বন্যেরা বনে সুন্দর, বাঙ্গালীরা চাপাতি হাতে

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ২১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৫:২৮:০৫ বিকাল

প্রায় সময়ই আমাদের বলতে হয়, "পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র জীব মানুষ।" কেউ যদি জিজ্ঞেস করেন, কেন ভাই, কেন এই কথা বললেন?

আমি বলব, আপনি এই মুহূর্তে একবার বাংলাদেশ ঘুরে আসেন ভাই।

বাঁশ কেটে লাঠি বানানো হচ্ছে, রামদা, চাপাতি, ছুরি ইত্যাদি ঘষে ঘষে ধারানো হচ্ছে, ককটেল, গ্রেনেড তৈরির মহোৎসব চলছে, কেউ কেউবা অাগ্নেয়াস্ত্রের জন্য বুলেট জমা করছে।

কেন?

উত্তরটা সবারই জানা আছে। বিরোধীদল প্রতিবাদ করবে আর সরকার দল পদ টিকিয়ে রাখার জন্য তা প্রতিহত করবে। মারা যাবে অসংখ্য মানুষ।

এমন দৃশ্য আমরা আগেও দেখেছি। প্রতি ৫ বছর পর পর দেখতে হয়। রাজনীতির কারণে আপন ভাইও হয়ে ওঠে শত্রু। সাপের মত পিটিয়ে মারতে হয় বিরোধীদলীয় কোনও লোককে। যতক্ষণ না পর্যন্ত সে মারা গেছে, তার মগজ থেতলে বেরিয়ে এসেছে, ততক্ষণ লাঠির বাড়ি চালাতে হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণিটিও তার স্বজাতের কারও উপর এভাবে আক্রমণ করেনা যেভাবে আমরা রাজনীতির কারণে নিজের ভাইকেও কোপাতে দ্বিধা করিনা। তাহলে আমাদের অবস্থান কোথায়?

এবার একটু গভীরে যাই।

এইযে এতো মারামারি, খুনাখুনি, দলাদলি কিসের জন্য? দলের জন্যই তো, নেত্রীর জন্যই তো?

তাহলে যে দলের জন্য আপনার এতো মায়া, যে দলের জন্য আপনি জান দিতেও প্রস্তুত, যে দলের জন্য আপনি জান নিতেও প্রস্তুত, সেই দল এবং নেত্রী আপনার বিপদের সময় কোথায় থাকে? এইতো মাত্র কয়েকমাস আগে দেখলাম একটি নির্দিষ্ট দলের জন্য নিরীহ বিশ্বজিৎকে ষোল কোটি মানুষের চোখের সামনে কোপিয়ে হত্যা করলো সেই দলের সোনার ছেলেরা। কই? নেতারা তো দলের সাথে তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করলো। বরং আরেকটি দলের সাথে সম্পৃক্ততার অপবাদ দিল। কি হলো? জেল কে খাটবে এখন? ফাঁসি কার হবে গো?

রানা প্লাজার রানার কথা তো ভুলে যান নি আপনারা। কুকুরের মতো কাজ করলো রানা দলের জন্য। কিন্তু যেই মাত্র বিল্ডিংটা ধ্বসে পড়লো, সাথে সাথেই তার নেত্রী সংসদে দাড়িয়ে বললেন, আমরা রানাকে চিনি না।

আমাদের বেশিরভাগ রাজনৈতিক ছোটখাটো টেংরাপুটিদেরই কোনও লিখিত ডকুমেন্ট থাকেনা যেখানে লেখা তারা অমুক দলের লোক। মুখে মুখে রাজনীতি করে সবাই। শেষ পর্যন্ত মুখে মুখে বড় লিডার অথবা ক্যাডারও হয়ে যায়। কিন্ত দলীয় লিখিত কোনও এভিডেন্স না থাকার কারণেই সেই সুযোগটা নেয় রাজনৈতিক দলগুলো।

কেন্দ্রীয় নেতা নেত্রীদের গদিতে বসিয়ে রাখতে আমরা কি না করি। তারা বসে বসে শুধু গদিই গরম করতে থাকেন আর আমাদের নির্দেশ দিতে থাকেন। আর আমরা সেই নির্দেশ মতো কাজ করতে থাকি। গণতান্ত্রিক দেশে জনগণই সরকারের গোলাম হয়ে গেলো। কিন্তু আমরা চাইলেই পারি এমন অবস্থাটির পরিবর্তন করতে। আমি জানি আমাদের কতিপয় কুকুর সদৃশ রাজনীতিবিদ ছাড়া এমন কেউ নেই যে চায়না এই পরিস্থিতির অবসান ঘটুক। আমাদের প্রবীণ রাজনীতিবিদরা মনে করেন যে আমরা কিচ্ছু বুঝিনা, আমরা সেই সত্তোরের দশকে বাস করছি। আসুন আমরা সবাই মিলে তাদের ভুল ভাঙ্গিয়ে দেই।

ভাবছেন কিভাবে?

খুবই সহজ ব্যাপার। আমরা নিজেও জানিনা আমরা কতটুকু ক্ষমতা রাখি। একটি গণতন্ত্রের সকল ক্ষমতা জনগণের হাতে। আর জনগণ সেই ক্ষমতা প্রকাশ করে ছোট্ট একটি ভোটের মাধ্যমে। আমরা বরাবরই দলীয় এবং খারাপ লোকদের নির্বাচিত করে সংসদে পাঠাই। তারপর কপাল চাপরাই। খারাপ লোককে সংসদে পাঠিয়ে তার কাছ থেকে ভালো আশা করি কিভাবে? তাইতো সংসদে কেউ আমাদের কথা বলেনা।

আমাদের এই ছোট্ট রীতিটাকে একটু কষ্ট করে বদলাতে হবে। এবারের নির্বাচনে দয়া করে যোগ্য এবং ভালো লোকটিকে নির্বাচিত করুন। তা তিনি যে দলেরই হোন না কেন। আমারা আওয়ামীলীগ আর বিএনপির নামে পাগল। এদের নির্বাচিত করতে গিয়ে অনেক সময় স্বতন্ত্রের অথবা অন্য দলের ভালো লোকটির দিকে নজরই দেইনা। আমরা যদি আওয়ামীলীগ অথবা বিএনপি ছাড়া আমাদের পছন্দমতো মাত্র ২০% সদস্য সংসদে পাঠাতে পারি তাহলে আমাদের জনগণের দাবি গুলোও উঠে আসবে সেখানে। আর এভাবেই একটি পরিবর্তনের সূচনা ঘটাতে পারি আমরা।

লাঙ্গল দিয়ে ধান চাষ করে তা পাল্লা দিয়ে মেপে নৌকায় বুঝাই করে করেই তো চার দশক কাটিয়ে দিলাম। এইবার নাহয় একটু খেয়াল কইরা।

বিষয়: বিবিধ

১১২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File