ভারতে বই ছাপিয়ে সরকারের লোকসান ৬০ কোটি টাকা!!! একি? দাদারা ঠকালো কিভাবে? লাভ হওয়ার কথা ছিলোনা?

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৬:৫১:২৪ সকাল



বাংলাদেশের আইন অমান্য করে ভারত থেকে ছাপানো হয়েছে প্রাথমিকের প্রায় ১০ কোটি বই। এতে প্রায় ৬০ কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে সরকার। ২০১০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ভারতীয় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকের ৯ কোটি ৬৪ লাখ বই ছাপিয়েছে। প্রতিবারই দেশের আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। দেশীয় প্রকাশকরা প্রতিবাদ করলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি সরকার। সরবরাহকারী হিসেবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে এ বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। ১৯৭৩ সালের মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন মোতাবেক একমাত্র ডিক্লারেশন গ্রহণকারী প্রকৃত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কেউ মুদ্রণ কাজ করতে পারবে না। আইন অনুযায়ী ভারতীয় কোন প্রতিষ্ঠানই টেন্ডারে অংশ নিতে পারে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশী প্রকাশকরা। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আইন অমান্য হচ্ছে কিনা তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। আমদানি শুল্কসহ সব মিলে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ২০.৪৩ ভাগ শুল্ক দেয়ার কথা। প্রাথমিকভাবে সরকার এটা বহন করলেও দরপত্র মূল্যায়নের সময় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত মূল্যের সঙ্গে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ করে দরপত্র মূল্যায়নের কথা। কিন্তু ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এটি করা হয় না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি। ২০১০ সাল থেকে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর কাজ দেয়া হচ্ছে। ওই বছর প্রাথমিকের মোট ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৬ হাজার ৪৭৫ কপি বই ছাপানো হয়। এর মধ্যে ভারত থেকে ছাপানো হয় ৩ কোটি ৩১ লাখ। বাকি বই ছাপা হয় দেশীয় প্রতিষ্ঠানে। সব মিলে ব্যয় হয় ২৫৪ কোটি ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার ৮৯৩ টাকা। ২০১১ সালে ৮ কোটি ৯ লাখ ১৩ হাজার ৯২৩ কপি বই ছাপানো হয়। এর মধ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান থেকে ছাপানো হয় ১ কোটি ৪৬ লাখ। বাকি বই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে ছাপানো হয়। সব মিলে ব্যয় হয় ৩০০ কোটি ৮১ লাখ ৭৭ হাজার ২৪৪ টাকা। ২০১২ সালে ছাপা হয় ১০ কোটি ৭১ লাখ ৫৮ হাজার ২৬৭ কপি বই। এর মধ্যে ভারত থেকে ছাপা হয় ৩ কোটি ৩১ লাখ বই। বাকি বই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে ছাপানো হয়। সব মিলে ব্যয় হয় প্রায় ৩২৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে ছাপা হয় ১১ কোটি ৫৯ লাখ বই। এর মধ্যে ভারত থেকে ছাপানো হয় ১ কোটি ৫৬ লাখ বই। বাকি বই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে ছাপানো হয়। সব মিলে ব্যয় হয় ৩৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এনসিটিবি সূত্র জানায়, ঘুরেফিরে কয়েকটি ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে কৃষ্ণা ট্রেডার্স, ভিকে উদ্যোগ, গফসন, পৃতম্বরা বুকস, সুদর্শন বোর্ড অ্যান্ড পেপার মিলস। ৪ বছরে সরকার প্রাথমিকের ৪০ কোটি ৮৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬৬৫ কপি বই ছাপিয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ১২২৫ কোটি ৮১ লাখ ৪৭ হাজার ১৩৭ টাকা। এর মধ্যে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ছাপিয়েছে ৯ কোটি ৬৪ লাখ কপি বই। বাংলাদেশী প্রকাশকরা যে দামে বই ছাপিয়েছে একই দামে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান বই ছাপালে তারা ৪ বছরে ২৮৯ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার ৬৯১ টাকা ২৮ পয়সা বই ছাপানো বাবদ পেয়েছে। এ টাকার উপর ২০.৪৩ ভাগ আমদানি শুল্ক বাবদ সরকার পরিশোধ করেছে ৫৯ কোটি ৫৮ লাখ ৪ হাজার ৪৫২ টাকা ২৩ পয়সা। সূত্র জানিয়েছে, ৪ বছর ধরে কোনপ্রকার আইন না মেনেই ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে বই ছাপানোর কাজ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি একাধিকবার প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে ৪ বছর পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতামত জানতে চেয়েছে এনসিটিবি। ৯ম জাতীয় সংসদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি কর্তৃক গঠিত ৭ নং সাব-কমিটির ২০১৩ সালের ২৬ শে জুন অনুষ্ঠিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনসিটিবি বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সঙ্গে একটি বৈঠক করে। তারা ৪ বিষয়ে আপত্তি করে। আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে এনসিটিবি বিষয়গুলো জানতে চেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি পত্র দেয়। যেসব বিষয় জানতে চাওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- টেন্ডার সিডিউলে প্রকৃত মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সরবরাহকারীদেরকেও টেন্ডারে অংশগ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রণকারীগণ ১৯৭৩ সালের মুদ্রণ ও প্রকাশনা আইন মোতাবেক একমাত্র ডিক্লারেশন গ্রহণকারী প্রকৃত মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান ব্যতীত অন্য কেউ মুদ্রণ কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়েছেন। তাই সরবরাহকারী মুদ্রণকাজের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে কিনা সে বিষয়ে মতামত প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক টেন্ডারের কারণে আমদানিকৃত পাঠ্যপুস্তকের উপর ১২ ভাগ আমদানি শুল্ক আমদানিকারককে বহন করতে হয়। আমদানি শুল্ক বাবদ প্রদত্ত ১২ ভাগ আমদানি শুল্ক ও অন্যান্য শুল্ক দরপত্র মূল্যায়নের সময় বিদেশী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উল্লিখিত দামের সঙ্গে যোগ করে মূল্যায়ন করা হবে কিনা সে বিষয়ে মতামত প্রয়োজন। এ ছাড়া আরও দুটি বিষয়ে মতামত চেয়ে ২০১৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়। বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম শাহ আলম মানবজমিনকে বলেন, প্রচলিত আইন অনুযায়ী ভারতীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান টেন্ডারেই অংশ নিতে পারে না। আমদানি শুল্ক প্রথমে সরকার পরিশোধ করলেও চূড়ান্তভাবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকেই এ ব্যয় বহন করতে হবে। ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিতে গিয়ে প্রতিবছর সরকারের লোকসান হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকা। ৪ বছরে সরকারের ক্ষতি প্রায় ১০০ কোটি টাকা। শাহ আলম বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দেয়া। এ জন্য আইন-কানুন তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক শফিকুর রহমান বলেন, আইন ভঙ্গ হচ্ছে কিনা তা জানতে চেয়ে মন্ত্রণালয়কে পত্র দেয়া হয়েছে। ৪ বছর ধরে কিভাবে ভারত থেকে বই ছাপানো হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এর আগে দায়িত্বে ছিলাম না, যারা দায়িত্বে ছিলেন তারাই বলতে পারবেন। আমদানি শুল্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশনের স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সরকারই আমদানি শুল্ক পরিশোধ করবে। এখন উল্লিখিত মূল্যের সঙ্গে আমদানি শুল্কসহ অন্যান্য ব্যয় যোগ করে টেন্ডার মূল্যায়ন করা হবে কিনা এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ জন্য আমরা মতামত জানতে চেয়েছি।

নিউজ লিংক

http://mzamin.com/details.php?mzamin=MTI4MTg%3D&s=Mg%3D%3D

বিষয়: বিবিধ

১০৮৬ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

183715
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:০০
এনামুল মামুন১৩০৫ লিখেছেন : এই সরকার দিয়ে কি হবে এগুলা ব্যাতিত??? চুক চুক
183733
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:২৭
মোহাম্মদ ওমর ফারুক ডেফোডিলস লিখেছেন : আমাদের সব ব্যবসায়ীকে লাটে বসাবে ভারত
183744
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ০৯:৫৫
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : ভাল লাগলো, ধন্যবাদ সুন্দর লেখার জন্য
183776
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:২২
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
183782
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১০:৩১
শেখের পোলা লিখেছেন : 'লাগে টাকা দেবে গৌরীসেন' সরকারের কি যায় আসে৷ জিসকা ফাটে উসকা ফাটে, ধোবীকা কিয়া ফাটে?
183803
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:০৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : দেশে উপযুক্ত ছাপার সমস্ত প্রযুক্তি আছে। ইউনেস্কোর আন্তর্জাতিক টেন্ডর এর কথা বলে গত পাঁচবছর ধরেই ভারতিয় প্রতিষ্ঠানকে বইছাপার কাজ দেয়া হচ্ছে।
203303
০৬ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৯
আহ জীবন লিখেছেন : শাহবাগের টাকা ফেরত দিচ্ছে সরকার আমাদেরকে ঋণ মুক্ত করতাছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File