চিংড়ি মাছের রপ্তানী ধরে রাখতে হলে উৎপাদন খরচ অবশ্যই কমাতে হবে!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ২৯ নভেম্বর, ২০১৭, ০৮:৩৬:৩৯ সকাল
আজ থেকে ২০-২২ বছর আগেও দেখছি বুড়িগঙ্গা নদীর বেশ কয়েকটি স্পটে শিকারীরা ছিপ দিয়ে গলদা চিংড়ি মাছ ধরত! এখনও দেশের যে সব নদী দূষণ মূক্ত সেখানেও গলদা চিংড়ি পাওয়া যাবে। বলাই বাহুল্য বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি ও নদ-নদী এবং সাগর চিংড়ি মাছের জন্য দারুণ আবাসস্থল। একে ভিত্তি করেই কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে চিংড়ি মাছের চাষ করে বিদেশে রপ্তানী হচ্ছে। গার্মেন্টস, সিরামিক, ওষুধ সহ উল্লেখযোগ্য পণ্যের সাথে চিংড়ি মাছও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পথ। কিন্তু যখনই দেখি যে বাংলাদেশের চিংড়ি মাছ অধিক মূল্যের কারণে এবং বিশ্বে চিংড়ির দাম ৫০% হ্রাস পাওয়াতে রপ্তানী কমে গেছে এর জন্য উদ্বিগ্ন হতেই হয়;
গলদার মূল্য হ্রাসে রেকর্ড
http://www.amadershomoy.biz/unicode/2017/10/22/350283.htm
খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা অঞ্চলেই বাংলাদেশের সিংহভাগ চিংড়ির ঘের বা খামার সমূহ অবস্থিত। এখানে এক কোটি উপর লোক চিংড়ি উৎপাদনের সাথে তাদের জীবিকা জড়িত। ভারত আমাদের দেশে থেকে অনেক বড় এবং থাইল্যান্ডও কয়েক গুণ বড়। সেখানে একই জাতের গলদা চিংড়ি কম মূল্যে হওয়ায় আমাদের দেশ থেকে বিদেশী আমদানিকারকরা কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিছে। বাংলাদেশে জমি, পুকুর বা চিংড়ি মাছের চাষের স্থান তৈরি, পাথড়ের চুন(পানির স্বচ্ছ, রোগ জীবাণু দমন, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি) প্রয়োগ, সার(গোবর, ইউরিয়া, টিএসপি), বিদ্যুৎ-ডিজেল পানি নিস্কাশন ও সরবারাহের জন্য, কোল্ড ষ্টোরেজ এবং সর্বপরি শ্রমিক খরচ বর্তমানে এই সবই অনেক বেশী। এমনকি ভিয়েতনাম এবং সদুর ল্যাটিন আমেরিকার দেশ সমূহেও এই খরচ কম। ভিয়েতনাম ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশ বিশেষ করে ইকুয়েডরেও চিংড়ি মাছের উৎপাদন খরচ অনেক কম। যেমন আমি লন্ডনে চীনা শপ থেকে ইকুয়েডর থেকে আসা কিং বা টাইগার সাইজের ২ কেজি চিংড়ি মাছ কিনছি ৮ পাউন্ডে একই ধরণের বাংলাদেশী মাছের মূল্য কেজিতে ৬০০-৭০০ টাকার মত। তাহলে দেখা যায় বৃটেন বা ইইউর দেশ সমূহে বাংলাদেশী চিংড়ির দাম পড়ে যাবে কেজিতে ৮ পাউন্ড বা ১০-১১ ইউরোর মত। তাহলে কেন সেখানকার ক্রেতারা ইকুয়েডর বা ল্যাটিন আমেরিকার টাইগার সাইজের চিংড়ি ছেড়ে বাংলাদেশীটা কিনবে? ঐ একই চীনা শপে ৮-৯ পাউন্ডে এক কেজি ওজনের একটা Lobster বা গলদা চিংড়ি কেনা যায়। সেটাই বাংলাদেশ থেকে গত বছর এই গলদার দাম প্রতি কেজিতে হাকা হইত ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মত। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, খাদ্য সহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, কোল্ড ষ্টোরেজ, পরিবহন ও সর্বপরি শ্রমিক মজুরী সবই একটার সাথে অন্যটা জড়িত। কাজেই ২-১টা দ্রব্যের মূল্য বাড়লে অন্যটারও দাম বৃদ্ধি পায়। একজন শ্রমিক ৭০ টাকা কেজি চাউল, ৮০ টাকা কেজিতে শাক সব্জি, চড়া মূল্যের পিয়াজ সহ অন্যান্য দ্রব্য কিনতে নিশ্চয়ই চিংড়ি ঘেরে বা অন্য কোন কর্মক্ষেত্রে কম বেতনে কাজ করতে পারবে না। গার্মেন্টস সহ অন্য শিল্প ক্ষেত্রেও অদূর ভবিষ্যতে এর প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের মত দেশে যেখানে প্রাকৃতিক সম্পদ তেল, গ্যাস সীমিত এবং ধাতব, স্বর্ণ যেখানে নাই সেখানে কৃষি, উল্লেখিত শিল্প হতে উৎপাদিত পণ্য সমূহই রপ্তানি আয় তথা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পথ। এই চিংড়িকে নেহায়েত ছোট করে দেখার উপায় নাই যেখানে বাংলাদেশ গত ২০১৬ পর্যন্ত বেশ কয়েক বছর ৫০ কোটি মার্কিন ডলার করে আয় করছে। ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশ এখন বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দী। কাজেই চিংড়ির পাশাপাশি অন্যন্য কৃষি বা অন্য শিল্পের উৎপাদন খরচও যাতে কমানো নিদান পক্ষে খরচ যেন তেমন না বাড়ে সেই বিষয়ে অতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আজকে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দী দেশ গুলি হতে চিংড়ি কম মূল্যে উন্নত দেশ গুলিতে রপ্তানী হচ্ছে সেখানে গার্মেন্টস সহ অন্য উৎপাদিত পণ্যের দামও কমতে পারে। এই সব বিষয়কে লক্ষ্য রেখে জাতীয় ও বেসরকারী পর্যায়ের জন্য কার্যকরী ও দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিকল্পনা দরকার।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আর এখন এই নদী এবং তার সংশ্লিষ্ট খালগুলো ড্রেন এর চেয়েও ময়লা। আহ্ আমাদের নগর জীবন!!! একটা আস্ত নদীকে কালো করে দিলো!!!
ধন্যবাদ ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন