স্বাধীন বাংলাদেশই বাংলা ভাষার মূল শিকড়!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৭:১৮:৪০ সকাল
ফেব্রুয়ারী মাস এবং আরো দুটি বিষয়ের কারণেই এই পোষ্ট!
আগা চৌধুরী অতীতের তথা ১৯৭২র এক ঘটনা স্মরণ করে একটি পত্রিকায় কলাম লিখে। সে জানায় ঐ সময় কোন এক বিমান যাত্রায় অস্কার বিজয়ী ভারতীয় বাঙালী সত্যজিত রায়ের সাথে তার বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়। আগাচৌ বলেন "এবার আমরা স্বাধীন জাতি এবং সে হিসেবে বাংলা ও এর সাহিত্য সংস্কৃতি সারা বিশ্বে পৃথক সত্ত্বা হিসেবে পরিচিতি পাবে"। এর জবাবে সত্যজিত বাবু বলে "সেটা হতে পারে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির শেকড় কিন্তু কোলকাতাতেই থাকবে"। এর জবাবে আগাচৌ শুধুই গভীর ভাবে চিন্তা করছে কিন্তু সত্যজিত বাবুর কথার সাথে দ্বিমত করতে পারে নাই।
উক্ত ঘটনার পর গঙ্গা-পদ্মার অনেক পানি গড়াইছে। তারপর আমি নিজে কিছু ঘটনার স্বাক্ষী। ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট টিভি দেখার জন্য ডিশ এন্টেনার ব্যাবহারের অনুমতি দিলে ভারত সহ এশিয়া ও কিছু আন্তর্জাতিক চ্যানেল সমূহের দেখার সুযোগ হয়। পরবর্তীতে ক্রমান্বয়ে ২০০০ সালে ভারতীয় বাংলা এক টিভি চ্যানেলে এসে বেশ অবাক হই। ঐ বছর ১লা বৈশাখ উপলক্ষে কোলকাতার কিছু হাইস্কুল ও কলেজের ছেলে মেয়েদের জিজ্ঞাসা করা হয় "আজকের দিনটা কেন গুরুত্বপূর্ণ?" যার জবাবে তারা কিছুই বলতে পারে নাই। আরো অবাক করার বিষয় তারা সবাই বাঙালী হয়েও কেউ বাংলায় জবাব না দিয়ে ইংরেজীতেই দিল। আর তাদের পোশাক পরিচ্ছেদ যথারীতি পাশ্চাত্যের মত সেটা বলাই বাহুল্য। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সেই সাথে হিন্দি-পাশ্চাত্যের মিশ্রণে কোলকাতা শহড় সহ রাজ্যের অন্যান্য শহড় গুলিতেও সেই হিন্দি কিংবা ইংরেজীর প্রাধান্য। কি সরকারী কি বেসরকারী অফিস, আদালত সবই ইংরেজীতে চলে। অবাঙালী যারা সে রাজ্যে ব্যাবসা করে তারা মোটেও বাংলায় লেখাতো দূর বলতেও অনিচ্ছুক! তাই কোলকাতা শহড় সহ পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য রাজ্যের স্কুল গুলোতে ইংরেজী মিডিয়াম হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। কেবল গ্রাম ও পল্লিীতেই বাংলা কোনমতে আছে। দেখা যাচ্ছে এলিট ও তাদের ছেলেমেয়েরা বাংলাকে নিজের মাতৃভাষার মত গুরুত্ব দিচ্ছে না। কারণ দিন শেষে ক্যারিয়ারটাই গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গে চাকুরী না পেলে বেঙ্গালুর, মাদ্রাজ, দিল্লী, মুম্বাইতে চলে যায়। কি সেখানে অথবা কোলকাতায় নিজেদের বাঙালী বলে পরিচয় দিতেই লজ্জা পায়। স্পষ্টতই আইডেন্টিটি ক্রাইসিস! কোলকাতা ও অন্যান্য শহড়ে বাংলা ভাষা শেখার বর্তমান কি হাল তা মূক্তমনার বিপ্লবপালের এক ষ্ট্যাটাস থেকেই বোঝা যায়;
*********
Biplab Pal
20 February at 23:26 •
কাল ভাষা দিবস। বাংলা ভাষা রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের বাঙালীদের আত্মোৎসর্গের কাহিনী, মানবসভ্যতার ইতিহাসেই বিরল।
তবে ত্রিশকোটি লোকের ভাষা, বাংলা ভাষা আরো একশো বছর টিকবে কি না সন্দেহ আছে। ভাষার জন্মমৃত্যু নতুন কিছু না। আস্তে আস্তে প্রান্তিক, ডায়ালেক্টগুলো মৃত্যু হচ্ছে। টিভি, স্যোশাল মিডিয়ার দৌলতে মিশ্র ভাষার উৎপত্তি দেখতে পাচ্ছি।
বাংলা ভাষায় উন্নত সাহিত্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, এডমিনিস্ট্রেশন সবকিছুই সম্ভব। কিন্ত একটা ভাষা টেকার জন্য, সেটাই যথেষ্ঠ না। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বাঙালী পিছিয়ে। ফলে চাকরি পাওয়ার জন্য, বাঙালীকে অন্য ভাষা জানতে হয়, অন্য দেশে পাড়ি দিতে হয়। খুব স্বাভাবিক কারনেই ছাত্রদের ও বাংলা শেখা ও চর্চার গুরুত্ব থাকে না। পেশাদারি মাপকাঠিতে যেহেতু বাংলার স্থান নেই, অধিকাংশ বাঙালীই বাংলার থেকে ইংরেজিটাই নিঁখুত ভাবে শেখা চেষ্টা করে।
ফলে পশ্চিম বঙ্গের দিকে বাংলা চর্চা টিকে আছে গ্রাম্য শহরে। কোলকাতা এবং জেলা শহরের স্কুলগুলোতেও ইংরেজি মিডিয়ামের রমরমা। যদিও সেইসব প্রাইভেট স্কুলে ছেলেমেয়েরা না শেখে ইংরেজি, না শেখে বাংলা। সেটা অন্য ব্যপার। কিন্ত আপাতত গ্রামের ছেলে মেয়েরা ছাড়া, আর কেউই বাংলাটা শিখছে না শহরের দিকে। আস্তে আস্তে বাংলার শিশু সাহিত্য সম্পূর্ন মৃত। খুদে পাঠক কই? ফলে আস্তে আস্তে বাংলা সাহিত্যের পাঠক ও কমে আসছে। নেটে যটুকু টিকে আছে পশ্চিম বঙ্গের বাংলা সাহিত্য। বাংলাদেশের দিকে অবস্থা আশা করি ভাল।
ফেসবুক এসে ভাষার মৃত্যুদিন আরো এগিয়ে দিয়েছে-ডায়েবেটিক রুগীর ক্যান্সার। ফেসবুকের জেনারেশনের এটেনশন স্প্যান ২৫ সেকেন্ড! তাতে কি সাহিত্য পড়বে লোকে তারাই জানে!
https://www.facebook.com/biplab.pal/posts/10155027386339641
*****************
তাহলে বোঝা যাচ্ছে যে আক্ষরিক অর্থেই আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশই বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার সুরক্ষিত স্থান। স্বীকার করি যে উচ্চ আদালতে বাংলা নেই কিন্তু বাকী সারা দেশে বাংলা ভাষার জয় জয়কার। এখানে কম-বেশী শিক্ষার্থীরা যতই ইংরেজী মিডিয়ামে পড়ুক কিন্তু অন্ততপক্ষে তারা বাংলা ভাষায় কথা বলা ও লিখতেও পারে। এখন সঠিক বানান, ব্যাকারণ শেখা ও স্মরণ রাখা সহ একে পরিপূর্ণ ভাবে ডিজিটাইজ ও সাইবার উপযোগী করতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ সবুজ ভাই।
ধন্যবাদ পল্লব ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন