খালাম্মার হাওয়াই জাহাজ

লিখেছেন লিখেছেন সাদাসিধে ঝুলিওয়ালা ১৬ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:৫৫:২৯ সন্ধ্যা

আমেরিকার ফরেন মিনিস্টারের নিজস্ব বিমান আছে কিন্তু তাদের খালাম্মার বিমান নেই, খালাম্মার এই দুঃখটুকু অবশেষে বুঝতে পারলো সোনার ছেলেরা। সাথে সাথেই "খালাম্মার হাওয়াই জাহাজ" নামক চ্যারিটি খুলে ফেললো তারা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে তারা নেমে পড়লো চ্যারিটির জন্য টাকা তুলতে।

সমাজের বিভিন্ন পেশার লোকজনদের কাছে তারা এই চ্যারিটির কাজ, উদ্দেশ্য এবং হাওয়াই জাহাজের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে গিয়ে বললো, এই হাওয়াই জাহাজের উপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অর্থনীতি। খালাম্মা যত দ্রুতগতিতে যাতায়াত করবেন, পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিও সেই গতিতে উন্নতি লাভ করবে।

হুমমম... খুব গভীর ব্যাপার। তাই কয়েকজন ভিক্ষুক সবার আগে সাড়া দিল, থালায় যা ছিল দিয়ে দিল। তারপর কিছু রিক্সা এবং সিএনজি চালকদের সাড়া মিললো। সুশীলরা কিছু উপদেশ দিয়ে চাঁদার ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো। তাই প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে বাধ্য হলো সোনার ছেলেরা। ব্যস্ কাজ হয়ে গেলো। যারা সুশীলদের মতো সুযোগ নিতে চাইলো তারাও যন্ত্রপাতির দেখা পেলো। লোকজন টাকা দিতে থাকলো। প্রচুর টাকা উঠলো। কিন্তু সোনার ছেলেরা তাদের চা নাস্তার টাকাটা সরিয়ে নিতে নিতে অবশেষে কিছুই বাকি থাকলোনা। এবার সরকারি খাতের দিকে নজর পড়লো। রাষ্ট্রীয় ব্যয় দেখিয়ে কিনে ফেলা হলো খালাম্মার হাওয়াই জাহাজ।

ব্যস, খালাম্মারে আর পায় কে? হাওয়াই জাহাজ নিয়ে তিনি ঘুরতে থাকেন এদেশ থেকে ওদেশ। বিদেশী খাবার আর দামী দামী হোটেল স্যুটের আরাম আয়েশে খালাম্মা ভুলে যান তার নিজের দেশের কথা, সোনার ছেলেদের কথা।

কয়েক বছর পর হঠাৎ দেশে যাওয়ার জন্য খালাম্মার মন আনচান করতে থাকে। পাইলটকে বললেন, "আমাকে দেশে নিয়ে চলো।"

পাইলটঃ কোন দেশে ম্যাডাম?

খালাম্মাঃ আমাদের নিজেদের দেশে।

পাইলটঃ আমাদের দেশ? কোনটা?

খালাম্মার সাথে বিদেশ ঘুরতে ঘুরতে পাইলট নিজেই ভুলে গিয়েছিল তারা কোন দেশের বাসিন্দা। মনমোহন বাবুকে ফোন করে দেশের এড্রেসটা নিয়ে নিলেন খালাম্মা।

অবশেষে দেশের আকাশ সীমায় প্রবেশ করলো খালাম্মার হাওয়াই জাহাজ। সোনার ছেলেরা দেখে ফেললো। সাথে সাথে তারা পিছু ছুটতে থাকলো। অনেক দিন পর দেশে ফেরার ফলে কোথায় এয়ারপোর্ট সেই কথাই ভুলে গেলো পাইলট। এদিকে তেল ফুরিয়ে যাচ্ছে। অতিসত্বর ল্যান্ড করতে হবে। তাই সামনে একটি বিশাল জমি দেখে সেখানেই ল্যান্ড করার সিদ্ধান্ত নিল পাইলট। সারা শরীরে কাদা নিয়ে জমিনে ধান বুনছিলো কিছু কৃষক। হাওয়াই জাহাজ তাদের দিকেই আসছে দেখে ছুটে দূরে সরে গেলো তারা। হাওয়াই জাহাজ যখন পুরোপুরি স্থির হলো তখন তারা ধীরে ধীরে কাছে আসলো এবং ভেতর থেকে কে বের হয় তাই দেখার জন্য হাওয়াই জাহাজের দরজার সামনে এসে জড়ো হলো।

আড়মোড়া ভেঙে দাঁড়ালেন খালাম্মা। বের হয়েই সোনার ছেলেদের হাতে সংবর্ধনা গ্রহণ করবেন ভেবেই তার মনটা কেমন আনন্দে লাফ দিয়ে উঠলো। দরজা খুললো পাইলট। এক পা দুই পা করে দরজার সামনে এসে বিদেশী পোজ দিয়ে দাঁড়ালেন খালাম্মা। কিন্তু সামনের দিকে তাকাতেই খালাম্মার আক্কেল গুড়ুম। একি? রোদে পোড়া কালো শরীরে কাদা নিয়ে ধবধবে সাদা দাঁত বের করে মফিজ মার্কা মোলায়েম টাইপ হাসি দিয়ে কয়েকজন কৃষক তাকিয়ে আছে তার দিকে।

"এ আমাকে কোথায় নিয়ে এলে পাইলট?" বলে চিৎকার করে উঠলেন খালাম্মা।

হাসিটা আরেকটু প্রশস্ত করলো একজন কৃষক। রোদের আলোয় দাঁতগুলো চিকচিক করে উঠলো। আর তারই সাথে একটু উঁচু স্বরে বললো,

"ওয়েলকাম ব্যাক টু বাংলাদেশ, খালাম্মা।"

বিষয়: বিবিধ

১১৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File