বায়ুকল বিপ্লবঃ হল্যান্ডের সব ইলেকট্রিক ট্রেনের ১০০% বিদ্যুৎ এখন আসে বায়ু শক্তি হতে!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৫:৫৩:১৯ সকাল
Dutch electric trains become 100% powered by wind energy
যখন আমি ইউকেতে কাউন্সিলের ফ্ল্যাটে উঠি তখন থেকেই সব কিছু নিজেকেই কিনতে হয়। আগে ম্যাসের নিয়মে একেক জন ভিন্ন টাইমে খাওয়া দাওয়া সহ প্রয়োজনীয় আইটেম কিনত। তাই অত কিছু খেয়াল করতাম না। তারপর নিজে একা হওয়াতে সব সময় একবারে ১০ কেজি ব্যাগের পিয়াজ কিনি। তারপরেই চেক করলাম এত ভাল পিয়াজ আসে কোথা থেকে! দেখলাম ইউরোপের ছোট্ট দেশ দি নেদারল্যান্ডস বা হল্যান্ড থেকে। শুধু বৃটেনেই নয় বরং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডাচদের থেকে ট্রাক বোঝাই পিয়াজ রপ্তানী হয়। দামও বেশী একটা বাড়ে না। তাই অবাক হই যে এইটুকুন একটা দেশ এত পিয়াজের এবং তাও বাম্পার ফলন কিভাবে ফলায়! এছাড়াও ডাচ গরুর দুধ এবং অন্যান্য দূগ্ধ জাতীয় খাবারও সারা ইউরোপে সয়লাব। আমরা জানি দেশটার অনেক অংশ সুমুদ্র পৃষ্ঠ হতে নিম্নে অবস্থিত। কিন্তু বহু আগে তারা বাধ দিয়ে এবং কার্যকর পানি নিস্কাশন ব্যাবস্থার মাধ্যমে দেশটার ঐ সমস্ত নিম্নভূমিকে বসবাসযোগ্য করে রাখছে। এর মূলেই আছে তাদের তৈরিকৃত বিশাল বায়ুচালিত পাখা। বাতাসের শক্তিকে ঠিকমত কাজে লাগিয়ে যান্ত্রিক শক্তিতে রুপান্তর করে যে প্রচলন শুরু হইছে বিষয়টির অনেক উন্নয়ন সহ আরো অনেক ক্ষেত্রেই এর ব্যাবহার হয়। কৃষি সেচ সহ পরবর্তীতে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় উৎপাদন কাজেও এই বায়ুকলের ব্যাবহার হয় ব্যাপক ভাবে। বলাই বাহুল্য এই বায়ুকলের কারণে পরিবেশের কোন ক্ষতি হয় না।
সর্বপরি এই ২০১৭ সালে এসে দেখা যাচ্ছে যে তাদের সবকয়টি ইলেকট্রিক ট্রেন এখন বায়ুকলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ হতে চলে। ডাচদের জাতীয় রেলওয়ে NS জানায় এই বছর ২০১৭র ১লা জানুয়ারী থেকে ট্রেনের জন্য সমস্ত তথা ১০০% বিদ্যুৎ আসে সারা দেশের বিভিন্ন বায়ুকল হতে। মজার কথা হল ট্রেনগুলির জন্য প্রস্তাবিত এই বায়ুকল বিদ্যুৎ ব্যাবস্থার নির্ধারিত সময় ২০১৮র আগেই ডাচদের এই সাফল্য আসে;
https://www.theguardian.com/world/2017/jan/10/dutch-trains-100-percent-wind-powered-ns
এখানে ডাচ বিদ্যুৎ সরবারাহকারী কোম্পানী Eneco এরও যথেষ্ঠ অবদান আছে। Eneco এবং NS তাদের যৌথ ওয়েবসাইটে জানায় যে প্রতিদিন ৫৫০০ ইলেকট্রিক ট্রেন প্রায় ৬ লক্ষ যাত্রী পরিবহন করে। তারা হিসেব করে দেখায় একটি বায়ুকল একঘন্টায় যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তা দিয়ে একটি ট্রেন একই সময়ে ১২০ মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। সেই সাথে তারা ২০০৫ এর তুলনায় ২০২০ সাল নাগাৎ যাত্রীপ্রতি তারা ৩৫% বিদ্যুতের সাশ্রয়ের ব্যাবস্থা করবে।
ছোট্ট দেশের ডাচদের মেধা অসাধারণতো বটেই সেই সাথে তাদের যথেষ্ঠ পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততার মাধ্যমে তারা এই বায়ুকলের যূগান্তকারী বিপ্লব ঘটাইছে। সেই দেশের ট্রেনের ভাড়া যেমনই হৌক তাতে জাতীয় আয় ব্যাপক। অহেতুক ডিজেল, কয়লা, গ্যাস, তাপশক্তি অথবা পারমাণবিক বিদ্যুতের প্রয়োজন নাই এই ইলেকট্রিক ট্রেন গুলির জন্য। হয়ত পৃথিবীর সব দেশের সব জায়গাতে বায়ুকল হতে ট্রেন বা অন্য ক্ষেত্রে ১০০% বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সম্ভব না তবে যদি চেষ্টা করে ২৫-৩০% বিদ্যুতও পাওয়া যায় তাতে ক্ষতি কি?
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল সহ বিভিন্ন নদ-নদী, খাল বিল, সহ বিভিন্ন খোলা অঞ্চলে বায়ুকল বসিয়ে তাতে যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন সহ অনেক কাজ করা সম্ভব। সেই সাথে সৌর শক্তি হতে বিদ্যুত উৎপন্নের জন্য সোলার প্যানেলতো আছেই। অহেতুক কুইক রেন্টাল তথা ডিজেল চালিত বিদ্যুৎ সহ কয়লা, গ্যাস সহ অন্যান্য তাপশক্তির অপচয় না ঘটিয়ে বায়ুকল হতে ব্যাপক বিদ্যুৎ প্রাপ্তি সম্ভব। এতে বিভিন্ন বিদ্যুৎ প্রজেক্টের জন্য রাষ্ট্র ও জনগণের বিপুল অর্থ ব্যায় করা হ্রাস পাবে। বিশেষ করে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রর জন্য এত অর্থ ব্যায় না করে এবং সুন্দরবনের পরিবেশের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এর চেয়েও অনেক কম খরচে এই বায়ুকল এবং সোলার প্যানেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা খুলনা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত উপকূলে গড়া সম্ভব! ডাচরা যদি প্রতিদিন বায়ুবিদ্যুৎ হতে ৫৫০০ ট্রেন চালাতে পারে আমরা কেন রামপালের বদলে এর মাধ্যমে বেশী বিদ্যুৎ পাব না? এখনই সময় বায়ু চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ এবং গুরুত্ব দেওয়া।
বিষয়: বিবিধ
১৭০২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh
হল্যান্ড আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় ২৫ ভাগের একভাগে । জনবসতির ঘনত্ব প্রায় কাছাকাছি ।
ইউন্ড মিল বসাতে অনেক জায়গা লাগার কথা । সেটা তারা কিভাবে করেছে ?
হল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডস কি ভিন্ন ভিন্ন দেশ ?
ডাচদের মধ্যে সততা, দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেম আমাদের থেকে অনেক বেশী। তাই অল্প জায়গাতেও এটা করতে পারছে।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ আনিসুর ভাই।
তথ্যের জন্য ধন্যবাদ সবুজ ভাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন