অন্য উচ্চতার অনন্য এক বাংলাদেশী তারেক অণু ।

লিখেছেন লিখেছেন বাংগালী ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:০৪:৪৬ দুপুর



বাংলাদেশের পর্যটক তারেক অণু কথাটা বলেছেন উত্তর মেরু সম্পর্কে ৷ ২০০৭ সালে আরেক বাংলাদেশি ইনাম আল হকের সঙ্গে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন ৷ কেউ কেউ বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ ভ্রমণ করা অণুর নাকি ইবনে বতুতা হতে আর সময় বেশি নেই ! ভ্রমণ বোধ হয় প্রায় সব মানুষেরই প্রিয় ৷ তবে কারো কারো কাছে সেটা নেশার মতো৷ তারেক অণু এমনই একজন৷ এক সাক্ষাৎকারের সময় তিনি মনে করতে পারলেন না ঠিক কয়টি দেশে তিনি গেছেন ৷ শুধু বললেন অস্ট্রেলিয়া আর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশে যাওয়া হয়নি!



বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মাচু পিচুর দেশ দক্ষিণ অ্যামেরিকার পেরু থেকে শুরু করে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া মঁ ব্লঁ'য় আরোহণ, স্নরকেলিং করে সাগরের তলদেশের সৌন্দর্য উপভোগ করা, পৃথিবীর ষষ্ঠ সর্বোচ্চ চূড়া চো ইয়ো'তে ওঠার চেষ্টা, উত্তর মেরুর মতো চরম ঠান্ডা স্থানে গিয়ে ম্যারাথন দৌড়ে অংশ নেয়া – এসবই করেছেন অণু৷ উত্তর মেরুতে ৬০ ঘণ্টা



২০০৭ সালে অণু আর ইনাম আল হক ‘নর্থ পোল ম্যারাথন' দলের অংশ হয়ে উত্তর মেরু গিয়েছিলেন৷ ‘‘এর ফলে কিছু কম খরচে সেখানে যেতে পেরেছিলান,'' সরল স্বীকারোক্তি অণুর৷ তিনি বলছেন, উত্তর মেরুতে এমনিতে যাওয়া বেশ ব্যয়সাপেক্ষ৷



সেখানকার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে বলতে বললেন, ‘‘উত্তর মেরুতে আমরা প্রায় ৬০ ঘণ্টা ছিলাম৷ পুরোটা সময় সূর্য আমাদের সঙ্গেই ছিল৷ কখনো ডুবেনি৷ কারণ ছোটবেলা থেকেই আমরা জানি উত্তর মেরুতে ছয়মাস দিন আর ছয়মাস রাত থাকে৷ তো আমরা গিয়েছিলাম যখন দিনের সময় তখন৷ এটা খুবই স্মরণীয় একটা ব্যাপার, যা আমার সারাজীবন মনে থাকবে৷'' অণুরা উত্তর মেরুতে গিয়েছিলেন এপ্রিল মাসে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে৷ এই সময়টায় ছয়মাস দিনের কেবল শুরু৷ তাপমাত্রা ছিল প্রায় মাইনাস ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ তবে অণু বলছেন উত্তর মেরুর প্রায় পুরোটাই যেহেতু ফাঁকা জায়গা তাই অনুভূত তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৫০-৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো৷

‘‘এমন ঠান্ডার মধ্যে ম্যারাথন দৌড়ের সময় অনেকের এমন হয়েছে যে, চোখে ঘামের ফোঁটা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেটা বরফ হয়ে গিয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়েছে৷ পরে হালকা গরম পানি দিয়ে সেটা সরিয়ে আবার দৌড় শুরু করতে হয়েছে,'' বলেন অণু৷ ‘‘আমি এখন ফিনল্যান্ডের মতো অত্যন্ত ঠান্ডার একটা দেশে থাকলেও ঐ যে অভিজ্ঞতা সেটা ভোলার নয়৷''

তারপরও বাংলাদেশ



টাংগুয়ার হাওর।

২০০২ সালে উচ্চশিক্ষার্থে ফিনল্যান্ডে যান অণু৷ এখনো সেখানেই আছেন৷ এর মধ্যে ২০০৬ সালে জার্মানিতে যখন বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল তখন গাড়ি নিয়ে ফিনল্যান্ড থেকে সেখানে গিয়েছিলেন খেলা দেখতে৷ পথে ঘুরেছিলেন প্রায় নয়টি দেশ৷ ‘‘এটা এক হিসেবে আমার জীবনের জন্য একটা মাইলস্টোন৷ এর আগে দেশে থাকতেও ঘোরাঘুরি করেছি৷ কিন্তু সেটা ছিল, বোঝেনই তো, সেটা ছিল, বোঝেনই তো, যেহেতু ছাত্র ছিলাম সামর্থ্য মতো৷''

আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়া, মেক্সিকো, কিউবা, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে রাশিয়া, ফ্রান্স, ইটালি, জার্মানি, স্পেন, নরওয়ে, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র সহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ চষে বেড়িয়েছেন৷ মেক্সিকোয় গিয়ে সেখানকার খাবার, প্রকৃতি, পাহাড়, জঙ্গল দেখে মোহিত হয়ে দেশ হিসেবে মেক্সিকোকে পর্যটকদের জন্য একশোতে একশো দিয়েছেন৷ প্রশংসা করলেন হিমালয় কন্যা নেপালেরও৷কিন্তু বারবার তাঁর কথায় ফিরে আসছিল বাংলাদেশের কথা৷ তিনি বলছেন, ছোট্ট একটা দেশ যে কী পরিমাণ বৈচিত্র্যময় হতে পারে বাংলাদেশ তার উদাহরণ৷ ‘‘সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, সুন্দরবন, ভোলা ও পটুয়াখালির ডুবো চর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে অপরূপ নকশার বাড়িঘর – এমন অনেক বৈচিত্র্যময় স্থান রয়েছে বাংলাদেশে যেখানে আমি ঘুরতে খুব পছন্দ করি৷''

ফিনল্যান্ডে বসবাস আর বিশ্ব ঘুরলেও সঙ্গেসবসময় থাকে সবুজ টি-শার্ট যার পেছনে ইংরেজি ও বাংলায় লেখা প্রিয় মাতৃভূমির নাম৷ ‘‘ঘোরাঘুরির সময় এই টি-শার্ট দেখে অনেকেই বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে চায়,'' বলেন অণু৷

ন্যাশনাল জিওগ্রাফির প্রতিযোগিতায় অণু

যারা ঘোরাঘুরি করতে ভালবাসেন তাদের মধ্য থেকে কয়েকজনকে বেছে ‘ট্র্যাভেলার অফ দ্য ইয়ার' খেতাব দেয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফি৷ পাঠকদের পাঠানো পর্যটকের নাম ও তাঁরা কেন তার নাম পাঠাচ্ছেন সেসব কারণ বিবেচনা করে জুরি বোর্ড বিজয়ী নির্ধারণ করে থাকে৷ সে ক্ষেত্রে কে বেশি ভোট পেল তা বিবেচ্য নয়, বরং কোন পর্যটক তার ঘোরাঘুরির মাধ্যমে অন্যকে উৎসাহিত করতে পারছে বা কোনো মহৎ কারণে সেই ঘোরাঘুরি কি না এসব নানা কারণ বিবেচনা করে থাকে জুরি বোর্ড৷

এবছর এই প্রতিযোগিতায় তারেক অণুকে ভোট দিয়েছেন অনেকে৷ অথচ অণু নিজে এই প্রতিযোগিতা সম্পর্ক অবহিত ছিলেন না বলে জানান৷ ‘‘আমার এক পাঠক একদিন আমাকে এটা সম্পর্কে জানায় এবং বলে যে তারা ভোট দিতে চায়৷ আমি বললাম ভালো তো! ন্যাশনাল জিওগ্রাফি একটি নামকরা প্রতিষ্ঠান৷''

ভোটপর্ব শেষ হয়ে গেছে গতমাসে৷ নভেম্বরের দিকে বিজয়ীর নাম প্রকাশ করা হবে৷ ‘‘আমি জানি জিততে পারব না৷ কিন্তু আমার জানা অজানা অনেকেই যে আমাকে ভোট দিয়েছেন তাতেই আমি মনে করি যে আমি জিতে গেছি৷'' ।

কপিঃ- ডয়েচভেল।

বিষয়: বিবিধ

২০৫৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181119
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩০
বিন হারুন লিখেছেন : খুব ভাল লাগল. নাম তাঁর অণু হলেও কাম তার বিশাল
181120
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০১:৩০
আলমগীর মুহাম্মদ সিরাজ লিখেছেন : আসলেই চমৎকার! জীবন পাতার অনেক খবর রয়ে যায় অগোচরে....
181138
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০২:০৪
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ।
বাংলার ইবনে বতুতা!! চমৎকার!!
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৫
134038
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck
181313
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
181322
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File