পর্দা কেন?

লিখেছেন লিখেছেন যায়েদ ভাই ০১ অক্টোবর, ২০১৩, ০৬:৩৫:৩৬ সন্ধ্যা

পর্দার রয়েছে মৌলিক ছয়টি স্তম্ভ

যার ভিত্তিতে পর্দার

অপরিহার্যতা সাব্যস্ত হয়, তা নিম্নরূপ:

(১) আল-ঈমান: ইহকালীন কল্যাণ ও

পরকালীন মুক্তি সন্নিবেশিত বিধি-

বিধানে আন্তরিক বিশ্বাস স্থাপন

করা, যার সাথে সাথে মানব

অন্তরে বিদ্যুৎ শক্তির উৎপত্তি হয়।

যে শক্তি মানবের

সর্বাঙ্গকে আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল

প্রদর্শিত আনুগত্যের

বিধানানুসারে পরিচালিত

করতে উদ্বুদ্ধ করে। সোজা কথায়

আল্লাহ ও রাসূলের মনোনীত আইন

কানুন মেনে নেয়া।

(২) আল-ইফ্ফাত: সতীত্ব সংরক্ষণ,

নৈতিক পবিত্রতা বজায় রাখা।

(৩)আল-ফিতরাত: সৃষ্টিগত স্বভাব ও

প্রকৃতি।

(৪) আল-হায়া: লজ্জাশীলতা।

(৫) আত-তাহারাত: আত্মার পবিত্রতা।

(৬) আল- গাইরাত: শালীনতা ও

আত্মমর্যাদাবোধ।

• আল-ঈমান: পর্দার স্তর ও অবস্থান

হচ্ছে,

আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল প্রদর্শিত আইন

কানুনের আনুগত্য। আল্লাহ রাব্বুল

আলামীন বান্দাদের প্রতি তার

আনুগত্যকে আবশ্যিক ও বাঞ্চনীয়

করে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনুগত্যের

অপরিহার্যতা ঘোষণা করে বলেন:

ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ ﺃَﻣْﺮًﺍ ﺃَﻥْ

ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ

“আর আল্লাহ ও তার রাসূল কোন

নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও

নারীর জন্যে নিজদের

ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার

অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও

তার রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই

পথভ্রষ্ট হবে”। (সূরা আহযাব:৩৬)

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

ﻓَﻠَﺎ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ

ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ

“তোমার সৃষ্টিকর্তার সপথ,

তারা কিছুতেই মমিন

হতে পারে না যতক্ষণ

না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ

কলহে তোমাকে বিচারক

রূপে মেনে নেয়। অত:পর তোমার

মীমাংসার

ব্যাপারে তারা নিজেদের

মনে কিছু মাত্র কুন্ঠাবোধ

করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল

করে নেবে”। (সূরা নিসা:৬৫)

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

ﻻ ﻳﻮﻣﻦ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﺣﺘﻰ ﻳﻜﻮﻥ ﻫﻮﺍﻩ ﺗﺒﻌﺎ ﻟﻤﺎ ﺟﺌﺖ ﺑﻪ

তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন

হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মন

আমার উপস্থাপিত আদর্শের বশ্যতা ও

অধীনতা স্বীকার করে নেবে। (আল

হাদীস)

আল্লাহ তাআলা পর্দার

অপরিহার্যতার

কথা বলতে গিয়ে বলেন:-

ﻗُﻞْ ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳَﻐُﻀُّﻮﺍ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻢْ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈُﻮﺍ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻢْ

ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺯْﻛَﻰ ﻟَﻬُﻢْ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺧَﺒِﻴﺮٌ ﺑِﻤَﺎ ﻳَﺼْﻨَﻌُﻮﻥَ ﴿ 30 ﴾ ﻭَﻗُﻞْ

ﻟِﻠْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕِ ﻳَﻐْﻀُﻀْﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭِﻫِﻦَّ ﻭَﻳَﺤْﻔَﻈْﻦَ ﻓُﺮُﻭﺟَﻬُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ

ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻇَﻬَﺮَ ﻣِﻨْﻬَﺎ ﻭَﻟْﻴَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺨُﻤُﺮِﻫِﻦَّ ﻋَﻠَﻰ

ﺟُﻴُﻮﺑِﻬِﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﻳُﺒْﺪِﻳﻦَ ﺯِﻳﻨَﺘَﻬُﻦَّ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﺒُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁَﺑَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺁَﺑَﺎﺀِ

ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺃَﺑْﻨَﺎﺀِ ﺑُﻌُﻮﻟَﺘِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ

ﺇِﺧْﻮَﺍﻧِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﺑَﻨِﻲ ﺃَﺧَﻮَﺍﺗِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﻧِﺴَﺎﺋِﻬِﻦَّ ﺃَﻭْ ﻣَﺎ ﻣَﻠَﻜَﺖْ ﺃَﻳْﻤَﺎﻧُﻬُﻦَّ

ﺃَﻭِ ﺍﻟﺘَّﺎﺑِﻌِﻴﻦَ ﻏَﻴْﺮِ ﺃُﻭﻟِﻲ ﺍﻟْﺈِﺭْﺑَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﺃَﻭِ ﺍﻟﻄِّﻔْﻞِ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ

ﻟَﻢْ ﻳَﻈْﻬَﺮُﻭﺍ ﻋَﻠَﻰ ﻋَﻮْﺭَﺍﺕِ ﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻀْﺮِﺑْﻦَ ﺑِﺄَﺭْﺟُﻠِﻬِﻦَّ ﻟِﻴُﻌْﻠَﻢَ

ﻣَﺎ ﻳُﺨْﻔِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺯِﻳﻨَﺘِﻬِﻦَّ ﻭَﺗُﻮﺑُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺟَﻤِﻴﻌًﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ

ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻟَﻌَﻠَّﻜُﻢْ ﺗُﻔْﻠِﺤُﻮﻥَ ﴿ 31 ﴾

মুমিন পুরুষদেরকে বল, তারা তাদের

দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের

লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই

তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয়

তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ

সম্যক অবহিত।[৩০] আর মুমিন

নারীদেরকে বল, তারা তাদের

দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের

লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর

যা সাধারণত প্রকাশ পায়

তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য

তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন

তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত

করে রাখে। আর তারা যেন তাদের

স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে,

স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে,

বোনের ছেলে, আপন নারীগণ,

তাদের ডান হাত যার মালিক

হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ

অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ

সম্পর্কে অজ্ঞ বালক

ছাড়া কারো কাছে নিজদের

সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর

তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য

প্রকাশ করার জন্য

সজোরে পদচারণা না করে।

হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর

নিকট তাওবা কর,

যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

(সূরা নূর:৩০-৩১)

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন

ঘোষণা করেন,

ﻭَﻗَﺮْﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺟْﻦَ ﺗَﺒَﺮُّﺝَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ

ﻭَﺃَﻗِﻤْﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁَﺗِﻴﻦَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺃَﻃِﻌْﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ

“আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান

করবে এবং প্রাক-জাহেলী যুগের মত

সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর

তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত

প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তার

রাসূলের

আনুগত্য কর”। (সূরা আহযাব আয়াত: ৩৩)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন:

ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺳَﺄَﻟْﺘُﻤُﻮﻫُﻦَّ ﻣَﺘَﺎﻋًﺎ ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﻫُﻦَّ ﻣِﻦْ ﻭَﺭَﺍﺀِ ﺣِﺠَﺎﺏٍ ﺫَﻟِﻜُﻢْ

ﺃَﻃْﻬَﺮُ ﻟِﻘُﻠُﻮﺑِﻜُﻢْ ﻭَﻗُﻠُﻮﺑِﻬِﻦَّ

তোমরা তাদের (নবী পত্নীগণের)

কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল

থেকে চাইবে, এটা তোমাদের ও

তাদের অন্তরের জন্যে অধিকতর

পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)

মহান আল্লাহ বলেন,

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ

ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ

“হে নবী, তুমি তোমার

স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও

মুমিনদের নারীদেরকে বল,

তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু

অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয়”।

(সূরা আহযাব:৫৯)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু

আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

নারীর সর্বাঙ্গই সতর-অঙ্গ। (গোপনীয়

বস্তু কাজেই নারীদেহ সম্পূর্ণটাই

ঢেকে রাখা অপরিহার্য।)

উল্লেখিত আয়াত ও হাদীস

দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, নারীর

জন্যে কোন অবস্থাতে আবাস গৃহ

থেকে বের হয়ে লোক চক্ষুর

সামনে স্বীয় রূপ-সৌন্দর্য ও যৌবন

প্রদর্শন করা বৈধ নয়

বরং তা সন্দেহাতীত হারাম।

স্মর্তব্য, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন

রাসূলের পূণ্যবতী, পুত:পবিত্র মহান

চরিত্রের অধিকারী, পরিপূর্ণ ঈমান

বিশিষ্ট পত্নীগণকে এসব অবাঞ্চিত

বস্তু থেকে সতর্ক করলেন,

তাহলে অন্যান্য নারীদের বেলায়

কিরূপ বিধান প্রজোয্য হতে পারে?

আল-ইফফাত: নৈতিক পবিত্রতা,

সতীত্ব সংরক্ষণ।

মহান রাব্বুল আলামীন রমণীর

জন্যে পর্দার বাঞ্চনীয় ও নৈতিক

পবিত্রতা বজায় রাখার

ঘোষণা দিয়ে বলেন:

ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﻗُﻞْ ﻟِﺄَﺯْﻭَﺍﺟِﻚَ ﻭَﺑَﻨَﺎﺗِﻚَ ﻭَﻧِﺴَﺎﺀِ ﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻳُﺪْﻧِﻴﻦَ

ﻋَﻠَﻴْﻬِﻦَّ ﻣِﻦْ ﺟَﻠَﺎﺑِﻴﺒِﻬِﻦَّ ﺫَﻟِﻚَ ﺃَﺩْﻧَﻰ ﺃَﻥْ ﻳُﻌْﺮَﻓْﻦَ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺆْﺫَﻳْﻦَ ﻭَﻛَﺎﻥَ

ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ ﺭَﺣِﻴﻤًﺎ

হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে,

কন্যাদেরকে ও মুমিনদের

নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের

জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের

উপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার

ব্যাপারে এটাই

সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে।

ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না।

আর আল্লাহ অত্যন- ক্ষমাশীল, পরম

দয়ালু।

(সূরা আহযাব-৫৯)

বিষয়: বিবিধ

৮৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File