চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার নির্মাণে জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ দূষণের দাবীতে মানববন্ধন
লিখেছেন লিখেছেন সময়ের আলো ২৪ ডটকম ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৭:১৯:৪১ সন্ধ্যা
পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ নগরায়ন শীর্ষক মানববন্ধন ও সংহতি সম্মিলনে বক্তারা
ফ্লাইওভার নির্মাণে জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ দূষণ
রোধে দায়িত্বশীল ও কার্যকর ভূমিকার দাবী
চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার নির্মাণ কার্যক্রমের ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ, জনদুর্ভোগ, জনস্বাস্থ্যের ক্ষতিরোধ এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় যাতায়াত সুবিধা নিশ্চিতকরণের দাবিতে আয়োজিত মানববন্ধন ও সংহতি সম্মিলনে বক্তারা বলেন, পৃথিবীব্যাপী যখন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন কর্মযজ্ঞকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, সেখানে চট্টগ্রামের উন্নয়ন কর্মকান্ডে তা অনুপস্থিত। বর্তমানে মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের ফলশ্রুতিতে প্রকল্পের নিকটবর্তী এলাকা ও বিপুল জনগোষ্ঠী মারাত্মক পরিবেশ ঝুঁকিতে পড়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির পরিকল্পিত সদ্ধব্যবহারের মাধ্যমে জনদুর্ভোগ চরমমাত্রা থেকে সহনীয় বা সর্বনিম্ন মাত্রায় নিয়ে আসা সম্ভব।
গত ৮ ডিসেম্বর ২০১৫ নগরীর নাসিরাবাদ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে “পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ নগরায়ন চাই” শীর্ষক সংহতি সম্মিলন পরিবেশবাদী সংগঠন ইকো ফ্রেন্ডস’র সাধারণ সম্পাদক ও উন্নয়নকর্মী নোমান উল্লাহ বাহারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। কর্মসূচীর আয়োজন ও অংশগ্রহণকারী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ ছিল-ইকো ফ্রেন্ডস, চাঁদের হাট-চট্টগ্রাম, স্বাধীন সাংস্কৃতিক একাডেমী, সেহের অটিজম সেন্টার, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম সিটি যাত্রী কল্যাণ সমিতি, সানশাইন ফ্যামিলি, এখন সময়, সিটিজি ব্লাড ব্যাংক, নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সচেতন নাগরিকবৃন্দসহ ভুক্তভোগী পথচারীরাও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করেন। সংহতি সম্মিলনে বক্তব্য রাখেন-পরিবেশবিদ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল কিবরীয়া, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান, কলামিষ্ট সাখাওয়াত হোসেন মজনু, ন্যাশনাল ইনষ্টিটিউট অব টেকনোলজি (এনআইটি)’র চেয়ারম্যান আহছান হাবিব, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল এন্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ কামাল উদ্দিন, গ্রীণ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক চৌধুরী, শিক্ষানুরাগী এস.এম আবদুল হাকিম, সরকারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব মো: মুজিবুর রহমান, স্বাধীন সাংস্কৃতিক একাডেমীর চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন হাসান বাবু, সানাশাইন ফ্যামিলীর প্রতিষ্ঠাতা ফরিদ আলম, মিডিয়াগ্রাফীর এমডি মিল্টন দাশ বিজয়, চাঁদের হাঁট, চট্টগ্রাম’র সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন জাবেদ, এখন সময়’র প্রতিষ্ঠাতা সেলিনা সেলি, সমাজকর্মী ও ব্লগার এ আর বাহাদুর বাহার, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন আকবর, সমাজকর্মী শ.ই.রাহী, চট্টগ্রাম সিটি যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ সভাপতি আবু নাছের তৈয়্যব, ইপসার কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক সেলিম উদ্দিন, মোহাম্মদ তোয়াহা, নিশি আকতার, প্রশান্ত বড়–য়া, শিবলী সাদিক কফিল, ইমাদ উদ্দিন প্রমুখ।
পরিবেশবিদ অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মাধ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। আর সেই সাথে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। উন্নয়নের সাথে পরিবেশ সুরক্ষার সামঞ্জস্যতা আনয়ন প্রয়োজন। নির্মিতব্য ওড়াল সেতুর দুপাশে বসবাসকারী হাজার হাজার মানুষের গমনাগমন যদি ধূলায় ধূসারিত থাকে তবে যে উন্নয়ন বিড়ম্বনায় পূর্ণ, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি ও পরিবেশের ক্ষতির ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন।
নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন-পৃথিবীর প্রতিটি সভ্য দেশে যখন ফ্লাইওভারের মত নির্মাণ কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় তখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় পরিবেশের ক্ষতি, জনস্বাস্থ্য এবং জনস্বার্থ এই ৩টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। যা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই করতে হবে। কিন্তু নির্মিতব্য মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অক্ষমতাই লক্ষ্যনীয়।
অধ্যাপক মনজুুরুল কিবরিয়া বলেন- ৫০ লক্ষ টাকার অধিক কোন কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ইকোলোজিক্যাল ইনপেক্ট এসেসম্যান্ট (ঊওঅ) এবং স্যোশাল ইনপেক্ট এসেসম্যান্ট এর রির্পোট জমা দিতে হয়। জনদুর্ভোগ প্রতিকারে যদি কোন কাজ না করে থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটি দুর্নীতি করছে। যা পরিবেশ আইন বিরোধী। তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জনভোগান্তির ৩ বছর পর যখন এই ফ্লাইওভার জনগণের জন্য ব্যবহার হবে তা কতটুকু কাজে আসবে?
এছাড়াও অতিথিবৃন্দ বলেন- নির্মিতব্য ওড়াল সেতুর বায়বীয় ক্ষুদ্রকণার বিড়ম্বনা আমাদের শ্বাসযন্ত্র, ফুসফুসকে আক্রান্ত করে। চোখের বিড়ম্বনা বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রদাহ সৃষ্টি করে। হাঁপানি, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বাতাস, মাথা ব্যাথা, প্রভৃতি রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। গর্ভবতী মা, শিশু, বৃদ্ধ, হাসপাতালের রোগী, স্কুলগামী শিশুদের আক্রান্ত করে। অসুস্থ করে পরিবার, সমাজ ও হাট বাজার, পথচারি মানুষকে। জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কোথায় কোথায় অস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, তাও আমরা জানিনা। বছরের বিভিন্ন সময়ে এ অঞ্চল থেকে কতজন নাগরিক পেশা ও কর্ম নির্বিশেষে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন-সে হিসাবও অনুপস্থিত। দিনে লালখান বাজার হয়ে মুরাদপুর অতিক্রম করে প্রায় সাতহাজার বিভিন্ন যান। পঞ্চাশ থেকে সত্তর হাজার মানুষের গমনাগমন যদি ধুলায় ধূসরিত থাকে, তবে যে উন্নয়ন বিড়ম্বনার পূর্ণ, তা নির্দিধায় বলা যায়। আমাদের প্রত্যাশা বিড়ম্বনামুক্ত উন্নয়ন। পৃথিবীর অপরাপর দেশের উদাহরণ অনুসরণযোগ্য। জনস্বাস্থ্য ও অন্যান্য নিরাপত্তা বিধানে যে যে সতর্কতা অবলম্বন দরকার, নির্মাণ বিধি যা যা অনুসরণ করতে নির্দেশনা দেয়- তা কতটুকু অনুসরণ হচ্ছে তা জানা দরকার। শ্রমিক স্বাস্থ্য ও ঝুঁকির নিরাপত্তাই শুধু নয়, পার্শ্বিক ঝুকি ও পরিবেশ বিড়ম্বনা কত নিন্ম মাত্রায় রাখা যায়- তা বিধি সম্মতভাবে অনুস্মরণ যোগ্য। যে বিষয়টি নজরে আনা প্রয়োজন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্পের জন্য এর কতটুকু কার্য সম্পাদন করছে।
আজকের দৈনিক আজাদীClick this link
বিষয়: বিবিধ
২০৬৮ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন