বাংলাদেশ নিয়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র 'কাজিয়া'

লিখেছেন লিখেছেন পাথরের প্রতিবাদ ০২ নভেম্বর, ২০১৩, ০৭:১২:৫১ সকাল



বাংলাদেশে ঘনীভূত রাজনৈতিক সঙ্কট নিয়ে প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত দুই দেশকে সমানভাবেই উদ্বিগ্ন দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সংকটাপন্ন অব্স্থায় যুক্তরাষ্ট্রের যে অবস্থান তাতে ভারত ক্রমেই অস্বস্তিতে পড়ছে। ভারতের বিশ্বাস, বাংলাদেশ ও এ অঞ্চল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নেতিবাচক।

এসব কারণে বাংলাদেশ বিষয়ে দিল্লির মনোভাব মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ক্রমেই বেখাপ্পা হয়ে পড়ছে। ভারতের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে।

বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১ টার দিকে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক জটিল পরিস্থিতি সম্পর্কে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সাংঘর্ষিক মনোভাবের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গেলো সপ্তাহে দিল্লির সাউথ ব্লক ঘুরে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা। এ সময় তিনি যে লম্বা বৈঠক করেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের সাথে তাতে দিল্লি-ওয়াশিংটন যথেষ্ট দরকষাকষি হয়েছে। আর এই কষাকষিতে ভারতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মন কষাকষিও হয়েছে।

তারা যখন সাউথ ব্লকে বসে ঢাকায় কার কী নীতি বাস্তাবায়ন হবে তা নিয়ে দুই পক্ষ বোঝাপড়া করছিলেন তখন রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলছিল। এ সময় বাংলাদেশে চলা চরম সহিংসতা এবং অস্থিরতা নিয়ে মজিনা-সুজাতা গভীর উদ্বেগও প্রকাশ করেন।

সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনার জন্য গণভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন দিয়েছিলেন।

সূত্রের বরাত দিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া বলেছে, 'বিএনপি সহিংসতা বন্ধ করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়, তারা তত্ত্বাবধায়কের দাবিতেই অনড় থাকতে চায়।'

ভারতে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগ বিএনপি যে ধরনের রাজনীতি করছে তার ধরন নিয়ে। ঠিক এই জায়গাতেই যুক্তরাষ্ট্রের সথে ভারতের 'বিরোধ'।

ভারত মনে করে, প্রকাশ্যেই কট্টর হয়ে ওঠা রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। দিল্লির বিশ্বাস, তারা সফল হলে বাংলাদেশ জাতি হিসেবেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের হয়ে যাবে। কারণ গত দুই বছরে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতি অনেক বেশি কট্টর ও চরমপন্থী হয়ে উঠেছে। জামায়াত ও বিএনপি রীতিমত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে ক্রমাগত প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।

শুধু তাই নয়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো জামায়াত-বিএনপির ওপর আল-কায়েদা ও পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়বার গুরুতর প্রভাব ও সম্পর্ক শনাক্ত করেছে। পাকিস্তান ও পশ্চিম এশিয়ার কয়েকটি দেশের কাছ থেকে ব্যাপক আর্থিক তহবিলের যোগান পায় এই গ্রুপগুলো।

এছাড়া বিএনপির প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁকটা আরো নানা কারণেও হতে পারে। প্রথমত ইতোমধ্যে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এবং আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনূসের সাথে গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে হাসিনার মারাত্মক বিরোধ ঘটে গেছে। হাসিনা-ইউনূসের এই বিরোধ পদ্মা সেতু পর্যন্তও গড়িয়েছিল। একই সাথে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে ক্যালেঙ্কারি এবং যুদ্ধাপররাধ ট্রাইবুনালসহ নানা কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি-জামায়াত জোটেই সম্পর্ক খুঁজে নিতে চায়।

এছাড়া বিএনপির সাথে ভারতের ভিন্ন অবস্থানের আরো বড় কারণের কথাও বলেছে পত্রিকাটি। পত্রিকাটি মনে করে, ২০০১ সালে পদুয়া-রৌমারি সীমান্তে বিডিআর গণহত্যা চালিয়ে বিএসএফের যে ১৫ জওয়ান নিহত হওয়ায় ঘটনা ঘটিয়েছে তার জন্য বিএনপিকে বিশ্বাস করতে পারে না ভারত। এই ঘটনা ভারত কোনোভাবেই ভুলতে পারছে না বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি।

বিএনপিতে ভারতের স্বাচ্ছন্দ্য না পাওয়ার আরো কারণ হল, জামায়াতকে নিয়ে তাদের আন্দোলন ও সরকার গঠন। জামায়াতের সাথে বিএনপির সম্পর্ক ভারত মেনে নিতে পারছে না।

পত্রিকাটি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছে, ২০০১ সালে জামায়াতকে নিয়ে বিএনপি সরকার গঠনের পর দেখা গেল জেএমবি ও হুজির ভয়বহ তৎপরতা।

এছাড়া আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার জন্যও বাংলাদেশে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কে দায়ী করেছে ভারত। ভারত মনে করছে, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের তাদের জনসংখ্যায় মিশিয়ে ফেলার কারণেই মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মারাত্মক আকার ধারণ করছে।

শাহাদত তৈয়ব •

http://www.poriborton.com/article_details.php?article_id=36297

বিষয়: রাজনীতি

১২৩৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File