বিশ্বকাপ ফুটবলে আমার দল এখন ইংল্যান্ড!
লিখেছেন লিখেছেন বাংলাদেশ_জিন্দাবাদ ১২ জুন, ২০১৪, ০৬:৩৫:৫৮ সকাল
ফুটবল ও আমি যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ! এত দারুণ একটা খেলা ও প্রিয় দল, ক্লাব এবং বেশী পছন্দের খেলোয়াড়দের ম্যাচ সরাসরি যেমন সহজে মিস হয় না আর তেমনি সুযোগ না হলে রেকর্ডকৃতটা দেখে নেই। সেই ১৯৮২ সাল হতে ফিফা বিশ্বকাপ ফুটবল মনে আছে। এরপর ১৯৮৬ সাল হতে এর খুব কম ম্যাচই দেখা মিস হয়। রক্তে ও হৃদয়ের স্পন্দনে ফুটবল পরম ভাবে গেথে আছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বে আসন গড়লেও ক্রিকেট নিয়ে অত ক্রেজ তেমন ছিল না বললেই চলে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ফুটবল অঙ্গনে তেমন ভাল না করতে পারলেও সব সময়ই জাতীয় দলের সর্বাঙ্গীন সাফল্য করতাম। মনে আছে ১৯৮৫, ১৯৮৯, ১৯৯৩, ১৯৯৫ সাফ গেমসে স্বর্ণ জয়ের ব্যার্থতায় হতাশার সাগরে ডুব দেওয়ার অবস্থা হত। মনে হত ফুটবল ছাড়া পৃথিবীর বাকী সব খেলা ধুলা বেকার। তবে এরই মধ্যে ১৯৯৫তে মিয়ানমারে চার জাতি ফুটবলে চ্যাম্পিয়ান এবং পরে ১৯৯৯ সাফে স্বর্ণ জয় অনেকটাই হতাশা কাটিয়ে দেয়। তারপর ২০০৩ সালে সাফ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ান হওয়ার টূর্ণামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিটা ম্যাচ সরাসরি বঙ্গবন্ধু ষ্টেডিয়ামে গিয়ে দেখেছি। এছাড়াও যখনই সুযোগ হয়েছে জাতীয় দলের খেলা ঢাকায় হলে সহজে মিস হয় নাই। সেই অনেকদিন থেকে আশা ছিল যে বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে খেলবে। এটা যে স্বপ্নেও দেখা যে দুস্কর তা জেনে অনেকেই আমার সাথে পরিহাস করত। যদিও তাদের দোষ দিতে পারি না তবুও নিজ দেশের কথাই আলাদা। সম্ভবত ২০০২ বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ প্রথম পর্বে তাজিকস্থানের সাথে পরে। ঐ সময়ে তাজিকস্থান যে দিন বাংলাদেশে এসে খেলতে আসে সেটা ছিল ঈদুল ফিতরের প্রথম দিন। তারপরেও সেই খেলা মিস করি নাই যদিও বাংলাদেশ ০-২ গোলে হেরে যায়।
বাংলাদেশের মানুষের নিজ দেশের পরে বিশ্বকাপ তথা আন্তর্জাতিক ফুটবলের প্রতি যে চিন্তা ভাবনা আমিও তার ব্যাতিক্রম নই। কেউ আর্জেন্টিনা, কেউ ব্রাজিল, কেউ জার্মানি, কেউ ইটালী সহ ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার সমর্থনই সিংহভাগ। ব্যাক্তিগত ভাবে সেই ১৯৮২ সালে যখন প্রথম ফুটবল বিশ্বকাপ নিয়ে জ্ঞান হয় তখন থেকেই ইটালীর নামটা কেন যেন খুব ভাল লেগে যায়। ফাইনালের দিন বলেছিলাম যে আজকে ইটালীই জিতবে হলও তাই। ৩-১ গোলে তারা পশ্চিম জার্মানীকে হারিয়ে দেয়। এরপর ১৯৮৬র বিশ্বকাপ ছিল এখন পর্যন্ত আমার দেখা সবচেয়ে সেরা। কারণ ঐ ম্যারাডোনা। সেই আমার সবচেয়ে প্রিয় ফুটবলার। এরপর থেকেই দুই দেশ ইটালী ও আর্জেন্টিনাই আমার পছন্দের দল। এরা যখন একে অপরের বিরুদ্ধে খেলে তখন কোন একক দলকে সাপোর্ট দিতে পারতাম না। এখনও পারি না। অনেষ্টলি বলতে পারি এই যাবৎ কালের ফুটবলে সবচেয়ে দুঃখজনক পরাজয় যা আজও ভুলতে পারি না সেটা হল ২০০০ সালের ইউরো ফাইনাল যেখানে ইটালী ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ফ্রান্সের কাছে হেরে যায়। এই কষ্টে সেই সময় সারা রাত ঘুম হয় নাই। তবে এর বদলা নেওয়া হয় ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে।
অনেক মানুষের জীবনেই কম-বেশী মোড় ঘুরে। ভাগ্যের অন্বেষণে তথা শিক্ষার জন্য বৃটেনে পাড়ি জমাই ২০০৯ সালে। বৃটেন হলেও মূলত ইংল্যান্ড ভুখন্ডেই এখন আমার বসবাস। আস্তে আস্তে এই দেশে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ হচ্ছে। আশা করি ইনশাল্লাহ আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত ভাবে সেটেল হয়ে যাব। এখানে যখন আসি দিনকে দিন ততই এর সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যাবস্থা সমন্ধে নতুন নতুন রোমাঞ্চকর বিষয়ে সত্যিই মূগ্ধ হতে হয়। বাংলাদেশে থাকতে শুধুই বই, পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও মানুষ মুখে কেবলই শুনতাম এখন বাস্তবিক ভাবে দেখা হচ্ছে। এখানে প্রথমেই বলতে হয় বাড়ী ভাড়া। সেই ২০০৯ সাল হতে কি সরকারী কি বেসরকারী বাড়ীর মাসিক ভাড়া নগণ্য বেড়েছে তাও সামান্য ক্লিনিং ও মেইনটেনেন্স চার্জ। তাই ভাড়া দিতে হলেও এই নিয়ে টেনশন করতে হয়নি যে শীঘ্রই বাড়ী ভাড়া বাড়বে। এই দেশের স্থায়ী বাসিন্দাদেরতো বটেই বিদেশী ষ্টুডেন্ট, ব্যাবসায়ী ও ওয়ার্ক পারমিটওয়ালাদের কখনই এই নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়নি যে বাড়ী ভাড়া বৃদ্ধি হলে কিভাবে বর্তমান আয় দিয়ে সামাল দিব! এই দেশের নাগরিক বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের কখনই রাস্তায় দিন কাটাতে হয় না। কোন না কোন সরকারী বা এনজিও সোস্যাশাল সাপোর্ট সংগঠন এসে অস্থায়ী আশ্রয় দেয় যতদিন না একটা নিয়মিত ভাড়ার বাসায় উঠছে। তারপর গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য খানিকটা বৃদ্ধি পেলেও এই গুলার সরবাহের বিঘ্ন তাদের কল্পনাতেও আসে না। নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি বিশেষ করে খাদ্যপণ্যর মূল্য বিগত পাচ বছরে আমি প্রায় বাড়তেই দেখিনি। এখানে সরাসরি ট্যাপের পানি পান করা যায় সেটার সুবিধা যে ব্যাপক তা বলাই বাহুল্য। খাদ্য দ্রব্যে ভেজাল ও কেমিক্যালতো থাকাতো দূর কোন খাদ্যের কি কি গুণাগুণ মেয়াদ সব স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে। ঘড় ও যাতায়াত ভাড়া বিদেশী বিশেষ করে অনুন্নত দেশ হতে আসা লোকদের জন্য তুলনামূলক বেশী হলেও খাদ্যপণ্যর দাম একেবারেই হাতের নাগালে। আর যাতায়াত ভাড়া কিছুটা বেশী হলেও যানবাহনে উঠলে সময়মত পৌছার ব্যাতিক্রম হয়ই না। আহ ২০০৯ সালে বৃটেন আসার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে কিযে ঢাকার ট্র্যাফিক জামের ধকল পোহাইছি রীতিমত দুঃস্বপ্ন। টেলিফোন, মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাবহার কত মসৃণ সেটা নতুন করে কিছু বলার নাই। ক্যারিয়ার ও কাজ কর্মে সব নিখুত। সাধারণত ওয়ার্ক আওয়ার সকাল ৯টা বাজার ৫ থেকে ১ মিনিট আগে ষ্টাফরা তাদের প্রতিষ্ঠানে আসবে এবং ঠিক বিকাল বেলা ৫টা বেজে ১মিনিট হলেই বেড়িয়ে পড়বে। যদি অতিরিক্ত বা অসম্পূর্ণ কাজ থেকেও যায় তার জন্য প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার অথবা মালিক তার কর্মচারীকে এটা নির্দেশ দিতে পারে না যে "কাজ শেষ করেই যেতে হবে"। শুধু তাই না কাজের সময় যার যতটুকু দায়িত্ব তার অতিরিক্ত কাজ দিয়ে কর্মচারীকে প্রেসার দেওয়া ও হয়রাণি করা যাবে না। যদি এই অজুহাতে অথবা অন্যায্য ভাবে কোন কর্মচারীকে চাকুরী থেকে বহিস্কার করা হয় তাইলে সংশ্লিষ্ট "Employment Tribunal" আদালত মালিকের বিরুদ্ধে শক্ত একশন নিবে। যারা এই দেশের নাগরিক ও লিগ্যাল রেসিডেন্ট তাদের চাকুরী চলে গেলেও পথে বসতে হয় না এবং না খেয়েও থাকতে হয় না। সরকার তখন কাউন্সিল ভূক্ত বাড়ীর জন্য পুরো আর বেসরকারী হলে সিংহভাগ ভাড়া ব্যায় নির্বাহ করে এবং সেই সাথে বেকার ভাতাও দেয়। যদি এরা এই ভাবে সরকারকে নিশ্চিত করে তারা সক্রিয় ভাবে চাকুরী বা কাজ খুজছে কিন্তু পাচ্ছে না তাতে তাদের এই বরাদ্দ প্রাপ্তি চলতেই থাকে। উপরন্ত চিকিৎসাও ফ্রি হয়। এখানে যদিও এমনকি বিদেশীদের জন্যও চিকিৎসককে ও রোগ পরীক্ষার জন্য ফিস দিতে হয় না। বিদেশীদের স্রেফ ওষুধ কিনতে হয় এবং বৃটিশ ও রেসিডেন্টদের জন্য আয় ও সাধ্য অনুযায়ী ওষুধ কেনা লাগে। দরিদ্রদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। একমাত্র লন্ডন ছাড়া অন্যান্য শহড় ও গ্রামে চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে বেশী সময় অপেক্ষা করতে হয় না। অনেক জায়গায় ২-৩ ঘন্টার মধ্যেই জিপি(ডাক্তারখানায়) চিকিৎসকের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এরপর খুব জরুরী ভাবে শরীর খারাপ হলে এম্বুলেন্সও ফ্রি এবং বিনা টোলে 999 যেকোন ফোন থেকে ডায়াল করলেই হয়। এই দেশে সৎ ভাবে চলা কোন ব্যাপারই না। এখনকার সিষ্টেমই আপনাকে সেই সহায়তা দিবে। আর অসৎ পথে গেলে পুরো রাষ্ট্র প্রশাসন আপনার উপর হামলে পড়বে। এই দেশে র্দূনীতি অনেক কম। তাই এই দেশের এত সুযোগ সুবিধা দেখে সত্যিই অভিভূত যা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মানুষের স্বপ্নকেও হার মানায়। যদিও এই দেশে লিগ্যাল হওয়া হতে দূরে আছি তাই এই পর্যন্ত যে ভাবে স্বচ্ছন্দে জীবন-যাপন করছি তাই এখন এটাকে আমার নিজের নতুন দেশ বলেই গণ্য করি। ফিফা বিশ্বকাপে এখন থেকে আমার প্রথম দল হল ইংল্যান্ড। আমি জানি ইংল্যান্ড হট ফেভারিট না যদিও তাদের রুনি, ষ্টারিজ তারকা সহ বেশ কিছু ভাল খেলোয়াড় আছে। তাদের মধ্যে সম্বয় ও টিম ওয়ার্ক খুবই জরুরী। সবচেয়ে বড় যেটা তা হল তারা স্ব স্ব ক্লাব ফুটবলে যে ভাবে নিজেদেরকে উজাড় করে খেলে জাতীয় দলে সেভাবে খেলে না। কারণ ঐ একটাই সেটা হল অর্থ। যদি তারা জাতীয় দলে খেলতে গিয়ে আহত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট ক্লাব তাদেরকে পূর্বের মত বেতন-ভাতা দিবে না। এখানে এটা বড় ফ্যাক্টর। আধুনিক যূগে অল্প কয়েকটি দেশ ছাড়া সবাই নিজেদের গা বাচিয়ে জাতীয় দলে খেলে। যদি ইংলিশ খেলোয়াড়রা এই বৃত্ত থেকে বের হতে পারে এবং এফএ(ইংলিশ ফুটবল এসোশিয়েসন) সেই ভাবে যত্ন নেয় তাহলে ইংল্যান্ডকে হারানো যেকোন দলের জন্যই কঠিন হবে। ইংল্যান্ড হয়তো একবারই সেই ১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপ জিতে কিন্তু তাদের ঘরোয়া লীগ বিশ্বের এক নম্বর লীগ। ঘরোয়া ফুটবলে বিশেষ করে ইউরোপে একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া সব দেশেই দুই কিংবা উর্দ্ধে তিনটা ক্লাবের মধ্যেই শিরোপার লড়াই সীমিত থাকে। সেই ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডেই ৪-৫টি দলকে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েই শিরোপা জিততে হয়। বিশ্বের বড় বড় অনেক দেশ ও ব্যবাসায়ী-ধনকুবদের নজর ও বিনিয়োগ ইংলিশ ফুটবলে। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও আরব ধনকুবদের লক্ষ্য এই ইংলিশ লীগ। বিশ্বের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তকদের থেকে এবার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের আশা একবারে অসম্ভব কিছু নয়। ইংল্যান্ডের প্রতি শুভকামনা রইল! Go England, go ahead!
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১১২১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ন
**************************************************************
০ যদিও খেলাটি দেখা হয় নাই , তবে পরে শুনেছি যে - ম্যাচ শেষ হবার প্রায় ১০-২০ সেকেন্ড আগে ফ্রান্স কর্ণার/ফ্রি-কিক পায় । তখন ইতালী ১-০ গোলে এগিয়ে ।
কিক নেবার সময় প্লেয়াররা যখন পজিশন নিচ্ছিল তখন মালদিনি জিদানকে হাতঘড়ির দিকে ইশারা দিয়ে দেখাচ্ছিল যে - টাইম নাই ।
ভাগ্যের কি পরিহাস ! সেই কি থেকেই গোল করে ফ্রান্স খেলা অতিরিক্ত সময়ে নিয়ে গেল , গোল করেন উইলটর্ড ।অতিরিক্ত সময়ে ত্রেজেগে গোল করে শিরোপা ইতালীর গ্রাস থেকে ছোঁ মেরে নিয়ে নেন ।
২০০৬ সালে ইতালী তার প্রতিশোধ নেয় । জিদানের পেনাল্টিতে ফ্রান্স এগিয়ে গেলেও মাতেরাজ্জি( সম্ভবত) সেটা শোধ করে দেন । ঘটনা বহুল খেলায় মাতেরাজ্জিকে ঢুস মেরে জিদান লাল কার্ড খান । খেলা চলে যায় ট্রাইবেকারে । ইতালী জিতে নয়ে কাপ ।
জানেন তো যে দুই খেলোয়াড়ের শট গোল না হওয়ায় ফ্রান্সকে হারতে হয়েছিল তারা কারা ?
সেই ২০০০ সালে ইউরা ফাইনালে গোল করা উইলটর্ড এবং ত্রেজেগে ।
ব্যাপারটা আমার কাছে খুব বিষ্ময়কর মনে হয় ।
http://en.wikipedia.org/wiki/2006_FIFA_World_Cup
এটা ২০০০ ইউরোর ফলাফল
http://en.wikipedia.org/wiki/UEFA_Euro_2000
মন্তব্য করতে লগইন করুন