আসুন, ভেলা চালাই
লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ৩১ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:৩৪:১০ বিকাল
বন্ধুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলাম, কি বন্ধু, Ice bucket challenge এ অংশগ্রহণ করেছে তো? বন্ধু বললো, করেছি দোস্ত। তবে একটু ভিন্নভাবে। চারিদিকে থই থই পানি থাকায় আইস আর বাকেট সংগ্রহ করতে পারি নাই। তাই বদনা ভইরা ঘোলা পানি মাথায় ঢালছি।
বন্ধু আমার বগুড়ায় থাকে। এই মুহূর্তে বগুড়ার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ১৭৬ টি গ্রাম পানির নিচে রয়েছে এবং সিরাজগঞ্জের ৭ টি উপজেলার প্রায় ৩৫০ টি গ্রামেরও একই অবস্থা। পানি উঠার কারণে বন্ধ রয়েছে প্রায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দেখা দিয়েছে সুষম খাদ্য, শিশু খাদ্য এবং বিশুদ্ধ পানির অভাব। প্রায় ৫ লক্ষ কৃষক ফসল, গবাদি পশু, ঘরবাড়ি সব হারিয়ে হয়েছেন নিঃস্ব। বিপদ সীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়ে বইছে পানি। পানি এখনও বাড়ছে।
কর্তৃপক্ষ এদের এখন গুড় আর চিড়া মুড়ি দিচ্ছে খাওয়ার জন্য, রান্নার জন্য দিচ্ছে চাল, চলছে ফটোশ্যুটিং। যাদের চুলা এখন রয়েছে ১০ ফুট পানির নিচে তারা এখন এই চালের বস্তা মাথায় করে গলা পানিতে হাঁটা ছাড়া অন্য কোনও উপায় দেখছিনা।
আমরা ASL রোগের রিসার্চের টাকা তোলার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির তাগিদে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালছি। আমাদের দেশে প্রতি বছর ভারত হতে আসা নোংরা পানি এবং বন্যার পানি ব্যবহারের ফলে শুধু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার শিশু। এ ব্যাপারে কি আমরা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কোনও পদক্ষেপ নিয়েছি? গাজার জন্য চাঁদা তুললাম। বেশ ভাল কথা। বিশ্ব মানবতার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা আমাদের মানবিক দায়িত্ব। কিন্তু আমাদের দেশে যে প্রতি বছর বন্যার পানিতে গৃহহীন হয় লাখো মানুষ, খাদ্যের অভাবে এবং বিভিন্ন পানিজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় হাজারো শিশু, সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে আত্মহত্যা করে কৃষক, তখনও আমাদের মানবতা জাগ্রত হয়না। শুধু মুসলিম বিশ্বে হামলা হলেই আমরা মাঝে মাঝে জাগি। কিন্তু এই ছোট্ট ব্যাপারটা মাথায় আসেনা যে আজ যারা বন্যার পানির নিচে গলা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারাও মুসলিম। গাজায় ওরা অন্তত নামাজ পড়ার জায়গা পাচ্ছে কিন্তু বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জে এই মুহূর্তে সেজদা দেয়ার মতো কোনও শুকনো জায়গা নেই। ওরাও মরছে, এরাও মরছে। শুধু পার্থক্য, ওদের মারা হচ্ছে হাতে, এদের মারা হচ্ছে ভাতে।
দয়া করে আমাদের দেশের বন্যাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দোহাই দিয়ে এড়িয়ে যাবেন না। এটা অবশ্যই প্রাকৃতিক দুর্যোগ। কিন্তু যদি আমরা সচেতন হতাম, আমাদের প্রশাসন একটু দায়িত্বশীল হতো, তাহলে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের জন্য মোকাবেলা করা কোনও ব্যাপারই ছিলনা। আমাদের দেশে বন্যা মোকাবেলা বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো, বন্যা আসার পর সাংবাদিকদের সাথে নিয়ে কয়েক বস্তা চাল বিতরণ। বাকি কয়েকমাস এরা পানির নিচে থাকলেও আমরা পুরো বছর নাকে তেল দিয়ে ঘুমাই। আমাদের প্রশাসন এক জটিল ধাঁধাঁর নাম। আমাদের দেশে যত নদী নালা আছে তা সময়মতো খনন করা হলে ভারত হতে আসা এসব পানি বঙ্গপোসাগরে ঠেলে দেয়া কোনও ব্যাপার না। বাঁধগুলো মেরামত করা হলে ভেতরে পানি ঢুকার প্রশ্নই আসেনা। ঢাকা শহরে এখন যারা আছেন তারা জানেন এই মুহৃর্তে ঢাকার কি অবস্থা। পানি নিষ্কাশনের কোনও তাগিদই নেই সিটি কর্পোরেশনের। আর তাই ড্রেনের পানি এবং টয়লেটের পানির মধ্যেই হেঁটে রাস্তা পারাপার হচ্ছেন মানুষ। আমি বরঞ্চ বলবো কলাগাছ দিয়ে ভেলা বানিয়ে নিন। এই মুহূর্তে ঢাকার রাস্তা সম্পূর্ণ ভেলা চলাচলের উপযোগী।
বিষয়: বিবিধ
১৩১৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন