পোস্টমর্টেম

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ১৫ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:২৩:৫০ বিকাল

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বললেন, এইচএসসি তে পাশ করা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথেষ্ট আসন রয়েছে। নিজের পছন্দমত বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পেলেও যার যার মেধা অনুযায়ী সঠিক আসনেই সুযোগ করে নেবে তারা।

আসুন, শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের একটু পোস্টমর্টেম করি।

এবছর মোট পাশ করেছে ৮,৮৫,০৭০ জন।

গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়ায় রয়ে গেছে আরও প্রায় ৩,০০,০০০ জন শিক্ষার্থী।

তাহলে মোট শিক্ষার্থী ১১,৮৫,০৭০ জন।

মোট ৩৪ টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে ৬৮,৭৪০ টি।

সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন সংখ্যা ৮,৩৫০ টি।

হেলথ ইন্সটিটিউটে মোট আসন সংখ্যা ১,০৬৫ টি।

লেদার ও টেক্সটাইল টেকনোলজিতে মোট আসন সংখ্যা ৪৫৫ টি।

এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বমোট আসন সংখ্যা ৭৮,৬১০ টি।

এবছর শুধু A+ পেয়েছে ৭০,৬০৬ জন।

তার মানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে A+ পাওয়া শিক্ষার্থীদের নিজেদের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ নেই বললেই চলে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজ সহ এসব আসনগুলোতে সুযোগ না পাওয়া বাকি ১১,০৬,৪৬০ জন শিক্ষার্থীদের পরবর্তী টার্গেট হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো। কিন্তু এখানে রয়েছে মাত্র ৪,০০,০০০ টি আসন।

এখন জমি জামা বেচে শেষ সম্বল হিসেবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়বেন বাকি ৭,০৬,৪৬০ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু আফসোস, সারা দেশে সকল প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে মোট আসন সংখ্যা ২,০০,০০০ এর বেশি নয়।

তাহলে বাকি ৫,০৬,৪৬০ জন শিক্ষার্থীর কি হবে?

সেটা আমাদের শিক্ষামন্ত্রীর দেখার বিষয় নয়। ওনার দেখার বিষয় হচ্ছে পাশ রেট বাড়ানো। তা প্রশ্নপত্র ফাঁস করে হোক অথবা সৃজনশীল নামক দেশের ভবিষ্যৎ সর্বনাশকারী এক শিক্ষা ব্যবস্থাই হোক। রাজনীতিবিদদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তেমন কোনও মাথা ব্যথা নেই। তাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে লেখাপড়া করে। তারা কখনোই চায়না জাতি শিক্ষিত হোক, সচেতন হোক। তাহলে আর নোংরা রাজনীতি এবং দূর্নীতি করা যাবেনা। আমাদের পাশের রেট বাড়ছে, শিক্ষার নয়। ৮০% শিক্ষার্থী এখনও মুখস্থ বিদ্যার ওপর টিকে আছে। এরা সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থায় পড়াশোনা করছে কিন্তু সৃজনশীলকে পাশ কাটিয়ে মুখস্থ করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সৃজনশীল বাংলাদেশে একটি ফেল প্রোজেক্ট যতদিন না পর্যন্ত স্কুল কলেজগুলোতে যথেষ্ট শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে এবং প্রাইভেট কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ করে ক্লাসেই সবকিছু শেখানো হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে স্কুল কলেজ রয়েছে, কোচিং সেন্টার নেই, নেই শিক্ষার নামে দূর্নীতি এবং ব্যবসা। তাই তারা উন্নত। আমাদের রাজনীতিবিদরা এক ঢিলে দুই পাখি মারেন। পাশের রেট বাড়ানোর জন্য দূর্নীতি করেন, পাবলিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন না বাড়িয়ে বরঞ্চ সেখানে সকল প্রকার দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেন। ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে তাদের মালিকানাধীন ব্যাঙের ছাতার মতো গজানো প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোতে ভর্তি হয়। যারা এফোর্ড করতে পারেনা তাদের শিক্ষাজীবনের সেখানেই ইতি ঘটে। চাকরি না পেয়ে তারা রাজনীতিতে অথবা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যোগ দেয়।

এসব কারণে আজ দেশে কোনও মেধা বেরিয়ে আসছেনা, বেকারত্ব বাড়ছে, অপরাধ বাড়ছে, দেশ পঙ্গু হতে চলেছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থা এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশ কোনদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবেনা।

fb.com/shadashidhe.jhuliwala

বিষয়: বিবিধ

১৩৮৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

254586
১৫ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:১৯
কালো পাগড়ী লিখেছেন : বড়ই জটিল বিশ্লেষণ। আসলে আমাদের পাবলিকরে ওরা বোদাই মনে করে।
254590
১৫ আগস্ট ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৫
আহ জীবন লিখেছেন : নচিকেতার গানটা খুব মনে পড়ে।

"আমি মুক্ষ সুক্ষ মানুষ বাবু কিছুই জানিনা"

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File