অসহায়
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ১৬ মে, ২০১৪, ০৭:২৬:১৪ সন্ধ্যা
মাহীর বাবার টাকা পয়সার সাথে সমাজে নাম ডাক ও আছে তাছাড়া মাহী ছাত্রী তেমন ভাল না হলেও দেখতে বেশ সুন্দুরী ।
ইন্টার এ পড়ার সময় থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসলেও মমতাজ বেগম ও আশরাফ সাহেব মেয়েকে ছোট মনে করে এতদিন চুপ করে ছিলেন ।এখন মাহী অনার্স থার্ড ইয়ার এ পড়ছে । এবার বাবা মা মনে করলেন মেয়ে বড় হয়েছে বিয়ে দেয়া দরকার ।অনেক ভাল ভাল বিয়ের প্রস্তাবও আসছে দেশে প্রতিষ্টিত ও বিদেশে সেটেল্ট ।
এরকম কয়েকটা ছেলের বায়োডাটা নিয়ে মমতাজ বেগম মেয়ে মাহীকে বলেন এখান থেকে তুমি একটা পছন্দ করে আমাদেরকে বল আমরা তাদের সাথে কথা বলি ।
কিন্তু মেয়ের কথা শুনে মমতাজ বেগম অবাক হয়ে গেলেন ।
মাহী এখন বিয়ে করবে না কারন তাসিফ লেখা পড়া শেষ করে প্রতিষ্টিত হবে তারপর বিয়ে ,তাসিফকে ছাড়া সে অন্য কাউকে বিয়ে করবে না ।
তাসিফ মাহীর আপন ছোট চাচার ছেলে বয়সে শান্তার চেয়ে দুই বছরের ছোট । এক বাসায় না থাকলে ও দুই পরিবারের আসা যাওয়া ছিল সবসময় ।সেই ছোট বেলায় একসাথে খেলতে খেলতেই তাদের মাঝে ভাল লাগা থেকে ভালবাসা হয় ।
তাসিফ লেখা পড়ায় যেমন মনোযোগী না স্বভাব চরিত্রেও তেমন ভাল না ।
দুই পরিবারের কেউই মেনে চায় না তাদের সম্পর্ক ।তবে এটা নিয়ে ভাইয়ে ভাইয়ে বা জায়ে জায়ের সম্পর্কে কোন টানা পোরনের সৃষ্টি হয় না ।তারা যার যার মত ছেলে মেয়েকে বুঝান ।
মাহী সরা সরি মাকে বলে দেয় এটা নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না জীবন আমার ,বিয়ে করব আমি ,সংসার করব আমি তাই এটা আমি আমার পছন্দেই করব ।
মমতাজ বেগম নরম ভাবেই মেয়েকে বলেন দেখ তোমার বয়স কম আবেগ বেশী তুমি ভুল করছ ।
বাবা মায়ের বয়স বেশী বলেই যে তাদের কোন ভুল হবে না এমন তো নয় !
মেয়ের এই ধরনের কথা শুনে মমতাজ বেগম নিজেকে খুবই অসহায় মনে হয় ।তিনি আর কি করবেন স্বামীর কাছে সবই খুলে বলেন ।
আশরাফ সাহেব এসব কথা শুনে তিনিও মমতাজ বেগমের উপরই রেগে যান কি বলছ এ সব ,তুমি কেন এসব আগে খেয়াল রাখ নি ,ঘরে বসে কি করেছ ,মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়েছ মেয়ে কথা শুনে না ।সব দুষ তোমার তুমি মা হওয়ার যোগ্যই না ।
স্বামীর এ সব কথা শুনে মমতাজ বেগমের নিজেকে অপরাধী ও আরো বেশী অসহায় মনে হয় ।
মনে মনে ভাবতে থাকে সব দুষ আমার ,আমি মা হওয়ার যোগ্য না !
আমর তো মনে পরে না মা হিসাবে আমি আমার কোন দায়িত্ব কর্তব্যে অবহেলা করেছি ,তাদের আদর যন্তের কোন ত্রুটি তো আমি করিনি । তাহলে কেন ? ? ? ? ।
এরপর আশরাফ সাহেব নিজে ও তার বড় বোন ,ভাই ও মাহীর মামা খালাদের দিয়ে ও মাহীকে বুঝান কিন্ত না কোন কাজ হয় না ।
আশরাফ সাহেব ও মমতাজ বেগম আশাহত হয়ে হাল ছেড়ে দেন ।আত্বীয় - স্বজনদের কে্উ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলে উনারা হ্যা না কিছুই বলেন না লজ্জায় চুপ করে থাকেন ।
সময় কারো জন্য বসে থাকে না মাহীর ও এখন আর বিয়ের প্রস্তাব আসে না।মাহী সুন্দুরী হলে ও তার চেহারায় বয়সের ছাপ পড়েছে ।মাহী দুই বছর আগে মাষ্টার্স শেষ করে একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে চাকরি নিয়েছে ।
তাসিফ কোন রকমে ডিগ্রী পাশ করে বাবার জুরে পর পর দুইটা চাকরি পেয়েও ধরে রাখতে পারেনি ।অফিসের ধরা বাধা নিয়ম পালন করা তার পক্ষে সম্ভব নয় ,বাবার হোটেলেই বসে বসে খায় আর বন্ধুদের সাথে আড্ডাদেয় ।
মাহী তাসিফকে অনেক বুঝায় একটা কিছু কর হয় চাকরি না হয় ব্যাবসা ।
তাসিফ মাহীর কথার কোন গুরুত্বই দেয় না ।সে তার মতই চলতে থাকে ।বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডায় মেতে থাকে ।
এনিয়ে মাহী তাসিফের সাথে কথা কাটাকাটি করে কয়েকদিন অভিমান করে তাসিফের সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখে ।কিন্তু তাসিফ এর কোন পাত্তাই দেয় না ।
মাহীর চোখের রঙ্গীন চশমা আস্তে আস্তে খুলে যায় আবেগটাও আর আগের মত নেই ।সে তাসিফদের বাসায় যায় আর শেষবারের মত তাসিফকে বুঝানোর চেষ্টা করে এভাবে তো জীবন চলবে না একটা কিছু কর ।আমি তোর জন্য আর কত দিন অপেক্ষা করব ।
তাসিফ এবার সরাসরি বলে আমি কিছু করব না ,আমার বাবার টাকা আছে তোর বাবার ও টাকা আছে তাছারা তুই তো চাকরি করছিস ।এখন তোর ইচ্ছা বিয়ে করলে কর না করলে ওকে ।
মাহী তাসিফের এমন কথায় কান্নায় ভেঙ্গে পরে এত বছর পর তুই এই কথা বলতে পারলি ।এই কি তোর ভালবাসা !!
মাহী কষ্ট দুঃখে কেঁদে কেটে চোখ মুখ লাল করে বাসায় ফিরে আসে ।
মমতাজ বেগম এটা দেখে মেয়ের কপালে হাত দিয়ে মাহী তোর কি শরীর খারাপ ?
না আম্মু শরীর ঠিক আছে ।
তাহলে কি হয়েছে ?মাহী মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়ে আম্মু আমি ভুল করেছি আমি তাসিফকে চিনতে ভুল করেছি ।এখন তোমরা ডিসিশন নিয়ে পার তবে বিদেশে সেটেল্ট এরকম হলে ভাল হয় আমি দেশে থাকলে তাসিফ আমাকে ডিস্টার্ব করবে ।
মেয়ের কথা শুনে মমতাজ বেগম অবাক হয়ে বলেন মাহী তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছ অনেক দেরীতে যেটা আমি তোমাকে অনেক আগেই বলেছিলাম ।কিন্তু সময় আর সুযোগ কারো জন্য অপেক্ষা করে না ।আমরা তোমাকে অনেক বুঝিয়েছি তখন তুমি বুঝনি ।
আম্মু সন্তানেরা ভুল করতে পারে মা বাবা কেন ভুল করবে ।তোমরা কেন আরো কঠোর হওনি তখন ।
মমতাজ বেগম অবাক হয়ে বলেন সন্তানের প্রতি স্নেহ ভালবাসায় এর চেয়ে কঠোর আমরা হতে পারেনি ।
আম্মু সন্তানের প্রতি স্নেহ ভালবাসা থাকবেই তাই তাদের ভালর জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতে ।আর শুধু সন্তানদের আদর যত্ব, ভালবাসা দিয়ে বড় করলেই হয় না তাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে যেটা তোমরা আমাদের দাও নি ।তাই আজকে আমার এই পরিনতির জন্য তোমরাই দায়ী ।
মমতাজ বেগম মেয়ের কথা শুনে ফ্যাল ফ্যাল চোখে আসহায় ভাবে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে বলে মেয়ে বলে কি !!
মমতাজ বেগমের মনে পড়ে একবার এক হুজুর বলেছিল কিয়ামতের দিন কিছু সন্তানকে দোজখে দিতে বলা হবে তাখন সন্তানেরা বলবে আমাদের মা বাবাকে আন তাদের বুকের উপর পা দিয়ে মাড়িয়ে দোজখে যাব কারন বাবা মা হিসাবে তারা আমাদের সঠিক শিক্ষা দেয় নি ।
সে তো কিয়ামতের কথা আমার সন্তান তো আমাকে দুনিয়াতেই দায়ী করে ফেলল .......।
বিষয়: সাহিত্য
১৭৯২ বার পঠিত, ১৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখাটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ--
সময়ই তার পথ বাতলে দেয়।
সহজ সরল জটিল।
এখানে "শান্তা" টা মনে হয় ,কি মনে হয় ভাইজান ?
আপনার গল্পটি আশা করি অনেকের মাঝে ভাবনার উদ্রেক করবে।
আপনাকে ধন্যবাদ
বিশেষ করে শেষ দিকটা্য়
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
মন্তব্য করতে লগইন করুন