সহজ সমাধানের পথ রেখে কেন বেহুদা কাহিনী করা?

লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ১৬ জুলাই, ২০১৪, ১০:৪৩:৫৭ রাত

আমেরিকা থেকে ১,১০০ কোটি ডলারের অস্ত্র কিনছে কাতার





কোথাও কোন প্রাকৃতিক র্দূযোগ, যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং কোন দৈব দূর্বিপাকে সাধারণ মানুষ হতে দান ও খয়রাতের আবেদন করা যেতেই পারে। যেমন বর্তমানে গাজার নিরীহ বাসিন্দাদের জন্য। কিন্তু সোমালিয়া ও গাজার অবস্থা এক নয়। সোমালিয়ায় এক সময় গৃহযুদ্ধ থাকলেও এখন অতটা বিপজ্জনক নয়। যদিও আল-শাবাবের কিছু হুমকি থাকলেও পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সে দেশের শাসক ও অন্যান্য প্রভাবশালী দল গুলোর ক্ষমতার লোভ, আধিপত্য, র্দূনীতি ও অনিয়মের জন্য বহু জনগণকে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত সহ নানাবিধ সংকটে জর্জরিত করে রেখেছে। অথচ লোহিত সাগরের পূর্বে এবং আর সাগরের উত্তরের মধ্যপ্রাচ্যের পেট্র ডলারের দেশ গুলোর অবস্থা রমরমা। সৌদি, কুয়েত, কাতার, আমিরাত এখানে বহু ধনী মানুষ ও তাদের সন্তানদের কয়েক মাস যেতে না যেতেই নিত্য নতুন মডেল বা নতুন যেকোন গাড়ী কেনা চাই। এমনি ভাবে সৌদি প্রিন্স তালাল মার্সিডিজ কোম্পানীর বিশেষ ভাবে তৈরি হিরক খচিত গাড়ী কেনে যার মূল্য ৪৮ লক্ষ ডলার। যা বাংলাদেশী মূল্যে প্রায় ৩৭ কোটি টাকা;



আর ঐ দিকে সৌদিদের প্রতিবেশী আরব আমিরাতও কম যায় না। তারা এই বছরের ঘোষণা দিয়েছে যে তাদের শহড়ে রুপকথার আলাদ্দিন শহড় গড়বে;



http://www.emirates247.com/dubai-build-aladdin-city-near-creek-2014-04-10-1.545143

এই আলাদ্দিন শহড় গড়তে ঠিক কত খরচ পড়বে তা সঠিক ভাবে উল্লেখ নাই। নিঃসন্দেহে কয়েক বিলিয়ন ডলারতো হবেই। এই শহড়ে কি কি নির্মাণ হবে তার মোটামুটি একটা তালিকা নিম্নের লিংকে পাওয়া যাবে;

http://whatson.ae/dubai/knowledge/13754/new-buildings-in-dubai-planned-for-the-future-gallery/

এখন সর্বশেষ খবর হল যে কাতার সরকার মার্কিনিদের কাছ থেকে ১১ বিলিয়ন ডলারের প্রতিরক্ষার সামগ্রী কিনছে;

http://bangla.irib.ir/2010-04-21-08-29-09/2010-04-21-08-29-54/item/63907

উপরের তিনটি বিষয়টাতেই বুঝা যায় এই সমস্ত বিষয়াদি স্রেফ ভোগ বিলাসের এবং অর্থের ব্যাপক অপচয়। কাতারের মত যা একেতো ছোট্ট দেশ এবং তার পাশের প্রতিবেশীরা কেউই এটা দখল করতে আসবে না। আমাদের বাংলাদেশের লোকসংখ্যা ১৬ কোটি অথচ প্রতিরক্ষার বাজেট মাত্র ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশী। এই যখন আসল বাস্তবতা যে বেশীর ভাগ মুসলিম ধনী দেশগুলোর শাসকবৃন্দ র্দূনীতি, স্বৈরাচারী মত ভোগ-বিলাস ও আরাম আয়েশে চলে তখনই মাঝে মাঝে দেখা যায় অহেতুক দান খয়রাতের জন্য কান্না। এমনই এক রকম ঘটনায় সৌদির এক আলেমকে সোমালিয়া হতে প্রায় অনাহারে থাকা একজন জিজ্ঞাসা করে যে "আমি সেহেরী ও ইফতারে কিছুই খাই না। আমার রোজা কি কবুল হবে?"। তাতে সেই আলেমের কান্না হয় সেটা মিডিয়া জগত ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সারা ফেলে। অনেকেই বলে মুসলিম দেশ গুলোর বাসিন্দারা দান খয়রাত করে না কেন? অথচ সংশ্লিষ্ট আরব দেশ গুলোর বিষয়ে তারা কিছুই বলে না যারা বিপুল অর্থ পানির মত অপচয় করে। কাতারের এই অস্ত্র কেনাতে প্রায় ৫৪ হাজার মার্কিনির চাকুরী হবে। এই প্রতিরক্ষার চালান সমাপ্ত করে কয়েক বছর লেগে যাবে। এই ৫৪ হাজার মার্কিনিদের বেতন মাসে গড়ে ২ হাজার ডলার অসম্ভব কিছু না। অথচ সৌদি, কাতার ও আমিরাত যদি মাত্র কয়েক বিলিয়ন ডলার সোমালীদের কৃষি, শিল্প কারখানা, যোগাযোগ সহ বেশ কয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করত তাহলে অনাহার ও অর্ধাহারে থাকা মানুষ হয়ত থাকত না। কৃষি, শিল্প কারখানা এবং যোগাযোগ ক্ষেত্র সমূহের চাহিদা কখনই শেষ হয় না। একবার সোমালিয়াতে এই গুলা দাড় করালে সিংহভাগ অভাবগ্রস্থ ও কর্মহীন মানুষের চাকুরী হবে। তারা রাতারাতি স্বচ্ছল না হলেও এত সংকটে থাকবে না। এখন এই সকল আলেমদের বেশীর ভাগই মুসলিম ধনী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিছু বলতে চায় না। অথচ সহজ ও কম সময়ে দরিদ্রক্লিষ্ট সোমালিয়ার র্দূদশা লাঘবে এটাই ভাল পথ। বাংলাদেশ সহ অনেক মুসলিম দেশের অবস্থা অত ভাল না। এখানে অনেক মানুষ দিন আনে দিন খায় এবং ভবিষ্যতও অনেক সংগ্রাম সাধ্য। কাজেই সাধারণ মুসলমানদের বলার আগে ঐ সমস্ত অঢেল অর্থ ও প্রভাবশালী মুসলিম শাসকদের কাছে ধর্ণা দিতে হবে। সোমালিয়াতে এমন আরো অনেক মানুষ আছে যারা খাদ্য সহ নানান কষ্টে দিন যাপন করছে। সৌদির সেই আলেমের কান্নায় অনেক মানুষের মনে সাময়িক আবেগ হলেও এটা সমাধানের রাস্তা না। এতে শুধুই একের পর এক কাহিনী তৈরি হবে তাতে কিন্তু বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্থায়ী উপকার হবে না। সোমালিয়ার প্রতিবেশী ইথিওপিয়ার কথাই ধরা যাক। আজ থেকে ১০-১২ বছর আগেও সেখানে প্রায়ই সমস্যার কথা শোনা যেত। মানুষ খাদ্য ও নানান অসুবিধায় ভূগত। কিন্তু পশ্চিমা সহায়তায় এবং দেশটির আভ্যন্তরীন উদ্যোগে আজকে সেখানে রিলিফের জন্য হাত পাততে তো হয়ই না বরং তাদের অর্থনীতিও শক্তিশালী;

Economic development: The good news from Ethiopia, and what might make it even better

https://www.gov.uk/government/speeches/economic-development-the-good-news-from-ethiopia-and-what-might-make-it-even-better

এমনকি উগান্ডাও আগের মত খাদ্য ও অন্যান্য মানবিক সংকটে নাই;

http://www.worldbank.org/en/country/uganda/publication/uganda-reducing-multiple-vulnerabilities-should-improve-pension-system

বিদ্রুপের বিষয় হলো এই সমস্ত অনেক আলেম সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য কাহিনী করে আর অন্যদিকে পশ্চিমা দেশ গুলো প্রতিবেশী ইথিওপিয়া ও উগান্ডায় সঠিক ও কার্যকরী পথে সহায়তার ফলে আজকে তারা আন্তর্জাতিক ভাবে ভিক্ষা করতে হয় না তারা বরং এখন নিজ পায়ে দাড়িয়ে আরো উন্নতির পথে অগ্রসর হচ্ছে। এখন বেহুদা সোমালিয়ার জন্য না কেঁদে বরং পার্শ্ববর্তী দেশ ইথিওপিয়া ও উগান্ডাকে রোল মডেল করে যদি মধ্যপ্রাচ্যের পেট্রডলারের দেশ গুলো কিছু করে তবেই কাজের কাজ হবে।

বিষয়: আন্তর্জাতিক

১৫৫৮ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

245297
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:১০
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪৪
190572
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
245300
১৬ জুলাই ২০১৪ রাত ১১:৪০
বাজলবী লিখেছেন : ভালো লাগলো।জাযাকাল্লাহ খায়ের।
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪৫
190573
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : জাজাক আল্লাহ খায়ের!
245314
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০১:২৯
সুজা মানুস লিখেছেন : ভাই ভাল তথ্য দিছেন। ধন্যবাদ
আরইবারা আগে ভিক্ষা করতে আসত সারা উপমহাদেশে আর এখন তেল বেচা অর্থ দিয়া যা খুশী তাই করে কিন্তু গরিবদের জন্য কিছু করে না,অতীত ভুলে গেছে
সালারা এখন মাগীবাজ,মদখুর।বাংলাদেশের ধনীরাও কম না ওদের চাইতে।
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ০৩:৪৬
190574
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : ;Winking

ধন্যবাদ ভাই।
245367
১৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৫:৫৫
শেখের পোলা লিখেছেন : মহান আল্লাহ বেহেশ্তের চাইতে দোজখের সংখ্যা বেশী রেখেছেন৷
১৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ০৬:৩৮
190583
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : দোজখের দরজা ৭টা আর বেহেস্তের হল ৮টা। তবে দোজখীদের সংখ্যাই বেশী হবে।

245415
১৭ জুলাই ২০১৪ সকাল ১০:২৪
হতভাগা লিখেছেন : কিয়ামতের ময়দানে তাদের এই অর্থই বিশাল সাপের আকার ধারণ করে তাদেরকে ঘিরে ধরবে ।
১৯ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
191024
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
245564
১৭ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৪৭
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : আমেরিকার বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার ব্যর্থ মিশনে খোদ আমেরিকানরাই এখন বিরক্ত। তাদের অভ্যন্তরীন বেকার সমস্যা, অর্থনৈতিক মন্দা কাটাতে বিভিন্ন দেশে অস্ত্র বিক্রি করা ছাড়া গতি নেই। তাই মুসলিম দেশগুলোতে যুদ্ধ লেগে থাকলে তাদের লাভ। তবে আমাদের বিলাসী মুসলিম শাসকগণ তাদের অর্থ,সম্পদ অস্ত্র কেনা আর বিলাসীতায় ব্যয় না করলে সোমালিয়ার মত অনেক দেশ দারিদ্রতা থেকে চিরতরে মুক্তি পেত।

ভাল লিখেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে
১৯ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৪:৪৯
191025
বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File