চট্টলাবাসীর স্বপ্ন: বহদ্দারহাটে প্রত্যাশার ফ্লাইওভার খুলছে কাল

লিখেছেন লিখেছেন সময়ের আলো ২৪ ডটকম ১১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৭:১৪:২১ সকাল

বহদ্দারহাটে প্রত্যাশার ফ্লাইওভার খুলছে কাল

.................................................

চট্টগ্রাম মহানগরীর যান চলাচলে ব্যাপক গতিশীলতা সৃষ্টিসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাচ্ছে। নগরীর সর্বসাধারণের জন্য নির্মিত প্রথম ফ্লাইওভার হিসেবে বহুল প্রত্যাশার বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে কাল থেকে গাড়ি চলবে। আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফ্লাইওভার উদ্বোধন করবেন। একই সাথে আগামীকাল উদ্বোধন করা হচ্ছে দেওয়ান হাট ফ্লাইওভারের। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দশটি প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৪৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে গৃহীত মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এসব প্রকল্পের পাশাপাশি রাউজানে ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং পশ্চিম গুজরায় মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন কমপ্লেক্স উদ্বোধন এবং নোয়াপাড়ায় শেখ কামাল স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ছবি সম্বলিত মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী।

সূত্র বলেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে যান চলাচলে ভয়াবহ রকমের স্থবিরতা দেখা দেয় কয়েক বছর আগেই। বিশেষ করে বহদ্দারহাট মোড়ের যানজট পরিস্থিতি ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে। বহদ্দারহাট মোড়ের যানজট নগরীর মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট এবং জিইসি মোড় (অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ চত্বর) পর্যন্ত এলাকায় মারাত্মক রকমের নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অপরদিকে কর্ণফুলী নদীর উপর তিনশ’ কোটিরও বেশি টাকা খরচ করে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু নির্মাণ করা হলেও বহদ্দারহাট মোড়ের যানজটের কারণে সেতু নির্মাণের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি বহদ্দারহাটে যানজট লেগে থাকে। যার ধকল সামলাতে গিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে এবং চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কে যান চলাচলে স্থবিরতা বিরাজ করে।

এই অবস্থার অবসান ঘটিয়ে নগরীর প্রধান সড়ক এশিয়ান হাইওয়েতে যান চলাচলে গতিশীলতা সৃষ্টি এবং দক্ষিণ চট্টগ্রামের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে বহদ্দারহাট মোড়ে একটি ফ্লাইওভার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম মহানগরীর বহুল প্রত্যাশার এই ফ্লাইওভারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তর থেকে টোল রোড পর্যন্ত একটি ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হলেও কার্যত সেটি কেবলমাত্র বন্দরের পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হচ্ছে। নগরীর সর্বসাধারণের ব্যবহারের প্রথম ফ্লাইওভার হিসেবে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার শুরু থেকে নগরবাসীর মনযোগের কেন্দ্রে ছিল। ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ চলার এক পর্যায়ে গত বছরের ২৪ অক্টোবর তিনটি গার্ডার ধসে পড়ে। ওই ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন বেশ কিছু মানুষ। অনাকাঙিক্ষত ওই ঘটনার পর ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই ফ্লাইওভারের ভবিষ্যত নিয়ে শংকা দেখা দেয়। পুরো প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হওয়ারও আশংকা ব্যক্ত করেন কেউ কেউ।

ওই সময় সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ তদারকিতে সেনাবাহিনীকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। সিডিএ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম এই ব্যাপারে আবেদন করলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় সাড়া মিলে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে চলতি বছরের শুরু থেকে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ আবারো শুরু হয়।

এশিয়ান হাইওয়ের মুরাদপুর মোড়ের সন্নিকটস্থ রওশন বিল্ডিং এর সামনে থেকে কক্সবাজার সড়কের এক কিলোমিটার পর্যন্ত ১৩৩১ মিটার দীর্ঘ ফ্লাইওভারটির প্রস্থ ১৪ মিটার। ফ্লাইওভারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১৪৫ কোটি টাকা। সর্বমোট ২৪টি পিলারের উপর চার লেন প্রশস্থ এই ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার। আগামীকাল সকাল সাড়ে দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্লাইওভার উদ্বোধন করার পর এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। অবসান ঘটবে দীর্ঘদিনের সংকটের। সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের।

টুকটাক কিছু কাজ বাকি থাকলেও বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুচ ছালাম। তিনি বলেন, যেসব কাজ বাকি রয়েছে সেগুলো আমরা রাস্তা চালু রেখে সম্পন্ন করতে পারবো। অনেক প্রতিকূলতার পরও ঠিকঠাকভাবে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে এটি চালু করতে পারায় তিনি সৃষ্টিকর্তার নিকট শোকরিয়া আদায় এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।

অপরদিকে আগামীকাল দেওয়ানহাট ফ্লাইওভারও উদ্বোধন করা হচ্ছে। ঢাকা ট্রাংক রোডের উপর নির্মিত এই ফ্লাইওভারটি নগরীর দেওয়ানহাট ও কদমতলীসহ সন্নিহিত এলাকার যান চলাচলের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের বন্ধাত্বের অবসান ঘটবে। বিশেষ করে ঢাকামুখী ট্রাক এবং কাভার্ড ভ্যানসহ বাস ট্রাক চলাচলের ক্ষেত্রে নিয়ে আসবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। দেওয়ানহাট মোড়ের চিরচেনা যানজট থেকেও নগরবাসীর নিস্তার মিলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আধা কিলোমিটারেরও বেশি দৈর্ঘ্য এই ফ্লাইওভারটিও যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে আরাকান সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে অলি খাঁ মসজিদ থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম কলেজ রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা ট্রাংক রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে পাঠানটুলী রোডের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ,৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিডিএ গালর্স স্কুল এন্ড কলেজ নির্মাণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার হাজার নারী শ্রমিকের ডরমেটরি নির্মাণ, ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিউমার্কেটের বি ব্লকের দশ তলা নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। বহদ্দারহাটে ফ্লাইওভার উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এখানে নির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেবেন। জমিয়তুল ফালাহ মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশ থেকে প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল পদ্ধতিতে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন প্রকল্পের পাশাপাশি রাউজানের গশ্চি কালু মরার টেক এলাকায় ২১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২৫ মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, রাউজানের পশ্চিম গুজরার নিশ্চার ঘাট ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় মহাকবি নবীন চন্দ্র সেনের সমাধীস্থলে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে এক কোটি চুয়াল্লিশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মহাকবি নবীন চন্দ্র সেন কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের উদ্যোগে রাউজানের নোয়াপাড়ায় সাত কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কুল প্রদীপ চাকমা। রাউজানের ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইতোমধ্যে উৎপাদন শুরু করেছে বলে জানিয়ে সূত্র বলেছে যে, রাউজানের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুতের সংস্থান করার পর এখানে উৎপাদিত বাকি বিদ্যুৎ ফটিকছড়ি এবং রাঙ্গুনিয়ায় সরবরাহ দেয়া হচ্ছে।

হাসান আকবর ॥

৥দৈনিক আজাদ

বিষয়: বিবিধ

১৩৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File