‘ভাইয়া, এখনও তুমি আমাকে রেপ করলে না

লিখেছেন লিখেছেন অরণ্যে রোদন ২৩ মে, ২০১৪, ০৬:২৫:১১ সন্ধ্যা



Apu ask korlo J, kaal 2mi apu k ph korlena keno’? ভাষাটা বাংলা, হরফটা ইংরাজি। কয়েক দশকে বাঙালির কাছে এই এক নব্য পণ্য। ই-মেলে, এসএমএসে, ফেসবুকে সর্বত্র নানা কিসিমের বিচিত্র বাকবিন্যাস ।

পড়তে গিয়ে পদে পদে বিপদে পড়ি। ‘hate’ লেখা দেখে ভাবি আমি কি এতই ঘৃণ্য? বুঝতে পারি না ওটা হল ‘হাতে’। এভাবেই ক্রমাগত শিখতে থাকি ই-ভাষা।

ফেসবুকে বিচিত্র সংক্ষিপ্তকরণের ছড়াছড়ি। শুরুতে o.m.g. দেখলে ভাবতাম বোধহয় লিখতে চাইছে ‘ও মাগো’, এখন বুঝেছি ওটা বিস্ময়যুক্ত ‘ও মাই গড’! সংক্ষেপে লেখার ইঁদুর মারা কল যে কী ভয়াবহ আবহ তৈরি করে, ভাবলে রোমাঞ্চ হয়।

হাঁটুর বয়সী একটি মেয়ে সেদিন লিখেছে ‘ভাইয়া, এই নিয়ে চারটে মেসেজ করলাম, বাট এখনও তুমি আমাকে রেপ করলে না’? যখন বুঝলাম ইংরাজি হরফে ‘rep’ হল ‘reply’-এর সংক্ষিপ্তকরণ, তখন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল। মনে মনে বললাম – মা, আমাকে বরং ‘ans’ করতে বোল।

কত সংক্ষেপে লেখা যায়, তার যেন প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে ই-ভাষায়। শুধু ‘u’ অক্ষরটি দিলেই বুঝে নিতে হয় যে, ওটা আসলে ‘you’। বাংলার কয়েকটি শব্দ ইংরাজির একটি হরফের উচ্চারণেই মিলে যায়। যেমন J হল যে, K হল কে। এই রীতিতে লিখতে থাকলে কেসটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াতে পারে ভেবেছেন?

একটি নমুনা পেশ করি বরং। ‘O-P-C-A-D-K-S-O’। কিছু বুঝলেন? এবার ওই ইংরাজি হরফগুলো উচ্চারণ করুন বাংলা বলছেন ভেবে, দেখুন আপনার শ্রবণে মধু বর্ষণ করে ই-ভাষা বলবে – ‘ও পিসি, এদিকে এস’।

ই-ভাষার মক্কা অধুনা ফেসবুক। রীতিমত গবেষণার অজস্র রসদ মজুত রয়েছে ফেসবুকিয়ানদের ওয়ালে। খ্যাতনামা ব্যক্তির জন্মদিন বা মৃত্যুদিন এলেই হল। ছবি পোস্ট করার ধুম লেগে যাবে হৃদকমলে। পোস্টটা যদি মৃত্যুদিনের হয়, তাহলেই গেড়ো। খালি কমেন্ট আসবে ‘RIP’।

বিপ-বিপ ধ্বনির মতো এই রিপ-রিপ কী বস্তু, না বুঝলে আপনি যে ই-দুনিয়ায় আনাড়ি তা প্রমাণ হয়ে যাবে। এই রিপ হল ‘রেস্ট ইন পিস’। শান্তিতে থাকার কী অশান্তিকর প্রার্থনা প্রয়াস।

শুধু কি ভাষার জটিলতা? ফেসবুকিয়ানরা এক-একজন একেক বস্তু। কেউ লাইক বিশেষজ্ঞ। এঁরা বেশি কথা না বলে পাইকারি হারে লাইক করে যান। কারও হয়ত বাবা মরেছে, সে বেচারি কাঁদোকাঁদো ভাষায় জানিয়েছে মৃত্যুসংবাদ। ব্যস, লাইক মাস্টার সেটিও দিলেন লাইক করে।

কেউ খালি গান শুনিয়ে বেড়ান। দিবস রজনী তাঁরা যেন ব্রত নিয়েছেন ‘তোমায় গান শোনাব’। শতকরা কত ভাগ যে সেগুলি শোনেন বলা শক্ত, কেননা গান দিতে না দিতেই পটাপট আসতে থাকে মতামত। এত জলদি গান শোনা অসম্ভব ব্যাপার। আসলে গান শোনার মতো অত সময় কোথায়, কিন্তু তাই বলে অমুক দাদা গান দিয়েছেন আর আমি সামান্য কান দেব না? সে তো অভদ্রতা।

সুতরাং ফেসবুকের দেওয়ালে ঘুঁটে দেওয়ার মতো গান দেওয়া চলতে থাকে এবং তা শুকনোর আগেই মতামতের উনুনে গুঁজে দেওয়া হয়। ফলত যা নির্গত হয়, তা যে ধোঁয়া- এটা জেনেও গান দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য।

আর এক কিসিমের ফেসবুকিয়ান আছেন, যাঁদের বলা হয় স্ট্যাটাসটিয়ান। এঁরা পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর হেঁচকি তোলার মত স্ট্যাটাস দিতে থাকেন। এঁরা কারও উত্তর বা মতামতের ধার ধারেন না। এঁদের স্ট্যাটাসে থাকে – ‘বড্ড মাথা ধরেছে’, পরমুহূর্তেই ‘উফ্ কী দিল!’ কে দিলেন, কাকে দিলেন, কী দিলেন- তা কেউ জানতেও চায় না; তবু তিনি শুধু স্ট্যাটাস দিয়ে যান।

ই-রাজ্যের আর এক বাসিন্দার নাম বলা যেতে পারে ট্যাগনেশিয়ান। এঁরা সারাদিন ব্যক্তিগত ফটো পোস্ট করেন আর সেগুলো যাঁকে খুশি ট্যাগ করতে থাকেন। তিনি বুঝতেও চান না যে, তাঁর বাথরুমের জন্য কেনা নতুন মগের ছবি নিয়ে অন্যেরা কী করবে!

আর আছেন কমেন্ট মাস্টার। তিনি যেখানে পারেন, কমেন্ট দিয়ে বেড়ান। চেনা-অচেনার ধার ধারেন না। হয়তো একটি বিমূর্ত ছবি নিয়ে কথা বলছেন দুজন শিল্পী বন্ধু। কমেন্ট মাস্টার এদের ভেতরে ঢুকে বলে আসেন – ‘থ্যাঙ্ক ইউ’! কাকে থ্যাঙ্ক ইউ, কেন থ্যাঙ্ক ইউ- ওসব প্রশ্নই ই-দেশে অপ্রাসঙ্গিক।

ই-দুনিয়ায় এখনও যাঁরা পা রাখেননি, তাঁরা জানেন না কী বিচিত্র এই দেশ। এখানে কারও ঘর ভাঙে, কেউ ঘর বাঁধে। এখানে তৈরি হয় নানা ধরনের গ্রুপ। সেই গ্রুপের সদস্যরা গেট টুগেদার করে, পিকনিকে যায়। দল বেঁধে যারা গেট টুগেদারে যায়, তাদেরই কেউ কেউ দলছুট হয়ে মিট করে কোনও মলে।

বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়, জোড়া জোড়া নারী-পুরুষ ‘মলে মলে যোগ দিন’ স্লোগান তুলে দেখা করে। সেই ‘দেখা’ কারও কারও চোখে সর্ষেফুল দেখায়, প্রাণ এবং মান বাঁচাতে তথাকথিত ফ্রেন্ডশিপকে তারা কয়েক মাস এড়িয়ে চলে! তারপর যথারীতি গেয়ে ওঠে – ‘আহা ki আনন্দ আকাশে বাতাসে…

বিষয়: বিবিধ

৯১৮৯ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

225108
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৬
ভিশু লিখেছেন : ভালো লাগ্লো...Happy Good Luck আপনি আমার শুধু উত্তর দিয়েন, অন্যকিছু না কিন্তু!
225123
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
অরণ্যে রোদন লিখেছেন : আইচ্চা দিলাম,
225125
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:১৪
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : ও মাই গড। শিরোনাম দেখে মনে করলাম এটা ভারতের রেড কেস স্টাডি নিয়ে কিছু গবেষণা কিন্তু ভিতরে পড়ে তো থ হয়ে গেলাম। আধুনিক যুগে চলছে তো এগুলাই। সংক্ষিপ্ত হতে হতে কয়দিন পর পরনের জামা কাপড়ও সংক্ষেপ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। বড়ই উদ্বেগের বিষয়।
225133
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : anek dhanobad er sathe rep dilam
225136
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৩৪
নীল জোছনা লিখেছেন : দারুণ। এই ব্যস্ততার যুগে এসব ছাড়া চলে বলেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই ধারণা।
225148
২৩ মে ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:৫৭
বিদ্যালো১ লিখেছেন : ্রিয় ব্লগার ও আমন্ত্রিত লিখা ছাড়া খুব একটা পড়া হয়না। হটাত, শিরোনামটি দেখে এড়িয়ে যেতে পারিনি।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট। ভাষা পরিবর্তনশীল, কিন্তু ফেসবুক এর যুগে সেটা বড্ড বেশি। কোথায় গিয়ে থামে তাই দেখার বিষয়।
225183
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৯:৩৫
সুশীল লিখেছেন : নীল জোছনা লিখেছেন : দারুণ। এই ব্যস্ততার যুগে এসব ছাড়া চলে বলেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে বলেই ধারণা।
225186
২৩ মে ২০১৪ রাত ০৯:৫৪
এম_আহমদ লিখেছেন : "Apu ask korlo J, kaal 2mi apu k ph korlena keno?"

আজ বাংলাদেশে ইংরেজি ও হিন্দির যে ব্যাপক প্রচলন তার দশ ভাগের এক ভাগ যদি উর্দূর ব্যবহার থাকত তবে ব্রাহ্মণ্য প্রভাবিত ভারতপন্থি পৌত্তলিক মুসলিম ও হনুমানগণ নগ্ন হয়ে রাস্তায় চিৎকার শুরু করত।
225189
২৩ মে ২০১৪ রাত ১০:০৩
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : হাহাহা চরম বলেছেন ভাই। আমি তো ভাবছিলাম অন্য কিছু।
১০
225207
২৩ মে ২০১৪ রাত ১০:৫১
পটাশিয়াম নাইট্রেট লিখেছেন : u r gr8! dis is my rep!
১১
225270
২৪ মে ২০১৪ রাত ০৩:৫৭
জিনিয়াস লিখেছেন : murad takla'র কথা বললেন না?
১২
226302
২৬ মে ২০১৪ সকাল ০৬:৪৭
গ্রাম থেকে লিখেছেন : আমার rep গ্রহণ করবেন, অনেক ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ
১৩
226310
২৬ মে ২০১৪ সকাল ০৮:২৫
এম আর রাসেল লিখেছেন : ফেসবুকে ভাষার প্রয়োগ দেখলেই বোঝা যায় যে মানুষ সময় সম্পর্কে কত সচেতন। তারা সবাই বঙ্কিম চন্দ্রের সেই কথাটিরই বাস্তব প্রয়োগ করছে মনে হয় ' অনর্থক কথা বাড়াইয়া লাভ কি , অল্প কথায় কাজ হলে বেশি কথার প্রয়োজন নাই'
১৪
226403
২৬ মে ২০১৪ দুপুর ০২:৪৮
গ্যাঞ্জাম খানের খোলা চিঠি লিখেছেন : ই-রাজ্যের আর এক বাসিন্দার নাম বলা যেতে পারে ট্যাগনেশিয়ান। এঁরা সারাদিন ব্যক্তিগত ফটো পোস্ট করেন আর সেগুলো যাঁকে খুশি ট্যাগ করতে থাকেন। তিনি বুঝতেও চান না যে, তাঁর বাথরুমের জন্য কেনা নতুন মগের ছবি নিয়ে অন্যেরা কী করবে!

ট্যাগনেশিয়ানদের অত্যাচারে অনেক সময় ই জগতের বাসিন্দারা মারাত্মক অস্বস্তিতে ভুগেন।
১৫
227648
২৮ মে ২০১৪ রাত ০৯:২২
পল্লবগ্রহিতা লিখেছেন : সত্যিই কিন্তু ভাল্লাগছে। অামি কিন্তু ভাই আবার কমেন্টিশিয়ান না। Not Listening Rose Not Listening
১৬
228293
৩০ মে ২০১৪ দুপুর ০১:৪৫
সুমাইয়া বিনতে আফসারী লিখেছেন : ওরে বাব্বাহ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File