মণ্ডপে মণ্ডপে দেবী বরণের প্রস্তুতি ।। আজ থেকে শারদীয় দুর্গোৎসব শুরু
লিখেছেন লিখেছেন সময়ের আলো ২৪ ডটকম ১০ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:১২:২৪ সকাল
শুকলাল দাশ ॥
শরতের আমেজে উৎসবমুখর বাংলায় আবার এসেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহত্তম ধর্মীয় অনুষ্ঠান শারদীয় দুর্গোৎসব। শরতের স্বচ্ছ নীল আকাশে এই উজ্জ্বল রোদ তো, এই ঝুম বৃষ্টি। আশ্বিন মাসের শেষ কিন্তু কাশের গুচ্ছ, শিউলির ঘ্রাণ আর আকাশের সাদা মেঘের ভেলা সব কিছুই যেন দেবী দুর্গার আগমনী বার্তার জানান দিচ্ছে। সর্বসাকুল্যে আর মাত্র কয়েকটি প্রহর বাকি তারপর শুরু হবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় শারদীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এবার আরও জাঁকজমকভাবে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেছে চট্টগ্রামের পূজা মণ্ডপগুলো। পূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে বর্ণাঢ্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে প্রতিটি মণ্ডপ। নগর থেকে গ্রাম বাংলায় এখন বইছে উৎসবের আমেজ।
ঢাকের বাজনা, উলুধ্বনি ও আরতীতে মুখরিত হবে পাড়া-মহল্লা ও গ্রাম। ভাস্কররা দেবী দুর্গা, তার সঙ্গে বিদ্যার দেবী সরস্বতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং তার সঙ্গে দেবতা কার্তিক, গণেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলেছেন নিপুণ হাতের ছোঁয়ায়।
‘যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরুপেন সংস্থিতা নমস্তসৈ নমস্তসৈ নম নম’ মন্ত্র দিয়ে মাতৃরূপী দেবী দুর্গাকে এভাবেই বন্দনা জানানো হবে। আজ ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে পাঁচদিনব্যাপী দুর্গোৎসবের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। সন্ধ্যায় ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে দেবীর বোধন।
জগতের মঙ্গল কামনায় এ বছর দেবী দুর্গা মর্ত্যলোকে এসেছেন দোলায় (পালকি) চড়ে। অন্যদিকে মর্ত্যলোকে আতিথ্য শেষে দেবী দুর্গা স্বর্গলোকে ফিরবেন গজে (হাতি) চড়ে। কাল সপ্তমী তিথিতে মণ্ডপে দেবী দুর্গার অধিষ্ঠানের মাধ্যমে শুরু হবে শারদীয় দুর্গাপূজার আনন্দ উৎসব। ১২ অক্টোবর মহা অষ্টমীর দিন সকালে কুমারী পূজা ও রাতে সন্ধি পূজা অনুষ্ঠিত হবে। ১৩ অক্টোবর নবমী এবং ১৪ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে শারদীয় দুর্গোৎসব।
সেই অনুযায়ী মণ্ডপগুলো সাজছে নানান সাজে। নগরী ও জেলার সকল মণ্ডপে ভক্তদের অভ্যর্থনা জানাতে বাহারী সাজের গেট আর তোরণ তৈরি হচ্ছে প্রতিটি মণ্ডপে। ১৪ অক্টোবর সোমবার বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে এ উৎসবের। এ বছর দেবী দুর্গা দোলায় চড়ে পৃথিবীতে আসছেন। দশমী বিহীত পূজা শেষে গজে করে কৈলাসে চলে যাবেন।
দর্শনার্থীদের আনন্দ দিতে মণ্ডপগুলোতে চলছে আলোকসজ্জার কাজ। বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে রঙিন বাতি। শারদীয়া এ দুর্গোৎসব শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নয় অন্য ধর্মাবলম্বীদের মধ্যেও সৃষ্টি করবে দৃঢ় সম্প্রীতির বন্ধন এমনটা প্রত্যাশা করছে সবাই।
এবার নগরীর ১২ থানা ও জেলার ১৪ উপজেলার ১৭৯৫টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপিত হচ্ছে। এর মধ্যে নগরীতে ২৬৩টি এবং চট্টগ্রাম জেলায় চৌদ্দ উপজেলায় ১৫৩২টি পূজা মণ্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন হচ্ছে। পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে এ পূজার আয়োজন করায় এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে যাত্রার আগে শ্রীরাম চন্দ্র দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিল শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে। এ জন্যই দেবীর শরৎকালের এ পূজাকে অকাল বোধনও বলা হয়। চট্টগ্রামের পূজা মণ্ডপগুলোর মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে প্রতিবারই পৌরানিক ‘থিম’ অনুসরণ করে পাথরঘাটা সতীশবাবু লেইন পূজা পরিষদ, হাজারী লেইন পূজা মণ্ডপ, সিটি কর্পোরেশনের কুসুমকুমারী পূজা মণ্ডপ, দক্ষিণ নালাপাড়া পূজা মন্ডপ, আগ্রাবাদ একতা সংঘ পূজা মণ্ডপ।
পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইন পূজা মন্ডপ : পাথরঘাটা সতীশ বাবু লেইন পূজা মণ্ডপ এবার সাজানো হয়েছে হিমালয়ের বরফের পাহাড়ের (আইল্যান্ড) আদলে। যেখানে দুর্গা শ্বেত শুভ্র রূপ ধারণ করবে। পাহাড় থেকে গলিত বরফের জল ঝর্ণা হয়ে পৃথিবীতে নেমে আসবে । লাইট এবং সাউন্ডের কম্বিনেশনে এক অপূর্ব মায়াবী আবহ সৃষ্টি হবে এই মণ্ডপে।
এবার ভিন্ন আঙ্গিকে এই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। মা দুর্গাকে কৈলাস থেকে এই ধরাধামে আহবান করবে পূজার্থীরা। পৃথিবীর উষ্ণতাকে উপলব্ধি করে এই মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। এ ব্যাপারে পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার দাশ জানান, আস্তে আস্তে বরফ গলিত হয়ে বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি জায়গা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য ভক্তি বিনম্র আরাধনা মা দুর্গার কাছে।
পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দির : পাথরঘাটা শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। আজ ষষ্ঠীতে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরু হবে। এছাড়াও রয়েছে, ধর্ম সম্মেলন, গীতা পাঠ, আরতি, মহা অষ্টমীতে কুমারী পূজা ইত্যাদি।
সনাতন সমাজ সংঘ : নগরীর লালখান বাজারে সনাতন সমাজ কল্যাণ সংঘের উদ্যোগে শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এবারও ‘দক্ষযজ্ঞের’ আয়োজন করা হয়েছে। দক্ষরাজা রাজবাড়িতে দক্ষযজ্ঞের আয়োজন করেন। কিন্তু নারদ মুনি ঋষিসহ দেবতাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও এতে শিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি-এ নিয়েই দক্ষযজ্ঞ।
পাথরঘাটা সাধু তারাচরণ সেবাশ্রম : পাথরঘাটা সাধু তারাচরণ সেবাশ্রমে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মঙ্গলদীপ প্রজ্বালন করে পাঁচ দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন, গীতাপাঠ, ধর্ম সম্মেলন, পুরস্কার বিতরণ, বাদ্যযন্ত্র সহকারে আরতি, গরিব ও দুস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরণ, প্রতিমা প্রদর্শন, প্রসাদ বিতরণ, পতেঙ্গা সৈকতে মায়ের বিসর্জন। এই উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা কমিটির সভাপতি রতন চন্দ্র ভৌমিকের সভাপতিত্বে মন্দির প্রাঙ্গণে গত ৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয়।
সাধারণ সম্পাদক লিটন দত্তের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য, এড. সুশীল কুমার দাশ, দেবব্রত চক্রবর্তী, শিবু প্রসাদ দাশ, মিহির কানুনগো, রোটন্তী চক্রবর্তী, সুজিত সরকার, মিলন কান্তি বণিক, মাখন বণিক, ঝন্টু কুমার দে, তপন চক্রবর্তী, আশীষ দাশ, মিলন দাশ, তাপস হোড়, প্রণব দাশ, সানু দাশ, রণবীর ঘোষ টুটন।
রাঙ্গুনিয়া পূজা উদযাপন পরিষদ : গত ৮ অক্টোবর রাঙ্গুনিয়া উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও বস্ত্রদান কর্মসূচি সভাপতি এডভোকেট পঙ্কজ কুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও শৈবাল চক্রবর্তীর পরিচালনায় রাঙ্গুনিয়া পাবলিক হলে অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার মজুমদার, প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পালিত। বক্তব্য রাখেন জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট চন্দন বিশ্বাস, বিশেষ অতিথি ছিলেন রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি চন্দন কুমার চক্রবর্তী, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাদেকুন নুর শিকদার, এডভোকেট ভবতোষ নাথ, আওয়ামী লীগ নেতা ওসমান গণি চৌধুরী, জেলা পূজা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ পালিত, দোলন মজুমদার, অলক মহাজন, সাংগঠনিক সম্পাদক কল্লোল সেন, মাস্টার সুকোমল শীল, অজিত শীল, পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডাঃ সন্তোষ শীল, উপাধ্যক্ষ দুলাল দাশ, নিবারণ দাশ, ডাঃ নিপন পাল, ডাঃ রূপাল নাথ, সমীর চক্রবর্তী, অজিত মল্লিক, অঞ্জন দে, পরিমল দাশ, বিজন দাশ গুপ্ত।
সভা শেষে দুস্থদের মাঝে বস্ত্রদান করা হয়। দ্বিতীয় পর্বে বিষয় নির্ধারণ কমিটি সর্বসম্মতিক্রমে পুনরায় এডভোকেট পঙ্কজ কুমার চৌধুরী সভাপতি, শৈবাল চক্রবর্তী সাধারণ সম্পাদক, সিনিয়র সহ-সভাপতি ডাঃ সন্তোষ শীল, সহ-সভাপতি রঘুনাথ মজুমদার সহ ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্র: দৈনিক আজাদী
বিষয়: বিবিধ
১৩৪৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন