রমজান পোষ্ট : সত্যবাদিতা
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৩ জুলাই, ২০১৪, ০৩:১৯:৪৯ দুপুর
সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহ তাআলার, যিনি নিখিল বিশ্বের একমাত্র স্রষ্টা, মালিক এবং শাসক। যিনি অসীম জ্ঞান, অনুগ্রহ ও ক্ষমতা বলে এই বিশ্বজাহান পরিচলনা করেছেন।
আল্লাহর করুণারাশি বর্ষিত হোক তাঁর সে সব সম্মানিত ও নেক বান্দাদের উপর যাঁরা দুনিয়ায় এসেছিলন মানুষকে প্রকৃত মানুষ্যত্ব শেখাতে, যারা মানুষকে তার জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সচেতন করে গেছেন, আর বাতলে দিয়েছেন তার জীবন যাপনের সঠিক পদ্ধতি। যে পদ্ধতি আনুসরন করলে আমরা ইহকালে শান্তি পরকালে মুক্তি পাব । ইনশা আল্লাহ ।
আসসালামু আলাইকুম !
সত্য কথা বলা ও সৎভাবে জীবনযাপন করা মহৎ মানুষের চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য। মিথ্যা কথা বলা ও অসৎ জীবন যাপন করা অসৎ মানুষের লক্ষণ।
সত্যবাদিতা হলো ঈমানের পূর্ণতাদানকারী একটি মহৎ গুণ। ইসলামের দাবি হলো সততানির্ভর জীবন, যে জীবনে থাকে না কোনো অসত্যের চিহ্ন। সত্যবাদিতা নির্ভেজাল ও নির্মল ঈমানের জন্ম দেয় এবং সত্যবাদী ব্যক্তিরাই প্রকৃত অর্থে দুনিয়া-আখিরাতে সফলকাম হয়ে থাকে। সত্যবাদী-সত্যাশ্রয়ী ব্যক্তিরাই আল্লাহর ওপর যথোপযুক্ত তাওয়াক্কুল ও ভরসা রাখে; দুর্যোগ ও দুর্ভোগের সময় ধৈর্যের পরিচয় দেয়; স্বচ্ছলতার সময় ঐকান্তিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। সত্যবাদীরাই কল্যাণকর কাজে পরস্পরে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয় এবং অকল্যাণকর কাজে তারা হয় প্রতিবাদী-বিদ্রোহী। এ সব কারণেই আল্লাহ তাআলা মুমিনদেরকে তাকওয়া ও আল্লাহ-ভীতি ও সত্যবাদী লোকদের সংস্রব অবলম্বন করার জোর নির্দেশ দিয়েছেন ।
আল্লাহ‘বলেছেন,"
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক’ (সূরা আত-তাওবা : ১১৯)।
সাদেকীন অর্থ যারা বোধ ও বিশ্বাসে সত্যবাদী, কাজে-কর্মে সত্যবাদী এবং লেনদেন, বেচাকেনাসহ সকল ক্ষেত্রে সত্যাশ্রয়ী। প্জরতা মুসলমানের জন্য এটা আবশ্যক যে তারা জীবন চর্চার প্রতিটি ক্ষেত্রে সত্যকে ফুটিয়ে তুলবে। সত্যের চর্চা ও অনুশীলকে সার্বক্ষণিক বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। সত্যবাদিতা ধরে রাখতে গিয়ে যদি আর্থিক ক্ষতিও সহ্য করতে হয় তবু তারা সত্যকে ধরে রাখবে। আর এভাবেই তরা সক্ষম হবে আল্লাহর পক্ষ হতে অফুরান বরকত লাভের।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘ ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই (ক্রয়-বিক্রয় প্রক্রিয়া নাকচ করার) ইখতিয়ার রাখে যতক্ষণ না তারা পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারা যদি সত্য বলে এবং ক্রটি-বিচ্যুতি বলে দেয়, তাহলে উভয়ের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দেয়া হয়। আর যদি তারা মিথ্যা বলে এবং পণ্যের দোষ লুকিয়ে রাখে তাহলে তাদের বেচাকেনার বরকত ধ্বংস করে দেয়া হয়’ (মুসলিম)।
সততা ও সত্যবাদিতা সম্পর্কে কুরআন মাজীদে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। সত্যবাদী ব্যক্তিদের জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতের ওয়াদা দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে : ‘ আজকের দিনে সত্যবাদীদের সত্যবাদিতা তাদের উপকার করবে। তাদের জন্য জান্নাতে রয়েছে; যার তলদেশে প্রবাহিত হবে নদী। তারা তাতেই থাকবে চিরকাল’ (সূরা আল মায়েদা : ১১৯)।
অর্থাৎ পার্থিব জগতে তাদের সততা পারলৌকিক জীবনে উপকারী হবে। বিচার দিবসে আল্লাহর ভয়াবহ শাস্তি থেকে সত্যবাদিতাই তাদেরকে বাঁচিয়ে দেবে।
এবং মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের রবের নিকট তাদের জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা’ (ইউনুস : ২)।
যারা সত্যকে ধারণ করে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নেয় তাদেরকে আল্লাহ তাআলা মুত্তাকী বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
‘আর যে সত্য নিয়ে এসেছে এবং যে তা সত্য বলে মেনে নিয়েছে, তারাই হলো মুত্তাকী’ (যুমার : ৩৩)।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, শুধু নিজে নিজে সত্যবাদী হলেই চলবে না বরং যারা সত্যবাদী তাদেরকে সত্যবাদী বলে সত্যায়ন করাও জরুরী। কারণ অনেকেই অহংকারবশত বা হিংসার বশবর্তী হয়ে সত্যবাদীকে সত্যায়ন করতে অস্বীকার করে।
সত্যবাদিতা এমন মহৎ গুণ যে আল্লাহ তাআলা নিজেই এ গুণে গুণান্বিত বলে উলে¬খ করেছেন। সত্যবাদিতা হলো আল্লাহর গুণ।
‘বল, ‘আল্লাহ সত্য বলেছেন’(আল ইমরান: ৯৫)।
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন : ‘আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে’? (নিসা : ৮৭)।
আমাদের একটি ভুল ধারণা এই যে সত্যবাদিতা শুধু কথার জগতে সীমিত। পক্ষান্তরে সত্যবাদিতার ক্ষেত্র সুদূরবিস্তৃত। অন্যভাবে বলতে গেলে বলা যায়, সত্যবাদিতা মৌলিকভাবে তিন প্রকার-
এক. কথার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। অথাৎ মানুষের জিহ্বা সত্যবাদিতা শেকড়ে সুদৃঢ়ভাবে স্থির থাকবে যেভাবে স্থির থাকে ধানের শীষ ধান গাছে।
দুই. কর্মের ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা : অর্থাৎ ব্যক্তির আমল ও কর্ম স্থির থাকবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের এঁকে দেয়া সীমানার ভেতর যেমন স্থির থাকে মাথা শরীরের ওপরের অংশে।
তিন. সার্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। অর্থাৎ অন্তরের আমল ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ইখলাসের ভিত্তিমূলে দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এই তিন প্রকারের সত্যবাদিতায় নিজকে দাঁড় করাতে পারলেই বলা সঙ্গত হবে যে কোনো ব্যক্তি সিদ্দিক, সততা-সত্যবাদিতা নিয়ে এসেছে বা সত্যবাদিতার গুণে যথার্থভাবে গুণান্বিত হয়েছে। আর এই তিন প্রকারের সত্যবাদিতায় ব্যক্তি যতই অগ্রসর হবে তার সিদ্দীকিয়াতের মাত্রাও ততো বেড়ে যাবে।
আবু বকর সিদ্দীক রাযি. এর সিদ্দীকিয়াতের সর্বোচ্চ শেখরে অধিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে এই তিন প্রকারের সত্যবাদিতায় সর্বোচ্চ পর্যায়ের উৎকর্ষ সাধনই কারণ ছিল। এ তিন প্রকারের সত্যবাদিতার সারমর্ম হলো নিম্নরূপ-
কথার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতার অর্থ- সকল প্রকার মিথ্যা থেকে নিজের যবানকে হিফাযত করা। সদাসর্বাদ সত্য বলা এবং এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা; কেননা মানুষ জিহ্বাকে ব্যবহার করে কি কি কথা বলেছে তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা স্বয়ং জিহ্বাকেই জিজ্ঞাসা করবেন।
কোরআনে বলা হয়েছে : ‘যেদিন তাদের জিহ্বাগুলো, তাদের হাতগুলো ও তাদের পাগুলো তারা যা করত, সে ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে (সূরা আন-নূর : ২৪)।
কর্মে সত্যবাদিতা হলো ব্যক্তির অন্তর ও বহির একরকম হওয়া। ভেতরে একরকম বাইরে অন্যরকম এরূপ না হওয়া। আবদুল ওয়াহেদ ইবনে যায়েদ আল বসরী, হাসান আল বসরী রহ. সম্পর্কে বলেন, হাসান আল বসরী যখন কোনো কাজের নির্দেশ দিতেন তিনি অন্যদের তুলনায় সে কাজে অধিক আমলকারী থাকতেন। আর যদি তিনি কোনো বিষয় থেকে কাউকে বারণ করতেন তবে তিনি অন্যদের তুলনায় সে বিষয়ে অধিক দূরত্বে অবস্থান করতেন। অন্তর ও বহির সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার ক্ষেত্রে হাসান আল বসরীর মতো অন্য কোনো মানুষকে আমি দেখিনি’।
সার্বিক অবস্থার ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা হলো সর্বোচ্চ পর্যায়ের সত্যবাদিতা। যেমন ইখলাস ও ভয়, তাওবা ও আশা, যুহদ, আল্লাহ ও তার রাসূলের মহব্বত, আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল ইত্যাদির ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা। এ কারণে ‘আ‘মালুল কুলূব’ বা অন্তরাশ্রিত সকল আমলের মূল হলো সত্যবাদিতা। মুমিন যখন এসব অবস্থায় সত্যবাদী হয় তখন সে উঁচু পর্যায়ে চলে যায়। আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বেড়ে যায়।
আল কুরআনে বলা হয়েছে : ‘ ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে; বরং ভালো কাজ হলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী’ (সূরা আল বাকারা:১৭৭)।
সত্যবাদিতার ফজিলত :
১-জান্নাতে লাভে ধন্য হওয়া: ‘জান্নাতের আমল কী’? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে উত্তরে তিনি বলেন,‘সত্যবাদিতা’(আহমদ)। আল কুরআন অনুযায়ী কিয়ামতের দিন সত্যবাদিতাই মানুষের উপকারে আসবে, মানুষকে জাহান্নাম থেকে বাঁচিয়ে নেবে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
‘ এটা সেই দিন যেদিন সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে। তাদের জন্য আছে জান্নাতসমূহ যার নীচে প্রবাহিত হবে নদীসমূহ। সেখানে তারা হবে চিরস্থায়ী। অল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন, তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছে। এটা মহাসাফল্য। (সূরা আল মায়েদা:১১৯)।
২-কল্যানের দরজা উন্মুক্ত হওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তাওফীক আসা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, কা‘ব ইবনে মালেক রাযি.- তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা তিনজনের একজন- কে উদ্দেশ্য করে বলেন: ‘তবে এ ব্যক্তি, সে নিশ্চয় সত্য বলেছে’ (বুখারী ও মুসলিম)।
৩-ধ্বংস থেকে বেঁচে যাওয়া ও সমস্যা-সঙ্কট দূরীভূত হওয়া। যে তিন ব্যক্তির গুহার মুখ পাথর দ্বারা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাদের বিষয়ে বর্ণিত হাদীসে এসেছে : ‘ তোমাদেরকে মুক্তি দেবে না তবে তোমাদের সততা। তাই তোমাদের মধ্যে প্রত্যেক ব্যক্তি সে যে বিষয়ে সত্যবাদি ছিল বলে জানে তা উল্লে¬খ করে যেন দুআ করে’ (বুখারী)।
৪-অন্তরে শুদ্ধতা আসা। কেননা যে ব্যক্তি বাইরের কাজে সত্যবাদী সে অন্তরবিষয়ক আমলেও সত্যবাদী।
৫-সত্যবাদিতা দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণের কারণ। ইরশাদ হয়েছে : ‘এটা সেই দিন যেদনি সত্যবাদীগণকে তাদের সততা উপকার করবে’(সূলা আল-মায়েদা:১১৯)।
৬-সত্যবাদিতা আস্থা ও প্রশান্তির কারণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘ নিশ্চয় সত্যবাদিতা হলো আস্থার কারণ, আর মিথ্যাবাদিতা হলো সংশয় সন্দেহের কারণ’ (তিরমিযী)।
৭- ফেতনা সত্যবাদীর কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
৮-সত্যবাদিতা সকল কল্যাণের মূল। আর মিথ্যাচার সকল গোমরাহীর মূল।
৯-মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হতে সত্যবাদীর নিষ্কৃতি। কেননা মিথ্যা বলা, হাদীস অনুযায়ী, মুনাফিকের একটি আলামত।
১০ সত্যবাদিতা সঠিক দূরদৃষ্টি অর্জনে সাহায্য করে।
তাই আসুন আমরা সকল ক্ষেত্রে সত্যবাদী হই। সততার পরিচয় দেই। সত্যবাদীদরে সঙ্গ অবলম্বন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে সাদিকীনদের দলভুক্ত করুন। কথায়-কাজে-আচরণে আমাদের সবাইকে সততার পরিচয় দেয়ার তাওফীক দান করুন। জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রতিটি পদক্ষেপে সত্যাশ্রয়ী হয়ে জীবনযাপনের তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে মিথ্যা থেকে হিফাযত করুন। কপটতা ও মুনাফিকী থেকে হিফাযত করুন। আমীন ।
( এটা কপিপেষ্ট , সুত্র বলতে পারব না ,আমার ডকুমেন্টে সেফ করা ছিল অনেক আগে ।
বিষয়: বিবিধ
১৭৪০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ আপু। পোস্টের জন্য শুকরিয়া। রমাদান মুবারাক আপনাকে
মন্তব্য করতে লগইন করুন