একটি নক্ষত্র নীরবে চলে গেলেন । পেলেন না কোন সম্মান ।

লিখেছেন লিখেছেন বাংগালী ২৬ মে, ২০১৪, ১২:৪৫:৫৪ দুপুর



এই মানুষটাকে আপনি চেনেন কি? ইনি গত শুক্রবারে মারা গিয়েছেন। কোনো পত্রিকায় পড়েছেন কি?

সম্ভবত না। এনার নাম ড: এ, কে, এম লুতফর রহমান তালুকদার।

আপনার এবং আপনার ভাইবোনের বয়স যদি ৩০ এর নীচে হয়ে থাকে এবং যদি এই লেখাটি আপনি পড়তে পারেন অর্থাৎ আপনি যদি জীবিত হয়ে থাকেন তাহলে এই মানুষটির খুব সামান্য হলেও একটা অবদান থাকতে পারে।

ইনি বাংলাদেশের যুগান্তকারী "আপনার শিশুকে টিকা দিন" প্রকল্পটি শুরু করেছিলেন।

বাংলাদেশকে পৃথিবীর বিস্ময় ধরা হয় দুএকটা কারণে - তার একটি হোলো ইমুনাইজেশানের অবিশ্বাস্য সাফল্য। হ্যা, এই সাফল্য কোনো একজন ব্যক্তি কিংবা একটি সরকার কিংবা প্রতিষ্ঠানের কারণে হয় নি সত্য। কিন্তু এই মানুষটা সবার আগে বুঝেছিলেন এবং অন্যদের বুঝিয়েছিলেন যে অশিক্ষিত গরীব লোকটাকে যদি এই কথাটা বোঝানো না যায় যে তোমার ৫টা সন্তানের দরকার নেই কারণ ২-৩টা কোনো সংক্রামক রোগে মারা যাবে না - তাহলে সে পরিবার পরিকল্পনা করবে না। তিনি সরকারী কর্মচারী হয়েও উদ্যোগ নিয়েছিলেন - যে উদ্যোগ বাংলাদেশে কেউ নিতে চায় না।

অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ফেনার দু বছর আগে ৯৩ বছর বয়সে মারা গিয়েছিলেন। তিনি পৃথিবীব্যাপী স্মল পক্স ইরাডিকেশান প্রকল্পের প্রধান ছিলেন। তার মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক প্রকাশ করা হয়। তার গবেষণার বিশ্ববিদ্যালয় ANU তে একটা হল আছে তার নামে, ফেনার স্কুল অফ এনভারনমেন্ট এন্ড সোসাইটি তার নামে এবং ক্যানবেরার একটা সাবার্বের নামও তার নামে করা হবে (ক্যানবেরার সাবার্বগুলো প্রায়ই অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীদের নামে বানানো হয়)।

আমি বলছি না যে পুরো পৃথিবী থেকে স্মল পক্সের বিদায় (যার গবেষণায়ও ফেনারের ব্যাপক অবদান ছিলো) আর বাংলাদেশের "আপনার শিশুকে টিকা দিন" একই পর্যায়ের সাফল্য কিন্তু ড: তালুকদারের অবদান বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কিংবদন্তীর মতো।

যে কবির বই সারা জীবনে ৫০ হাজার কপি বিক্রি হয় না এবং টেক্সটের বাইরে যার একটি কবিতাও হয়তো দশজন মানুষ মনে করতে পারে না সেই কবির মৃত্যুতে আমাদের পত্রিকা, নেতা নেত্রীরা শোকাতুর হয়ে পড়েন অথচ যে মানুষটার উদ্যোগের কারণে কম না হলেও কোটি মানুষ সামান্য সংক্রামক রোগে পৃথিবী থেকে বিদায় নেই নি তাকে কেউ চেনেই না এই দেশে।

আমরা এমন এক অদ্ভূত জাতিতে পরিণত হয়েছি যে আমরা মহানায়কদের সম্মান তো দূরের কথা, শনাক্তই করতে পারি না আর। সেই অনুযোগ আর না করি। থাক - রাষ্ট্রীয় সম্মানের আর কোনো দরকার নেই। ড: তালুকদার একজন হিরো। একজন রিয়াল হিরো সম্মানের আশায় কাজ করেন না, এই নিভৃতচারী মানুষটিও কোনো স্বীকৃতির আশায় এই মহান কাজটি শুরু করেন নি, করেছিলেন এই দেশটাকে ভালোবেসে। আসুন তার ভালোবাসা আর উদ্যোগটাকে একবার স্মরণ করি।

এই মানুষটি ব্যক্তিজীবনে খুব ধার্মিক ছিলেন। কেন জানি মনে হয় তিনি যদি আপনার সাথে কথা বলতেন বিদায় বেলায় একবার অবশ্যই বলতেন যে আমার জন্য দোয়া করেন। তার এই ইচ্ছাটাকে শেষবারের মতো একবার স্মরণ করি আসুন। তার জন্য শেষবারের মতো একবার হাত উঠাই - প্রার্থনারত মানুষকেই মনে হয় - সবচেয়ে সুন্দর দেখায়।

( কপি পেস্ট )

বিষয়: বিবিধ

১৮৫৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

226379
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৩৬
226405
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৫৩
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : আল্লাহ তারে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নিক।
226425
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০৩:২৯
আল্লাহর সন্তুষ্টি লিখেছেন : আল্লাহ তারে জান্নাতবাসী হিসেবে কবুল করে নিক।
226460
২৬ মে ২০১৪ বিকাল ০৪:৫২
শফিউর রহমান লিখেছেন : "এই মানুষটি ব্যক্তিজীবনে খুব ধার্মিক ছিলেন।"
এই কারণে জাতি তাকে স্মরণ করে নি। যদি অধার্মিক হতো তবে দেখতেন ঢোল-তবলার কত আওয়াজ।
226614
২৬ মে ২০১৪ রাত ০৮:০০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File