মায়ের ভালবাসা
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:১১:৫১ রাত
আমি আসমা আতিয়া নাম শুনেই বুঝতে পারছেন আমি একটি মেয়ে ।আমি ছোট্ট বেলায় পুতুল দিয়ে খেলা করতাম ।কেন জানি না আমি সব সময় মেয়ে পুতুলের মা হতাম ।আমি সেই পুতুলকে মিছামিছি গোছল দিতাম ,ঘুম পারাতাম ,খাওয়াতাম আবার বান্ধুবীদের ছেলে পুতুলের সাথে বিয়ে দিতাম ।
সেই আমি আজকে সত্যিকারে এক মেয়ে সন্তানের মা হয়েছি।আমার মেয়েটা দেখতে ঠিক পুতুলের মতই সুন্দর হয়েছে ।ওর নাম রেখেছি নীলা ।
১০মাস ১০দিন নাকি ৯মাস ১০দিন তা জানি না তবে ডাক্তার ২৮০দিনের হিসাব করে যে ডেট দিয়েছে সে ডেটেই আমার মেয়ের জন্ম হয়েছে ।
হাসপাতালে যখন আমার সন্তানের প্রথম কান্নার আওয়াজ আমার কানে আমি শুনতে পেলাম আমার ২৮০ দিনের আর প্রসব যন্ত্রনার অসহ্য কষ্ট নিমিষেই দুর হয়ে এক অনাবিল প্রশান্তিতে আমার মন খুশীতে ভরে উঠে।
আর নার্স যখন আমার সন্তানকে আমার বুকের উপর রাখল আমার মনে হল পৃথিবীর সমস্ত সুখ আমার বুকের উপর জমা আছে ।
এতদিন আমি ছিলাম আমার বাবা মায়ের মেয়ে আমার স্বামীর স্ত্রী আর আজকে আমি হলাম পূর্ণ আমি মা ।আমি আমার সন্তানের মা ।আমি নীলার মা ,সবাই আমাকে ডাকবে নীলার মা ।ভাবতেই কি যে ভাল লাগছে আমি ভীষন ভাবে পুলকিত ও শিহরীত হই ।
খুশী ও আনন্দীত মনে মেয়েকে নিয়ে বাসায় আসলাম ।আমার মেয়েকে খাওয়ানো,গোছল করানো ,গায়ে তেল মালিশ করা ঘুম পাড়ানো এসব নিয়েই ব্যাস্ত থাকি ।
তার ছোট ছোট নরম তুল তুলে হাত ,পা,নাক,কান ছুয়ে ছুয়ে দেখি আর অবাক হয়ে ভাবি এই মেয়েটা আমার পেটে ছিল !!আমার থেকে এর জন্ম !!
আল্লাহ তায়ালার অসীম কুদরতের কথা ভেবে নত হয়ে আসে আমার মাথা ।
আমার মেয়ের একটু খানি মুখ বাঁকা করা হাসিতেই আমি আনন্দে উদ্বেলিত হই আবার একটু আ..উ কান্নাতেই আমার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠে ।
বাসায় কে্উ এলে আমার মেয়েকে কুলে না নিলে আদর না করলে অনেক কষ্ট পাই ।
মেয়েটাকে এক পলকও চোখের আড়াল করতে ইচ্ছা করে না ।কিন্তু সংসারে তো আমাকে আরো কাজ করতে হয় ।পানির জন্য যেমন পিপাসা লাগে আমার মেয়েকে দেখার জন্য আমার মনের মাঝে একধরনের পিপাসা জাগে যত কাজের মাঝেই ব্যস্ত থাকি ৫ মিনিট পর পর মেয়ের মুখটা দেখলে শান্তি পাই না।
আমার মেয়েটা আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে সে বেশ দুষ্ট আর চঞ্চল।ওর দুষ্টামী ওর চঞ্চলতায় অন্যরা বিরক্ত হলেও আমার কাছে ভাল লাগে ।যদিও মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে দমক দেই ।কিন্তু এই ধমকটা যদি অন্য কেউ এমন কি ওর বাবাও দেয় আমি অনেক কষ্ট পাই আর আমার চোখের পানি বাধ মানে না ।
মেয়েটার জন্য এত বেশী মায়া লাগে মনে হয় পৃথিবীর সব সম্পদ আমার সন্তানের কাছে তুচ্ছ।মনে মনে ভাবি সব মায়েদেরই কি এমন লাগে তাদের সন্তানের জন্য ।আমার মন বলে আমার সন্তানের জন্য একটু বেশী লাগে আমি আমার সন্তানকে একটু বেশী ভাল বাসি । সবার এরকম লাগে না ।
কিন্ত আমার মাও একথাটা বলে " আমার মনে হয় আমার সন্তানের জন্য যেরকম মায়া লাগে আর কারো সেরকম লাগে না "।
আমার বাসায় একটা কাজের মেয়ে ছিল ময়না ।ময়নার মাও বলত আমার পোলাপাইনের জন্য আমার অনেক মায়া। আমি ওদের ঠিক মত খাওয়া পরা দিতে পারি না ওদের জন্য আমার বুকভরা আদর আছে। আমার কাছে লাগে আমার পোলাপাইনের জন্য যেমন লাগে অন্য কোন মানুষের তা লাগে না ।
আমি কারো কথাই মেনে নিতে পারি না আমার মনে হয়আমার সন্তানের জন্য যেরকম লাগে অন্য কারো সেরকম লাগে না ।
আমি যখন বিয়ের পর স্বামীর সাথে আলাদা বাসা নিলাম আমার মা প্রতিদিন ফোন দিয়ে এটা এভাবে করবা ,ওটা ভাবে করবা রান্না করার সময় আগুন থেকে সাবধান ,কাটার সময় বটি থেকে সাবধানে কাজ করবা এভাবে বলতেই থাকত ।আর কান্না করত আমি রাগ হয়ে বলতাম এত চিন্তা কর নাতো আমি এখন বড় হয়েছি না ।আর আমি একা দুরে আছি তোমার আর তিনটা সন্তান তোমার কাছে আছে ।
আমার মা বলত মা হও নি তো বুঝ না ,সন্তান কখনো মায়ের কাছে বড় ছোট হয় না সন্তান মায়ের কাছে শুধুই সন্তান ।সন্তান দুরে থাকলে মা যে কত ধরনের টেনশনে থাকে যখন মা হবে তখন বুঝবে ।আর মায়ের যদি ১০টা সন্তান ও থাকে তার একজনও যদি দুরে থাকে মায়ের হৃদয়ের একটা অংশ তার জন্য খালিই থাকে অন্য নয় জন সেটা পূরণ করতে পারে না ।
আমার মেয়েটা বড় হয়েছে ওর বয়স এখন চার বৎসর সে এখন এঘর ও ঘর বারান্দায় ঘুরে বেড়ায় স্কুলেও যাওয়া শুরু করেছে কিন্তু যতক্ষন মেয়েটা আমার চোখের আড়ালে থাকে আমি স্থির থাকতে পারি না এক অজানা আশংকায় মনটা ছটফট করতে থাকে ।মেয়েটা কি করছে ,কোন ব্যাথা পেল কিনা ,তার খিদা লাগল কিনা ।
আমার নীলা মনির পর আমি আরো তিনটা সন্তানের মা হয়েছি আমার চারটা সন্তান কারো জন্য আমার মায়া বা ভালবাসা কম নয় সবাইকেই সমান ভালবাসি ।যে যখন চোখের আড়াল হয় তার জন্য্ই বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠে ।
সময়ের পরিক্রমায় আমার মায়ের চারটা সন্তান সবাই দুরে যে যার মত সংসার স্বামী সন্তান,বউ বাচ্চা নিয়ে ব্যাস্ত ।সব সময় ফোনে যোগাযোগ হয় ।আর আমার মা কথার চেয়ে কান্নাই করে বেশী ।
মায়ের এই কান্নায় বিরক্ত হয়েই বলি মা কান্না কর কেন ? আমরা ভাল আছি ,ভাল খাচ্ছি ,ভাল পরছি তুমি কান্না করবা নাতো ।
আমার মা বলে আমি জানি তোমার ভাল আছ কিন্তু আমি তো দেখছি না আমার ইচ্ছা করে আমার সব সন্তানদের নিয়ে এক সাথে থাকি ।ছেলে মেয়ে নিয়ে একসাথে আছ তো বুঝ না সন্তান দুরে গেলে কেমন লাগে ।
সময় অনেক চলে গেছে আমার সেই ছোট্ট নীলা মনি আমার নীলা পাথর অনেক বড় হয়েছে পড়াশুনার জন্য সে আমার থেকে অনেক দুরে ।যদিও প্রায় প্রতিদিনই কথা হয় আর তিনটা সন্তান আমার কাছেই আছে তবু তার জন্য আমার বুকের ভিতর শুন্যস্থান পূরণ হয় না অন্য সন্তান তা পূরন করতে পারে না । সব সময় টেনশনে থাকি আমার নীলামনি ভাল আছে তো ! সে ঠিক মত খাচ্ছে তো ! তার কোন সমস্যা হল নাতো !আর আমি দিন গুনতে থাকি কখন সে আমার কাছে আসবে ।
আর আমাকে বলা আমার মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে তবু মায়ের কষ্টটা সেরকম করে উপলদ্ধী করতে পারি না ,আমার কাছে আমার সন্তানের বিরহের কষ্ট টাই বড় মনে হয় ।আমার সন্তানের প্রতি আমার ভালবাসাকেই বড় মনে হয় ।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা এখানে ধনী-গরীব নেই সব মাই তার সন্তানকে সমান ভালবাসে ।সন্তান মায়ের কাছে কখনো বড় হয় না সন্তান সব সময় মায়ের কাছে সন্তানই থাকে।সন্তান চোখের আড়াল হলেই মায়ের বুকের ভিতর এক ধরনের আস্থিরতা কাজ করে ।
সব মায়ের ভালবাসাই তাদের সন্তানদের প্রতি একই রকম তবু এক মা পারে না আরেক মায়ের অনুভূতিকে উপলদ্ধী করতে ।প্রতিটা মাই পারে তার নিজের সন্তানের প্রতি নিজের মায়া,মমতা, ভালবাসার অনুভূতিকে উপলদ্ধী করতে ।
প্রতিটা মায়ের কাছেই মনে হয় তার সন্তানের প্রতি তার ভালবাসাই বেশী তার সন্তানই বেশী আদরের ।
(এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত ধারনা ,আর মানুষ মাত্রই ভুল আমার ধারনা ভুল ও হতে পারে )
বিষয়: বিবিধ
২৮৬৮ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে
মাকে মনেই পড়ে আমার মাকে মনে পড়ে।
সেকি কভু হারায়
সে যে জড়িয়ে আছে
ছড়িয়ে আচ্ছে
সন্ধ্যা রাতের তারায়
সেই যে আমার মা
বিশ্ব ভূবন মাঝে তাহার নেই কো তুলনা ।
ধন্যবাদ-জাজাকাল্লাহুল খাইরান।
দেখা হয়না কত দিন।
ঘরটা আমার খাঁ খাঁ করে
অশ্রু ঝড়ে দুচোখ ভরে
বুকে কষ্ট সীমা হীন।
বারাকাল্লাফীহ ।
নিশি অবসান প্রায়,ঐপুরাতন বর্ষ হয় গত
আমি আজি ধূলিতলে জীর্ণ জীবন করিলাম নত।
বন্ধু হও শত্রু হও,যেখানে যে রও
ক্ষমা করো আজিকার মত
পুরাতন বর্ষের সাথে পুরাতন অপরাধ যত. .
লেখার জন্য ধন্যবাদ।
----বরাবরের মতই ভাল রাগলো- তাই ভালো লাগা রেখে গেলাম---------
মেয়ে তাসনিয়া। এখন বয়স ১২। ওকে বড় হতে দেখে ভাল্লাগেনা। ভাবি ইস । ও বড় না হলেই ভাল হত। আমার আদর থেকে ও অনেক দুরে চলে যাচ্ছে। একদিন কলিজার সব অনূভূতিগুলোতে আঘাত দিয়ে আরও অনেক দুরে চলে যাবে। ধ্যাৎ। এসব ভাবতে খুব খুব খুব কষ্ট লাগে। কিন্তু আপনার মত করে বলতে পারিনা। তাই মাঝে মাঝে মেয়ের পাশে ধূয়ে পীঠটা লাগিয়ে দেই ওর শরীরের সাথে।
ওমরাহ করতে গেলে ও আমাকে জাড়িয়ে তাওয়াফ করতে করতে নাক দিয়ে কি যেন গ্রান নেয়ার চেস্টা করে আমার দেহ থেকে।
কি মা। এমন করছো কেন।
না বাবা। তোমার দেহের গ্রাণটা আমার খুব ভাল লাগে।
মেয়েরা এভাবেই বাবার কলিজাটা নিয়ে স্বামীর বাড়ীতে পাড়ি জমায়। বাবাদের চোখের পানি আসা অনেক কষ্ট। এজন্য হয়ত দেখাতে পারেনা। কিন্তু বুকে কান দিয়ে হৃদপি্ন্ডের কষ্টটা দেখাতে পারলে হয়ত পৃথিবীর মায়েরা ও বলত, আসলে
হে পিতা
তুমি নয় মাসের গর্ভে ধারন করনি সন্তান
তোমার গাধার খাটুনী পরিবারে দিয়েছে প্রাণ।
তুমি শ্রেষ্ঠ হয়েও বড় অজানা
বড় বৈচিত্রময় বলে তোমাকে হয়না জানা।
...............
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা'আলা যেন আমার বোনটিকে (যদি অসুস্থ হয়) সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে দেন,(যদি ব্যস্ত হয়) তাড়াতাড়ি পূর্ণবিশ্রাম নেয়ার মতো সুযোগ করে দেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন