ভ্যালেন্টাইনস' ডে কি? ভ্যালেন্টাইন কে?এই দিবসটি কি মুসলমানরা পালন করতে পারে?
লিখেছেন লিখেছেন হৃদয় আমার তলোয়ার ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১২:৫৫:৫৭ রাত
ভ্যালেন্টাইনস' ডে কি? ভ্যালেন্টাইন কে?এই দিবসটি কি মুসলমানরা পালন করতে পারে?
প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাস আসলেই আমাদের যুব সমাজের সুড়সুড়ি বাড়ানোর জন্য আমাদের মিডিয়া গুলো উঠে পড়ে লাগে। তারা চাই আমাদের যুব সমাজকে বিজাতীয় সংস্কৃতিতে ডুবিয়ে মারার জন্য। একটি জাতির মূল চালিকা শক্তি হলো যুবসমাজ। যদি কোনো ভাবে কোনো জাতির যুবসমাজ কে ধ্বংস করা যায় তাহলে সে জাতি অচিরেই ধ্বংসের মুখে পড়বে। আমার মূল আলোচনা হলো ভ্যালেন্টাইনস' ডে সম্পর্কে। আজ থেকে ১৪/১৫ বছর আগে এই প্রথা টি ছিলনা। কিছু পশ্চাত্য মুখুর মিডিয়া এই প্রথাটা আমাদের যুবসমাজের সাথে পরিচয় করে দিয়েছে।তখন থেকেই এই ভ্যালেন্টাইনস' ডে কে বাংলাদেশের মুসলিম যুবসমাজ নিজের সংস্কৃতি মত আকড়ে ধরেছে।
ভ্যালেন্টাইনস' ডে কি?
আমরা সাধারনত জানি একটি কাহিনীর উপর ভিত্তি করে এই দিবসটি পালন করা হয়।আবার এমন অনেক যুবক আছে এই সম্পর্কে কিছুই জানেনা তবে অন্যজনের দেখা দেখিতে এটি পালন করে। কিন্তু অনেকে জানে না ভ্যালেন্টাইনস' ডে সথে জড়িয়ে আছে আরও অনেক কাহিনী। এই দিবসের ঐতিহাসিক ভিত্তি কোথায়?
১. যীশু - খ্রীষ্টের জন্মের অনেক আগে চতুর্থ শতকে পুত্তলিকা, মুর্তিপূজারীদের সমাজে বিভিন্ন অনুষ্টান প্রচলিত ছিল। তারা বিভিন্ন দেবতাকে পূজা করত, তাদের বিভিন্ন দেবতা ছিল, পশু পাখির জন্য একটি দেবতাকে তারা কল্পনা করত। জমির উর্বরতার জন্য একটি দেবতাকে তারা বিশ্বাস করত। দেবতার নাম হচ্ছে "লুপারকালিয়া"। এই দেবতার সম্মানে তারা একটি অনুষ্টান করত। এই অনুষ্টানের একটি কর্মসূচি ছিল, যুবতীদের নামে লটারি ইস্যু করা হত। লটারিতে যে যুবতী যে যুবকের ভাগে পড়ে আগামী বছর এই দিন আসা পর্যন্ত সে যুবতীকে যুবক ভোগ করত। অর্থাৎ লটারির মাধ্যমে যুবতিদেরকে বন্টন করা হত। আগামী বছর লটারি না দেওয়া পর্যন্ত যুবতী এই যুবকের সাথে থাকবে। সেদিন দেবতার নামে পশু উত্সর্গ ও জবাই করা হত। জবাইকৃত ছাগলের চামড়া তুলে যুবতীর গায়ে মধ্যে জড়িয়ে দেওয়া হত। তারপর ছাগলের রক্ত ও কুকুরের রক্ত রঞ্জিত একটি চাবুক যুবকের হাতে দেওয়া হত। যুবক সে চাবুক দিয়ে চামড়া পরিহিতা যুবতীকে আঘাত করত, তারা মনে করত এই চাবুকের আঘাতের কারণে যুবতীটি সন্তান জন্ম দেয়ার উপযুক্ত হবে। আর এই অনুষ্টানটি পালিত হত ১৪ ফেব্রুয়ারী।এর পরে খ্রিষ্ট ধর্মের আবিভূর্ত হলো। খ্রিষ্ট ধর্ম হলো আহলে কিতাবের ধর্ম।তাদের কিতাব হলো ইনজিল। তাই এই জাতীয় পৌত্তলিক কু-সংস্কার কে আহলে কিতাব হিসেবে সমর্থন করতে পারেনা। এজন্য তারা এই প্রথা ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করলো। কিন্তু তারা এই প্রথাকে রোধ করতে পারলনা। উপায় না দেখে তারা এই অনুষ্টানকে বিশুদ্ধ করার চেষ্টা করল। অনুষ্টানটি ঠিক রেখে একে একটু বিশুদ্ধ করা হবে, কিভাবে বিশুদ্ধ করা যায় এই চিন্তা মাথা রেখে তারা এগুতে রাখল। তারা বলল যে, আগে অনুষ্টানটি ছিল দেবতার নামে, এখন হোক পাদ্রীর নামে। যুবতীর নামে লটারির পরিবর্তে পাদ্রীর নামে লটারি হল যে, যুবকের ভাগে যে পাদ্রীর নাম আসবে সে যুবক পাদ্রীর সংস্পর্শে এক বছর অতিবাহিত করবে। অনুষ্টানটির ধরন পরিবর্তন করা হল। এবার অনুষ্টানটি পবিত্র করার জন্য পাদ্রীর সুহবতে যুবক দেয়া হত। যাতে পাদ্রীর কারণে যুবকের চরিত্র ভালো হয়। ৪৭৬ সালে পোপ জেলিয়াস বললেন, দিবসের নাম পরিবর্তন করা দরকার। আগে ছিল একজন দেবতার নামে এটা পরিবর্তন করে একজন যাজকের নামে নামকরণ করে তার সম্মানে এই দিবসটি পালন করা হোক। এই যাজকের নাম ছিল "ভ্যালেন্টাইন"। ৪৯৬ সাল থেকে এই দিবসটি পালন করা হয় ভ্যালেন্টাইনস' ডে। সুতরাং ১৪ ফেব্রুয়ারী হলো ভ্যালেন্টাইনস' ডে।
২. ভ্যালেন্টাইন নামে একজন যাজক ছিলেন। তাকে রোমান সরকার গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিয়ে বলা হয় যে, রোমান সরকরকে তোমার পূজা করতে হবে। তখন খ্রিষ্টের ধর্মের যাজক ভ্যালেন্টাইন বললেন, আমি রোমান সরকারের কাছে মাথা নত করতে পারিনা, আমি পৌত্তলিকতাকে বিশ্বাস করতে পারিনা। আমি বিশ্বাস করব যীশু খ্রিষ্টের পিতাকে, ঈশ্বরকে, তাকেই ভালবাসব, তারই অনুকরণ করব এবং তার কথা মত চলব। রোমান সরকারের নির্দেশ অমান্য করায় তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। একজন পাদ্রী তার খ্রিষ্টিয় ঈমানকে রক্ষা করতে গিয়ে রাজার হাতে নিহত হওয়ার দিন থেকে খ্রিষ্টান ধর্মালম্বিরা সেদিনকে পাদ্রীর নাম অনুসারে ভ্যালেন্টাইনস' ডে হিসেবে পালন করা আসছে।
অন্য ইতিহাসে আছে এই পাদ্রী ভ্যালেন্টাইন গ্রেপ্তার হওয়ার পর কারাগারের প্রধান রক্ষকের মেয়ের প্রেমে পড়েন। ওই মেয়ের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করতেন। মিত্যুর পূর্বে তার জন্য যাজক একটি চিরকুট লিখে যান। এই জন্য একে খ্রিষ্টানদের সমাজে "প্রেমিকের যাজক" হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাই তারা মিত্যু বার্ষিকীর দিন অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারী ভ্যালেন্টাইনস' ডে পালন করে আসছে।
এই দিবসটি কি মুসলমানরা পালন করতে পারে?
মহানবী (সঃ) এরশাদ করেন, "যে অন্য জাতির সাথে আচার আচরণের, কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে সামঞ্জস্য গ্রহণ করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে" (সুনানে আবু দাউদ শরীফ)।
ইতিহাস থেকে যতটুকু জেনেছি তা থেকে বুঝা যায় আমরা মুসলিম জাতি হিসেবে অন্য একটি ধর্মের সংস্কৃতি পালন করতে পারিনা।যদি আমরা অন্য ধর্মের সংস্কৃতি চর্চা করি তাহলে মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সঃ) হাদিস অনুসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হব। এই ভ্যালেন্টাইনস' ডে যেহেতু মানুষের যৌনতাকে উস্কে দেয় তাই এর ধারে কাছেও আমরা যেতে পারিনা। কারণ আল্লাহ তায়ালা কোরআন মজিদে সুরা ইসরাতে উল্লেখ করেছেন- "তোমরা ব্যভিচারের নিকট যেওনা"।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৬ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন