যদি বাংলাদেশে সব চিকিৎসা, টেষ্ট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ বিনামূল্যে হইত!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ৩১ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:১৩:৩০ সকাল









দেশে থাকতে মাত্র ৩-৪ বার ডেন্টিষ্ট তথা দাতের ডাক্তারের কাছে গেছিলাম। তাও সরকারী হাসপাতালে! তারপর দেশে কোলগেট ও পেপসুডেন্ট টুথপেষ্ট এভেইলএবল হলে(আগে কিছু নির্ধারিত ও অভিজাত বিপণীতে পাওয়া যেত) দাতে তেমন সমস্যাই হয় নাই। তবে একটি দাত অনেক আগেই খানিকটা ক্ষয় হতে হতে বৃটেন আসার পর এই বছর ফেলে দিতেই হল। ১৫-২০% টিকে ছিল তাই ডেন্টিষ্ট যখন দাত তুলে তখন সমস্যা হয় নাই। এর তিন মাস পর আবার যখন এই মাসের শুরুতে গেলাম তখন তিনি বললেন এই জায়গায় একটা দাত বসানোর কথা। আমি প্রথমে বললাম আদৌ কি দরকার আছে? তারপর তার কথাতেই রাজী হইলাম। তাকে খরচের বিষয়ে প্রশ্ন করাতে বলল "তোমার যদি উচ্চ আয় না থাকে এবং ট্যাক্স ক্রেডিট পাও তাইলে সম্পূর্ণ ফ্রি"। খুশীতে আমার মন ভরে গেল। ঠিক আছে ডেন্টিষ্ট যখন বলতাছেন তাইলে দাতের ইমপ্ল্যান্ট ব্রীজটা করেই ফেলি। পরে ডেন্টাল সেন্টারের রিসেপশনিষ্টকে জিজ্ঞাসা করলাম বিত্তবান বা সামর্থ্যবানদের জন্য এটা কেমন খরচ? বলল সব মিলিয়ে ৩১০ পাউন্ড লাগবে। পরে আমি ওয়েব সাইটে দেখি এটাই প্রাইভেটে লাগে ৭০০ পাউন্ড। উল্লেখ্য বৃটেনে National Health Service(NHS) যা সরকারী ফান্ডে চলে এমন ডেন্টাল সেন্টারে নিম্ন হতে উচ্চ আয়ের মানুষেরা পুরো থেকে ৬০-৭০% দাতের চিকিৎসায় ভর্তূকী পেয়ে থাকে। তাই NHS ছাড়া প্রাইভেটে চিকিৎসা অনেক ব্যায় বহুল। কাজেই আমারও দাত বসানো বিনা খরচে ও আরামে হয়ে গেল। এখানে অন্য সব চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি তবে ওষুধ আয় অনুযায়ী কিনতে হয়। বিত্তবান-সামর্থ্যবান ও ট্যাক্স ক্রেডিট যাদের নাই এমন বৃটিশরা ছাড়া বাকী বৃটিশ নাগরিকরা ৯৯% ওষুধই ফ্রি পায়। এছাড়াও রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে, স্ক্যান সহ সব ধরণের টেষ্ট বৃটিশ নাগরিক ও বৈধ রেসিডেন্টদের জন্য ফ্রি। রোগ নিয়ে অহেতুক ভুল চিকিৎসা, ভুল ওষুধ প্রায় নেই। কাজেই অহেতুক রোগ না থাকলে বাড়তি অর্থের জন্য ডাক্তাররা অবৈধ কোন কাজ করে না।

সহজে সারার মত রোগ হইলে এক কোর্সের ওষুধেই রোগ সারে। সেই সাথে দীর্ঘ মেয়াদেও সারার মত রোগ হইলে সেটাই ধীরে ধীরে সুন্দর ভাবে সারে। ক্যান্সার সহ যেকোন জটিল রোগ সারানোর জন্য যতটা সম্ভব প্রচেষ্টা সহ হার্ট, লিভার, কিডনী, চোখ সহ সম্ভ্যাব্য প্রতিস্থাপনযোগ্য শরীরের অঙ্গ ষ্টোরে রিজার্ভ থাকলে সেগুলোও ফ্রিতে স্থাপন করে দেয়। বহু লোক এগুলো মৃত্যুর পর এটা দান করে যায়। খালি যদি বৃটিশদের সবাই একটু বুঝে অতিরিক্ত মিষ্টি, চর্বি, সোডা, প্রসেসড ফুড এবং এলকোহল কম গ্রহণ করত তাইলে তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে NHSর অর্থ অপচয়টা কম হইত।

বৃটেন সহ ইইউভূক্ত বেশীর ভাগ সদস্য রাষ্ট্র সহ ইউরোপে সুইজারল্যান্ড, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের নাগরিকদের জন্য সব ধরণের চিকিৎসা পুরাটাই বিনামূল্যে। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য ইন্সুরেন্স গুণতে গুণতে কাহিল হওয়ার অবস্থা হয় যদিও সেই দেশের চিকিৎসা ইউরোপের মতই অনেক উন্নত। আর অষ্ট্রেলিয়া ও কানাডাতে সব চিকিৎসা ফ্রি হলেও চোখ ও দাতের চিকিৎসা ফ্রি না। এর জন্য অষ্ট্রেলিয়ান ও কানাডিয়ানদের অনেক অর্থ ব্যায় করতে হয়। তাই মানুষ মুখে শুনি তাদের আত্নীয়রা যারা অষ্ট্রেলিয়া ও উঃ আমেরিকায় থাকে তারা বাংলাদেশেই দাতের চিকিৎসাটা করায়।

আর স্বদেশ তথা বাংলাদেশের কথা!!! যদিও সংবিধানে বলা আছে স্বাস্থ্য সেবা সব নাগরিকের অধিকার তবে বাস্তবে যার অর্থ-ক্ষমতা আছে সে চিকিৎসা পায় আর যার নাই সে অকালে মরে অথবা খানিকটা কি সারা জীবন ধূকে। অনেক সময় অর্থ ব্যায় করেও দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা সঠিক চিকিৎসা পায় না। কোন সময় টেষ্টের দরকার নাই কিংবা তেমন বেশী ওষুধের দরকার নাই। কিন্তু প্যাথলজিকাল ল্যাব ও ওষুধ কোম্পানী হতে কমিশন খাওয়ার লোভে অহেতুক রোগীদের অর্থ অপচয় করায়। অনেক সময় বুঝে বা অবহেলা করে সঠিক পথে টেষ্ট ও ওষুধ না দিয়ে রোগকে বাড়িয়ে তোলে। এতে করে অনেক মানুষই নিস্ব হয় অথবা দেনায় জর্জরিত থাকে। ইউরোপ ও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ারের দেশ গুলিতে ইউটিলিটি বিল(গ্যাস, বিদ্যুৎ), টেলিফোন, জ্বালানি তেল সহ বিভিন্ন পণ্য হতে নির্ধারিত অথবা কিছুটা বাড়তি কর আরোপ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাসস্থান সহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে বরাদ্দ করে। তাই সেই সকল দেশে চিকিৎসা নিয়েতো ভাবতেই হয় না আর অন্য সব ক্ষেত্রেও র্দূনীতিও অনেক কম। তাই বলছিলাম বাংলাদেশে বিভিন্ন শুল্ক করের উৎস থেকে একটা অংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ হলে তথা সরকার এই উদ্যোগ নিলে সব দরিদ্র ও মধ্যবিত্তরা অনেকটা ভাল স্বাস্থ্য সেবা পেত। উদ্যোগটা নিঃসন্দেহে কঠিন কিন্তু মোটেও অসম্ভব না। আমাদের বাংলাদেশে এখন পৃথিবীর ৯৮% ওষুধ বিভিন্ন কোম্পানী উৎপাদন করে। এটা আর কোন কল্পনার বিষয় না। দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছর। যদি ভেজাল মূক্ত খাদ্য, খাদ্যের সঠিক গুণাগুণের লেভেল এবং বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা থাকত তাইলে আমাদের দেশের মানুষের আয়ু ৯০+ বছর হইত। আর যাই হৌক বাংলাদেশের মানুষের আশা ও মনোবল অনেক এই উৎসাহ হতেই ইউরোপকে দেখেই এই লেখার প্রয়াস। আমার মরহুম আব্বা ও মরহুমা আম্মা সহ বহু মানুষকে চিকিৎসা নিয়ে সংগ্রাম ও অনেককে চরম কষ্ট-র্দূভোগ পোহানো সহ ধুকে ধুকে মরতে অথবা দীর্ঘদিন বিছানায় পড়ে থাকতে দেখছি। তাই ইউরোপকে দেখে আর চাই না যে ভবিষ্যত প্রজন্ম স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তির জন্য কষ্ট করুক।

বিষয়: বিবিধ

১৩০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376979
৩১ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:৪১
হতভাগা লিখেছেন : আজ যেমন বৃটিশেরা এরকম উদারতা দেখাতে পারছে তাদের নাগরিকদের, এরকম আমরাও পারতাম । কারণ আজ থেকে ৫০০ বছর আগে আমরাই ছিলাম সব দিক দিয়ে ওদের চেয়ে উন্নত ।

নিজেদের দূর্দশা কাটাতে ওরা আমাদের এখানে এসেছিল বণিক সেজে । উদ্দেশ্য ছিল লুট পাট করা , শোষন করা ।

শান্তিপ্রিয় আমরা তাদেরকে বনব্ধু ভেবে সাহায্য করলেও তারা আমাদের পিঠে ছুরি চালিয়ে গেছে। আমাদের সবকিছু লুটে পুটে ওরা ওদের দেশে নিয়ে গেছে ।

বৃটিশদের প্রতিটা ইমারতের ইটের গায়ে আমাদের পূর্ব পুরুষদের রক্ত লেগে আছে । তাদের এসব চাকচিক্যময় সুযোগ সুবিধার দেয়ালে কান পাতলে আজও আমাদের পূর্ব পুরুষদের হাহাকার শোনা যাবে।

গত সহস্রাব্দীর শেষের অর্ধেক সারা বিশ্বে চুরি চামারি করে এখন নিজেদেরকে সভ্য জাতি হিসেবে পরিচিত করতে চাইছে বৃটিশরা।

এলাকার বড় সন্ত্রাসীও বয়স হয়ে গেলে পান্জাবী টুপি পড়া শুরু করে , হজ করে আসে - নিজের মধ্যে বদলে গেছে একটা লুক আনে ।

কিন্তু যাদের ক্ষতি করে আজ সে ভাল মানুষ সেজেছে তারা কি তার সেই পুর্বের কীর্তি ভুলতে পারে বা ভুলে যাওয়া উচিত ?

আমরা ছিলাম শান্তি প্রিয় জাতি , ধন সম্পদও আমাদের যথেষ্ট ছিল যেটা ঐ সময়ে খুব কম দেশেরই ছিল। কারও বাড়া ভাতে ছাই দেবার মত ছিল না এ অন্চলের লোকেরা ।

বৃটিশরাসহ ইউরোপীয় লুটেরারা যদি আমাদেরকে লুটে না নিত তাহলে কি আমরাও কি এরকম National Health Service(NHS) চালু করতে পারতাম না ?

হয়ত বৃটিশ নাগরিকত্ব পেয়ে নিজেকে আরও সভ্যের কাতারে নিয়ে গেছেন , স্ট্যাটাসকে অনেক আপগ্রেড করেছেন - National Health Service(NHS) এর মত ফ্যাসিলিটিস পেয়ে কি আপনাদের একটুও মনে হয় না যে আমাদের জিনিস লুট পাট করে তারা এতদূর এসেছে ?
377001
৩১ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫১
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : আগে মীর জাফরদের প্রতিরোধ করেন পরে বৃটিশদের দোষ দিয়েন। এখন দেখেন ভারত কিভাবে আমাদেরকে শোষণ করছে। এটা সম্ভব হইছে হাসিনার মত মোনাফেক বাংলাদেশের ক্ষমতার মনসদে আছে। এ ছাড়াও র্দূনীতি, অনিয়ম প্রকট। ১৯৭২ সালে স্বাধীন বাংলাদেশে মুজিবই বলছে সব দেশে পায় তেল, সোনার খনি আর আমি পাইছি চোরের খনি যদিও সেই চোরদের বিষয়ে জোরাল কিছুই করে নাই। আপনে দেখেন মালয়শিয়ার দিকে তাকান তারাওতো বৃটিশেরই উপনিবেশই ছিল। এখন মালয়শিয়া কোথায় গেছে? আর শুধু কি বৃটিশদের কথা বলছি? এখানে জার্মানী, ডেনমার্ক, স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ গুলোও আছে যাদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা বৃটিশদের মতই। বাংলাদেশের ট্যাক্স ব্যাবস্থা ঢেলে সাজিয়ে র্দূনীতি কমানো গেলে আগামী ২০ বছরে বৃটিশদের মতই স্বাস্থ্য সেবা দেওয়া সম্ভব। নিজের এই উদ্যোগ নিলে বৃটিশ বা অন্য কেউ আপনাকে বাধা দিবে না। ঢালাও ভাবে অন্যকে দুষার আগে নিজের চেহারাটাও আয়নায় দেইখেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File