ইতিহাস বিকৃতি কে করে ?

লিখেছেন লিখেছেন বাংগালী ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:১২:০৬ রাত

১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান থেকে মুক্তি পাওয়ার লন্ডন যান তখন প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে আমি তার সাথে দেখা করেছিলাম। ভারতের হাইকমিশনার আপা ভাই পন্থ লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দর থেকে তাকে ক্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসেন এবং তার পরপরই আমি সেখানে গিয়ে পৌঁছি।

‘মি. পন্থ তাকে ‘ইয়োর এক্সিলেন্সি’ বলে সম্বোধন করায় মুজিব হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। আমি যখন তাকে বুঝিয়ে বলি যে " বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হয়েছে " তখন তিনি বিস্মিত হলেন, বলতে গেলে একটা ধাক্কা খেলেন। আপাতদৃষ্টিতে তিনি লন্ডনে এসেছিলেন এ ধারণা পেয়ে যে তিনি যে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের জন্য আন্দোলন করছিলেন পূর্ব পাকিস্তানকে সে স্বায়ত্তশাসন দেয়া হয়েছে। সে দিন প্রথমে আমি এবং পরে অন্যেরা তাকে মুক্তিযুদ্ধের আনুপূর্বিক বিবরণ দিয়েছিলাম। আমি তাকে বুঝিয়ে বলি যে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের কোনো সঠিক সংখ্যা পাওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে আমরা অনুমান করেছি যে সর্বাধিক তিন লাখ লোক মারা গেছে এ যুদ্ধে।

“শেখ মুজিব যখন পরে ডেভিড ফ্রস্টকে বলেন যে ‘আমার তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) মানুষকে পাকিস্তানিরা হত্যা করেছে’, তখন আমি বিস্মিত এবং আতঙ্কিত হয়েছিলাম। তিনি কি ভুল করে লাখকে ইংরেজিতে মিলিয়ন বলেছিলেন, অথবা তার তখনকার কান্ত মনের অবস্থা সে জন্য দায়ী ছিল আমি জানি না, তবে অনেক বাংলাদেশী এখনো মনে করেন যে তিন মিলিয়ন সংখ্যাটা অবাস্তব এবং অবিশ্বাস্য।”

লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকায় আমার একখানি চিঠি প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের ২৩ মে। তার দুই দিন আগে একই পত্রিকায় প্রকাশিত খ্যাতিমান কলামিস্ট (আগে সংবাদদাতা ছিলেন) ইয়ান জ্যাকের একটি কলাম প্রসঙ্গে সে চিঠি আমি লিখেছিলাম। ইয়ান জ্যাকও তার কলামটি লিখেছিলেন নেতাজী সুভাষ বোসের বড় ভাই শরৎ বোসের নাতনী শর্মিলা বসুর ডেড রেকনিং নামক বই নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে। এ বই ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধের স্মৃতি হিসেবে বর্ণিত হলেও শর্মিলা এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন না। তিনি বিভিন্ন লোকের স্মৃতিমন্থন করে বইখানি লিখেছেন।

শর্মিলা বসু সে যুদ্ধের অনেক পরে পাকিস্তানেও গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি জনৈক জেনারেলের অতিথি ছিলেন। উক্ত জেনারেলের স্ত্রী ছিলেন শর্মিলার বন্ধু। শর্মিলা বলেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের যে সংখ্যা দাবি করা হয় সেটা খুবই অতিরঞ্জিত। ইয়ান জ্যাক তার কলামে শর্মিলাকে সমর্থন করেছেন। সংবাদদাতা হিসেবে একাত্তরে তিনি বাংলাদেশে গিয়েছিলেন। নিজের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন যে সে সময় বাঙালিরাও বহু অবাঙালি, বিশেষ করে বিহারিকে হত্যা করেছিল। ইয়ান জ্যাক ও শর্মিলা বসু উভয়েরই মতে মুক্তিযুদ্ধে এক লাখেরও কম মানুষ মারা গিয়েছিল। গার্ডিয়ান পত্রিকায় আমি এ প্রসঙ্গেই লিখেছিলাম।

‘ইয়ান জ্যাক (২১ মে) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কের অবতারণা করেছেন।

কত লোক শহীদ হয়েছে আপনার কিম্বা পাশের গ্রামে?

আমার ধারণা ও অনুমানের কিছু বাস্তব ভিত্তিও ছিল। বাংলাদেশে গ্রামের সংখ্যা ৮৬ হাজার। ৩০ লাখ লোক মুক্তিযুদ্ধে মারা গেলে গড়পড়তা হিসেবে প্রতি গ্রামে ৩৫ জন মারা গেছে বলে ধরে নিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধে আমারও কিছু আত্মীয় এবং অনেক বন্ধু শহীদ হয়েছেন। কিন্তু এমন কোনো গ্রামের কথা শুনিনি যে গ্রামে ৩৫ জন কিংবা তারও বেশি লোক মারা গেছেন। তা ছাড়া সাংবাদিক হিসেবে কতগুলো যুদ্ধের বিবরণ আমার জানা আছে। সেসব যুদ্ধের দৈর্ঘ্য ও তীব্রতা এবং নিহতদের সংখ্যার সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিন মিলিয়ন নিহত হওয়ার হিসাব মেলে না। সর্বশেষ একটা দৃষ্টান্ত দিলেই যথেষ্ট হবে আশা করি। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে তিন বছর আগে। এ যুদ্ধের তীব্রতা আধুনিক কালের যেকোনো যুদ্ধের চেয়ে কম নয়। এমনকি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেয়েও নয় এবং এ যুদ্ধে হতাহতদের নির্ভরযোগ্য হিসাব পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সিরিয়ার এই যুদ্ধে মৃতদের সর্বশেষ প্রাপ্তসংখ্যা এক লাখ ৬০ হাজার। আমার বক্তব্য এই যে, আওয়ামী লীগ নেতারা এবং আওয়ামী লীগ সুবিধামতো এবং মনগড়া ইতিহাস তৈরি করেন। শেখ হাসিনা এ যাবৎ দুইবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বর্তমানে অত্যন্ত বিতর্কিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর পদে রয়েছেন। তিন মিলিয়ন সংখ্যাটার ওপর তাদের দৃঢ়বিশ্বাস থেকে থাকলে তাদের উচিত ছিল বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে জরিপ চালিয়ে নিহতদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণের চেষ্টা করা।

গার্ডিয়ান পত্রিকায় আমার চিঠি প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের তখনকার এবং তার পূর্ববর্তী প্রেস মিনিস্টার আমার বিরুদ্ধে হিংস্র আক্রমণ চালান। কার নির্দেশে তারা অনির্ভরযোগ্য এবং দুর্বল যুক্তিভিত্তিক বক্তব্যগুলো লিখেছিলেন বুঝতে আমার অসুবিধা হয়নি। প্রথমে তখনকার প্রেস মিনিস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকায় চিঠি লিখে দাবি করেন যে ভারতের হাইকমিশনার আপা ভাই পন্থ নয়, তৎকালীন (বেসরকারি) বাংলাদেশ হাইকমিশনের রেজাউল করিমই হিথরো বিমানবন্দর থেকে শেখ মুজিবকে ক্যারিজেস হোটেলে আনেন। তিনি এবং ঢাকার ডেইলি স্টার পত্রিকায় তার পূর্ববর্তী প্রেস মিনিস্টার আরো দাবি করেন যে আপা ভাই পন্থ বিমানবন্দরে যাননি। তাদের একজন তো এমন দাবি করেছিলেন যে আমিও আদৌ ক্যারিজেস হোটেলে যাইনি এবং সেখানে মুজিবের সাথে আমার দেখাই হয়নি। পূর্ববর্তী প্রেস কাউন্সিলর তো লিখেছিলেন যে মুজিব ‘লাফ দিয়ে রেজাউল করিমের গাড়িতে উঠে পড়েন’ (হপ্্ড অন টু) এবং সে গাড়িতেই হোটেলে আসেন- অনেকটা যেমন আমরা কৈশোরে লাফ দিয়ে বাসে চড়তাম।

নয়া দিগন্ত পত্রিকায় আমার কলামে দুই মিনিস্টারের বক্তব্য নিয়েই আলোচনা করেছিলাম। তাদের দু’জনেরই বক্তব্যে অনেক তথ্যগত ভুল ছিল। প্রথমত, ক্যারিজেসে মুজিবের সংবাদ সম্মেলনের ফিল্মে (যার উল্লেখ তারা করেছেন) পরিষ্কার দেখা যাবে যে তার বাঁ পাশ ঘেঁষে হাঁটু গেড়ে আমি মাইক্রোফোন হাতে বসেছিলাম। দ্বিতীয়ত, তারিখটা ছিল ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি শনিবার। সে বছরের ৪ ফেব্রুয়ারির আগে ব্রিটেন বাংলাদেশকে কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয়নি। তখন পর্যন্ত নতুন স্বাধীন বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল লন্ডনে ভারতীয় হাইকমিশনের ওপর। সুতরাং মুজিবের লন্ডন উপস্থিতির খবর ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতর কূটনৈতিক রীতি অনুযায়ী ভারতের হাইকমিশনারকেই জানিয়েছিল। তৃতীয়ত, বিমানবন্দরের কূটনৈতিক সিকিউরিটি পাস বাংলাদেশের অস্থায়ী মিশনে তখন কারো ছিল না।

দল এবং সরকার হিসেবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস বিকৃতির দৃষ্টান্ত অজস্র। আর একটির উল্লেখ করছি এখানে। নয়া দিগন্ত পত্রিকাতেই প্রকাশিত কলামে আমি লিখেছিলাম যে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের মে মাসে আওয়ামী লীগের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. কামাল হোসেন ও মহাসচিব আব্দুর রাজ্জাককে দিল্লিতে পাঠিয়ে শেখ হাসিনা ও তার সহোদরা শেখ রেহানাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনেন। কলামটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে ক্রুদ্ধ প্রতিবাদ জানিয়ে প্রেসনোট জারি করা হয়। তাতে এই বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাক উদ্ধৃত করা হয় যে ড. কামাল হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাক মোটেই দিল্লিতে যাননি এবং তার সাথে সাক্ষাৎও করেননি। প্রত্যুত্তরে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার প্রকাশিত ডায়েরি থেকে কয়েকটা উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম আমি। তাতে দিল্লিতে ড. কামাল হোসেন ও আব্দুর রাজ্জাকের শেখ হাসিনার সাথে দেখা করার কথা পরিষ্কার লেখা ছিল। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে তারপর এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করা হয়নি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে সত্যকে অস্বীকার করতে গিয়ে নানা কল্পকাহিনীর আশ্রয় নেয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালে লন্ডনের কমনওয়েলথ ইনস্টিটিউটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ মুজিবুর রহমানের রঙিন ফটোযুক্ত বিরাট পোস্টার দেখে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম। ছবিতে সরাসরি এই বলে তার নামে উক্তি ছাপা হয়েছিল যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি (শেখ মুজিব) বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। পোস্টারের নিচে মুজিবের স্বাক্ষরের ফ্যাক্সিমিলিও যোগ করে দেয়া হয়েছিল। তারপর এর-ওর কণ্ঠে চট্টগ্রাম কিংবা কালুরঘাট থেকে শেখ মুজিবের (এর-ওর মারফত পাঠানো) লিখিত স্বাধীনতা ঘোষণার বহু পরস্পরবিরোধী কাহিনী প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু এটা প্রামাণ্য সত্য যে ২৫ মার্চ রাত ১২টার আগেই পাকিস্তানিরা তাকে তার ধানমন্ডির বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। তাহলে কি বিশ্বাস করতে হবে যে পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী অবস্থাতেই তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন?

মুজিবের একান্ত সচিব জমিরুদ্দিন

জমিরুদ্দিন আহমেদ শেখ মুজিবের একান্ত সচিব ছিলেন। তিনি বলতেন তল্পিবাহক। স্বাধীনতার পর একাধিক দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হন। বিবিসি থেকে জমিরুদ্দিন আহমেদের একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার প্রচার হয় ১৯৮৬ সালে। তার অনুলিপি ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতার ১৫ বছর’ শীর্ষে সে বছরেই পুস্তকাকারে প্রকাশ করে ঢাকার ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড। পঁচিশে মার্চ রাতের ঘটনাবলি সম্বন্ধে জমিরুদ্দিন আহমেদের বক্তব্য হুবহু নিম্নরূপ :

‘এটা ২৫ মার্চের কথা। তখন তো ইয়াহিয়া খান ও তার সরকারি প্রতিনিধিদলের সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের কথাবার্তা চলছিল। আর আমাকে শেখ মুজিব বিশেষ করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যস্ত রেখেছিলেন এবং আমাদের একজন লিয়াজোঁ ছিলেন ভুট্টোর সাথে কথা বলার জন্য। তিনি গোলাম মোস্তাফা খার। আমি (সে দিন) যতবার গিয়েছি মোস্তাফা খার দৌড়ে এসে আমাকে অন্য দিকে সরিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি ঠিক ৪টার সময় গেলাম। তখনো আমরা জানি না যে আলোচনা ভেঙে গেছে। তখন আমাকে মোস্তাফা খার বললেন যে ‘ভুট্টো সাহেব এখন ঘুমুচ্ছেন, তুমি সন্ধ্যা ৮টায় আসো’। আমি যখন ৮টার সময় গেলাম তো উনি আমাকে সুইমিংপুলের দিকে নিয়ে যান। নিয়ে যেতে যেতে বলেন যে ‘চিড়িয়া তো ভেগে গিয়েছে’।

‘চিড়িয়া বলতে তিনি ইয়াহিয়া খানকে বুঝিয়েছেন। আমি তাড়াতাড়ি ফিরে আসলাম। এসে মুজিব ভাইকে বললাম, ‘মুজিব ভাই, প্রেসিডেন্ট তো চলে গেছেন।’ উনি এই কথাটা শুধু হাঁ করে শুনলেন এবং আর কিছু বললেন না আমাকে। আমাকে আবার বললেন, ‘তুমি আবার যাও, ভুট্টো কী বলে শুনে আসো।’ আমি আবার গেলাম। তখন রাত ১০টা বাজে। মোস্তাফা খার বললেন, ‘তোমার সাথে দেখা করতে চান না, ভুট্টো সাহেব দেখা করতে চান না।’ আবার আসলাম। খুব ভারাক্রান্ত মনে শেখ মুজিবের বাড়িতে আমি ঢুকলাম। তখন প্রায় ১০টা-সাড়ে ১০টা বাজে। আমি দেখলাম যে আমীর-উল ইসলাম সাহেব বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর ছিলেন আমাদের পুলিশের আইজি মহিউদ্দিন সাহেব। তিনি আমাকে দেখে বেরিয়ে গেলেন।

‘আমি দেখলাম যে মুজিব ভাই একটা সোফার ওপর শুয়ে আছেন। আমার মনে হলো তার প্রায় পাঁচ পাউন্ড ওজন কমে গেছে। সকালে আমি যখন দেখি তখন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে। পাইপটা হাতে ছিল তার। আমি বললাম, ভুট্টো সাহেব তো দেখা করল না। উনি বললেন, ‘জানিরে, এরা আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করল।’ এরপর আমি খুব কাছে গিয়ে তার সোফার কাছে বসলাম, কারপেটের ওপর। আমি তার গায়ে হাত দিলাম। তিনি আমাকে বললেন, ‘আমি তাজউদ্দীনদেরকে বলেছি আন্ডারগ্রাউন্ডে যাওয়ার জন্য, কিন্তু আমি কী করি বল্্, আমি কী করি বল। আমি যদি ধরা না দিই ওরা তো পাগলা কুত্তার মতন আমার ওয়ার্কারদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে।’

আমি বাড়িতে এসে কেবল এদিক-ওদিক বন্দুকের গুলি শুনতেছি- আমি ভাবীকে টেলিফোন করলাম। আমি মুজিব ভাইকেই টেলিফোন করলাম, কিন্তু ভাবী ধরলেন। ভাবীকে বললাম যে কী ভাবী, মুজিব ভাইকে কি নিয়ে গেছে নাকি? তিনি বললেন, না এখনো নেয়নি, তবে গুলি করছে আমাদের বাড়িতে। এই কথা বলার পরই তো টেলিফোন স্ন্যাপড হয়ে গেল, আর আমি কিছু শুনতে পারলাম না।’

পাকিস্তানি আশ্রয়, মাসোহারা ও হারুনদের টাকা

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ও জুলফিকার আলী ভুট্টোকে আওয়ামী লীগ নেতারা সর্বশেষ প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে পাকিস্তানকে একটা ফেডারেল রাষ্ট্রে পরিণত করা হোক। সে প্রস্তাব সম্বন্ধে জবাবের আশাতেই মুজিব তার একান্ত সচিবকে ২৫ মার্চ বিকেলে এবং রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে পাঠিয়েছিলেন। তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় যে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি এবং দেয়ার ইচ্ছাও তার ছিল না। জমিরুদ্দিন ঢাকার ইনসাফ ও মিল্লাত পত্রিকায় আমার সহকর্মী ছিলেন এবং আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক গভীর ছিল। ‘অফ দ্য রেকর্ড’ তিনি আমাকে আরো বলেছিলেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ কর্মীদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের উল্লেখ করলে মুজিব বলেন যে তার সমর্থকদের ‘হটহেডরা’ মাঝে মধ্যে সামালের বাইরে চলে যায়। ইয়াহিয়া তখন মুজিবকে বলেছিলেন, আপনি কয়েক দিন একটু সরে দাঁড়ান, আমরা হটহেডদের একটু পিটিয়ে দিই। কিন্তু পিটিয়ে দেয়া যে ২৫ মার্চ রাতের ভয়াবহ সামরিক অভিযানে রূপ নেবে মুজিব ভাবতে পারেননি।

শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রয়াত স্বামী) ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের এক সন্ধ্যায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়িতে বেগম মুজিবের সাথে দেখা করতে যাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে তার অভিজ্ঞতার কথা বিস্তারিত বলেছিলেন আমাকে। তার সাথে আমার আলাপচারিতা প্রতিবেদনের আকারে বিবিসি থেকে প্রচারিত হয়েছিল এবং তার বিবরণ ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই সম্প্রচার করেছিল। ভাবী বলছিলেন, মুজিব সিন্ধি ব্যবসায়ী হারুনদের আলফা বীমা কম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে মাসে ১০ হাজার টাকা পেতেন, সে টাকা তারা বন্ধ করেনি। নইলে তিনি ছেলেপুলে নিয়ে সমস্যায় পড়তেন। তা ছাড়া পাকিস্তান সরকারও তাকে একটা মাসোহারা দিয়েছিল তখন। সঠিক মনে নেই, সম্ভবত মাসে ১৬৫০ টাকা করে।

স্বাধিনতার ঘোষনা ।

মেজর জিয়াউর রহমানের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রথমে প্রচার করেছিল ফরাসি রাষ্ট্রীয় রেডিও। সে ভাষণে তিনি স্বয়ং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথা বলেননি। কিন্তু পরে ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংলাদেশী অফিসারদের তিনি বলেছিলেন, ‘উই রিভোল্ট’ (আমরা বিদ্রোহ করলাম)। তিনি নাকি সহ-অফিসারদের আরো বলেছিলেন যে তিনি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন। কিন্তু তার দায়িত্ব নেয়ার কথা সামরিক অভ্যুত্থানের মতো শোনাতে পারে বলে ২৬ তারিখের বেতার ঘোষণায় স্বয়ং রাষ্ট্রপতি হওয়ার কথাটা তিনি বাদ দিয়েছিলেন।

ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণের একাংশে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব নিজে, যতটা আমি জানি, এখনো স্বাধীনতা চাননি। কিন্তু তার গ্রেফতারের পরে, তারপরে যেখানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড হয়েছে, এটা বোধগম্য যে তার অবশিষ্ট লোকেরা বলবে, আমরা এই লোকদের সাথে কিভাবে এক সাথে থাকতে পারি? আমাদের বিচ্ছিন্ন হতেই হবে।’

শেখ মুজিবুর রহমানর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তহীনতা লক্ষ্য করা যায়। তিনি শেষ সময় পর্যন্ত চেষ্টায় ছিলেন একটি সমাযোতায় পৌঁছানোর। যে কারনে আমরা তাঁকে দেখি মার্চের ৩য় সপ্তাহে ঢাকাতে পাকিস্তানীদের সাথে সিরিজ অব মিটিং করতে। কিন্ত যদি তিনি স্বাধীনতার ব্যাপারে নুন্যতম সচেতন হতেন তাহলে মিটিংয়ের পাশাপাশি স্বাধিনতা যুদ্ধের রোডম্যাপ তখনই তৈরি হওয়ার কথা। যে কাজটি শেখ মুজিবুর রহমানর অনুপস্হিতিতে হয়েছিল এপ্রিলের ২য় সপ্তাহে, সেটি যদি শেখ মুজিবুর রহমানর উপস্হিতিতে মার্চের ৩য় সপ্তাহে শুরু হত তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার একক রুপকার হিসাবে উপস্হাপন প্রশ্নাতীত থাকত।

মেজর জিয়ার উত্থান যে ২টি সময়ে - সে ২টি সময়েই তিনি সুযোগের পূর্নাংগ সৎ ব্যবহার করেছিলেন। জিয়া স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বা আওয়ামীলীগ নেতাদের যে অযোগ্যতা ছিল তা পূরন করেছিলেন। জিয়া যা করেছিলেন তা তার করার কথা ছিলনা। তিনি তার গন্ডির বাহিরে গিয়ে সাহস দেখিয়েছিলেন। এ সাহসই তাকে পরবর্তীতে ১৯৭৫ পরবর্তী রাজনৈতিক শুন্যতায় রাজনীতির মাঠে আসতে সাহস যুগিয়ে ছিল। সে ২য় বারের মত সুযোগের সৎ ব্যবহার করল। ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে এখনকার জাদরেল আওয়ামীলীগ নেতারা রাজনীতির মাঠ থেকে হাওয়া হয়ে গিয়ে জিয়াকে হিরো হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন।

তাই সময় এসেছে সবকিছুই নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখার। সুবিধাবাদের হাত থেকে জাতির ইতিহাসকে রক্ষা করার।

এত সাক্ষ্য-প্রমাণের পরও শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করা বাস্তবকে অস্বীকার করার শামিল হবে।

বেগম জিয়া ও তারেক রহমান সম্প্রতি শহীদ জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বলায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ল্যাজে যেন আগুন লেগেছে। তারা স্বভাবজাত ভাষায় কুৎসিৎ গালিগালাজ করে চলেছে এবং ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে বলে চেঁচামেচি করছে। আমার কেন জানি মনে পড়ছে তাদের কয়েক দিন আগে জাতীয় পার্টি নেতা কাজী জাফরও একই ধরনের উক্তি করেছিলেন। সে যা হোক, এ কথা সত্যি যে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকার এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেহেরপুরের এক আম বাগানে শপথ নেন। ২৫ মার্চ থেকে তার আগে পর্যন্ত আওয়ামী লীগ স্বাধীন ঘোষিত বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র নেতার নাম ঘোষণা করেনি। দলত্যাগী সেনাকর্মকর্তারা মেজর জিয়াউর রহমানের নির্দেশই মেনে চলেছেন এবং সাধারণ মানুষের আনুগত্য তখন ছিল মুক্তিবাহিনীর নেতাদের প্রতি।

মুসলিম লীগের প্রেতাত্মা ভর করেছে ওদের ওপর

আওয়ামী লীগের কোনো কোনো মন্ত্রী আমাকে পাকিস্তানের গোড়ার দিককার মুসলিম লীগ নেতাদের প্রেতাত্মার কথা মনে পড়িয়ে দেন। মুসলিম লীগ সরকার অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও গণসমর্থনহীন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু তারা গদি ছাড়তে চায়নি। সরকারের সামান্যতম সমালোচনাকেও তখন ‘শিশু রাষ্ট্রের’ বিরোধী বলে দাবি করা হতো। ঠিক বর্তমান আওয়ামী লীগের মতো। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা ও মন্ত্রী কথায় কথায় বিএনপি নেতা-নেন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপবাদ দেন। কথায় কথায় তারা মানহানির মামলা করেন। আমার সন্দেহ হয় রাষ্ট্রের প্রকৃত সংজ্ঞাও তারা জানেন কি না। ব্যক্তি বা সরকার নিজেদের রাষ্ট্র বলে দাবি করতে পারে না। সরকারের সমালোচনা ও বিরোধিতা করা কিছুতেই রাষ্ট্রদ্রোহ হতে পারে না। তা ছাড়া সত্যি সত্যি হানি হওয়ার মতো মান আদৌ তাদের আছে কি না দুরবিন দিয়ে দেখতে হয়। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগ আনার আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের উচিত আয়নায় নিজেদের চেহারা ভালো করে দেখে নেয়া।

সমালোচনা সম্বন্ধে সরকারের অতিমাত্রিক স্পর্শকাতর হওয়ার কারণ বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। ভারত ছাড়া আর কোনো দেশ এখনো এ সরকারকে মূলত বৈধ বলে স্বীকার করেনি। কোনো কোনো দেশের সরকার তাদের সাথে ‘কাজ’ করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু সেটা দেশে দেশে ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় রাখা, অবৈধ সরকারকে সমর্থন করা নয় বরং প্রায়ই সাবেক বন্ধু দেশগুলো অবিলম্বে সমঝোতার মাধ্যমে সবার গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন করার তাগিদ দিচ্ছে সরকারকে। কিস্তিতে কিস্তিতে উপজেলা নির্বাচনে যেমন ভোটডাকাতি, কেন্দ্র দখল, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতা হয়েছে এবং যেভাবে নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন হয়ে পড়েছে, তাতে দেশে-বিদেশে সবাই বুঝে গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন সম্বন্ধে বিএনপি ও অন্য বিরোধী দলগুলোর দুর্নীতির আশঙ্কা ষোল আনার স্থলে আঠারো আনা সত্যি ছিল। অর্থাৎ তাদের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

অন্য বড় কারণটা হচ্ছে দেশ এখন সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক অনুশাসনগুলোকে এ সরকার ২০০৯ সালের গোড়ার দিকেই হত্যা করে ফেলেছে। প্রশাসন দলীয়কৃত এবং সে কারণে দুর্বল, অসহায়। পুলিশ বিভাগ দলীয় কবজায়, তাদের অন্যায় ও দুর্নীতির বহু রসালো কাহিনী প্রায়ই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।

শাসন করার নৈতিক শক্তি হারিয়ে ফেলেছে

আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব ১৯৯৬ সালে তাদের সশস্ত্র ক্যাডার সৃষ্টির সময়েই আমি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলাম এই ক্যাডার নেতাদের ও বাংলাদেশের কাল হবে। সে ক্যাডারে বিগত পাঁচ বছরে যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। বিগত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি পরিচালিত হয়েছে এদের সাহায্যে। তাতেও নিশ্চিত না হয়ে সরকার শাহবাগে কী যেন একটা ‘মঞ্চ’ গড়ে তুলেছিল। এ সরকারকে অবৈধভাবে গদিতে রাখার বিনিময়ে তারা নিজেদের ভাগ্য গড়ে নেয়ার চেষ্টা করেছে। ভর্তি ও নিয়োগবাণিজ্য, চাঁদাবাজি ইত্যাদি দিয়ে তারা বিলাস-ব্যাসনের ইন্ধন জুগিয়েছে। বিগত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে জয়ী করার জন্য ভারতের বরাদ্দের একটা বড় অংশ বাংলাদেশে এসেছে এবং সরকারের এই ঠ্যাঙাড়েদের পকেটে গেছে।

বাংলা প্রবাদে বলে ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’। কিন্তু চুরি-লব্ধ অর্থের বখরা নিয়ে শেষ পর্যন্ত বিবাদ হয় এবং সেটা প্রায়ই প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে বাংলাদেশেও সে রকমেরই একটা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অর্থের বখরা এবং প্রভাব বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগের লেজুড় সংস্থাগুলোর ভেতরে ভয়াবহ একটা সঙ্ঘাত চলছে এখন। ছাত্রলীগের গৃহযুদ্ধে তাদের কয়েকজন নেতা ও কর্মী মারা গেছে বিগত কিছু দিনে। ছাত্রলীগ-যুবলীগে খণ্ডযুদ্ধ হচ্ছে প্রায়ই। এতকাল তারা ছিল পুলিশের বর্ধিত অংশের মতোই। কিন্তু এখন পুলিশ তাদের ওপর লাঠিপেটা করছে, গ্রেফতার করছে তাদের।

শাহবাগের সেই মঞ্চেও গৃহযুদ্ধের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। এ মঞ্চ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এক অংশ মঞ্চের মুখপাত্র ডা: ইমরান সরকারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। বলা হচ্ছে যে, ইমরান সরকার ১৪ মাসের মঞ্চের সুযোগে ৫০ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। হয়তো সে অর্থের ওপর লোলুপ দৃষ্টি তাদের গৃহবিবাদের একটা কারণ। ছাত্রলীগ হামলা করেছে মঞ্চের ওপর এবং পুলিশ সরকারের প্রাক্তন আদরের দুলাল শাহবাগ মঞ্চের ওপর চড়াও হয়েছে। একটি কিংবা দুটি নয়- অনেক দানবকে তারা বোতল থেকে বের করেছিলেন। তারা আর বোতলে ফিরে যাবে না, অনির্বাচিত ও গণবিরোধী সরকার আর তাদের বোতলে ঢোকাতে পারবে না। সে নৈতিক শক্তি তাদের নেই। মন্ত্রীরা একেকজন একেক সুরে কথা বলছেন। ছালার ভেতরে ছুঁচোদের মারামারির কথা মনে হতে পারে। অর্থমন্ত্রী আর পরিকল্পনামন্ত্রীর প্রকাশ্য বিরোধে পরিকল্পনামন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে খারাপ নজির সৃষ্টি করা হয়েছে। একটা প্রকৃত নির্বাচিত ও গণতান্ত্রিক সরকারের বড় প্রয়োজন এখন বাংলাদেশের।

লন্ডন, ০৯.০৪.১৪

বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান



শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাস করত না। এমনকি দেশ স্বাধীনের পরেও সে ভুট্টোর সাথে পাকিস্তান কনফেডারেশন করতে চাইছিলো। ১৯৭৪ সালে দেশে যখন চরম দুর্ভিক্ষে লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছিল, তখন ভুট্টোকে দাওয়াত করে ঢাকায় এনে শেখ মুজিবুর রহমান জনতার প্রতিবাদের মুখেও লাল গালিচা সম্বধর্না দেয় । অনেক অনুরোধ করে শেখ মুজিবুর রহমান ভুট্টোকে নিয়ে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে।



ভুট্টো অতি তাচ্ছিল্য করে পোলো হ্যাট মাথায় দিয়ে স্মৃতিসৌধে গিয়ে বাংলার মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করে আসে। এই নিয়া তখন বিস্তর লেখালেখি হইছিলো। অথচ শেখ মুজিবুর রহমান লাহোর গিয়া ভুট্টোর সাথে গলা ধরে সে কি মহা পিরিতি। তো, যুদ্ধাপরাধের এক নম্বর লোকের সাথে যদি শেখ মুজিবুর রহমান এই কাজ করতে পারে, তবে আর বিচার কি করে হবে?

এই ম্যাকিয়াভেলি শেখ মুজিবুর রহমান একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য কোর্ট বসাইছিল, অন্যদিকে বড় বড় যুদ্ধাপরাধীদের নিজ বাসায় রেখে ফজিলাতুন নেছা তাদের আপ্যায়ন করত। এই অবস্থায় একদিন পুলিশের আইজিপি ই এ চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানকে গিয়ে বলেন, ”স্যার এদের তন্য তন্য করে খুঁজেও কোথাও পাচ্ছি না।” শেখ মুজিবুর রহমান তখন অট্টহাসি দিয়ে বলে, ”আরে পাইবা পাইবা...ভালো করে খোঁজো।” অথচ তখন তারা ছিল শেখ মুজিবুর রহমানর বাড়ির ভিতরে। এই ঘটনা নিয়া আ হা চৌধুরীও কলাম লিখতে বাধ্য হয়।

কপি পেষ্ট তথ্য সুত্রঃ- Click this link

Click this link

Click this link

বিষয়: বিবিধ

১৫৯৭ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

206193
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৪৯
হতভাগা লিখেছেন : সবাই দেখি খুব বড় ইতিহাসবিদ হয়ে গেছে !
১৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:১৮
157051
বাংগালী লিখেছেন : সময়ের তাড়না ভাই ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File