এইভাবে কি দেশটা উপজাতি মেধাহীনদের দখলে চলে যাবে ?

লিখেছেন লিখেছেন বাংগালী ২৬ মে, ২০১৪, ০৭:৪১:৩৫ সন্ধ্যা



বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট উপজাতি কোটা সংখ্যার চেয়ে, ভর্তির জন্য ন্যুনতম যোগ্যতাধারী উপজাতি এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা কম!

সারাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, টেক্সটাইল, কৃষি, ভেটেরেনারি, মেডিকেল কলেজ পর্যায়ে প্রতিবছর ৩১,৪০০টি সিট খালি থাকে। অবশ্য প্রতিবছরই বিশ্ববিদ্যালয় বাড়ছে অথবা পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট বাড়ছে। তবু আমি আগের পরিসংখ্যান মোতাবেক প্রতিবছর প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার সিটের কথাই ধরে নিলাম। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫% করে উপজাতি কোটা বিদ্যমান, সেই হিশেবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উপজাতি কোটা মোতাবেক উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত সিটের পরিমান প্রায় ১৫৭০ টি!

এবার আসুন গতবছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে তিন পার্বত্য জেলার উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফলের দিকে তাকাই। গতবছর খাগড়াছড়িতে ১১১৪ জন পাশ করেছে, তার মধ্যে মাত্র ৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে! বান্দরবানে ৬৫১ জন পাশ করেছে, জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ৩০ জন। রাঙ্গামাটিতেও পরিস্থিতি একই বলে আমার ধারনা, কারন সেখানেও একই পরিমান শিক্ষার্থী উর্তীর্ন হয়েছে। সুতরাং গোটা পার্বত্যঞ্চলে থেকে সর্বোচ্চ ৭০-৮০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। ধরে নিলাম, জিপিএ-৪ বা তার উপরে পেয়েছে সর্বোচ্চ ২০০-৩০০ জন। এবং জিপি ৩.৫ বা তার উপরে পেয়েছে আরও ২০০-৩০০ জন, জিপিএ-৩ বা তার উর্ধ্বে পেয়েছে সর্বোচ্চ ৪০০ জন শিক্ষার্থী। অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে আবেদন করার ন্যুনতম যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষার্থী ছিল ১০০০-১১০০ জনের মত! এর মধ্যে বাঙালি হবে অর্ধেক, উপজাতি হতে পারে অর্ধেক। সুতরাং উপজাতিদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ন্যুনতম শিক্ষার্থী আছে সর্বোচ্চ ৬০০-৯০০ জনের মত। একটু বেশিই ধরলাম, কারন তাদের ক্ষেত্রে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করার ন্যুনতম যোগ্যতাও শিথিল করা হয়!

অর্থাৎ ফলাফল কী দাঁড়াল? ১৫৭০ উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত সিটের বিপরীতে সর্বোচ্চ মাত্র ৯০০ জন উপজাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার ন্যুনতম যোগ্যতা অর্জন করেছে। অর্থাৎ এত বেশি সংখ্যক কোটা দিয়ে তাদেরকে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, কোন উপজাতি সবগুলো বিশ্বিবিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলে একটাতে না একটাতে টিকবেই টিকবে! তাদের ইন্টার পাশকৃত ছেলেমেয়েদের চেয়ে তাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও বেশি সিট বরাদ্দ আছে! বিশ্বাস হয়?! যেখানে প্রতিটি সিটের জন্য সারাদেশের প্রায় ৫০ জন ছেলেপেলে যুদ্ধে নামে, সেখানে তাদের জন্য সিট আরও বেশি খালি রয়ে যায়! এদিকে পার্বত্যঞ্চলের বাঙালি ছেলেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায়ই যেতে পারে না। এত বৈষম্য নিয়ে আর কত? মানুষ পায় না, আর তাদের রয়ে যায়!

পুনশ্চ: প্রতিবছর পার্বত্যঞ্চলের মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার পরীক্ষার্থী উপজাতি। এবং এদের মধ্যে ১২০০ জনই উন্নয়ন বোর্ডের বিশেষ বৃত্তি (থাকা, খাওয়া, পড়াশোনার খরচ) ভোগ করে পরীক্ষা দিয়েছে এবছর! তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ থেকেও বৃত্তি পাচ্ছে অন্যরা! সরকারের নুন খেয়ে, সরকারের পরে, সরকারের কোটায় বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পর প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাতিত যেকোন সরকারি চাকুরীতে (প্রথম শ্রেণী থেকে চতুর্থ শ্রেণী) ৫% কোটা এবং ন্যুনতম শিক্ষাগত ও শারিরীক যোগ্যতার ক্ষেত্রে শিথিলতা তারা ভোগ করে। প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও ন্যুনতম যোগ্যতার ক্ষেত্রে শিথিলতা ভোগ করে। অর্থাৎ প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে যে পরিমান উপজাতি শিক্ষার্থী গ্র্যাজুয়েট হয়, তার চেয়েও বেশি পরিমান সরকারী প্রথম (বিসিএস) ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকুরীতে তাদের জন্য কোটা বিদ্যমান। সরকারের এত পৃষ্ঠপোষকতার পরও তারা নিজেদের 'বৈষম্যের' শিকার বলে অপপ্রচার চালায়। এরপরও স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাদের বক্তব্য, ঘৃণা ও কর্মকান্ড দেখার পর, এদেরকে 'নিমকহারাম' বললে কি আমাকে অভদ্র বলা হবে?

বিষয়: বিবিধ

১২৮৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

226616
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:০১
সন্ধাতারা লিখেছেন : সহমত.. অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
226619
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:০৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠিকে কিছুটা সুবিধা দিতেই হয়। না হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে এর প্রভাব পরে। তবে বাংলাদেশের মত ঢালাও কোটা ব্যবস্থা বাতিল করা অতি জরুরি।
226632
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:১০
ভিশু লিখেছেন : চমৎকার বিশ্লেষণটি যথেষ্ট চিন্তার ও গুরুত্ব দাবী করে!
226648
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:২৪
হতভাগা লিখেছেন : এসব কোটা ফোটা একেবারে বাদ দিয়ে দিতে হবে । সব কিছুর ক্ষেত্রে মেধা ও দক্ষতাকে প্রাধান্য দিতে হবে ।

পরে যখন কাজের দক্ষতা দেখানোর পরীক্ষা আসবে তখন কোটাধারীদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না । মেধাবীদের পেছনে ফেলে এদেরকে চান্স পাওয়ালেও কাজের বেলায় তখন মেধাবীদের জন্য হাহাকার করতে হবে ।
226661
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:৪০
পুস্পিতা লিখেছেন : পুরো দেশই তো আসলে এখন মেধাহীনদের দখলে। যেভাবে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র উত্তর সহ বেডরুমে সরকার পৌঁছিয়ে দিচ্ছে তাতে জ্ঞানঅর্জন করে পরীক্ষা দিতে আর হবে না। জাতিকে মেধাহীন করার সব ব্যবস্থা বর্তমান সরকার করে ফেলেছে। তাই তো কয়েকবছর আগে সরকার ঘোষণা দিয়েছিল মেডিকেল সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হবে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের উপর ভিত্তি করে। (যদিও বিভিন্ন প্রতিবাদে তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি) অর্থাৎ ঘরে পৌঁছিয়ে দেয়া প্রশ্নপত্র যারা পেয়েছে তারাই ভর্তি হয়ে যাবে সরাসরি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে! মেধা ও জ্ঞান অর্জনের আর কোন প্রয়োজন নেই!
226682
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৯:৩১
সিকদারর লিখেছেন : মেধাহীনদের কারনেই আজ দেশের এই অবস্থা ।
226742
২৬ মে ২০১৪ রাত ১১:২০
দৃষ্টিহীনের অন্তর্দৃষ্টি লিখেছেন : সব দেশেই পিছিয়ে পড়া জনগোস্টির জন্য এরকম সুবিধা থাকে। আর বাংগালি, পাহাড়ি উপজাতি বলে কিছু নেই, সবাই বাংলাদেশি।
226958
২৭ মে ২০১৪ দুপুর ০২:১৯
ইয়াফি লিখেছেন : কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে কোন উপজাতি ছাত্র-ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে দেখা যায়না। তারা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকুরী পছন্দ করেন না?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File