আবু নকীব করলে ভাল, আবু ওয়ামী করলে খারাপ। জামায়াত কারো পারিবারিক সম্পত্তি না।
লিখেছেন লিখেছেন পান্থ ০৭ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৫৩:৪২ রাত
লিখেছেন মুরীদ রাশীদ রিদা।
লেখাটি কপি পেস্ট করা হল মাত্র।
আমরা শিখেছিলাম যে আমাদের পার্টি অন্যদের চাইতে অনেকগুলো কারনে ডিফরেন্ট।
এর একটা হচ্ছে, সিদ্ধান্ত যা-ই হোক এখানে খোলা মনে সবাই মত প্রকাশ করতে পারে।
কামারুজ্জামান ভাই যখন জেল থেকে অচলায়তন কে সংস্কার করে যুগোপযোগী করার জন্য লেখা (http://imbd.blog.com/?p=22) লিখলেন তখন নির্বাহী পরিষদে উনি প্রচন্ড আক্রোশের মুখোমুখি হলেন, কেউ কেউ তো স্বীকারই করলেন না যে এটা কামারুজ্জামান ভাই আদৌ লিখেছেন। কেন তিনি ফোরামের বাইরে কথা আসতে দিলেন এইসব আরো কত নিয়ম…
এবার দেখলাম জনাব আবু নকীব (নকীব ভাই এর বাবা) জেল থেকে লিখলেন। চিঠি নয়। উপসম্পাদকীয়! “ইসলামী আন্দোলনে হীনমন্যতাবোধের সুযোগ নেই” (http://www.dailysangram.com/news_details.php?news_id=125508 )
কোন ব্যাপারে?
পার্টির নীতি নির্ধারনী ব্যাপারে!
এবার কেউ বললেন না যে এটা লেখার আগে নির্বাহী পরিষদে কী আলোচনা হয়েছে?এখানে শেষ না এই লেখা ফটোকপি করে সব শাখার মাধ্যমে গ্রামে গঞ্জে জনশক্তির মাঝে ছড়িয়ে দিতে নির্দেশ দেওয়া হল!
তাহলে দেখা যাচ্ছে শুধু খোলামনে কথা বলাই এখানে বন্ধ করা হয়েছে তা না, এখানে একটা ডিক্টেটরিয়াল পদ্ধতিতে ব্যাক্তি, গোষ্ঠী ও পরিবার বিশেষের নিজেদের মস্তিষ্কে প্রডিউসড আইডিয়া অন্যদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এ কাজে ব্যাবহার হচ্ছে পার্টির ইনফ্রাস্টাকচার, জনশক্তি, নেটওয়ার্ক।
মস্তিষ্কে প্রডিউসড আইডিয়া একারনে বললাম কারন জনাব আবু নকীব বিশ্ব ইসলামী আন্দোলন সমূহের রিফর্মের ব্যাপারে কলম ধরেছেন। কিন্তু এসব ব্যাপারে তার জানাশোনা যে আরব এফেয়ার্সের যেকোনো গড়পড়তা সাংবাদিকের চাইতে অনেক কম সেটা তার লেখার বর্ণে বর্ণে পরিস্কার। জানি তিনি জেলে আছেন, এই জেলে বসেই মাওলানা মওদূদী তাফহীম আর সাইয়্যেদ কুতুব যিলালিল কুরআন লিখেছিলেন। বুঝতে অসুবিধা হয়না কেন মাওলানা মওদূদী তার সময়ের উলামাদের কে চ্যালেঞ্জ করে আনকোরাভাবে ইসলামের রাজনৈতিক, তমাদ্দুনিক, অর্থনৈতিক চিন্তা হাজির করতে পেরেছিলেন আর কেন আমাদের নকীব ভাই এর বাবা যেকোনো চ্যালেঞ্জের মুখ বন্ধ করতে, যেকোনো মেরামত/সংস্কার প্রক্রিয়ার গলা টিপে ধরতে ব্যাস্ত আছেন।
মাওলানা মওদূদী সবসময় ব্যাক্তি মওদূদী ও আমীরে জামায়াত মওদূদীর মধ্যে একটা পার্থক্য করতেন। এরকম হিম্মত তার ছিল। তার নিজের চিন্তা যা বিভিন্ন বই যেমন রাসায়েল মাসায়েল ও অন্যান্য আরো বইতে আছে সেগুলো তিনি জামায়াতের উপর আরোপ করেননি। তিনি অন্যদের কথা বলার সুযোগ দিতেন, চাপিয়ে দিতেন না।
দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এখন আবু নকীব (নকীব ভাই এর বাবা), এর আগে উম্মু নকীব (নকীব ভাই এর আম্মু, তিনি অবশ্য নিজ নামেই লিখেছিলেন সোনারবাংলা পত্রিকায় http://www.weeklysonarbangla.net/news_details.php?newsid=799 ) তথা ব্যক্তি বিশেষ ও পরিবার এর ব্যাক্তিগত প্রিফারেন্স ও সীমাবদ্ধ অসম্পূর্ন তাকলীদি চিন্তা, ইসলামী আন্দোলনের সামগ্রিক চিন্তা চেতনার উপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিন্ন চিন্তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে বন্ধ করা হচ্ছে। শুনি আমাদের ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিরা নাকি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কার্যকরি পরিষদের ভয়ে নয়, উম্মু নকীব এর ফোনের ঝারি খাওয়ার ভয়ে তটস্থ থাকেন।
নকীব ভাই এর বাবা মা এর চিন্তার ক্রিটিক না করেই এটা বলে দেওয়া যাচ্ছে যে, যে প্রক্রিয়ায় তাদের চিন্তা আমাদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেটা একটা স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, এটা শুধু অনৈসলামিক ই নয়, এটা এন্টি ইসলামিক। ইসলামী আন্দোলনের নিবেদিত প্রান জনশক্তিদের উচিত ক্রিটিকালী ভেবে দেখা যে তাদের প্রানের আন্দোলন কোন দিকে যাচ্ছে। এজন্য পড়াশোনার কোনো বিকল্প নাই। পড়া পড়া আর পড়া। সারা দুনিয়া আপনার সামনে উন্মুক্ত, শুধু আপনার চোখ মেলবার অপেক্ষা।
শায়খ ইউসুফ আল ক্বারাদাওয়ী তার বইPriorities of The Islamic Movement in The Coming Phase এর What I Fear for the Islamic Movement চ্যাপ্টারে লিখেছেন,
“ইসলামী আন্দোলনের জন্য আমার এই ভয়টাই সবচাইতে বেশি হয় যে, এই আন্দোলন তার সন্তানদের মধ্যে যাঁরা বুদ্ধিজীবি তাদেরকে পছন্দ করেনা। এটা পুনুরুজ্জীবন (তাজদীদ) এবং ইজতিহাদ এর দরজা বন্ধ করে দিয়ে শুধু একধরনের চিন্তার মধ্যে নিজেকে আটকে ফেলে। এই চিন্তা পদ্ধতি বিভিন্ন লক্ষ্য, উপকরণ এবং সময়কাল এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ নির্দেশকারী অন্য যেকোনো মতামতকে অস্বীকার করে, অথচ স্বাধীন ইজতিহাদের মাধ্যমে বিভিন্ন পথ তালাশ করার স্বাধীনতা এক্ষেত্রে স্বীকৃত।
পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তনের স্বাপেক্ষে স্বাধীন মানবীয় ইজতিহাদ সবসময়ই পরিবর্তনের মুখাপেক্ষী। আমাদের সালাফ অনেক আগেই বলেছিলেন, “একটা ফাতওয়া স্থান, কাল, প্রথা এবং পূর্বশর্তের পরিবর্তনে অবশ্যই পরিবর্তন হবে”।
আমার ভয় যদি সত্য হয়ে যায় তাহলে সৃজনশীল এবং পুনরুজ্জীবন ঘটাতে পারে এমন সজীব ও সতেজ মনগুলো এই আন্দোলনের Rank গুলো থেকে ছুটে পালাবে, ঠিক যেভাবে আংগুলের ফাঁক গলে পানি গড়িয়ে পড়ে। আর পেছনে রেখে যাবে শুধু সেই বুড়ো জরাগ্রস্থ মনগুলোকে যারা পারে কেবল অন্ধ অনুকরন করতে আর যারা চায় প্রত্যেকটা জিনিশ যেন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে অপরিবর্তিত স্থানুর মত, যতই পুরোনো আর প্রাচীনই তা হোক না কেন। এবং এরা মনে করে; আমরা যা জানি তা, আমরা যা জানিনা তার চেয়ে শ্রেয়, আর আমরা যে পথে চলে দেখেছি তা নিশ্চয়ই সেই পথের চেয়ে ভাল যা আমরা এখনও চিনিনা।
এর ফল এটাই হবে যে, এই আন্দোলন সৃজনীক্ষমতা সম্পন্ন সজীব প্রাণগুলোকে আর কিছুতেই এর পদপদবীর ভিড়ে খুঁজে পাবেনা এবং শেষমেষ একটা অচল স্থির দলে পরিনত হবে। অথবা একটা ফিকহী তর্কে জর্জরিত অনুকরনপটিয়সী অথর্ব গোষ্ঠী হিসেবে নিজেকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলবে। আন্দোলনের অবশিষ্ট সদস্যরা নিজেদের কুঠুরীর মধ্যে কচ্ছপের গতিতে হামাগুঁড়ি দেবে, ইসলামের পুনরুজ্জীবনের জন্য বাস্তবিকফল বয়ে আনতে পারে এরকম যেকোনো তৎপরতার দিকে ঘৃণাভরে নাক সিটকাবে। অথবা তারা ব্যাক্তিগতভাবে ছাড়াছাড়া হয়ে কাজ করবে, সমষ্টির কথা ভুলে যাবে।”
আল্লাহর পথের ভাইয়েরা আজকের জামায়াতের সাথে কোনো মিল পাচ্ছেন???
বিষয়: বিবিধ
১২৫৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন