যদি আমাদের দেশে এভাবে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানোর প্রতিযোগীতা হত!

লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ০৯:০৬:৩৩ রাত



২০১৩ সালে আমার এক ইংরেজ কলিগ বলল তুমি কেন TESCOর বদলে ALDI থেকে শাক-সবজ্বি কেন না! টেস্কোর মূল্য আলডি থেকে ৫০-৭০% বেশী মূল্য নেয়। তার পরামর্শ মোতাবেক আলডিতে গিয়ে আমি অবাক। যেমন টেস্কোতে যে শসা ৮০ পেনী করে সেটাই আলডিতে ৫০ পেন্স। এভাবেই পালন শাক, টমেটো, লেবু, গাজর, মাশরুম সহ সব শাক-সবজ্বির দাম অনেক কম। তারপর সেই বাসা থেকে দূরের সেই আলডি ষ্টোর হতেই প্রয়োজনীয় ভেজিটেবল গুলো কিনতে লাগলাম। তবে ঘটনা এখানেই শেষ না।

দুধের একটা ক্যান(২.২৭ লিটার) কিনতাম ১.২০ পাউন্ডে সেই টেস্কো থেকেই। একই সময় এই পরিমাণের ক্যান ওয়ালমার্টের ASDA বিক্রি করত ১ পাউন্ডে। এরপর হঠাৎ করেই টেস্কো এর দাম করে ১.৪০ পাউন্ড। তারপর দেখা যায় টেস্কোর বিক্রি অনেক হ্রাস পায়। এতে টেস্কোর হর্তাকর্তারা নড়েচড়ে বসে। যে শসা এতদিন ৮০ পেনী ছিল সেটা ৫০ পেনী, দুধ এক ক্যান ১ পাউন্ড করা সহ প্রায় সকল খাদ্যপণ্যর মূল্য কমিয়ে দেয় সেই ২০১৩ সালেই। বিষয়টা আমাকে দারুণ ভাবে আনন্দিত করে। এলাকার কাছের টেস্কো ষ্টোর ছেড়ে ও অতিরিক্ত সময় ব্যায় করে আর দূরের আলডি ও আসদাতে যেতে ভাল লাগছিল না। এই টেস্কোতেই ঐ সময় ১০টা ডিমের একটা কেসের দাম ছিল ১.৫০ পাউন্ড সেটাই Iceland ষ্টোর বিক্রি করত ১ পাউন্ডে। এখন টেস্কোতেও এটা এক পাউন্ডেই পাওয়া যায়।

বৃটেনের গ্রোসারী চেইন ষ্টোর গুলোর মধ্যে TESCO, ASDA, Sainsburys, Co-operative, Iceland, ALDI, Morrissons, B&M, Home Bargains উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে চলে ব্যাপক প্রতিযোগীতা। সিন্ডিকেট করে খাদ্য অথবা অন্য ভোগ্যপণ্যর দাম বৃদ্ধি করবে সেটা প্রায় অসম্ভব। কিছুদিন আগে আলডি তাদের বিভিন্ন পণ্যের দাম কমায় বাজারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীদের তুলনায়;

Aldi cuts prices in fresh assault on supermarket rivals

http://www.telegraph.co.uk/finance/newsbysector/retailandconsumer/12154401/Aldi-cuts-prices-in-fresh-assault-on-supermarket-rivals.html

এখানে সর্বশেষ যে শসা টেস্কো ৫০ পেনীতে বিক্রি করত এখন সেটা দেখি ৪২ পেন্স। তারপরেও আলডি কিভাবে পণ্যের দাম কমায় সেটা অবাক না হয়ে পারি না। আরো উল্লেখযোগ্য বিষয় হল মুসলমানদের রমজান মাস এলে এই চেইন ষ্টোরের কতগুলি বিশেষ মূল্য ছাড় দেয়;

Ramadan 2016

Ramadan is the ninth month of the Islamic calendar. In 2016, this holy month will be 6th June to 5th July. It is observed by Muslims worldwide as a month of fasting from dawn until sunset.


http://www.tesco.com/groceries/zones/default.aspx?name=ramadan

ASDA Ramadan Mubarak Offers (£1 Bombay Mix, Basmati Rice 10kg for £9, etc)

http://www.hotukdeals.com/deals/asda-ramadan-mubarak-offers-1-bombay-744571

Ramadan boosts supermarket sales of rice, chapati flour, dates and meat as Muslims stock up for festival 'bigger than Christmas'

http://www.independent.co.uk/news/business/news/ramadan-boosts-supermarket-sales-of-rice-chapati-flour-dates-and-meat-as-muslims-stock-up-for-10339906.html

অমুসলিম প্রধান দেশ হয়েও বৃটেনের মুসলমানদের রোজা ও সারা বছর খাদ্যপণ্য নিয়ে আল্লাহর রহমতে দূ্ঃশ্চিন্তা করতে হয় না। অথচ বাংলাদেশে সারা বছর কোন অজুহাত পেলেই ব্যাবসায়ীরা খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। আর রোজা আসলে গরীব ও মধ্যবিত্তদের মাথায় হাত পরে। এখানে সব ব্যাবসায়ীরা একজোট। দ্বিগুণ লাভ করলেও তাদের পেট ভরে না। এতে যে গরীব ও মধ্যবিত্তরা কষ্ট করতাছে সেটা তার স্বপ্নেও দেখে না।

বিদেশে থেকে যখনই এই রকম খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের মূল্য কমতে দেখি তখনই বাংলাদেশের কথা মনে পরে। ফেলে আসা দেশের মানুষ একটু ভাল ও পরিমাণ মত খাবে সেটা রীতিমত যুদ্ধের বিষয়। তার উপর আছে ভেজাল ও ক্ষতিকর খাদ্য এবং ওজনে কম পরিমাণের বিষয়। তাই ভাবি কতগুলি দিকে কূল করা যায়?

এতদা সত্ত্বেও আমি আশাবাদী মানুষ। যদি সরকারের খাদ্য, বাণিজ্য সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলো উদ্যোগী হয় তবে সিন্ডিকেট মূক্ত ও সুস্থ প্রতিযোগীতার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশে খাদ্যপণ্যের মূল্য কমানো তথা সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব। এখন প্রশ্ন হল সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এই বিষয়ে আন্তরিক ভাবে ব্যাবস্থা নিবে কি? রমজান মাস আসতাছে মাত্র ৩ মাস বাকি। তাই এখন থিকে উদ্যোগ নিলে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যর মজুদদারী, কৃত্রিম সংকট ও অতিরিক্ত মূল্য প্রতিরোধ করা সম্ভব। দেখা যাক এবার কি হয়!

বিষয়: বিবিধ

২২৬৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

360612
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১০:৩৬
তোমার হৃদয় জুড়ে আমি লিখেছেন : সেই আশায় গুড়েবালি. কমবে না বড়ং বাড়ার প্রতিযোগিতা হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৪৩
298870
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : এটাই আমাদের র্দূভাগ্য!
360619
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:১৩
দ্য স্লেভ লিখেছেন : বাংলাদেশে সারা বছর কোন অজুহাত পেলেই ব্যাবসায়ীরা খাদ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে। আর রোজা আসলে গরীব ও মধ্যবিত্তদের মাথায় হাত পরে। এখানে সব ব্যাবসায়ীরা একজোট। দ্বিগুণ লাভ করলেও তাদের পেট ভরে না। এতে যে গরীব ও মধ্যবিত্তরা কষ্ট করতাছে সেটা তার স্বপ্নেও দেখে না।

স্বয়ং সরকারই সিন্ডিকেট করে....আর ব্যবসায়ীদের বেশীরভাগই মানুষই না মুসলিম তো পরের কথা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৪৩
298871
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
360620
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ১১:১৮
আকবার১ লিখেছেন : আমার বাড়ীর আধা মাইল দুরে ALDI ।
সব কিছু অন্যান্য ষ্টোরের চেয়ে সস্তা।
প্রথম শুর হয় জার্মানীতে,তারপর পৃথিবীর
অনেক দেশে।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০২:৪৪
298872
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ ভাই।
360630
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৬:০৯
পললব লিখেছেন : LIDLE খারাপ না । আর বাংলাদেশের কথা কি বলব হাতে তজবি মাথায় বাজারের হিসাব!
ধন্যবাদ।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৫
298934
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
360631
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৭:৪৭
মাই নেম ইজ খান লিখেছেন : জুলুমের দেশে জুলুম মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মালয়েশিয়ায় আমরা তেল, ডিম, ইলেক্ট্রণিক দ্রব্য বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কমে পাচ্ছি। আর দেশে চলছে মানুষ মারার প্রতিযোগিতা!

রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কারণেই মূলত: জনগণ অন্যায়ে বাধ্য হচ্ছে!
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৫
298935
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : তথ্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই।
360641
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ১০:১৫
হতভাগা লিখেছেন : রমজান মাস আসলেই যেখানে পৃথিবীর অন্যন্য মুসলিম দেশে নিত্য ব্যবহার্য্য জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে দেওয়া হয় সেখানে আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা রমজান মাসকে তাদের ব্যবসার জন্য পয়মন্ত মাস বলে মনে করে । ২/৩ গুন বাড়িয়ে দেয় সব জিনিসের দাম । মানুষ আবার প্রতিযোগিতা করে বেশী দামে জিনিস কেনার জন্য ।

পিয়াঁজ ও বেগুনের দাম বেড়ে যায় লক্ষনীয়ভাবে । মানুষের হাব ভাব এমন যে , বেগুনী পিয়াঁজু না খেলে রোজা রাখা ঠিকভাবে হবে না , ঠিক যেমন ১ লা বোশেখে পান্তা ইলিশ না খেতে পারলে বাঙ্গালীত্ব চলে যায় যায় - এমন ।

এই সংযমের মাসে বাংলাদেশী মুসলমানেরা কে কার চেয়ে বেশী আইটেম খেতে পারে , দামী দামী রেসিপি কিনতে পারে তার প্রতিযোগিতা শুরু করে । বড় বাপের পোলারা খায় , বড় লোকের মায়েরা খায় - এগুলো শুধু রমজান মাসেই বের হয় পেটুক বাংলাদেশীদের রসনা নিবারণে ।

ব্যবসায়ীরা যখন দেখে মানুষের মধ্যে বেশী দামে জিনিস না কেনার লক্ষণ তো দেখা যায়ই না বরং তারা উল্টো প্রতিযোগিতা করে - এতে তারা কেন সুযোগ নেবে না ।

আলটিমেটলি - পণ্যের দাম কেনা দামের দ্বিগুন দামে বেচতে না পারলে ব্যবসায়ীরা তার মাল ছাড়ে না । ছাড়লেও সেগুলো লাভের উপর দিয়েই ছাড়ে। স্প্যানিশরা কি টমোটো ফ্রি তে বিক্রি করে ?
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৬
298936
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : বিক্রি বাড়লে পণ্যের মূল্য কমে সারা বিশ্বের বেশীর ভাগ দেশেই। আমাদের দেশে জনগণকে জিম্মি করে র্দূনীতিবাজরা ফায়দা লুটে।

অনেক ধন্যবাদ ভাই।
360674
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ দুপুর ০২:৪০
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ভাই এতো বেশি আশা করা ভালো না, আগে আশা করেন জান মালের নিরাপত্তার কথা, তারপর অন্যগুলো নিয়ে ভাবিয়েন ধন্যবাদ আপনাকে।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৭
298937
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : মামুন ভাই, ন্যায্য খাওয়াটুকু না খেলে মানুষের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে কিভাবে?

মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
360703
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:২৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই জন্যই তো বাংলাদেশ হলো উল্টাদেশ!
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:০৮
298938
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : :(

ধন্যবাদ সবুজ ভাই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File