মহিলারা কিভাবে সালাত আদায় করবে?

লিখেছেন লিখেছেন অরণ্যে রোদন ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৫৭:৩৯ দুপুর



বেশিরভাগ বইয়ে আলাদা একটি অধ্যায় থাকে: মহিলারা কিভাবে সালাত আদায় করবে

প্রশ্নঃ আমি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছি মেয়েরা ছেলেদের থেকে আলাদা ভাবে নামাজ আদায় করে, এখন কারো কারো কাছে শুনছি যে নারী পুরুষের নামাযের কোন পার্থক্য নাই, বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?

উত্তরঃঅনেক আপুদের প্রশ্ন, মেয়েদের নামায কিরুপ হবে। অনেকে মহিলাদের নামাজের নিয়ম সম্পর্কে জানি না, আর যা জানি তার মধ্যে অনেক ভুল রয়েছে। বাজারে অনেক বই পাওয়া যায় যেখানে সালাত আদায়ের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন দেয়া আছে। বেশিরভাগ বইয়ে আলাদা একটি অধ্যায় থাকে যে, মহিলারা কিভাবে সালাত আদায় করবে এবং পুরুষরা কিভাবে সালাত আদায় করবে। আর সেখানে নিয়মগুলোও আলাদা। সত্যি বলতে এমন একটি সহীহও হাদীস খুজে পাবেন না; যেটা বলছে পুরুষরা মহিলাদের থেকে ভিন্ন নিয়মে সালাত আদায় করবে। এমন কোনো সহীহ হাদীস নেই। আর আপনারা যদি সহীহ বুখারী পড়েন তাহলে পাবেন, হযরত উম্মে দারদা (রা) তাশাহুদে বসেছিলেন পুরুষদের মতো করে। (সহীহ বুখারী) তিনি ছিলেন এমন একজন যিনি ধর্মীয় বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখতেন, এরকম আরো অনেক সহীহ হাদীস আছে যেগুলোর বর্ণনা দিয়েছিলেন হযরত আয়েশা (রা) এবং নবী (সা)-এর অন্যান্য স্ত্রীরা আর অন্য মহিলা সাহাবীরা। আল্লাহ তাদের সকলকে শান্তিতে রাখুন।

নবী করীম (সা) মেয়েদের পৃথকভাবে নামায শিক্ষা দিয়েছেন এমন কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। হযরত জীবরাঈল (আHappy রাসূল (সা) কে নামায কিভাবে পড়তে হবে এবং কখন পড়তে হবে তা শিক্ষা দিয়েছেন। ঠিক একইভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাকেরামদের শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন:

صَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর”। (সহীহ বুখারি, সহীহ ইবনে হিব্বান, বায়হক্বী)

মেয়েদের নামাযের ভিন্নতা বলতে নামাযের মূল রূকনগুলির কথা বলছি। অনেকের বলে থাকেন সেজদা রুকু, কিয়াম ও হাত বাধার ক্ষেত্রে মেয়েরা ভিন্নরূপ করবে, এবং এই বিষয়গুলিতে যে হাদিসগুলো বর্ণনা করা হয় তা সবই অগ্রহণযোগ্য। একদা এক বেদুঈন মহিলা উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ) সাক্ষাত করতে এসে তাঁকে না পেয়ে ফেরার পথে উম্মুল মু’মিনীন হাফসা (রাঃ) এর কাছে গিয়ে মহিলাদের নামায় সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেনঃ নামায আদায়ের নিয়ম পদ্ধতি ব্যাপারে মহিলাদের পৃথক কোন নিয়মের কথা আমাদিগকে বলা হতো না তবে রুকুতে, রুকু থেকে দাঁড়িয়ে, দু’সিজদার মাঝে বসে একটু সময় অবস্থান করতে বলা হতো। নামাযে তাড়াহুড়া না করে ধীর স্থীর শান্তভাবে আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা (রাঃ), হাফসা বিনতে উমার (রাঃ), মায়মুনা (রাঃ) ও দ্বীন সম্পর্কে বিশেষ উম্মু দারদা (রাঃ) (বুখারী ভাষ্যানুযায়ী) এরা পুরুষদের মত নামায আদায় করতেন সুন্নাতী নির্দেশ মোতাবেক। অতএব এতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই যে, মহিলাদের নামাযও পুরুষদের মতই আদায় করতে হবে।

মেয়েদের নামাযের ক্ষেত্রে কিছু বাহ্যিক দিক রয়েছে, যেগুলি পুরুষদের চেয়ে ভিন্ন। যেমন-

১. সালাতে মহিলাদের জন্য পর্দা আবশ্যক, অর্থাত্ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে মহিলারা সালাত আদায় করবে। আল্লাহ তা’লা বলেন:

وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا

“তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” (সুরা আহযাব- ৩৩)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হুজুর (সাঃ) এরশাদ করেন “মহিলাদের নিজকক্ষে নামায পড়া বাড়িতে নামায পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামায পড়া ঘরে নামায পড়া থেকে উত্তম। ‘‘ [হাদীসটি সহীহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮] হযরত আয়েশা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ- “ওরনা বা চাদর ব্যতিত মহিলাদের নামায কবুল হবেনা।” [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/২৫১] মহিলাদের পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখতে হবে তা নাহলে সালাত সিদ্ধ হবে না। অপরদিকে পুরুষদের পায়ের গোড়ালী খোলা রাখতে হবে।

২. সালাতের জন্য পুরুষ আযান দিবে কিন্তু মহিলা আযান দিবে না। এটা হল ফোকাহকেরামদের ইজমা। কারণ মেয়েদের আওয়াজ হল একটা ফিতনা।

اتَّفَقَ الْفُقَهَاءُ عَلَى عَدَمِ جَوَازِ أَذَانِ الْمَرْأَةِ وَإِقَامَتِهَا لِجَمَاعَةِ الرِّجَال،

অর্থাত্, ফোকাহকেরামদের ঐক্যমত হচ্ছে যে পুরুষদের জামাতে মেয়েরা আযান এবং একামত দেয়া যায়েজ নাই।

৩. কোন মহিলা পুরুষদের ইমামতি করতে পারবে না; কিন্তু পুরুষরা নারী পুরুষ উভয়েরই ইমামতি করতে পারবে। নবী করীম (সHappy বলেছেন: لاَ تَؤُمَّنَّ امْرَأَةٌ رَجُلاً “মেয়েরা পুরুষদের ইমামতি করবে না।” (ইবনে মাজাহ)

৪. জামাআতে সর্বাবস্থায় মহিলাদের কাতার পুরুষদের কাতারের পিছনে হবে। হযরত আবুহুরাইরা (রাHappy থেকে বর্ণিত, রাসূল (সHappy বলেছেন:

خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا ، وَشَرُّهَا آخِرُهَا ، وَخَيْرُ صُفُوفِ النِّسَاءِ آخِرُهَا ، وَشَرُّهَا أَوَّلُهَا هَذَا. حَدِيثٌ صَحِيحٌ، أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ

“পুরুষদের জন্য উত্তম সাফ্ (কাতার) হল প্রথম সাফ‌, আর খারাপ সাফ হল পিছনের সাফ্। পক্ষান্তরে মেয়েদের জন্য উত্তম সাফ্ হল পিছনের সাফ্ এবং সবচেয়ে খারপ সাফ্ হল প্রথম সাফ্। (সহীহ মুসলিম)

৫. পুরুষ ইমামতি করলে কাতারের আগে একাকী দাঁড়াতে হবে (যদি ওজর না থাকে)। কিন্তু মহিলা ইমাম হলে তাকে মহিলাদের কাতারের মাঝখানে দাঁড়াতে হবে। বর্ণিত আছে যে, আয়েশা (রাঃ) এবং উম্মে সালমা (রাঃ) যখন মেয়েদের ফরয সালাত অথবা তারাবীহ এর সালাতে জামা’আতে ইমামতি করতেন তখন তাদের মাঝখানে দাঁড়াতেন।

৬. স্বরব কির’আত বিশিষ্ট সালাতে স্বরবে কির’আত পড়া সুন্নত। মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)

৭. যদি ইমাম ভুল করে তাহলে মহিলাদেরকে হাতের উপর হাত দিয়ে বা উরুর উপর হাত মেরে সংকেত দিতে হবে। আর পুরুষেরা উচ্চঃস্বরে সুবহানল্লাহ বলবে। রসুল (সHappy এ প্রসংগে বলেন: পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর মহিলাদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। (সহীহ বুখারী ১/৪০৩)

উপরোক্ত বাহ্যিক করনীয় বিষয়গুলো ব্যতীত অন্য কোন পার্থক্য পুরুষ মহিলাদের সালাতে নেই।

বিষয়: বিবিধ

২৮৪৮ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212584
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৫৯
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : হুম। সহীহ হাদীস সেটাই বলে। নারী পুরুষের নামায পদ্ধতি একই রকম।
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৪৭
160932
চোরাবালি লিখেছেন : এই কথাটি আমাদের অফিসের ঈমাম সাহেব কে বোঝাতে সস্পর্ণ ব্যর্থ হয়েছি। সো তার মাদ্রাসায় যা শিখিছে তার বাইরে কিছু বুঝতে নারাজ।
২৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৪১
161531
প্রেসিডেন্ট লিখেছেন : এটাই সমস্যা। মক্কার কাফেরদের যখন ইসলামের দাওয়াত দেয়া হলো তখন তারা অন্য কোনো যুক্তি না পেয়ে বলতো- আমাদের বাপ দাদারা মূর্তিপূজা করেছে, আমরা ও করবো।
212592
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:০৯
সুশীল লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ
212599
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ এই তথ্য ও যুক্তিপুর্ন পোষ্টটির জন্য। আমার মনে হয় ইসলামের পতন যুগে বিজ্ঞান দর্শনের চর্চার পরিবর্তে কিছু মানুষ এই ধরনের নিয়ম আবিস্কার এর পিছনে সময় নষ্ট করেছেন। আর আমাদের কিছু উলামা নিজের বুদ্ধি ও জ্ঞান না খাটিয়ে সেগুলিকেই চর্বিতচর্বন করে যাচ্ছেন।
212637
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৩৪
আবদুস সবুর লিখেছেন : সোনার বাংলা ব্লগে এই বিষয় নিয়ে পোষ্ট দিয়েছিলাম।

সামুতেও . . .

নারী ও পুরুষের নামাযের পার্থক্য

আসলে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন ব্যতীত মাসয়ালা নিয়ে কথা বলা উচিত নয় . . .
212638
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:৩৬
আবদুস সবুর লিখেছেন : এই বইটা পড়লে আরো অনেক নতুন কিছু জানতে পারবেন আশা করি . . .

নবীজির নামায
212664
২৪ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৩১
সন্ধাতারা লিখেছেন : অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ
212677
২৪ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:০৩
সত্যবাদী ব্লগার লিখেছেন : all are same for men and women ...........

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File