Objective, Burma! (1945) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রোমাঞ্চকর অভিযান মূলক এবং উপভোগ্য মূভি।

লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ৩০ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:১৪:০৪ রাত





দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন শেষের পর্যায়ে। এতদিন জাপানকে কোনমতে ভারতবর্ষে প্রবেশ এবং দখল করা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হয়েছিল বৃটিশ সামরিক বাহিনী। কিন্তু এশিয়া প্যাসিফিকে মার্কিন বাহিনীর হাতে মার খেয়ে নড়বড়ে হয়ে যায় আগ্রাসী জাপানী বাহিনী। শুরু থেকে চীনের পূর্বাঞ্চলের কিছু অংশ হতে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বার্মা পর্যন্ত দখল করে নেয় জাপানীরা। তাই বৃটিশ ও মার্কিনিদের যৌথ বাহিনী সিদ্ধান্ত নেয় এবার তারা এই অঞ্চলে এবার পাল্টা হামলা শুরু করে স্থল সেনা অভিযান চালিয়ে বার্মা হতে পর্যায়ক্রমে সব জাপানী দখলকৃত দেশ ও অঞ্চল মূক্ত করবে। এই মূভিটির নাম Objective, Burma! ১৯৪৫ সালের তৈরি এই মূভিটিতে দেখানো হয় যে অভিযান চালানোর প্রাথমিক বাধা হল জাপানীদের একটি রাডার ষ্টেশন। এটাই যৌথ বাহিনীর অবজেক্ট। তাই মূভিটির নাম অবজেক্টিভ বার্মা। এই ষ্টেশনের মাধ্যমে জাপানীরা যৌথ বাহিনীর আক্রমণ বিশেষ করে অনেক গুলো পরিবহন বিমান(৫০টির বেশী) গুলিকে সনাক্ত করে তাদের ফাইটার বিমান দিয়ে রুখে দিতে পারবে। অথবা যৌথ বাহিনীর যথেষ্ঠ ক্ষতি করে সাফল্যর পরিমাণ কমে যাবে। তাই এই ঝুকি এড়ানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয় উক্ত জাপানীজ রাডার ষ্টেশনকে ধ্বংস করে দেওয়া। কিন্তু জাপানীদের দখলে থাকা সীমা হতে প্রায় ২৫০ মাইল বার্মার গভীরে রাজকীয় ফাইটার বা মার্কিন বিমান হতে সেই ষ্টেশনটি ধ্বংস করা সম্ভব না। কারণ চতুর জাপানীরা জঙ্গলের মধ্যে এই ষ্টেশনটাকে আড়াল করে রাখছে যদিও যৌথ বাহিনী জানে কোন এলাকায় এর অবস্থান। যৌথ বাহিনীর রিকনাসেন্স বিমান অনেক চেষ্টা করেও এই ষ্টেশনটির সঠিক অবস্থান নির্ণয় করতে ব্যার্থ হইছে। এই কারণেই ঠিক হয় একদল বিশেষ বাহিনী তথা কমান্ডো ফোর্স পাঠিয়ে উক্ত জাপানী রাডার ষ্টেশনকে উড়িয়ে দেওয়া। এই মূভিতে অভিনেতা Errol Flynn যে Capt. Nelson চরিত্রে অভিনয় করেন তাকে অভিযানের অধিনায়ক করে মোট ৩২ জনকে পাঠানো হয়। এই ৩২ জন প্যারাট্রুপার রেজিমেন্টের অংশ। তাদের এই দলে এক জন চীনা ও দুই জন ভারতীয় থাকে গাইড হিসেবে। যাদের বার্মার সংশ্লিষ্ট অঞ্চল সমন্ধে ধারণা আছে। সাথে আছে একজন মিলিটারী প্রেসের একজন সাংবাদিক যে বয়স্ক যদিও তার যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা নাই। তার দায়িত্ব ছিল অভিযানের খুটিনাটি নিয়ে নোট করা। ৩২ জনের এই দলটিকে দুই ভাগে দুটি পরিবহন বিমানে করে প্যারাসুটের মাধ্যমে উক্ত এলাকার কাছাকাছি এলাকায় অবতরণ করানোর সিদ্ধান্ত নেয়। আর অভিযান শেষে বৃটিশ বাহিনীর পরিত্যাক্ত একটি এয়ারফিল্ড যা তখনও বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের যোগ্য এমন একটি জায়গায় আসতে বলা হয়। এইতো শুরু হল বিমানে করে অভিযান!



বিশেষ দলটি কোন বাধা বিপত্তি ছাড়াই সাফল্যের সাথে তাদের নির্ধারিত স্থানে প্যারাসুটের মাধ্যমে বার্মায় অবতরণে সমর্থ্য হয়। শুধু তাই নয় কোন রকম শক্ত বাধা ছাড়াই তারা ঐ জাপানী রাডার ও ষ্টেশনের অবস্থান সনাক্ত করে ঘিরে ফেলে গোটা ছোট্ট ঘাটিকে। তারপর দুইটি মেশিন গান, বন্দুকের গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে ঘায়েল করে ষ্টেশনে থাকা সকল জাপানী সেনাদের। এরপর নেলসনকে তার সহকারী বলে আমরা ভাগ্যবান নিজেদের কোন সদস্যের ক্ষতি ছাড়াই আমরা ষ্টেশনটাকে দখলে নিয়েছি। এরপর ইঞ্জিনিয়ারদের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রাডার সহ গোটা ষ্টেশনের যত স্থাপনা ছিল সব ধ্বংস করে দেয়। এরপর ফেরার পালাতে কোন বড় বাধা ছাড়াই তাদের নির্ধারতি ঐ পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ডে উপস্থিত হয় নেলসনের বাহিনী। অপেক্ষা করতে থাকে দুটি বিমান ল্যান্ড করে তাদের সবাইকে তুলে ভারতে নিয়ে যাবে। বিমান দুটিও নির্ধারিত সময়ে আকাশে উপস্থিত হয় এবং নেলসন তাদের অভিযানের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বিমান দুটিকে কোনদিক হতে অবতরণ করতে হবে সেটাই বলে রেডিওর মাধ্যমে।



বিমান দুটি যখন নামার পথে তখনই দুই ভারতীয় গাইড হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে জানায় যে ২০০ জনের জাপানী সেনারা এই দিকেই আসছে। তখন নেলসন পুনরায় রেডিওতে ম্যাসেজ দেয় বিমান দুটি যেন অবতরণ না করে ফিরে যায় এবং ম্যাপ দেখে কোডে সনাক্ত করা এলাকার কথা বলে দুইদিন পরে সেখানে আসতে বলে। বোঝাই যায় জাপানীদের হামলা করে মৌচাকে ঢিল ছোড়া হইছে। নেলসন বাহিনী ও বিমান পাইলটদের ধারণায় থাকে যে সেখানে অন্যকোন অবতরণযোগ্য রানওয়ে আছে। এরপর নেলসন বাহিনী ঐ এলাকা থেকে সটকে পরে এবং নির্ধারিত জায়গার উদ্দেশ্যে রাওনা দেয়।



এর মধ্যে নেলসেন তার বাহিনীকে দুই ভাগ করে দেয় একভাগের নেতৃত্ব সে আরেক ভাগ সার্জেন্টকে দেয় এবং নির্ধারিত ঐ স্থানে যেন মিলিত হয় সেটাও সিদ্ধান্ত হয়। তাদের হাতে থাকা দুটি মেশিনগান ও দুটি রেডিও একটি করে ভাগ করা হয়। আর ঐ দিকে বিমানের পাইলটরা ভারতের ঘাটিতে গিয়ে জানতে পারে নেলসনদের ফিরার জন্য আর কোন অবতরণযোগ্য রানওয়ে নাই। ছবিতে দেখানো হয় নেলসের উপদল নির্ধারিত স্থানে উপস্থিত হলেও তার সার্জেন্টের উপদলের কোন খবর নাই। আর এর একটু পরেই দুটির বদলে একটি বিমান হাজির হয় যারা রেডিওর মাধ্যমে নেলসনকে জানিয়ে দেয় তাদের বিশেষ বাহিনীকে পায়ে হেটে স্থলপথেই ভারত ফিরতে হবে। তারা শুধু ম্যাপে কোড করা জায়গার কথা উল্লেখ করে একটি স্থান নির্ধারণ করবে যাতে বিমান হতে তাদের খাদ্য, ওষুধ সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ড্রপ করে।



একেতো জঙ্গল, কাদা, জলাশয় ও মশা তার উপর কোন নিরাপদ পানি পানের ব্যাবস্থা নাই। সাফল্যের সাথে টার্গেট ধ্বংস করে সহজে ফিরে যাবে সেটি আর হচ্ছে না। এরপর কি হয় সেটা আপনার দেখেই জানুন Happy



পরিচালক Raoul Walsh এবং Warner Brothers কোম্পানীর তৈরিকৃত এই মূভিটির IMDB রেটিং ৭.৪;

http://www.imdb.com/title/tt0037954/

অষ্ট্রেলিয়ান এরোল ফ্লিন যে একজন চমৎকার অভিনেতা এই মূভিতে সেটা দারুণ ভাবে ফুটে উঠছে।

মূভিটি ডাউনলোডের জন্য টরেন্ট লিংক;

https://isohunt.to/torrent_details/5327249/Objective-Burma-1945-Errol-Flynn

আশা করি মূভিটি অনেকেরই ভাল লাগবে।

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347867
৩১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ১২:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : প্রথম ও দ্বিতিয় বিশ্ব যুদ্ধে ইঙ্গমার্কিন জোট এর বিরত্ব নিয়ে নির্মিত অনেক চলচ্চিত্রই একতরফা। "লেটারস অফ আইওজিমা" একটি ব্যাতিক্রম। বার্মার যুদ্ধে কিন্তু অনেক ভারতিয় উপমহাদেশিয় সৈনিক অংশ নিয়েছিল। কিন্তু কোন ইংরেজি চলচ্চিত্রেই তাদের বিরত্ব কে প্রদর্শন করা হয়নি।
৩১ অক্টোবর ২০১৫ রাত ০১:১৬
288824
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় অংশে রাজনীতি আছে। তবে ঐ সময়ে জাপানীরা ছিল বর্বর! তারা সেই ১৯৩১ সালেই চীনে হামলা চালিয়ে এর পূর্বের অংশ হতে দখল শুরু করে। পাখির মত চীনাদের গুলি করে মারে।

ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File