পাশের বাড়ির মুরগি
লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ১১ ডিসেম্বর, ২০১৩, ১২:৩২:৩৩ রাত
ছেলের হঠাৎ মুরগি খাওয়ার সখ হলো।
মা বললেন, ঠিক আছে। বিকেলে তোর বাবা বাজারে যাবেন। তখন তোর জন্য মুরগি নিয়ে আসবেন।
কিন্তু ছেলে তো কোনও ভাবেই মানেনা। তার এই মুহূর্তেই মুরগি খেতে হবে।
মা তো মহা মুশকিলে পড়লেন।
হঠাৎ দেখলেন পাশের বাড়ির কয়েকটি মুরগি ওদের উঠান দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যস্। খপ্ করে একটা ধরে ফেললেন। তারপর জবাই করে ছেলের জন্য রেঁধে ফেললেন।
ছেলে সবকিছুই দেখলো। কিন্তু মুরগি খাওয়ার লোভে কিছুই বললো না।
এখন আসি আসল কথায়।
একজন কাদের মোল্লার ফাঁসি হতে যাচ্ছে। আমরা সবাই খুশি। একজন যুদ্ধাপরাধীর অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিৎ। আর সেজন্যই হাজার হাজার বাঙ্গালী শাহবাগে জড়ো হয়ে তাদের দাবী জানিয়েছিলো।
প্রতীক্ষার মুহূর্ত শেষ।
জাতি কলংকমুক্ত হতে যাচ্ছে।
শুধু একটি প্রশ্ন থেকে যায়।
যুদ্ধাপরাধ বিচার ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত আর সেটা সবার জানা।
আজ থেকে কয়েক বছর পর যদি প্রমাণ হয় এই কাদের মোল্লা সেই রাজাকার কাদের নয়, ট্রাইব্যুনাল ছিলো একটি সাজানো নাটক, তাহলে কে নেবে এই নিরপরাধ কাদের মোল্লার মৃত্যুর দায়ভার?
আমরা গল্পের শুরুর সেই ছেলেটির মতো। আমাদের শুধু ফাঁসি চাই। তা যে বা যাদেরই হোক। হোক সে অপরাধী বা নিরপরাধ। ফাঁসি হলেই হলো। বিচার বুদ্ধি পেছনে ফেলে চেতনার ভূয়া চাদর মুড়ে হুঁশ খুইয়ে বসেছি আমরা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমাদের প্রাণের দাবী। অথচ আমাদের এই আবেগকেই রাজনৈতিক পুঁজি করে চেতনা ব্যবসায় ব্রত কতিপয় মহল।
একটি বিতর্কিত ট্রাইব্যুনালে ফাঁসির রায় দিয়ে তা কার্যকর করা কতটুকু যৌক্তিক?
যুদ্ধাপরাধ একটি অন্যায়। সেই অন্যায়কে অন্যায়ভাবে বিচার করা কি আরেকটি অন্যায় নয়?
জাতি কলংকমুক্ত হচ্ছে ভালো কথা। তবে এই প্রক্রিয়ায় পাশের বাড়ির মুরগির মতো কোনও নিরপরাধ ব্যক্তিকে যদি অন্যায়ভাবে বলি দেয়া হয় তাহলে পৃথিবীর কোনও ট্রাইব্যুনালই বাঙ্গালী জাতির সেই কলংক মোচন করতে পারবেনা। আর আমরাই হবো পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত এবং নিকৃষ্ট জাতি।
বিষয়: বিবিধ
১১০৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন