বিদেশে না আসলে নিজে রান্না করার এত স্বাধীনতা পেতাম না!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৯:৩৮:০১ সকাল
দেশে থাকতে বড় জোর ডিম ভাজা কি চা বানানো ব্যাস এই! এর বাইরে যদি নুডুলস বা অন্য কিছু নিজে তৈরি তথা রান্না করতে যেতাম আম্মুর কয়েক ডজন বকুনী। আম্মু বলত ব্যাটা মানুষদের রান্না ঘরে বেশী যেতে নেই তাতে কপাল ছোট হয়। আর বৃটেন আসার পর যখন একের পর এক রান্না করে ফেসবুকে ছবি ও পদ্ধতি সমূহ শেয়ার করে অতীতে মায়ের বকুনীর কথা বলি তখনি এক আফ্রিকান ফ্রেন্ড অবাক! সে কয় "বল কি"। আমার সহ এখানকার(আফ্রিকান) মায়েরা তার ছেলেরা বয়স ৮-৯ হলেই বলে আমাকে রান্নায় সাহায্য কর। আর মেয়েরাতো যথারীথি! আর বয়স ১২ হলেই আফ্রিকান ছেলেদের নিজ হাতে কম-বেশী রান্না করতে হয়। এটা আমাদের উপমহাদেশের কুসংস্কার যে পুরুষ মানুষের রান্না ঘরে যাওয়া ঠিক না। অথচ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ সার্কের অন্য সব দেশেই পাড়া মহল্লার সাধারণ হোটেল, রেস্তোরা হতে ফাইভ ষ্টার হোটেল সর্বত্রই পুরুষ শেফদের জয়জয়কার শুধু বাড়ীর রান্নার ক্ষেত্রে মা, বোন, বিবি ও মেয়েদের যত কতৃত্ব তথা বহু ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি। আমি মনে করি শখ বা ইচ্ছা হলে বাড়ীর কিশোর(১৪-১৬) হতে বড়রা যদি চায় তারাও যেন রান্না করে সেটা উপভোগ করতে পারে। সে যাই হৌক বিদেশে আসার পর মেস মেম্বারদের থেকে দেখে ও পরে ইন্টারনেটে বিশেষ করে ইউটিউব দেখে বিভিন্ন আইটেম রান্না করা এখন কঠিন কিছুই না। যদিও খুব সহজ না তবে সব সময়ই এখন রান্না করা উপভোগ করি মোটেও খারাপ লাগে না। আর ঈদ সহ বিশেষ খাবারের আয়োজনে পুরো মনোযোগ সহ বাড়তি আনন্দ হয়
১) উপরের ছবিতে ২০১১ সালে একটি স্যামন মাছ কিনে রান্না করছিলাম। যেদিন রান্না করি সেটার উপর পোষ্টও দেই (সেপ্টম্বর, ২০১১);
http://www.somewhereinblog.net/blog/Bangladesh_Zindabad/29448256
২) দ্বিতীয় ছবিতে মাশরুম ও ছোলার ফ্রাই করছি ২০১২র রমজান মাসে(আগষ্ট)। এই নিয়ে আমার পোষ্টও আছে;
http://www.somewhereinblog.net/blog/Bangladesh_Zindabad/29653854
তারপর সময় যতই গড়ায় ক্যারিয়ার তথা জব, শপিং ও ঘরের কাজের ব্যাস্ততার তেমন ব্লগিং করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। তাই রান্না করা আবার এসবের ছবি তুলে বর্ণণা যে সময় সাপেক্ষ তা বলাই বাহুল্য। তবুও আজকে এরই মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু রান্না তুলে ধরলাম।
৩) মুরগীর স্পেশাল ঝাল ফ্রাই সাথে মটরশুটি ও আলু;
৪) ভুনা গরুর গোশতের তরকারী পাশে ফুলকপির কারী;
৫) মিক্সড ভেজিটেবল কারী। এখানে উপাদান গুলি হল ফুলকপি, ব্রোকলি, সবুজ ক্যাপসিকম, গাজর, সুইট কর্ন;
৬) ওভেনে চিকেনের গ্রিল করা;
উপরের এই ৬টি আইটেম নিজ বুদ্ধি ও পরিচিতদের মুখে শুনে করছি।
৭) চীনা ষ্টাইলে ভেজিটেবল ফ্রাই। এর নাম Vegetable Medleys। অবশ্যই এটা ইউটিউবের ভিডিও দেখে রান্না করছি। অত্যন্ত সুস্বাদু। রুটি বিশেষ করে পাউরুটির সাথে গরম গরম খেতে দারুণ;
আপনারাও নিম্নের ইউটিউবের ভিডিওটা দেখে এই চীনা Vegetable Medleys রান্না করতে পারেন;
https://www.youtube.com/watch?v=667yR9TbwyY
৮) এটাও চীনা ষ্টাইলের ভেজিটেবল ফ্রাই যার নাম Yasai Itame এর সাথে চীনা ষ্টাইলে চিকেন নাগেট ফ্রাই। এগুলোও যথারীতি ইউটিউব দেখেই রান্না করছি;
এই Yasai Itameর রান্না প্রণালীর ভিডিও লিংক;
https://www.youtube.com/watch?v=VtTSLBJF4H0
দুঃখিত চিকেন নাগেট ফ্রাইয়ের ভিডিও লিংকটা সেভ করে রাখি নাই :(
৯) পুরান ঢাকার ষ্টাইলে তেহারী রান্না। সরিষার তেলে বানানো এই তেহারী দারুণ স্বাদ । এটাও যথারীতি ইউটিউবের ভিডিও দেখেই রান্না করা;
এর জন্য নিম্নের ভিডিও লিংক অনুসরণ করছি;
https://www.youtube.com/watch?v=BJbPY6CijKQ
১০) নিজ হাতে রান্না করা প্রথম চিকেন বিরিয়ানী। এটা কোন একক নয় বিভিন্ন ভিডিও দেখে নিজের সুবিধা মত কম-বেশী উপকরণ দিয়ে তৈরি করছি;
১১) এরপর যা না বললেই না সেটা আগে বলে নেই । আগে মানুষের বিয়েতে বিশেষ করে নিকট আত্নীয় বা পরিচিতজনদের বিয়েতে বর ও কনের বা কারো পক্ষ হতে(ঠিক মনে পড়ে না কার পক্ষ হতে) বাসায় দই মাছ পাঠানো হইত। কিন্তু বাংলাদেশে থাকতে কখনই এই দই মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য হয় নাই। আম্মুরে বললে লাঠি নিয়ে তেড়ে আসত আর মুখে বকাঝকাতো মিস নাই। বলত এত ঝামেলা ভাল লাগে না। আর আমিও জিদ্দি পোলা একবার যে খাওয়া মনে ধরে সেটা না খাওয়া পর্যন্ত শান্তি নাই। তাই এই বৃটেনেই করছি দই মাছ(রুই)। সরিষা তেল ও টক দইয়ের এই রুই মাছ রান্নাটা সেই রকম স্বাদ হইছে
এই দই মাছ রান্নাটাও কয়েকটি ভিডিওর সংমিশ্রণ। তবে এখানে দারুচিনি, এলাচ, তেজপাতা এগুলো দেই নাই। আমার কাছে এগুলো বেশীর ভাগ মুরগী, গরু, খাশীর গোশতের সাথেই ভাল লাগে। এগুলো মাছের সাথে দিলে মাছের স্বাদটা তেমন পাই না। তাই এই সব গরম মশল্লা বাদ দিয়েই দই মাছ রান্না করছি!
নিজ হাতে রান্না করে খাওয়া এখন নেশার মত হয়ে গেছে। নিজ ঘরের রান্নার মত বাইরের আর অন্য খাবার সহজে ভাল লাগে না। বৃটেনে ইংরেজদের দেখি তাদের অনেকেই দুফুরে নিজ বাসার রান্না করা খাবার থেকে বাইরের স্যান্ডউইচ, পাস্তা, ম্যাকডোনাল্ডের বার্গার সহ নানান ফাষ্টফুডই বেশী খায়। আমি যখন নিজের হাতের এই দেশী ও বিদেশী(উপমহাদেশ, চীন, মোঘল-তুর্কী) ষ্টাইলে রান্না করা খাবার আমার কর্মস্থলে খাই তার গন্ধে আমার কলিগরা এর সুঘ্রাণে বলে Very nice and delicious food you cooked! তখন আমিও বলি যে ঘরের খাবার শুধুই সুস্বাদুই নয় বরং স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিজে রান্না করাতে যে বিনোদন আছে সেটা যে রান্না করে না তাকে সহজে বোঝানো যায় না। সেই সাথে আশা করব বাংলাদেশের মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যারা তারা যেন ঘরের ছেলে পুরুষরা যদি মাঝে মাঝে রান্না করে খেতে চায় তো সেই সুযোগ দিয়েন। এই নিয়ে কোন কুসংস্কার ইস্যু আনবেন না। রান্নার যে শিল্প সমূহ সত্যিই অনন্য!
বিষয়: বিবিধ
১৫৮০ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ।
আমিও বছর পাঁচেক চাকরির জন্য অন্য শহরে থাকতে গিয়ে রান্না শিখে নিয়েছি। এবং এখন বউ এর চেয়ে অনেক ভাল রান্না করি।
ধন্যবাদ সবুজ ভাই।
ধন্যবাদ।
ভেজিটেবলস কারীর চেহারাটা দারুণ হয়েছে!
স্যামন ফিস শুধু ফরাই করে পিয়াজ ভাজা দিয়ে খেলে অসাধারণ লাগে।
আপনার রান্নার হাতের দিনকে দিন কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনা করছি!
মন্তব্য করতে লগইন করুন