ফিরে এসো শান্তির পথে (পর্ব ৬ )
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ১০:৪৩:৩৫ রাত
জাফর সাহেব ভেবে চিন্তে কোন কোল কিনারা না পেয়ে মীনার নানা ও মামাদের সাথে সমস্ত কথা খুলে বলেন ।
আমি এখন কি করব আমার কি করা উচিত আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
মীনার নানা ও মামারা সব শুনে চিন্তিত হয়ে পড়েন ।মীনার নানাই বলেন ,বিয়ে দিয়ে দাও ,আমার মনে হয় বিয়ে হলেই সব ঠিক হয়ে যাবে ।
মীনার মামারা বিয়ে তো বললেই দেয়া যায় না ।যেখানে সেখানে তো আর বিয়ে দেয়া যাবে না ।আর মীনা তো ছোট বেলা থেকেই জেদী ওকে তো জোর করে কিছু করা যাবে না ।
দুলাভাই আপনি না হয় মীনাকে আমাদের এখানে পাঠিয়ে দেন আমরা বুঝিয়ে দেখি কোন কাজ হয় কিনা ।
জাফর সাহেব আমি সেটা বলতে পারব না তোমরা কেউ যেয়ে যদি নিয়ে আসতে পার !
জাফর সাহেব বলেন ঠিক আছে আব্বা আমি এখন আসি আপনারাও চিন্তা ভাবনা করেন আর দেখেন যদি কোন ভাল ছেলে পান তো আমাকে জানাবেন ।
জাফর সাহেব রাহেলার সাথেও মীনার বিয়ে নিয়ে আলোচনা করেন
আপনি উনাদের সাথে আলাপ করেছেন এটা ভাল করেছেন যেহেতু উনারাও মীনার র্গাজিয়ান ।তবে আমি মনে করিনা বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে ।
আমি চাই আগে মীনা সঠিক পথে ফিরে আসুক তারপর বিয়ে এই অবস্থায় বিয়ে আর হঠাৎ করে ভাল ছেলে খুজে পাওয়া কঠিন । আমার মনে হয় এটা ঠিক হবে না ।
তার পরো ও আপনি বা মীনার নানা মামারা যা ডিসিশন নিবেন সেটাই করবেন।
মীনা বন্ধুদের সাথে আড্ডায় বসে তাস খেলছিলেন এমন সময় মীনার মোবাইলে এস এম এস টোন বেজে উঠে ,মীনা মোবাইল উপেন করে
"আল্লাহর দেয়া জীবন আল্লাহ ইচ্ছে করলে যে কোন সময় নিয়ে নিতে পারেন ।কাজেই আপনার জন্য বরাদ্ধকৃত সময়টুকুর সঠিক ব্যবহার করে জীবনকে গড়ে তুলুন কল্যানকর ইহকালীন ও পরকালীন"।
ম্যাসেজটা পড়ে মীনার বুকের ভিতরটা ভয়ে কেঁপে উঠে মীনা তারা তারি খেলা বন্ধ করে বন্ধুদের বলে আমি আসি ।
মীনার বন্ধুরা অবাক হয়ে বলে এত তারা তারি যাবি মানে !!
আমার ভাল লাগছে নারে আমি আসি বলেই মীনা বের হয়ে আসে ।
সারা রাস্তায় মীনা মাথা থেকে এটা সরাতে পারে না ,আল্লাহর দেয়া জীবন আল্লাহ ইচ্ছে করলে নিয়ে নিতে পারেন যে কোন সময় ।
বাসায় এসেও মীনা শুয়ে শুয়ে একথাই ভাবছে আরও ভাবছে কে দিল এমন ম্যাসেচ কে হতে পারে !এটা কি রাহেলা আন্টি !এমনি সময় মীনার মোবাইলে আবার এস এম এস আসে ।
"মাগরিবের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে নামাজটা পড়ে নিন ।হাসরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা সর্ব প্রথম নামাজের হিসাব নিবেন "।
মীনা ভীষন বিরক্ত হয়েও নামাজ পড়ে নেয় ।সারা রাত মীনার ভাল ঘুম হয় না এই ভাবনায় কে তাকে এমন এস এম এস পাঠাচ্ছে কেন পাঠাচ্ছে !
মীনা যখন এরকম ভাবছে মীনার ভাবনায় ছেদ পড়ে মোবাইলের ম্যাসেজ টোনে মীনা বালিশের নীচ থেকে মোবাইল নিয়ে ম্যাসেজ উপেন করে ।
"ফজরের নামাজ পড়ুন তারপর কয়েক আয়াত কোরআন তেলাওয়াত করুন।কোরাআনের একটা হরফ উচ্চারন করলে ১০টা সোওয়াব পাওয়া যাবে ।কেন মিস করবেন !
মীনার ধৈর্যের বাদ ভেংগে যায় সে রেগে ঐ নাম্বাবারে কল দেয় ।
কিন্তু ওপাশ থেকে কল রিসিভ করে নরম ,সুললিত পুরুষ কন্ঠে আসসালামু আলাইকুম শুনে মীনার সমস্ত রাগ পানি হয়ে যায় ।
নিজের অজান্তেই মীনা বলে ওয়াআলাইকুম আসসালাম ।
মীনা চুপ হয়ে যায় ।
ওপাশ থেকে আপনি ভাল আছেন ?কিছু বলবেন ?
মীনা হকচকিয়ে যায় আপনি কে ?আপনি আমাকে এমন এস এম এস পাঠাচ্ছেন কেন ?নরম কন্ঠেই বলে ।
আমি আপনার একজন শুভাকাংখী আমি আপনার ভাল চাই তাই ।আপনার মত সুন্দর ও ভাল সম্ভাবনী একটা মেয়ের জীবন এভাবে নষ্ট হতে পারে না ।বাস্তবতা মেনে নীতে আমাদের কষ্ট হলেও বাস্তবতাকে মেনে নেয়াই বুদ্ধী মানের কাজ ।আমি মনে করি আপনি বুদ্ধীমতি ।
আপনি কি আমাকে চিনেন ? আপনার নাম কি ?
জী আমি আপনাকে চিনি ।আমার নাম আবরার ।
মীনা আর কোন কথা না বাড়িয়ে ঠিক আছে বলে লাইন কেটে দেয় ।
মীনা চিন্তায় পড়ে যায় কে এই আবরার যে আমাকে চিনে জানে অথচ আমি তাকে চিনি না আমার আশে পাশে তো আবরার নামে এমন ছেলে দেখিনা যার এমন মিষ্টি কন্ঠ আর আমার ভালর জন্য চিন্তা করে ।
মীনা তাকে খুজে বের করতে না পারলে ও কেন যেন মীনার তার কথাগুলো মানতে ইচ্ছা করে ।সে ঠিকই ফজরের নামাজ পড়ে কোরাআন তেলাওয়াত করে ।
মীনা নিয়মিত ভাবেই আবরারের কাছ থেকে সুন্দর সুন্দর এস এম এস পেতে থাকে কখনো কোরআনের কোন আয়াতের বাংলা অর্থ কখনো হাদীস কখনো জীবন ঘনিষ্ট কোন কথা ।
আর এভাবেই মীনা একটু একটু বদলাতে শুরু করে ।
মীনাদের বাসায় মাঝে মাঝেই আসে রাহেলার বড় বোনের ছেলে গালিব । বুয়েটে পড়ে ।দেখতে হ্যান্ডসাম সভ্য ও ভদ্র ।
মীনা তাকে দেখেছে তবে কথা হয়নি কখনো ।যুব শুভ তার ভক্ত । সে আসলেই যুব শুভকে পড়া শুনার ব্যাপারে উৎসাহিত ও হেল্প করে ।
দীনা মেয়ে হিসাবে যথেষ্ট বুদ্ধীমতি ও শান্তশিষ্ট আর রাহেলার সংস্পর্শে সে নিয়মিত নামাজ ও কোরাআন হাদিস অধ্যায়ন করে ।কিছুদিন হল সে হিজাব পড়াও শুরু করেছে ।
গালিব বাসায় আসলেই দীনার সব কিছু উলট পালট হয়ে যায়।দীনা নিজের ভিতর একধরনের অস্তিরতা অনুভব করে
বার বার ছুটে যায় ড্রয়িং রুমে অযাচিত ভাবেই কথা বলার চেষ্টা করে গালিবের সাথে ।
গালিব দীনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও অনেক সময় বাধ্য হয়েই কথার উত্তর দেয় ।
দীনার এই আচরন রাহেলার চোখকে ফাকি দিতে পারে না ।
রেহানা বাধ্য হয়ে গালিবকে বলে ।গালিব তুই আর এ বাসায় আসিস না ।আমি এবাসায় দুইটা মেয়ে আছে তোকে নিয়ে কোন ঝামেলার সৃষ্টি হোক ।
তুই আসলে যুব শুভর উপকার হয় তুই ওদের সাথে ফোনে কন্টাক রাখিস ।আর কোন কিছুর দরকার হলে আমাকে জানাস।
ওকে খালামনি বলে গালিব সম্মতি জানায় ।
মীনা একটু একটু করে অনেকটাই পরিবর্তন হয় । আড্ডাবাজী বন্ধ মরে পড়াশুনায় মনোযোগী হয় , আর রাহেলার সাথেও মিশা শুরু করে ।
মীনার এই পরিবর্তনে খুশী হয় সে হল রাহেলা ।
জাফর সাহেবও সস্থির নিঃস্বাস ছাড়েন ।আর আপাতত মীনার বিয়ের চিন্তা বন্ধ রাখেন পড়া শেষ হোক তারপর।
আর আবরারের ম্যাসেজের ও দিক পরিবর্তন হয় ।এতদিন ম্যসেজ আসত শুধু উপদেশ মুলক আর এখন আসে কোরানের এই সুরার এই আয়াতটা পড়ুন বা অমুক হাদীস গ্রন্থ থেকে ঐ হাদীসটা পড়ুন অথবা কোন ইসলামী সাহিত্যের এত পৃষ্টা পড়ুন ।
মীনাও আবরারের কথা মত পড়েই কি বুঝল বা বুঝতে না পাড়লে আবরারকে এস এম এস করে জানায় ।
আবরার ও আবার রিপ্ল্যাই দেয় ।এভাবেই তাদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ডিসকাসন চলতে থাকে ।
অনেক দিনই হয়ে যায় গালিব আসে না দীনা ভাবে রাহেলা আন্টিকে কি জিজ্ঞাসা করব আবার ভাবে না থাক আন্টি আবার কি মনে করে ।
দীনা অনেক ভেবে বের করে আরে শুভর কাছ তো গালিব ভাইয়ার ফোন নাম্বার আছে !
দীনা শুভর কাছ থেকে গালিবের নাম্বার নিয়ে নিজেই ফোন করে........................।
চলবে ...........ইনশা আল্লাহ ।
বিষয়: বিবিধ
১৮১৫ বার পঠিত, ৩৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
অনেক ধন্যবাদ আপু
গত পর্বে বলেছিলাম মিনা কে বিয়ে দিয়ে দিতে। শেষ পর্যন্ত কি বিয়ের দিকে যাচ্ছেন ?
অপেক্ষায় থাকলাম।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ও সরি বুজতে পেরেছি ঠিক আছে এখন হতে একদম
মন্তব্য করতে লগইন করুন