ফিরে এসো শান্তির পথে (শেষ পর্ব )
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২২ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:৪৮:১০ রাত
মীনা ভীরু ভীরু মনে সামনে এগিয়ে এসে গালিব ভাইয়া আপনি এখানে !!
গালিব মুচকী হেসে কেন মীনা আমারই তো এখানে থাকবার কথা !!
মীনা গালিবের কন্ঠ শুনে স্তদ্ধ হয়ে যায় এই সেই কন্ঠ যার যার আহবানে মীনা নিজেকে গড়ে তুলেছে নতুন করে নতুন রূপে ,তার পরো মীনা বলে মানে !!
মানে আমিই আবরার আর আমার পুরা নাম আবরার গালিব ।
মীনার মীনার দুচোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রু ধারা আর বির বির করে এটা হতে পারে না কিছুতে ই না মীনা পিছন দিকে হাটা ধরে ।
আবরার কিছুই বুঝতে না পেরে মীনার চোখে পানি ও চলে যাওয়া দেখে অবাক হয়ে মীনা কি হয়েছে তুমি চলে যাচ্ছ কেন ?শোন মীনা আমার কথা শুনে যাও ।
মীনা আর পিছন ফিরে তাকায় না ।গালিব ও মীনার পিছন পিছন আসতে থাকে ।
মীনা দৌড়ে গিয়ে গাড়ি ষ্টার্ট দিয়ে দেয় ।সারা রাস্তা মীনার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে ।
মীনা বাসায় এসে সরাসরি বাথরুকে ডুকে শাওয়ার ছেড়ে দেয় ।শাওয়ারের পানি আর মীনার চোখের পানি এক হয়ে মিশে যায় ।
মীনা অনেক চোখের পানি ঝড়িয়ে নিজেকে হালকা ও মনকে শক্ত করে নেয় ।
এর মাঝে আবরার কয়েক বার ফোন করলে ও মীনা রিসিপ করেনি এবার রিসিপ করে সালাম দিয়ে বলা শুরু করে আবরার ভাইয়া আমি আপনার কাছ অনেক কৃতজ্ঞ যে আপনি আমাকে আলোর পথ শান্তির পথ দেখিয়েছেন ।আপনার কারনেই আমি ইসলামকে জানতে বুঝতে শিখেছি ।
সে জন্য আমি জানি ইসলাম মানুষকে উদার হতে শিখায় ।একজন মুসলিম সে কখনো শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে সে সবার কথা ভাবে ,কি ভাবে নিজে ত্যাগ স্বীকার করে অন্যকে সুখী করা যায় ।
কাজেই আপনাকে বিয়ে করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্বব নয় আমার বোন দীনা আপনাকে ভালবাসা ।আপনি দীনাকে বিয়ে করন ।
আবরার : তা কি করে হয় আমার ভাল লাগা থেকে আমার মাঝে তিল তিল করে গড়ে উঠেছে যে স্বপ্ন সেতু তোমাকে নিয়ে ।
মীনা : আবরার ভাইয়া মানুষের এই ছোট্ট জীবনে সব স্বপ্ন সব আশা তো আর পূরণ হয় না তাই না !
দীনাকে বিয়ে করে আপনি সুখী হবেন ।দীনা মেয়ে হিসাবে সব দিক দিয়েই আমার চেয়ে ভাল ।
মীনার এসব কথা শুনে চুপ হয়ে যায় আবরার নিজের অজান্তেই চোখদিয়ে পানি পড়তে থাকে যদিও সে পানি মীনা দেখতে পায় না ।
মীনা : আবরার ভাইয়া কিছু বলছেন না কেন ? আপনি যদি দীনাকে বিয়ে নাও করেন তবু আমার পক্ষে আপনাকে বিয়ে করা সন্বব নয় ।তাই আপনার কাছে আমার অনুরোধ আপনি দীনাকে বিয়ে করুন ,আপনি সুখী হবেন ইনশা আল্লাহ !
আবরার : মীনা আল্লাহ হাফেজ বলেই লাইন কেটে দেয় ।
এর পর দীনা রাহেলার দরজায় নক করে খালা মনি কি করছ আমি কি আসতে পারি ।
রাহেলা : আয় মীনা মীনা রুমে ডুকে রাহেলার পাশেই খাটের উপর বসে খালামনি তুমি কি ফ্রী আছ আমি একটু কথা বলব ।
রাহেলা : হ্যা আমি ফ্রী বল কি কথা মীনা ।
খালা মনি দীনা তোমার বড় বোনের ছেলে গালিব ভাইয়াকে খুব পছন্দ করে তুমি সবার সাথে কথা বলে ওদের বিয়ের ব্যাবস্থা কর ।
রাহেলা অবাক হয়ে মীনার দিকে তাকিয়ে এটা কেমন করে হয় তোরা দুজন দুজনকে পছন্দ করিস !
এবার মীনা অবাক হয়ে খালা মনি !
হ্যা রে মা আমি সব জানি ।কিছুতেই যখন তুকে সোজা পথে আনতে পারছিলাম না বাধ্য হয়েই আমাকে এই বাকা পথটা বেছে নিতে হয় ।
আমার কেন জানি মনে হত আবরারই পারবে তোকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে ।তাই আমিই আবরারের কাছে হেল্প চাই আর তোর ফোন নাম্বারটা ওকে দিয়েছিলাম ।
আলহামদুল্লিলাহ !! তুই ফিরে এসেছিস ।
খালামনি আমি তোমাকে ভুল বুঝেছি সত্যি তুমি অনেক ভাল ।
মীনা মা তুই ও খুব ভাল এই রকম পরিস্থিতীতে হয়ত আমিও ঐ রকমই করতাম ।
খালা মনি মানুষ বলে আল্লাহ যা করেন মানুষের মঙ্গলের জন্যই করেন কথাটা আমি এখন স্বীকর করি ।আমার আম্মু মারা গেছে তার জন্য আমার এখন কষ্ট থাকলে কোন আফসোস নেই ।কারন আম্মু বেঁচে থাকলে হয়ত আমাদের মনে সুখ ,আনন্দ খুশী থাকত কিন্তু এখন আমরা ভাই বোনেরা আমার আব্বু ইসলামকে যতটুকু বুঝে পালন করছি সেটা হয়ত হত না ।এই যে আজকে আমরা সব ভাই বোনেরা আম্মুর জন্য দুয়া করছি সেটাও হত না ।এ সবকিছু সন্বব হয়েছে খালা মনি তোমার জন্য বলে মীনা রাহেলাকে জড়িয়ে ধরে মীনা কেদে উঠে ।
রাহেলা মীনার পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে কাদিস না মীনা কাদিস না সোনা ।
মীনা শান্ত হয়ে খালা মনি দীনা আমার ছোটবোন আমার কাছে আমার সুখের চেয়ে ওর সুখটাই বড় ।আমি জানি দীনা গালিব ভাইয়া কে ভীষন ভালবাসে কাজেই আমার পক্ষে কিছুতেই গালিবকে বিয়ে করা সন্ভব নয় তাই তুমি ওদের বিয়ের ব্যাবস্তা কর ।আর খালা মনি তোমার কাছে একটা অনুরোধ আমার আর আবরারের ব্যাপারটা দীনা যেন কিছুতেই জানতে না পারে ।
রাহেলার দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে ,মীনা রাহেলার চোখের পানি মুছে খালামনি তুমি কেঁদনা এনিয়ে আমার কোন কষ্ট নেই ।
রাহেলা এটা কেমন করে হয় তুই বড় তুকে রেখে আগে দীনার বিয়ে ! দীনাই কি এটা মানবে ।
খালামনি ছোট-বড় এটা কোন ব্যাপার না যার জন্য যখন ভাল ছেলে পাওয়া যাবে তখন আর দেরী করা ঠিক হবে না আর দীনার ব্যাপারটা আমি দেখব ।
রাহেলা জাফর সাহেব ,গালিব ও গালিবের মা বাবার সাথে কথা বলে দীনাও গালিবের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ।
দীনা বড় বোনকে রেখে তার বিয়ে এর জন্য একটু গড়িমসি করলেও মনে মনে ভীষন খুশী ।
মীনা নিজের বুকের ভিতর জমানো কষ্টকে কাউকে বুঝতে না দিয়ে হাসি মুখে দীনার বিয়ের সমস্ত আয়োজনে নিজেকে ব্যাস্ত রাখে ।
কেউ এটা বুঝতে না পারলেও রাহেলা ঠিকই বুঝতে পারে মীনার কষ্ট ।এনিয়ে রাহেলার নিজেকে খুব অপরাধী মনে হয় মীনা কি পারবে এ কষ্ট সহ্য করতে মীনা যদি আবার আগের মত হয়ে যায় আমার জন্যই মেয়েটার এই অবস্থা রাহেলা যখন এসব ভাবছে এমন সময় মীনা রাহেলার রুমে ডুকে খালামনি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই ।
বল মীনা কি কথা ।
খালা মনি আমি m s করার জন্য ইংল্যান্ড একটা ইউনির্ভারসিটিতে এ্যাপ্লাই করেছিলাম সেটার রেজাল্ট আগেই পেয়েছিলাম আমি সিলেক্ট হয়েছি কিন্তু আমি সিন্ধান্ত নিতে পারছিলাম না যাব কি যাব না তাই তোমাদের কাউকে জানাই নি এখন আমি সিন্ধান্ত নিয়েছি আমি যাব তাই আমি টিকেট কর্ণফার্ম করে দিয়েছি ।আর এটা দীনার বিয়ের দিন রাত বারটায় আমার ফ্লাইট ।
রাহেলা চমকে উঠে মীনা তুই এসব কি বলছিস .. !
হ্যা খালামনি আমি অনেক চিন্তা করে দেখলাম এটাই আমাদের মানে দীনা আবরারের জন্য ভাল হবে ।আমি সামনে থাকলে আবরার মীনার সাথে সহজ হতে পারবে না ।
রাহেলা এবার আর স্থীর থাকতে পারে না মীনাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে মীনা তুই কেন এভাবে জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছিস ।
খালামনি আমি জীবন থেকে পালিয়ে যাচ্ছি না মাত্র তো দুই বছর তার পর আমি ফিরে আসব তোমার কাছেই ফিরে আসব ।
রাহেলা : মীনা সত্যি তুই অনেক ভাল মেয়ে আর আমার নিজেকে খুব বড় অপরাধী মনে হচ্ছে ,মনে হচ্ছে তোর সমস্ত কষ্টের জন্য আমিই দায়ী ।
খালামনি তুমি এভাবে ভেব না আমার কোন কষ্ট নেই ,আর আমার যাবার কথা এখন কাউকে বল না ।
আজকে দীনার বিয়ে সবাই কমিউনিটি সেন্টারে চলে এসেছে মীনা দীনাকে পার্লার থেকে সাজিয়ে নিয়ে এসেছে মীনা দীনাকে জড়িয়ে ধরে দীনা তুকে খুব সুন্দর লাগছে ,গালিব ভাইয়ার সাথে তুকে বেশ ভাল মানাবে ।মীনার কথায় দীনার চোখে পানি টলমল করে ।
কায় মীনার চোখে চোখ পড়ে আবরারের ।দুজনের চোখেই পানি চলে আসে মীনা তারা তারি চোখ নামিয়ে নেয় আর মনে মনে বলে তোমাদের খুব সুন্দর মানিয়েছে তোমাদের সাথে আমার দুয়া রইল তোমরা সুখী হও ।
মীনা সবার অলক্ষে বের হয়ে আসে তার পিছন পিছন আসে রাহেলা ।
খালা মনি আমার প্লেনের সময় হয়েছে আসি ।
রাহেলা মীনাকে জরিয়ে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে মীনা পারলে আমাকে ক্ষমা করিস ..................।
কেঁদ না খালা মনি আর আমার জন্য কোন চিন্তা কর না পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি শান্তির পথ থেকে যেন সরে না যাই সেই দুয়া কর ........ খালামনি আল্লাহ হাফেয .........।
বিষয়: বিবিধ
১৮২৪ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দীনা গালিবকে যে মীনা'র চেয়ে বেশি ভালোবাসে (যার মূল্যদিতে মীনা তিলেতিলে গড়ে উঠা নিজের খাটি ভালোবাসাটাকে বোনের জন্য কুরবান করেদিলো), ওটা আরেকটু বেশি ফোকাস করলে গল্পটা আরও বেশি আকর্ষনীয়+বাস্তবভিত্তিক হতো।
ধ্যাত, আসলেই আমি বেশি কথা বলি, তাইনাপু? নাহলে কি আজকে এসে আবার এরম মন্তব্য করতাম? আমাকে আমি হাতুড়ি পেটা কর্লাম
মন্তব্য করতে লগইন করুন