যেসব কারণে বিজয় দিবস উদযাপনে বিবেক বাধা দেয়

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:০৬:০১ রাত

বিজয় দিবস একটি স্বাধীন জাতির জন্য। পরাধীন জাতির বিজয় দিবস উদযাপন লজ্জাজনক। আজ আমরা অন্য কোনও রাষ্ট্রের হাতে নয়, নিজেদের নোংরা রাজনীতিবিদদের হাতে প্রত্যক্ষ ভাবে বন্দী। আমরা এক হায়েনাদের হাত থেকে দেশ ছিনিয়ে এনে আরেক ধূর্ত শেয়ালের হাতে তুলে দিয়েছি। কোন্ মুখে যাবো শহীদদের কবরে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে? যারা জীবনের তোয়াক্কা করেনি দেশের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য, যাদের প্রতি ফোটা রক্তের ঋণ আমাদের কাঁধে, যারা জীবন দিয়ে এনেছিল স্বপ্নের স্বাধীনতা, আজ তাদেরই চেতনাকে নানা রঙে রাঙিয়ে জাতি বিভক্ত। কেউবা চেতনার চাদর ওড়ে চেতনা হাটের মহাজন, আবার কেউবা চেতনার যাঁতাকলে পিষ্ট গম।

*স্বাধীনতার ৪২ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও বাক স্বাধীনতা মেলেনি। হিসেব করে কথা বলতে হয়।

*সত্য প্রকাশের কারণে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের জেল খাটতে হয়।

*৪২ বছরের স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এখনও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। দুই নেত্রী যেমন চাইছেন তেমনই নির্বাচন হচ্ছে।

*গত ২৩ বছরে রাজনৈতিক হত্যা ১৩ হাজারেরও বেশি। এদের পারিবােরর বেদনা কি একাত্তরে মারা যাওয়া নিরিহ লোকদের পরিবারের বেদনার চেয়ে আলাদা?

*একাত্তরের মতো আজও পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা হচ্ছে। ঘরে ঢুকে ছাদের উপর তুলে গুলি করে নিচে ফেলা হচ্ছে। প্রতিদিন ৮-১০ জন নিহত হচ্ছে। মানবাধিকার কোথায়?

*যে দলই ক্ষমতায় আসুক, তারা গদি ছাড়তে চায়না। এক দল অন্য দলের সাথে রক্ত খেলায় মেতে ওঠে। জনগণের দাবী কোথায়?

*লক্ষ লক্ষ বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে তাদের রাজপথে ব্যবহার করা হচ্ছে।

*স্কুল কলেজে লেখাপড়ার চেয়ে আজকাল রাজনীতিই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।

*যুবতী মেয়েরা রাস্তার বেরুলে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে।

*বাচ্চারা ভুল বিভ্রান্তিকর ইতিহাস শিখছে। শেখ মুজিব আর জিয়াউর রহমান ছাড়া আর কারও নামই উল্লেখ করা হয়না। ভাসানী, এম এ জি ওসমানী, বীরশ্রেষ্ঠ, বীর উত্তমেরা কি ঘোড়ার ঘাস কেটেছিলেন?

*বাংলাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়া স্বত্বেও পার্শ্ববর্তী দেশের পররাষ্ট্র সচিব এসে বাংলাদেশের নির্বাচনী আলোচনায় অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করছে এবং একটি নির্দিষ্ট দলের রিপ্রেজেনটেটিভ হয়ে কথা বলছে। কোথায় স্বাধীনতা?

*ফেলানিদের লাশ কাটাতারে ঝুলে থাকা সত্ত্বেও আমাদের জারজ নেতারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেখান না। উল্টো বলেন, এমনটি আগেও হয়েছে, আরও হবে। মানবতার কবর খুঁড়ছেন তারা।

*৪২ বছর পর হওয়া বিচারকার্য নিয়ে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক মহল হাজারটা প্রশ্ন তুলছে অথচ যা হওয়ার কথা ছিল নিঁখুত।

*জনগণের কথা এদেশের নেতাদের কানে পৌছানোর কোনও ব্যবস্থা নেই।

*রাষ্ট্রীয় খরচে এদেশের রাজনৈতিক নেতারা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছে।

*রাজনৈতিক দাঙ্গার শিকার সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হচ্ছে।

*আমদানিকৃত দ্রব্যের কথা নাহয় বাদই দিলাম, দেশীয় দ্রব্যের মূল্যও আকাশচুম্বী।

*এখন পর্যন্ত ৫ টি মৌলিক অধিকার - অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষার পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি অথচ মন্ত্রী এমপিরা সিংগাপুর ছাড়া চিকিৎসা করান না।

*মুক্তিযোদ্ধারা ঠেলা আর রিক্সা চালিয়ে সংসার চালায় অথচ রাজাকারেরা পতাকা লাগিয়ে সরকারী গাড়ি চড়ে।

*আজ কোটি টাকা খরচ করে বিজয় দিবসের মঞ্চ বানানো হলো, লক্ষ টাকা খরচ করে পতাকা বানানো হলো। কিন্তু সামান্য টাকা দিয়ে কয়জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সাহায্য করা হলো? কয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা দেয়া হলো?

*মামা কাকা অথবা বড় আকারের ঘুষ ছাড়া চাকুরী হয়না, পেনশনের টাকা টা পর্যন্ত বের হয়না।

*কৌটা নিয়া বিবাদ বাঁধে যোগ্য অযোগ্যদের মাঝে।

*বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবীতে আন্দোলনকৃত শিক্ষকদের উপর রাবার বুলেট, টিয়ারশেল এবং গরম পানি ছুড়া হয়। অথচ চ্যাতনা ব্যবসায়ীদের আন্দোলনে মোবাইল টয়লেট পর্যন্ত সাপ্লাই দেয়া হয়। ছিঃ মানবতা।

*আগে চোর ডাকাত দেখলে মানুষ ভয় পেতো অথচ এখন লোকজন পুলিশ দেখলে ভয়ে কাঁপে। যে পুলিশ দেশের শান্তি রক্ষার জন্য নিয়োজিত, সেই পুলিশই আজ ব্যবহৃত হচ্ছে অন্যায় ভাবে মানুষ মারার জন্য।

*দিনে দুপুরে বিশ্বজিতদের কুপিয়ে হত্যা করা হয় আমাদের দেশে।

*আপনি যেকোনও সময় গুম অথবা খুন হয়ে যেতে পারেন। কোনও বিচার হবেনা, ফলোআপও হবেনা।

*আপনি রানা প্লাজার নিচে পিষ্ট হয়ে অথবা তাজরিন ফ্যাশনে আগুনে পুড়ে মারা যাবেন। সেই বিচার কেউ করবেনা। বরং রাজনৈতিক নেতারা তাদের পাছা বাচাঁনোর জন্য সংসদে আপনারই বিরুদ্ধে কথা বলবে।

*জোরে ঘর বাড়ি দখল করা হয় গরীবদের।

*পুনর্বাসন ছাড়াই হাজারো মানুষের বস্তি উচ্ছেদ করা হয়।

*ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার সময় প্রাণ বাজি রেখে ট্রেন অথবা স্টিমারে চড়তে হয়।

*আজো রাস্তার পাশে রাত কাটায় হাজারো বাঙ্গালী।

*আজো ডাস্টবিনের ময়লা খাবার খেয়ে জীবন বাঁচায় সহস্র বাঙ্গালী।

*আজো স্কুলের ফিস না দিতে পেরে অকালেই ঝরে যায় হাজারো মেধাবী।

*বিশ্বের সবচেয়ে নিম্ন মজুরীর শ্রমিকদের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।

এরকম আরও হাজারটা কারণ লেখা যাবে যা প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে ঘটছে, যা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করে, আমাদের বিবেক কে বাধা দেয় স্বাধীনতা উপভোগ করার জন্য।

তবুও আমরা সিজনাল চেতনাময়ী জাতি সিজনালি বিজয় দিবস পালন করি। কারণ আমাদের চেতনা আমাদের স্বাধীনতার চেয়েও বড়। স্বাধীনতা যাক জাহান্নামে, চেতনার চাদর যেন গায়ে থাকে। তাই চেতনায় চ্যাতিত হয়ে সবাই বলুন,

মহান বিজয় দিবস

অমর হউক।

http://www.facebook.com/shadashidhe.jhuliwala

বিষয়: বিবিধ

১০৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File