শিক্ষকই যখন রাজনৈতিক গুরু

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ০৪ জুলাই, ২০১৫, ১২:০৯:৫৪ রাত

প্রাইমারি স্কুল এবং হাইস্কুল দুটোই পাশাপাশি এবং আমাদের গ্রামের ভেতরই ছিল। আমি যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি আমার ভাইয়া তখন হাইস্কুলে পড়ছেন। ভাইয়া সহ হাইস্কুলের অনেক বড় ভাইদের মুখে ওনাদের পন্ডিত স্যারের কথা হরহামেশাই শুনেছি। স্যারকে সবাই ভয় পেতেন। একবার নাকি এক ছাত্র সাইকেল নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ করেই দেখে সামনে থেকে পন্ডিত স্যার হেঁটে হেঁটে আসছেন। কি করবে কি না করবে তা ভেবে উঠতে না পেরে বেচারা ছাত্র সাইকেল নিয়ে সোজা রাস্তার পাশের শুকনো খালে নেমে ছুঁটতে থাকে। এসব গল্প শোনার পর প্রাইমারী স্কুল পাশ করে হাইস্কুলে উঠার স্বপ্নটা কেমন যেন ঘোলাটে হয়ে গেল। কিন্তু ভাগ্য ভাল যে হাইস্কুলে ঢুকার আগেই পন্ডিত স্যার অবসরে চলে যান।

শুধু যে পন্ডিত স্যারকে সবাই ভয় পেত এমন না। মোটামুটি সকল শিক্ষকদের বেলায়ই এমন হতো। আমরা সাইকেল চালানোর সময় সামনে থেকে কোনও শিক্ষককে আসতে দেখলে সাথে সাথে লাফ দিয়ে নেমে সালাম দিতাম, তা কখনও কখনও লাফ দিয়ে কাদায় নামতে হলেও। কখনও কখনও স্পিডের কারণে সঠিক সময়ে না নামতে পারলে স্যারকে না দেখার ভান করে চলে গেলেও মনের ভেতর যে ভয় আর লজ্জা কাজ করতো, সেটার কারণে পরদিন সেই স্যারকে স্কুলে পাশ কাটিয়ে চলতাম। স্যারেরা আমাদের প্রায় সময়ই বলতেন, এতো সম্মান দেখানোর প্রয়োজন নাই। লাফ দিয়ে সাইকেল থেকে নামার দরকার নাই। নামতে গিয়ে যদি কোনও দূর্ঘটনা ঘটে যায় তাহলে কি হবে? চলতি পথে একটা সালাম দিলেই চলে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। স্যারদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধই স্যারদের সেই আদেশকে অমান্য করতে বাধ্য করতো আমাদের।

দিন বদলেছে। এখন আর ছাত্রদের মাঝে সেই আগেকার শ্রদ্ধাবোধ দেখা যায়না, নেই শিক্ষকদের মাঝে সেই গাম্ভীর্য। আধুনিকতায় ক্ষয়ে গেছে আমাদের অর্ধেক আর বাকীটুকু তলিয়ে যাচ্ছে রাজনীতির অতল গহ্বরে। শিক্ষাঙ্গন এখন রাজনীতির একটা প্রধান কার্য্যালয় যেখানে ছাত্র শিক্ষক ভেদাভেদ ভুলে শুধু দলীয় ভেদাভেদই প্রাধান্য পায়। দলীয় পরিচয়ে যেমন ছাত্রদের ভর্তি হয়, ঠিক সেই দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে শিক্ষদেরও নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। না দেখা হচ্ছে যোগ্যতা, না আছে সার্টিফিকেট নিরীক্ষণের বালাই। অনেক ক্লাসেই এখন সিলেবাসের একাংশ হয়ে ওঠেছে রাজনৈতিক লেকচার। গল্প বা উদাহরণ দিতে গেলেই অনেক শিক্ষক এখন রাজনীতি টেনে আনেন। বিশ্বাস হয়না আমার কথা? জিজ্ঞেস করুন আপনার আশেপাশের কিছু কলেজ অথবা ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রদের, চোখ রাখুন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর নিয়োগ পদ্ধতিতে।

বাবা মা সন্তানদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠায় শিক্ষা অর্জনের জন্য। কিন্তু তারা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেনা যে সেই সন্তানটি জড়িয়ে পড়ছে কোনও রাজনৈতিক গ্রুপের সাথে, কোনও খারাপ কয়েকটি ছেলের সাথে সিগারেট ফুঁকে অথবা কোনও শিক্ষকের রাজনৈতিক লেকচারে আকৃষ্ট হয়ে সেই শিক্ষকেরই রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ডকে অনুসরণ করে।

শিক্ষকদের কাছ থেকে আমরা জ্ঞান অর্জন করতে চাই, নোংরা রাজনীতি নয়। ছাত্ররা খারাপ পথে যেতেই পারে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু শিক্ষকদের ভুল করা চলেনা। ছাত্রদের সঠিক পথ বাতলে দেয়া শিক্ষকদের দায়িত্ব, তাদের ভুল পথ প্রদর্শন নয়।

যেখানেই কোনও শিক্ষককে শিক্ষকতার সময় রাজনৈতিক নোংরা আলোচনায় পাবেন, সেখানেই প্রতিবাদ শুরু করবেন। হয়তো এভাবেই একটা ঘুনেধরা শিক্ষানীতিকে একটু সবল করতে সক্ষম হবো আমরা।

নিচের লিংকগুলোতে কতিপয় শিক্ষাঙ্গনে কিছু রাজনৈতিক নিয়োগের উদাহরণ দেয়া হলো। চোখ বুলাতে পারেন।

# http://www.jugantor.com/last-page/2014/04/18/89464

# http://www.amardeshonline.com/pages/details/2010/10/17/169128#.VZbNY4lwYm8

# http://www.firstnewsbd.com/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC-%E0%A7%AB/

# http://blog.bdnews24.com/ImdadHaque/60873

# http://blog.bdnews24.com/harunrashid/52284

# http://www.dainikazadi.dainikazadi.net/details2.php?news_id=893&table=april2012&date=2012-04-09&page_id=4

বিষয়: বিবিধ

১৩০৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

328534
০৪ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:৪০
শান্তির ফেরীওয়ালা লিখেছেন :
শ্রদ্ধেয়
এই পোষ্টটি অনেক ভালো লেগেছে । অনেক ধন্যবাদ । আশা করি এই রকম পোস্ট আপনার কাছ থেকে আরো পাবো । জনপ্রিয় নিউজ সাইট http://www.onn24.com এ আমি চিফ রিপোর্টার হিসেবে দায়িত্বরত । আমাকে আপনার লিখাগুলো পাঠাবেন । আমি তা প্রকাশনার ব্যাবস্থা করবো। আমার ইমেইল
০৪ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:৫৯
270860
সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা লিখেছেন : অবশ্যই।
ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File