‘বাঙালি’ ভাবনা
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্ন দেখি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:৫৩:০০ দুপুর
দুই বাঙলার বাঙালিকে একই অর্থে ‘বাঙালি’ ভাবেন অনেকে। এর ইতিবাচক দিক হচ্ছে বাংলাভাষীদের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক মজবুত করা দুই পক্ষের জন্যই ভাল। নৈতিক ও রাষ্ট্রনৈতিক এই উভয় দিক থেকেই বাংলাভাষীদের মধ্যে সম্পর্ক গভীড় করা খুবই দরকারী কাজ। কিতু এটাএক তরফা হবে না। অভিজ্ঞতা থেকে বুঝি পশ্চিম বাংলার বাঙালিদের অধিকাংশেরই ধারণা, ‘বাঙালি’ পরিচয়ই অসম্প্রাদায়িকতার মানদণ্ড। এটাই ধর্মনিরপেক্ষ বা সেকুলার হবার পথ। বাংলাদেশের বাঙালি জাতীয়তাবাদীদেরো মত এটাই। এখানেই ফাঁকির জায়গা। বাংলাদেশের জনগণের মতো পশ্চিম বাংলার হিন্দুর ‘বাঙালি’ হয়ে ওঠার কোন রাজনৈতিক কিম্বা রাষ্ট্রনৈতিক ইতিহাস নাই। বাঙালি বনাম মুসলমানের লড়াই হিসাবে যে পুলসিরাত বাংলাদেশী জনগণকে পেরুতে হচ্ছে, সেই বিপদের হাত থেকে তাঁরা মুক্ত। এর ফলে তাঁরা হিন্দুই থেকে গিয়েছেন এবং শেষতক হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতকেই তার আদর্শ রাষ্ট্র হিসাবে মেনে নিয়েছেন। তারা ইসলামকে বাঙালির ইতিহাসের অংশ বলে মনে করেন না এবং তারা সেই ইতিহাসের বাইরের নন এমন কোন উপলব্ধির প্রমাণ আমার হাতে নাই। পার্থক্য হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ অখণ্ড ভারতকে যেমন মেনে নেয় নি, তেমনি পাকিস্তানকেও নয়। ভারতীয় বাঙালির সঙ্গে বাংলাদেশের বাঙালির এখানে বিরাট পার্থক্য। এই পার্থক্য রাজনৈতিক। ভালবাসা, প্রেম, মহব্বত বা সুসম্পর্ক দিয়ে যার মোচন হবে না।
‘বাঙালি’ শব্দের আগে আমরা সাধারণত ‘হিন্দু’ ব্যবহার করি না, কিন্তু মুসলমানিত্বকে বাঙালিত্বের ব্যতিক্রম গণ্য করি। এই দিক থেকে ‘বাঙালি’ দ্বিগুণ সাম্প্রদায়িক। প্রথমত তার পরিচয়ের হিন্দুত্বকে সে লুকায়, দ্বিতীয়ত ‘বাঙালি’র ঝান্ডা দেখিয়ে সেও উপমহাদেশে ইসলামের ইতিহাসকে নাকচ করে। অথচ নির্বিচার ‘বাঙালি’ পরিচয় ঐতিহাসিক ভাবে উচ্চবর্ণের ঔপনিবেশিক হিন্দুত্ব বহন করে। তাকে সাফ না করে দাবি করা হয়, মুসলমানকেও বাঙালি হতে হলে এই হিন্দুত্বের ঐতিহাসিক আবর্জনাই বহন করতে হবে। ‘তুমি কে আমি কে, বাঙালি বাঙালি’ – এই শ্লোগানের মধ্য দিয়ে এই ঘোষণাই দেওয়া হয় যে বাংলাদেশের জনগণকে ইসলামের আগমন থেকে শুরু করে বর্ণাশ্রম প্রথার বিরুদ্ধে মুক্তির লড়াইসহ তার শূদ্র ও নিম্নবর্গের জীবনের ইতিহাস ভুলে যেতে হবে। ভুলে যেতে হবে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে জমি হারানোর স্মৃতি। ভুলতে হবে জমিদারতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই। মুছে ফেলতে হবে সিপাহি বিদ্রোহ ও তার পরিণতিতে আলেম-ওলেমাদের নির্বিচার হত্যা, ভুলে যেতে হবে ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে কৃষক হিসাবে তার সংগ্রামের ইতিহাস। মেনে নিতে হবে নয় মাসের ইতিহাসই এই দেশের জনগোষ্ঠির একমাত্র ও শেষ ইতিহাস।
বিষয়: বিবিধ
১২১৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন