ওয়াসার ব্যাবস্থাপনা ও বিশুদ্ধ পানি সরবারাহ প্রসঙ্গে!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ২৮ মার্চ, ২০১৬, ০৬:৩৮:২১ সন্ধ্যা





পানির অপর নাম জীবন এটা নতুন করে বলার দরকার নাই। কিন্তু কোন এলাকা বা শহড়ে নিত্য পানীয় পর্যাপ্ত ভাবে ও যদি বিশুদ্ধ বা ব্যাবহার বা পানযোগ্য পানি সহজে না পাওয়া যায় তাহলে সেটা স্বাস্থ্য সহ বাসাবাড়ী পরিবেশের জন্য মারাত্নক হুমকি হয়ে দাড়ায়। স্বাধীনতার পর থেকে ঢাকা শহড়ের পানি সরবারাহ ব্যাবস্থাপনার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেওয়া হয় নাই। এর মধ্যে সায়েদাবাদ ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট ছাড়া ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যাবহারের কোন প্রজেক্টের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানি না। কেবলই শুনি মেঘনা ও যমুনা নদী দ্বয় হতে ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট করা হবে। এই নিয়ে কোন সমীক্ষাও হইছে তাও জানি না। ক্রমবর্ধমান শহড় ও জনসংখ্যার জন্য ভূগর্ভের পানিই সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত হয়। এটাই আশংকার কথা। ভারত কতৃক উজানের বহু নদ-নদীতে বাধ দিয়ে পানি প্রত্যাহারের কারণে শীত মৌসুম ও গ্রীষ্মে দেশের ভূগর্ভের পানির স্তর অনেক নীচে নেমে যায়। তাই ঢাকা শহড়ের অনেক গভীর নলকূপ গুলোতে পানি উত্তোলন তেমন হয় না তথা সরবারাহ কমে যায়। এখানে এভাবে পানি উত্তোলন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থের আশংকা অনেক বৃদ্ধি পায়। ভূগর্ভে পর্যাপ্ত পানি থাকলে ভূমিকম্পের ধাক্কা অনেকটাই সয়ে যায় যাতে উপরি ভাগের বিল্ডিং, রাস্তা সহ বিভিন্ন স্থাপনা সমূহের ক্ষতি কম হয়। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভূ-উপরিভাগের পানি বিশেষ করে মেঘনা ও যমুনা নদীর পানিকে পরিশোধনের মাধ্যমে ঢাকার পানির ঘাটতি মেটানো সম্ভব। তাতে ভূ-গর্ভের পানির স্তরই ঠিক থাকা সহ পাম্পগুলোর জন্য বেশী বিদ্যুৎ শক্তিও ব্যায় করতে হবে না।

এরপর আসে বিশুদ্ধ পানি সরবারাহের বিষয়টি। ঢাকার পানি সরবাহের লাইন বিভিন্ন সড়ক, গলির নীচ দিয়ে আসে যেখানে সুয়ারেজ, গ্যাস, টেলিফোন সহ বিভিন্ন ক্যাবল লাইনও থাকে। মুশকিল হল এই বিভিন্ন সেক্টরের মধ্যে ভাল সমন্বয় নাই। অনেক সময় ক্যাবলের জন্য লাইন খুড়তে গেলে ওয়াসা বা গ্যাসের লাইন কোথায় সেটা সব সময় গুরুত্ব দেয় না। বিপরীত দিকে ওয়াসা বা গ্যাসের কাজের জন্যও ক্যাবল লাইন কাটা পড়ে। ফলে ওয়াসা, গ্যাস ও ক্যাবল লাইন সমূহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। গ্যাস অবশ্যই বিপজ্জনক এটা যেকোন মূল্যে এর পাইপ লাইন যেন না ফাটে সেটা নিশ্চিৎ করতেই হবে। আর ক্যাবল লাইন কাটা পড়লে সেটাও সহজে বুঝা যায়। কিন্তু ওয়াসার লাইন ফেটে গেলে তখন সব সময় বোঝা যায় না। এতে করে ওয়াসার লাইনে পানি সরবারাহের চাপটা কমে গেলে বাইরের ময়লা ও নোংরা পানি সরবারাহ লাইনে ঢুকে যায়। এরপর বাসাবাড়ী সংযোগের জন্যও অনেক সময় এলোপাতাড়ি ভাবে নল কাটা ও জোড়া দেওয়ার সময়ও ওয়াসার লাইনে লিকেজ হয়। একই ভাবে বিভিন্ন অফিস, শিল্প কারাখানার অবস্থা ভয়াবহ। এরা বহু সময়ই দায়িত্বহীন। এমনকি পানির সঠিক বিলটাও দেয় না। এই সমস্ত অনিয়ম দূর করে কঠোর ব্যাবস্থাপনা জরুরী। উন্নত দেশ গুলোতে এখন আর বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মিটার রিডিং এর জন্য রিডারদের মিটার গুলির সামনে যেতে হয় না। এই সমস্ত মিটারের ওয়ারল্যাস সিগনাল সিষ্টেম আছে। বিদ্যুতের ছাড়া অন্য মিটার গুলিতে আছে দীর্ঘমেয়াদী ব্যাটারী(৫ বছর চার্জ);







উপরের ছবি গুলো দেখে বোঝাই যায় যে বাসার বাইরে থেকেই কোম্পানী বা সরবারহকারী প্রতিষ্ঠানের রিডাররা বাইরে থেকে তাদের রিডিং ডিভাইস অন করলেই অটোমেটিক ভাবে মিটার থেকে ডাটা এসে পড়বে। এখানে র্দূীনিতর সুযোগ অনেক কঠিন।

উন্নত বিশ্বে এখন শুধুই নদী বা ভূগর্ভের পানিই ব্যাবহার করা হয় না বরং ব্যাবহার করা ও সুয়ারেজের পানিকেও পরিশোধন করে যার নাম Wastewater treatment। এতে করে পানির মূল উৎসের উপর চাপ কম পড়ে। ঢাকা সহ চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা সহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহড় সমূহে এই বিষয়ে উন্নতমানের ট্রিটমেন্ট স্থাপন করতে হবে। তাতে যদি ব্যাবহৃত পানির ৬০-৭০% পুনরায় সুপেয় ও ব্যাবহারযোগ্য হয় সেটাও অনেক কাজে দিবে। ওয়েষ্টওয়াটার পুনরায় ব্যাবহারযোগ্য হিসেবে ইসরাইল পৃথিবীর এক নাম্বার দেশ এবং দ্বিতীয় হচ্ছে স্পেন;

http://www.reuters.com/article/us-climate-israel-idUSTRE6AD1CG20101114

https://en.wikipedia.org/wiki/Water_supply_and_sanitation_in_Spain

এখানে ইসরাইল তার ওয়েষ্টওয়াটারের ৮০% ও স্পেন ৭৭% পুনরায় ব্যাবহারযোগ্য করতে পারে।

বাংলাদেশ এই ক্ষেত্রে জার্মানী, স্পেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোম্পানীর সাথে দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির মাধ্যমে ওয়েষ্টওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে পারে।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File