অবশেষে চুলার দখল নিচ্ছে ভারত.
লিখেছেন লিখেছেন অরণ্যে রোদন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:২৪:৪৬ বিকাল
বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করাসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনার কথা সরকারের বিভিন্ন মহলে হরহামেশা বলা হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, রান্নার চুলার বাজার পর্যন্ত চুক্তি করে ভারতের হাতে সমর্পণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই দেশের ৮টি উপজেলায় ৭০ হাজার ভারতীয় চুলা সরবরাহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সর্বত্র এই চুলা ছড়িয়ে দেয়া হবে বলে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন। চলতি বছরের ৬ ও ৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়ে এধরনের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে চুলা সরবরাহ করা হচ্ছে। ভারতীয় চুলা সরবরাহের সপক্ষে যুক্তি প্রদর্শন করে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, রান্নার এসব স্টোভের আরো উন্নয়ন ঘটিয়েছে বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর)। তার মতে এসব চুলা জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশ বান্ধব। সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিবেশ বিভাগের টেকনিক্যাল উইং এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ভারত বাংলাদেশকে যে তার নিরঙ্কুশ বাজারে পরিণত করতে যাচ্ছে তার প্রমাণই বহন করে চুলার সরবরাহ। পরিবেশের কথা যাই বলা হোক কার্যতঃ এ ধরনের চুলা সরবরাহের মধ্য দিয়ে ভারত এখন একেবারে আমাদের রান্নাঘরে পৌঁছে গেল। এর ফলে বাংলাদেশের চুলার বাজার নষ্ট করে দেয়া হল। এর উৎপাদন-বিপণন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কর্মের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেল। বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, যুগ যুগ ধরে যেসব চুলা দেশের চাহিদা পূরণ করে আসছিল সেগুলোতে কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানে বিসিএসআইআর এগিয়ে এল না কেন? বাজারে বর্তমানে সাধারণ ও উন্নত মানের চুলা রয়েছে। ইতোপূর্বে সাধারণ চুলাকে সাশ্রয়ী করে তৈরি করার পদ্ধতিও উদ্ভাবন করেছে আমাদের বিজ্ঞানীরা। গত কয়েক বছর ধরে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ‘বন্ধু’ নামে একটি জ্বালানি সাশ্রয়ী চুলা বাজারজাত করছে। ব্যাপক সাড়াও পড়েছে এ চুলা নিয়ে। বাজারে বিদ্যমান স্টোভগুলো যদি চাহিদা পূরণে সক্ষম না হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই দেশীয় উৎপাদকদের উৎসাহিত ও সহযোগিতা করা যেতে পারত। এর সাথে যদি গৃহস্থালীতে গ্যাস সরবরাহ না করার সিদ্ধান্তের কোন সম্পর্ক থেকে থাকে তাহলে বিসিএস আইআর আবিষ্কৃত চুলা সেক্ষেত্রে অনেক বেশি কার্যকর। এখন হঠাৎ কি হলো যে ভারত থেকে চুলা এনে তা উন্নয়ন করতে হচ্ছে দেশীয় বিজ্ঞানীদের। বাস্তবতা হল দেশকে ক্রমশঃ ভারতনির্ভর করা হচ্ছে। এখন বাস-ট্রাকসহ যানবাহন খাত ভারতই নিয়ন্ত্রণ করছে। বাসে ফুটপাথে বিভিন্ন নিম্নমানের ভারতীয় পণ্য বিক্রয় হচ্ছে। এমনকি বাসা-বাড়িতে গিয়ে ভারতীয় চোরাই পণ্যও কম মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজার দখলে ভারতীয় নানা কৌশলের ফলে দিন দিন বাংলাদেশ উৎপাদনের সক্ষমতা হারাচ্ছে। সীমান্ত অতিক্রম করে চোরই পথে আসা পণ্যাদি এবং আমদানী ও চুক্তির মাধ্যমে বৈধ পথে আসা পণ্যের কারণে ভারতের সাথে বাণিজ্যিক ব্যবধান বেড়েই চলছে। দেখা যাচ্ছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাণিজ্যিক সুফল পেতে শুরু করেছে ভারত। অথচ দীর্ঘ আলোচনার পরও বাংলাদেশী উন্নত পণ্য ভারতের বাজারে অবাধ প্রবেশের সুযোগ পায়নি বা পাচ্ছেনা। ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা ফি বছরই বাড়ছে। বস্তুতঃ দেশর স্বার্থানুগ চিন্তা ও উদ্যোগ না থাকার কারণে দিন দিনই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি তথা বাংলাদেশ। প্রায়শঃই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলা হচ্ছে। বিমান ও নৌযুদ্ধ জাহাজ তৈরির বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নগণ্য চুলার জন্য ভারতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি দিন দিন ভারতনির্ভর করা হচ্ছে। অবস্থা হয়ত এমন দাঁড়াবে যে, ভারতীয়রা প্রস্তাব দেবে তোমাদের কিছু উৎপাদন করতে হবে না আমরা উৎপাদন করবো, তোমরা কিনে খাবে। সরকার যা করছে তার ফলে কার্যতঃ দেশে মেধা-মননের লেশমাত্রও অবশিষ্ট থাকবে না। আত্মবিনাশী এধরনের সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসা দরকার। খেয়াল রাখা দরকার, কিভাবে কোন পদ্ধতিতে দেশের মানুষের আয়-উন্নতি হয়। জীবনমানে সত্যিকারের পরিবর্তন আনা যায়। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন করা যায়। নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার প্রবণতা সক্রিয় থাকবে, এটাই প্রত্যাশিত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ভারতীয় সিরিয়ালে মত্ত থেকে নাওয়া খাওয়া ও গৃহস্থালীর কাজ ভুলে যাওয়া আমাদের বেটার হাফেরা এই চুলার উসিলায় যদি রান্না ঘরে যাওয়া শুরু করে তাহলে এটা হবে ভারতীয় পণ্যের চমৎকার উপকারী দিক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন