সত্যি কারের নেতা আসলে তারেক জিয়া,
লিখেছেন লিখেছেন অরণ্যে রোদন ১২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৭:৪৬:৩৯ সন্ধ্যা
লন্ডনে তারেক রহমানের দেয়া বক্তব্য পুরোটা ইউটিউবে দেখলাম। আমি আগে কখনো উনার বক্তব্য শুনিনি। তাছাড়া, বক্তব্যটা নিয়ে যেহেতু তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে তাই মনোযোগ দিয়েই শুনলাম।
তারেক রহমানের বক্তব্যের যে বিষয়টা আমার সবচেয়ে বেশী ভাল লাগছে তা হল উনি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে আক্রমন করেননি। বডি ল্যঙ্গুয়েজও যথেষ্ট শালীন ছিল। বক্তব্যে মূলত ৪টি বিষয়ের উপর যুক্তি দিয়েছেন, রেফারেন্স দিয়েছেন। এ ধরনের রেফারেন্সযুক্ত বক্তব্য আমাদের রাজনীতিবিদরা সচরাচর দেন না। তাছাড়া, উনার বক্তৃতার ধরনও আলাদা ছিল। সব মিলিয়ে গতানুগতিক রাজনৈতিক বক্তব্য নয়। যাইহোক, তিনি যে চারটি বিষয়ে বলেছেন তা হল, ১) জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক,২) জিয়াউর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি,৩) শেখ মুজিব অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ৪) বর্তমান ক্ষমতাসীনরাই রাজাকারের পৃষ্টপোষক।
তিনি যে চারটি দাবী করেছেন তার প্রত্যেকটার স্বপক্ষে তিনি যুক্তি/রেফারেন্স দিয়েছেন। তিনি আবুল মাল আবদুল মুহিত, কে.এম. শফিউল্লাহ, মঈদুল হাসান, একে খন্দকার প্রমুখ ব্যক্তিবর্গকে উদ্ধৃত করেছেন যারা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সাথে জড়িত। উনাদের বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন। শেখ মুজিবের একটা সাক্ষাৎকারের কিছু অংশও দেখানো হল। যেখানে সাংবাদিক শেখ মুজিবের কাছে জানতে চেয়েছেন
-You mean Independence?
জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন,
-No, I don't mean it. (উনি অটোনমির কথা বলেছিলেন)
তারপর তিনি স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের আলোকে বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। সেক্ষেত্রে তিনি যেটা বলছেন তা হল, স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে আছে নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি থাকবেন। কিন্তু ১৯৭২ সালের ১২ই জানুয়ারি (সংবিধান রচনা তখনো হয়নি) বঙ্গবন্ধু ওয়েস্টমিনিস্টার স্টাইলে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নিলেন (তাজউদ্দীনকে সরিয়ে)। তাহলে, বিষয়টি স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়েছে। তারেক রহমান এই ফাঁকটা ব্যবহার করেই বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তানের পাসপোর্টে ভ্রমনের বিষয়ে অভিযুক্ত করেছেন যেখানে উনার কাছে জাতিসংঘের ট্র্যাভেল ডুকিউমেন্ট নেয়ার সুযোগ ছিল। সেক্ষেত্রে ড. কামাল হোসেনের নিজের সাক্ষাৎকারের রেফারেন্স দিয়েছেন।
রাজাকারের বিষয়ে তিনি যে অভিযোগ করেছেন, তা সবাই মোটামুটি জানে। শেখ হাসিনার বেয়াইয়ের বাবা রাজাকার ছিলেন। ১৯৯৬ সালের শেখ হাসিনার সরকারের ধর্মপ্রতিমন্ত্রী রাজাকার ছিলেন। এই অভিযোগগুলো তারেক রহমান করেছেন।
তিনি বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে "৪০০ টাকার মেজর" ডাকার যে শালীন রিঅ্যাকশন দিয়েছেন তাও যথেষ্ট ভদ্রোচিত ছিল।
এখন কথা হলো, তারেক রহমানের এই বক্তব্যে ক্ষমতাসীনরা তীব্রভাবে প্রতিক্রিয়া জানাল। তাদের প্রতিক্রিয়ায় তারেক রহমানের যুক্তির/প্রশ্নের কোন কাউন্টার আর্গিউমেন্ট নেই। গতকাল তোফায়েল আহমেদ যেভাবে সঙ-সদে বললেন "তোর বাপ আমাদের স্যার ডাকতো", সেটা কোন কাউন্টার আর্গিউমেন্ট নয়। তারেক "অর্বাচীন", তারেক "পাক এজেন্ট", এসব কোন মানদন্ডেই কাউন্টার আর্গিউমেন্ট নয়। তারেক রহমান কিছু যুক্তি দিয়েছেন, রেফারেন্স দিয়েছেন, সেসব যুক্তির খন্ডনটাই আমরা আ. লীগের কাছে প্রত্যাশা করি। ২৫ মার্চ তারেক বক্তব্য দিলেন, এর পরে মুহিত সাহেব বললেন, ঘোষনা-টোষনা এসব কোন ব্যাপার না। তারেক রহমান পরের বক্তৃতায় মুহিত সাহেবের নিজের লেখা বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছেন। মুহিত সাহেব আবার তার যুক্তি দিবেন, বলবেন ........... এটাই রাজনীতির পরিশীলিত চর্চা। আর্গিউমেন্ট Vs কাউন্টার আর্গিউমেন্ট!
তারেক রহমান ইতিহাস বিকৃত করছেন এই অভিযোগও কেউ কেউ করছেন। বাস্তবতা হলো, ইতিহাস কখনো অন্যের কথায় চলে না। চাইলেই কেউ চেঞ্জ করতে পারে না। ইতিহাস ইতিহাসের জায়গায় থাকে। যেমন, তারেক রহমানের বক্তব্যের পর আমার নির্দিষ্ট কিছু বই পড়ার আগ্রহ জন্মেছে। আমি হয়ত আরো অনেক কিছু জানব যেই ইতিহাস আমি এখন জানি না। ক্ষমতাসীনরা যদি কাউন্টার আর্গিউমেন্ট
দেয় আমি সেটাও শুনব। কোন আর্গিউমেন্ট সর্বোৎকৃষ্ট সেটা বুঝেই আমি ইতিহাস জানতে চেষ্টা করব। আমি মনে করি সবার এটাই করা উচিত। আপনি, বিএনপি করেন, আ.লীগ করেন যেটাই করেন না কেন আপনাকে সব সাইডের আর্গিউমেন্ট শুনতে হবে। আমলে নিতে হবে। যেটা বেস্ট আপনি সেটার পক্ষেই থাকবেন।
একারনে, গালাগালি, ব্যক্তি আক্রমন না করে ক্ষমতাসীনদের উচিত তারেকের আর্গিউমেন্ট গুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া বা খন্ডন করা।
এই হচ্ছে লিঙ্কঃhttp://www.youtube.com/watch?v=C5Uh1yrBbF4
বিষয়: বিবিধ
১১১৬ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Click this link" target="_blank"]তারেক বঙ্গবন্ধুকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলতে পারতো না, যদি.[/url]
এই লোকগুলি এখনো সাহস করে সত্য বলে তাহলে বাংলার মানুষ বিকৃত ইতিহাস থেকে মুক্তি পাবে।
তাই এখানেও তারা গালাগালি আর খিস্তি খেউরের আশ্রয় নিয়েছে ।
সত্য যতই সামনে আসবে খিস্তি খেউরের মাত্রা ততই বেড়ে যাবে ।
একটা কথা প্রায়ই আমরা শুনি :
'' রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন ''
কারন বাপকা বেটা----
মন্তব্য করতে লগইন করুন