জাতিসংঘের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর না বলা কথা
লিখেছেন লিখেছেন যায়েদ ভাই ০৭ অক্টোবর, ২০১৩, ০২:৩৯:২৯ দুপুর
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের
বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের
সমর্থন চেয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে এও
বলেছেন ন্যায়বিচার, মানবাধিকার
ও আইনের শাসনের জন্য এই বিচার
প্রয়োজন। এই বিচারের সফল
সমাপ্তি যুদ্ধের ক্ষত
মুছে দিয়ে বাংলাদেশকে শান্তি ও
সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবে। গত ২৭
সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রদত্ত
ভাষণে বাংলাদেশকে শান্তি ও
সমৃদ্ধির পথে নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের
প্রতি এই আহ্বান জানালেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই
আহ্বান বাংলাদেশকে শান্তি ও
সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। বেশ তাত্পর্যপূর্ণও বটে।
বাংলাদেশে কাগজে-
কলমে যুদ্ধাপরাধের বিচার
চলছে নাকি মানবতাবিরোধী অপরা
বিচার চলছে, এ নিয়ে বিতর্ক
রয়েছে। সরকারের
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ
হরহামেশা বলছেন, যুদ্ধাপরাধ নয়,
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
চলছে। আর জাতিসংঘে শেখ
হাসিনা বললেন যুদ্ধাপরাধের
বিচারের কথা। সেটা তারাই
জানেন আসলে কিসের বিচার চলছে।
বিরোধী দলগুলোর পক্ষ
থেকে বলা হচ্ছে রাজনৈতিক
প্রতিপক্ষ দমনের বিচার হচ্ছে।
জাতিসংঘে প্রদত্ত
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
এই আহ্বানে আরেকটা তাত্পর্য
রয়েছে।
তাহলে কি বিচারে আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের সমর্থন নেই! আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের সমর্থন থাকলে নতুন
করে আবার এই আকুতি কেন? বিচারের
শেষ পর্যায়ে এসে এই আহ্বান কেন?
এখন তো রায়
কার্যকরে সহযোগিতা চাওয়ার কথা।
রায় কার্যকরের সময় ঘনিয়ে এসেছে।
অবশ্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন
সংস্থা এবং খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক মান বজায়
রেখে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার
আহ্বান জানিয়ে আসছে শুরু থেকেই।
এ পর্যন্ত প্রদত্ত রায়গুলো নিয়েও
নানা প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহল
থেকে। সহযোগিতার আহ্বানের
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর
ন্যায়বিচারের স্বার্থে(?) গ্রহণ
করা যেসব পদক্ষেপ জাতিসংঘের
ভাষণে উদগিরণ করতে ভুলে গেছেন
বা কৌশলে এড়িয়ে গেছেন,
সেগুলোর দিকে আলোকপাত
করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ভাষণে বলতে পারতেন
ট্রাইব্যুনাল রায়ে একজনকে ফাঁসির
দণ্ড দেয়নি। এজন্য সঙ্গে সঙ্গে আইন
পরিবর্তন করা হয়েছে। সরকারের
হাতে আইন পরিবর্তনের ক্ষমতা ছিল।
এজন্য সেই সুযোগ
হাতছাড়া করা হয়নি।
সঙ্গে সঙ্গে আইন পরিবর্তন
করে আপিলের সুযোগ
নিয়েছে সরকার। যদিও দুনিয়ার
কোনো বিচারের ক্ষেত্রে এমন
ঘটেনি। তার সরকার সেটাও
করে দেখিয়ে দিয়েছে ন্যায়বিচার
কীভাবে নিশ্চিত করতে হয়।
সরকারের এই উদ্যোগের সুযোগ
কাজে লাগিয়ে আপিল বিভাগ
ট্রাইব্যুনালের
বিচারে ত্রুটি সংশোধন করেছে।
যাবজ্জীবন থেকে দণ্ড
বৃদ্ধি করে ফাঁসি নিশ্চিত
করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দাপটের
সঙ্গে বলতে পারতেন,
আমরা দুনিয়াকে দেখিয়ে দিয়েছি
মাঝখানে আইন পরিবর্তনের
মাধ্যমে কীভাবে আপিলের সুযোগ
নিয়ে যাবজ্জীবন
থেকে ফাঁসি নিশ্চিত করতে হয়।
দুনিয়ার
কোনো বিচারে যেটা পারেনি স
গর্ব করে বলতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী।
বিশ্ব নেতাদের
জানিয়ে দিতে পারতেন, বিচার
কীভাবে করতে হয় এবং যাবজ্জীবন
থেকে রায়
কীভাবে ফাঁসিতে উন্নীত করতে হয়।
প্রধানমন্ত্রী আরও গর্ব করতে পারতেন
আমাদের আপিল বিভাগের
দক্ষতা নিয়ে। আপিল বিভাগ একজন
মাত্র মহিলার বিতর্কিত সাক্ষীর
ভিত্তিতেই ফাঁসি নিশ্চিত করেছে।
এসব তুলে ধরলে বিচারে নতুন নজির
স্থাপনের জনক হিসাবে বাংলাদেশ
একটি সম্মানজনক
আসনে পৌঁছাতে পারত
বিশ্বদরবারে। এর জন্য পদক-টদক
পেতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী।
ভাষণে সেই গর্বের
বিষয়গুলো তুলে ধরতে মিস করেছেন
প্রধানমন্ত্রী।
জাতি হিসেবে আমরা বঞ্চিত
হয়েছি।
আমাদের বিচার বিভাগের
দক্ষতা তিনি তুলে ধরতে পারতেন
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে।
বলতে পারতেন যুদ্ধাপরাধের
বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালের
রায় নিয়ে আপিলের শুনানি শুরুর দুই
দিন আগে সেখানে নতুন
বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এর মধ্যে এমন ব্যক্তিও রয়েছেন
যিনি এই বিচারের
দাবিতে বিদেশের মাটিতে সভা-
সেমিনারে প্রকাশ্যে অংশ
নিয়েছেন। ফাঁসির দাবিতে সভা-
সেমিনার করেছেন এমন
ব্যক্তিকে আপিল বিভাগে নিয়োগ
দেয়া হয়েছে ন্যায়বিচার নিশ্চিত
করার স্বার্থে। ওই বিচারপতি এতটাই
ন্যায়পরায়ণ যে জাতীয় সংসদ
তাকে সংবিধান
লঙ্ঘনকারী হিসেবে আখ্যায়িত
করেছিল।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে এও
বলতে পারতেন, শুধু যুদ্ধাপরাধীর
বিচার নয়, সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার
নিশ্চিত করতে সরকার হাইকোর্ট
বিভাগে দক্ষ বিচারক নিয়োগ
দিয়েছে। উদাহরণ
হিসেবে তিনি বলতে পারতেন
চার্জশিটভুক্ত বিচারাধীন খুনের
মামলার প্রধান আসামিকে হাইকোর্ট
বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়
দেয়া হয়েছে। যেটা হয়তো দুনিয়ার
কোনো বিচার বিভাগে এমন নজির
নেই। প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন
বিচারক হিসেবে নিয়োগ
দেয়া হয়েছে সুপ্রিমকোর্টে প্রকাশ্য
সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকেও। আইন পেশায়
টানা দশ বছর হয়নি, আওয়ামী লীগ
সরকার ক্ষমতায় আসার আগেও
লন্ডনে টেসকো এবং আজদায়
সেলস্ম্যানের চাকরি করতেন। এদের
খুঁজে বের করে বিচারক
হিসেবে নিয়োগ
দেয়া হয়েছে ন্যায়বিচার নিশ্চিত
করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য।
ন্যায়বিচার এবং আইনের শাসন
প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর এই
পদক্ষেপগুলো ভাষণে তুলে ধরলে জাত
করতে পারতাম।
প্রধানমন্ত্রী আইনের শাসন
এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিচার
বিভাগের আরেকটি প্রশংসনীয়
উদ্যোগের কথাও বলতে মিস করেছেন।
বলতে পারতেন আপিল বিভাগের
বিষয়ে কতগুলো মামলার আদেশ
প্রসঙ্গে সত্য প্রকাশ করায় একজন
সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট
প্রতিবেদককে কারাদণ্ড
দেয়া হয়েছে। কারাদণ্ড দেয়ার
আগে সুপ্রিমকোর্ট বলেছে ‘ট্রুথ ইজ
নো ডিফেন্স’। আইনের শাসন ও
ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার স্বার্থেই
এই কাজগুলো করছে আমাদের বিচার
বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের
মাধ্যমে বিশ্ব
নেতারা জানতে পারতেন
বাংলাদেশে সত্য বিচার্য বিষয় নয়।
প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়গুলো উল্লেখ
করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচার
বিভাগের গৌরবোজ্জ্বল
ভূমিকা নিয়ে গর্ব করতে পারতেন
জাতিসংঘে। সত্যিই আমাদের
প্রধানমন্ত্রী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়
তার সরকার ও বিচার বিভাগের এই
মাইলফলক
ভূমিকাগুলো তুলে ধরতে মিস
করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ন্যায়বিচার,
মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের
জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রয়োজন।
অবশ্যই কথাটা সঠিক। এটাকে সবাই
সমর্থন করবেন। ন্যায়বিচার,
মানবাধিকার ও আইনের শাসনের জন্য
যে কোনো অপরাধের সুষ্ঠু বিচার
হওয়া প্রয়োজন। যুদ্ধাপরাধ
বা মানবতাবিরোধী অপরাধের
বিচার চায় না এমন মানুষ
হয়তোবা বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়
এর পাশাপাশি মানুষ সব সরকারের সময়
সঙ্ঘটিত
মানবতাবিরোধী অপরাধেরও
ন্যায়বিচার চায়। প্রশ্ন হচ্ছে অন্য
জায়গায়।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিচারের জন্য গঠিত
আদালতের চেয়ারম্যান যখন বিচার
সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দেশের
বাইরের কোনো ব্যক্তির
সঙ্গে দিনের পর দিন কথোপকথন করেন
সেটাকে ন্যায়বিচার বলা যায়
কি না। সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের
জন্য প্রণীত আচরণবিধির আওতায় সেই
কার্যক্রম ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত
করে কি না। যদি আচরণবিধি লঙ্ঘন
করে কেউ এ ধরনের কর্মে লিপ্ত হন তার
বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছ
বিচারের জন্য আদালতের চার্জ
দেশের
বাইরে থেকে লিখিয়ে আনাটা ন্য
আওতায় পড়ে কি না। প্রশ্ন হচ্ছে,
প্রসিকিউশনের (সরকার পক্ষের)
সাক্ষীর তালিকায় অনুপস্থিত
ব্যক্তির নামে তদন্ত কর্মকর্তার
লেখা জবানবন্দিকে সাক্ষ্য
হিসেবে গ্রহণ
করা ন্যায়বিচারকে কতটা নিশ্চিত
করছে? সেই সাক্ষীকে সরকার পক্ষের
সেফ হোমে দিনের পর দিন উপস্থিত
রাখার পরও
তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বা দ
ছেড়ে চলে গেছে বলে আদালতকে জ
সেটাই হচ্ছে বড় প্রশ্ন। আসামি পক্ষের
সাক্ষীকে আদালতের ফটক
থেকে অপহরণ
করা ন্যায়বিচারে কতটা সহায়ক!
অপহরণ করার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যদের তত্পরতায় আবার সীমান্ত
অতিক্রম করতে বাধ্য
করা কতটা ন্যায়বিচারকে নিশ্চিত
করছে! এই বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রীর
ন্যায়বিচারের সংজ্ঞায়
উঠে আসেনি।
প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন সরকার
পক্ষের সাক্ষী যখন
আসামি পক্ষে সাক্ষ্য দিতে যায় তখন
তাকে অপহরণ
করে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছ
স্বার্থে। কারণ সরকার পক্ষের
সাক্ষী আসামি পক্ষে উপস্থিত
হয়ে বিচারকে বিভ্রান্ত
করতে চেয়েছিল। সরকার পক্ষের
তালিকাভুক্ত
সাক্ষী আসামি পক্ষে উপস্থিত
হয়ে যাতে বিচারে বিভ্রান্তি সৃষ্ট
অপহরণের পর
বিদেশে ঠেলে দেয়া হয়েছে বিচ
রাখার জন্য। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায়
প্রশংসনীয় এই উদ্যোগগুলো হয়
তিনি ভুলে গেছেন,
নতুবা যারা প্রধানমন্ত্রীর
ভাষণটি লিখে দিতে সহায়তা করেছ
তারা এড়িয়ে গেছেন।
এতে জাতিকে বঞ্চিত করেছেন
বিশ্বদরবারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিচার চলাকালীন আইন
পরিবর্তন করে সেটা প্রয়োগ
করা কতটা ন্যায়বিচারসম্মত! আরও প্রশ্ন
হচ্ছে, বিচারের রায়ের জন্য
সরকারের আইন মন্ত্রণালয় থেকে চাপ
সৃষ্টি করা ন্যায়বিচার
নিশ্চিতকরণে কতটা যৌক্তিক!
যেমনটা স্কাইপ সংলাপে বিতর্কিত
বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম তার
বন্ধু ড. আহমদ জিয়াউদ্দিনকে অবহিত
করেছেন—‘গভর্নমেন্ট গেছে পাগল
হইয়া, তারা একটা রায় চায়।’ প্রশ্ন
হচ্ছে, সরকারের পছন্দমত আদেশ
দিতে রাজি না হওয়ায়
বিচারককে আইন
মন্ত্রণালয়ে ডেকে নিয়ে পদত্যাগপত্
রেখে দেয়া ন্যায়বিচারকে নিশ্চি
করতে কতটা সহায়ক!
যেমনটা বিচারপতি নিজামুল হক
নাসিম স্কাইপ সংলাপে বিচারক এ
কে এম জহিরের পদত্যাগ
সম্পর্কে জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে বলতে পারতেন
এই ঘটনাগুলো প্রকাশ
করে দিয়ে বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ
করার কারণে দৈনিক আমার দেশ-এর
প্রেসে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়ে
সম্পাদক মাহমুদুর
রহমানকে ধরে পিটুনি দিয়ে আটক
রাখা হয়েছে জেলে। এতে বিচার
নিয়ে আর কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস
দেখাচ্ছে না। বিচারকরা এখন
নির্বিঘ্নে তাদের মতো করে কাজ
চালিয়ে যেতে পারছেন। এই
গৌরবোজ্জ্বল
ভূমিকাগুলো প্রধানমন্ত্রী কেন
জাতিসংঘের ভাষণে উল্লেখ
করলেন না তা বোধগম্য হচ্ছে না।
বড় প্রশ্ন হচ্ছে, রায় ঘোষণার আগের
দিনই সেই রায় অনলাইন
মিডিয়াগুলোতে প্রকাশ
হওয়া ন্যায়বিচারের
মাপকাঠিতে কতটা যুক্তিসঙ্গত
হয়েছে! শুধু রায় ফাঁসই হয়নি, সেই রায়
আইন মন্ত্রণালয়ের
কম্পিউটারে লেখা হয়েছে বলেও
অনলাইন মিডিয়াগুলোর
বদৌলতে জানা গেছে। আদালতের
রায় প্রকাশের আগে সেটা আইন
মন্ত্রণালয়ে যাওয়াকে কতটা ন্যায়ব
বলবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী!
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ৪ অক্টোবর
আমার এ লেখা শুরুর আগে মানবজমিন
অনলাইনে প্রকাশিত
একটি প্রতিবেদনে দেখা যায় বাবু
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সুন্দর
একটি যুক্তি খাড়া করেছেন।
তিনি বলেছেন, সমুদ্র থেকে এক দুই কলস
পানি নিলে সমুদ্রের কিছু যায়
আসে না। তেমনি রায়ের এক দুই
পাতা ফাঁস হলেও কিছু যায় আসে না।
বাবু সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের অবশ্য
জানা থাকার কথা এক/দুই পাতা নয়,
১৬২ পৃষ্ঠার পুরো রায়
অনলাইনগুলোতে পাওয়া গেছে আগে
দিন। তিনি যদি ১৬২ পৃষ্ঠার
পুরো রায়কে এক/দুই
পাতা বলে মিথ্যাচার করেন
সেটা করতে পারেন। কারণ তার এই
অভ্যাস রয়েছে। রেলওয়ের
কালো বিড়াল
ধরতে গিয়ে তিনি নিজেই সেই
ফাঁদে আটকা পড়েছেন।
কালো বিড়াল খেতাব
নিয়ে মন্ত্রণালয়
ছেড়ে ঘরে ফিরেছেন। সেটা আজ
আমার লেখার বিষয়ও নয়। কিন্তু এই
বিচার নিয়ে শুরু থেকেই বাবু
সুরঞ্জিত সেনগুপ্তরা মিথ্যার
বেসাতি করে যাচ্ছেন। গণমানুষের
প্রত্যাশিত একটি বিচারকে তাদের
মিথ্যাচারের মাধ্যমে প্রশ্নবিদ্ধ
করা হচ্ছে। তাদের অতি কথন,
মিথ্যাচার ও বিচারকে দলীয়করণের
কারণে আজ দুনিয়াব্যাপী প্রশ্নবিদ্ধ
হয়েছে এই বিচার। সেটা যাক,
বলছিলাম প্রধানমন্ত্রীর জাতিসংঘ
ভাষণের বিষয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে আরও
বলা হয়েছে, মানবাধিকার ও আইনের
শাসনের জন্য এ বিচার প্রয়োজন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর
কাছে সবিনয়ে জানতে চাইব, এই
বিচারকে কেন্দ্র করে রাজপথে যত
মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তাদের
কি মানবাধিকার নেই? শুধু গত ২৮
ফেবু্রয়ারি রাজপথে পুলিশ ও
আওয়ামী লীগ মিলে কত মানুষ খুন
করেছে? মানবাধিকারের কোন
মানদণ্ডে এই হত্যাকাণ্ডগুলোক
ে জায়েজ করা হবে? মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী, আপনার সুশাসনের(?)
আমলে শুধু রাজপথে কত মানুষ খুন
করেছে সরকার? এই হত্যাকাণ্ডগুলোর
শিকার যারা হয়েছেন তাদের
কি মানবাধিকার নেই? তাদের
মানবাধিকারের কথাও
জাতিসংঘে উত্থাপন
করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের
আওতায় আনার
সহযোগিতা চাইলে জাতি খুশি হত
আপনার শাসনে কত মানুষকে আইন-
শৃঙ্খলা বাহিনী ধরে নিয়ে গুম
করেছে, তার হিসাব কি দিয়েছেন
জাতিসংঘে? সেটারও একটা হিসাব
দিলে জাতি আপনার
প্রতি আস্থাশীল হতে পারত।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের
রাজপথে খুন করা, ধরে নিয়ে গুম
করা কি ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন
বলা যায়! কত মানুষ গত ৫ বছরে বিচার
বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার
হয়েছেন সেটার একটা খতিয়ান
দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য
এগুলো করা হচ্ছে। কারণ তাদের জন্য
সরকার সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারছিল
না। সরকার যাদের
বাধা মনে করেছে তাদের গুম
অথবা খুন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের
ভাষণে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মিস
করেছেন। ৫ মে (২০১৩)
হেফাজতে ইসলামের অবস্থান পণ্ড
করে দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন
করতে হয়তো ভুলে গেছেন।
সেখানে তিনি বলতে পারতেন, এই
সমাবেশ পণ্ড করতে পুলিশ
কোনো গুলি চালায়নি। তারপরও
অনুসন্ধান চালিয়ে নিহতের
একটি পরিসংখ্যান তৈরি করায়
মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর
সম্পাদক আদিলুর রহমান
খানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাঁকে গ্রেফতারের পর
রিমান্ডে নিয়ে উত্তম-মাধ্যম
দিতেও কসুর করেনি পুলিশ।
জাতিসংঘ থেকে শুরু করে দুনিয়ার
শক্তিধর রাষ্ট্র এবং মানবাধিকার
সংগঠনগুলো বিবৃতি দিয়ে তাঁকে মুক্ত
অনুরোধ জানিয়েছে। আদালত এতটাই
ন্যায়বিচার
করছে তাঁকে ছাড়া হচ্ছে না।
এটা বলে প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার
প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের
গৌরবোজ্জ্বল পদক্ষেপগুলো উত্থাপন
করতে পারতেন।
মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী কি জাতিসংঘের
ভাষণে বলেছেন যে ১৯৭১ সালের
মানবতাবিরোধী অপরাধের
সঙ্গে জড়িত ১৯৫ জন
সেনা অফিসারকে শনাক্ত
করা হয়েছিল? কিন্তু
পরবর্তী সময়ে তাদের সাধারণ
ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে!
চিহ্নিত ১৯৫ সেনা অফিসারের
বিচারের লক্ষ্যেই ১৯৭৩
সালে যে আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল
সেই আইনের সংশোধনী এনে এখন
বেসামরিক ব্যক্তিদের বিচার
করা হচ্ছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার
পর প্রণীত দালাল আইনেও
বর্তমানে দণ্ডিতদের
বিরুদ্ধে কোথায়ও থানায়
জিডি পর্যন্ত করা হয়নি। ২০১০
সালে এসে তারা যুদ্ধাপরাধের
অভিযোগে অভিযুক্ত হচ্ছেন!
এগুলো মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের
ভাষণে গর্বের
সঙ্গে তুলে ধরতে পারতেন। মাননীয়
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এই
বিষয়গুলো উঠে এলে আন্তর্জাতিক
মহল ন্যায়বিচারের
উদাহরণগুলো জানতে পারত। সেখান
থেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ
বাংলাদেশের ন্যায়বিচারের
নজিরগুলোকে অনুসরণ করতে পারত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জাতির
নেতা হিসেবে জাতিসংঘে বাং
ন্যায়বিচারের উদাহরণগুলো মিস
করা উচিত হয়নি।
জাতি হিসেবে আমরাও গর্ব
করতে পারতাম। বিদেশিদের আমরাও
গর্ব করে বলতে পারতাম, দেখ
আমাদের দেশে ন্যায়বিচার
প্রতিষ্ঠা করতে কত সুন্দর সুন্দর পদক্ষেপ
নেয়া হয়েছে!
প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা যদি চিহ্নিত ১৯৫
যুদ্ধাপরাধীকে ফিরিয়ে আনার
দাবি তুলতেন জাতিসংঘে,
সেটা অবশ্য দেশবাসী সমর্থন জানাত।
কিন্তু তিনি সেটাও করেননি। প্রকৃত
যুদ্ধাপরাধীদের বিষয়ে একটি কথাও
উচ্চারণ করেননি। শুধু প্রশ্নবিদ্ধ
বিচারের সমর্থন চেয়েছেন।
বিষয়: রাজনীতি
৯৯৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন