সুখের আনন্দে ক্ষণিকের কালি --
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৯:০৫:২০ রাত
ফজরের নামাজ পড়ে মৃদু পায়ে দরজা খুলে বারান্দায় এসে দাড়ায় রাহা সূর্যটা আকাশ ফুরে আস্তে আস্তে বের হয়ে জানান দেয় আরো একটা নতুন দিনের ।এ দৃশ্যটা দেখতে রাহার খুব ভাল লাগে ।
আর আজকের দিনটা রাহার জীবনে এক বিশেষ দিন রাহার জীবনে শুরু হবে এক নতুন অধ্যায়ের ।
এত দিন যে দিনটাকে নিয়ে নানা রংগের রঙ্গিন স্বপ্ন দেখত আজকে রাহার জীবনে তা বাস্তবে পরিনত হবে ।
মেয়ে হিসাবে বিয়ের বয়স একটু বেশীই হয়ে গেছে রাহার। রাহা দেখতে সুন্দুরী ও শিক্ষিত হলেও রাহার বাবা নাই ,মায়ের সাথে সে ভাইয়ের সংসারে থাকে । আবার রাহার ছোট বোন আগেই বিয়ে করে ফেলেছে ।এই সব কারনে অনেক বিয়ে আসলেও ফিরে যায় ।
রাহার বড় বোন সাহানা স্বামীর সাথে দুবাই থাকে । সাহানার স্বামী যে কোম্পানীতে জব করে সেখানে জব করে কুষ্টিয়ার এক ছেলে নাম সাহেদ । সাহানার স্বামীর সাথে মাঝে মাঝে বাসায় আসে । সাহেদ নম্র ভদ্র দেখতে শুনতে ভাল ,ইন্জিনিয়ার এখানে ভাল জব আছে ।সাহানা স্বামীকে বলে রাহার কথা একটু বলে দেখ না ।
সাহানার স্বামী বলতে সংকোচ করলেও সাহানার পীড়া পিড়িতে একদিন বলেই ফেলে ও রাহার ছবি দেখায় ।
রাহার ছবি দেখে সাহেদের খুব পছন্দ হয় ।সাহেদ আর দেরী না করে তারা তারি অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে আসে ।
সাহেদ এসেই রাহাদের বাসায় যোগা যোগ করে এক সপ্তাহের ভিতর বিয়ের তারিখ ঠিক করে ফেলে । কারন সাহেদকে চার সপ্তাহের ভিতর চলে যেতে হবে ।
ছেলে পক্ষের কোন দাবী দাওয়া নাই আর তিন চার মাস পর রাহাকে দুবাই নিয়ে যাবে। তাই রাহার মা ও ভাই আর অমত করে না ।আর সাহানা ছেলে সম্পর্কে ভাল বলেছে তাই আর কোন খোজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না ।
তাই মাত্র তিন দিন আগে ঠিক হয়ে আজকে রাহার বিয়ে ।তিন দিন ধরেই রাহা নিজের ভিতর এক অন্য রকম অনুভূতি অনুভব করে ।কিছুটা লজ্জা কিছুটা আনন্দ , কিছুটা ভয় সব মিলিয়ে এক অন্য রকম অনুভুতি । এটা শুধু নিজেই অনুভব করা যায় কাউকে বলে বুঝানো যায় না ।
আর আজকে সেই অনুভূতিটা শুধু মনের মাঝেই নয় দেহের মাঝেও অনুভব করছে ।বুকের ভিতর সারাক্ষন ধুক ধুক করছে ।
রাহার বুকের ধুক ধুকের সাথে ঘড়ির কাটাও ঢিক ঢিক করে সামনে এগিয়ে যায় ।
যথা সময়ে ও যথা নিয়মে সাহেদ ও রাহার বিয়ে সুসম্পন্ন হয় ।
আগেই বলা ছিল ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া দূরের রাস্তা তাই রাতে বর যাত্রীরা সবাই চলে গেলে ও সাহেদ আর দুই একজন রাতে রাহাদের বাসায় থেকে পরের দিন সকালে তারা রাহাকে নিয়ে যাবে ।তাই রাহাদের বাসায় রাহার রুমে বাসর সাজানো হয় ।
পরের দিন সকালে মা ,ভাই বোনদের কাছ থেকে বিদায় নিতে কান্নায় ভেংগে পড়লেও মনের ভিতর এক অন্য রকম অনুভূতি নিয়ে রাহা স্বামী সাহেদের সাথে শশুর বাড়ি যাত্রা করে ।
রাহা আপন পরিবার ছেড়ে একটা সম্পূর্ণ নতুন পরিবারে তাদেরই একজন হয়ে যাচ্ছে ভাবতেই রাহার কেমন যেন লাগছে।
একরাতে একজন মানুষকে আর কতটুকু চেনা যায় তবু রাহার কাছে সাহেদকে ভালই মনে হয়েছে ।
শাশুরী ,ননদ ,ভাসুর ,জা এরা আমাকে কি ভাবে গ্রহন করবে আর আমি কি নতুন পারিবার ,নতুন পরিবেশ অনেক কিছুই আমার সাথে মিলবেনা আমি কি এ সব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারব !
এসব কিছু ভেবে রাহা নতুনকে জানার কৌতুহল ও ভয় মিলিয়ে শিউরে উঠে একটু পর পর সাহেদের হাত শক্ত করে চেপে ধরে ।
রাহার এ অবস্থা দেখে সাহেদ রাহার মাথায় হাত বুলিয়ে ,রাহা তুমি কি ভয় পাচ্ছ !! ভয়ের কিছু নেই আমি আছি তো তোমার পাশে ।
বিকালে রাহা শশুর বাড়ি এসে পৌছে ,একেবারে গ্রাম ,মাটির ঘর ,চাপকলের পানি ,টয়লেটের অবস্থাও ভাল না ।রাহা এসব কিছুর সাথেই পরিচিত নয় ।তারপর ও রাহার ভাল লাগে ,মনে হয় এটাই আমার আপন ঘর আমার নিজের ঘর ।
শাশুরী ,ননদ ,ভাসুর ,জা সবাইকে দেখে খুব ভাল লাগে।এরাই সাহেদের আপনজন তার মানে আমারো আপনজন ।
গ্রামের লোকজন খবর পেয়ে নতুন বউ দেখতে আসে ।এতে রাহা বেশ মজা পায় ,নিজের কাছে নিজেকেই ভি আই পি মনে হচ্ছে ।সবাই তাকে দেখতে আসছে ।
শাশুরীর বউমা ডাক ,ননদের ভাবী ডাক শুনতে ও রাহার খুব ভাল লাগছে ।রাহা মনে মনে ভাবে ডাকে যে এত মধু আগে তো জানতাম না ।
পরের দিন বিকালে রাহা শাশুরী ,ননদ ,জা এদের সাথে মাদুর বিছিয়ে উঠানে বসে গল্প করছে এমন সময় এক বয়স্ক মহিলা সাহেদের মা--------ও সাহেদের মা তোমার ছেলে নাকি ঢাকার মাইয়া বিয়ে করে আনছে ।
সাহেদের মা জী চাচী আম্মা আসেন ।
মহিলা এসে রাহার পাশে বসে রাহার হাত ,মুখ টিপে টিপে দেখে দেখে বলে হু বউ সুন্দর আছে । আলহামদুলিল্লাহ !সাহেদ আগার চেয়ে সুন্দর বউই পাইছে ।
সাহেদের মা তারা তারি বলে জী চাচী আম্মা রাহাতের বউ সাহেদের বউ দুইজনই সুন্দর ।
রাহাতের বউ ও বলে জী নানী সাহেদের বউ ঢাকার মেয়ে আর আমি গ্রামের মেয়ে ।সে তো বেশী সুন্দর হবেই ।
রাহার মনে খটকা লেগে যায় মহিলা তো বড় বউ ছোট বউ বলে নি বা রাহাতের বউ সাহেদের বউ বলেনি,সে বলেছে সাহেদ আগের চেয়ে -------উনারা কি আমার কাছে কিছু লুকাচ্ছেন ।
তার মানে কি ----------সাহেদ আগে বিয়ে -----রাহা আর ভাবতে পারে না ,রাহার মাথা ঘুরে আসে সে ঘরে যেয়ে শুয়ে পড়ে ,আর ভাবতে থাকে আমি কি ঠিক শুনলাম ,নাকি তার কথাকে ভুল বুঝলাম ,মা ভাবী যে এরকম বল্ল ।
রাহা কিছুতেই মন থেকে এটা সরাতে পারছে না ।
সন্ধ্যায় সাহেদ বাসায় আসে ,রাহা অসময়ে শুয়ে আছ যে তোমার কি এখানে খারাপ লাগছে ?
রাহা উঠে বসে না এমনি ।
এমনি কেন কেউ কি কিছু বলেছে ।
না কেউ কিছু বলে নি ।
তাহলে কি হয়েছে আমার রাহা মনির চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে বর্ষাকালের মেঘ জমেছে যে কোন সময় ঝর ঝর করে ঝরবে ।
চল রাহা আমরা খেয়ে আসি আম্মা ডাকছে রাহার হাত ধরে টানে ।
রাহা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আমি খাব না তুমি খেয়ে আস কথা আছে ।
রাহার অবস্থা দেখে সাহেদ আর কিছু না বলে সে চলে যায় ।
খেতে বসে আম্মা রাহাকে কি কেউ কিছু বলেছে নাকি ।
না কেউ কিছু বলে নি ।
সাহেদ চুপচাপ খেয়ে ঘরে ফিরে আসে ।
রাহার পাশে বসতে বসতে রাহা বল এখন কি হয়েছে তোমার ।
সাহেদ আমি কিছু জানতে চাই তুমি আমার কাছে সত্য কথা বলবে আশা করি ।
বল তুমি কি এমন জানতে চাও !
তুমি কি আগে একটা বিয়ে করেছিলে ?
সাহেদের মুখটা অন্ধকার হয়ে যায় ,হঠাৎ তোমার মনে একথা আসল কেন ?
বিকালে একটা মহিলা এসেছিল সে আমাকে দেখে বলেছে সাহেদ আগের চেয়ে সুন্দর বউ পেয়েছে ।
সাহেদ মুখ কালো করেই বলে তুমি যা শুনেছ ঠিকই শুনেছ আগার বউ এর চেয়ে সাহেদের বউ সুন্দর ।
তার মানে তুমি আগে বিয়ে করেছিলে ?
জী আমি দুবাই যাওয়ার আগে বিয়ে করে বউ রেখে যাই তার কয়েক মাস পর বউ আমাকে ডির্বোস দিয়ে চলে যায় ।
রাহার দুচোখ বেয়ে পানি নেমে আসে তাহলে বিয়ের আগে সেটা আমাদের জানাও নি কেন ?সেটা কি তোমার আমার ফ্যামেলীকে জানানো উচিত ছিল না !
সরি রাহা আমি জানাই নি তোমার ছবি দেখেই তোমাকে আমার এত বেশী ভাল লাগে তাই তোমাকে আমি হাড়াতে চাই নি ।ভেবেছি বিয়ের পরে সময় সুযোগ মত তোমাকে সব খুলে বলব ।
সত্য কোন দিন চাপা থাকে না তুমি যা ভেবে ছিলে হল তার বিপরীদ তোমাকে বুঝার আগেই আমি জেনে গেলাম তুমি আমার সাথে প্রতারনা করেছ ।
সাহেদ একটু মুচকি হেসে এখন আর কি করবে বিয়ে যখন হয়ে গেছে আর সেই বউ ও চলে গেছে কাজেই ওসব ভুলে গিয়ে আমরা মিলেমিশে সংসার করি বলে রাহাকে জড়িয়ে ধরে ।
রাহা সাহেদে সরিয়ে দিয়ে মিলেমিশে সংসার করব মানে একজন প্রতারকের সাথে ।
তাহলে কি করবে চলে যাবে !!
রাহা কান্না জড়িত কন্ঠেই সাহেদ তুমি যদি আগেই সব কিছু আমাকে খুলে বলতে তাহলে হয়ত আমাদের বিয়ে হত না,আর হলে ও তোমার সততার জন্য তোমার প্রতি আমার সন্মান থাকত ।
একটা মেয়ের জীবনে স্বামীর প্রয়োজন আছে ,স্বামী তার নিরাপত্তা তার সন্মান ।
বিয়ের পর বিয়ে ভেংগে দিয়ে চলে যাওয়া এতটা সহজ নয় ।সব মেয়েরা এটা পারে না ।তাছাড়া আমার কিছু সমস্যাও আছে আমার বাবা নেই ,মায়ের সাথে ভাইয়ের কাছে থাকি ।এখন তোমার কাছ থেকে চলে গেলে আমার মা ভাই আমাকে নিয়ে আবারো টেনশনে পড়ে যাবে ।
এই সব কথা চিন্তা করে আমি হয়ত তোমাকে ছেড়ে যাব না ।কিন্ত আমাদের সম্পর্কের শুরুতেই দুজনের মাঝে যে দেয়াল তৈরি হল এটা আমি কিছুতেই ভাংতে পারব না ।
আমি আমার আদর ভালবাসা দিয়ে সব দেয়াল ভেংগে দিব রাহাকে জড়িয়ে ধরে ।
রাহা ধাক্কা দিয়ে সাহেদকে সরিয়ে দেয় তুমি সারা জীবন আমার কাছে একজন প্রতারক ,ঠগ হয়েই থাকবে ।
সাহেদ তুমি কেন এমন করলে আমি তো এমন জীবন চাইনি ।বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল কত আশা ছিল পবিত্র এই সম্পর্কের মাধ্যমে যে আমার জীবনে আসবে আমাদের অর্থের প্রাচুর্য না থাক সততা,বিস্বাস আর ভালবাসা দিয়ে আমরা আমাদের জীবন সাজাব ।
যার প্রতি বিস্বাস থাকে না তাকে না করা যায় সন্মান না বাসা যায় ভাল ।তার সাথে একই ছাদের নীচে সারা জীবন কাটাব কেমন করে ।রাহার চোখ বেয়ে পানি পড়তেই থাকে ।
এ কয়দিনে আমাকে একটুও কি ভালবাসনি আর আমাকে বিস্বাস করেই তো তোমার সব আপনজনদের ছেড়ে আমার সাথে এসেছ !
হ্যা সাহেদ তোমাকে আমরা চিনতে পারিনি ।তোমার সুন্দর চেহারার আড়ালে তুমি একটা প্রতারক আমরা বুঝতে পারি নি ।তুমি আমাকে ঠকিয়েছ কেন ..কেন কেন?
আমি ও মনে করি স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক শুরু হয় বিস্বাস আর ভালবাসা দিয়ে ।প্রতারনা করে হয়ত সম্পর্ক করা যায় তবে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।
আমি তোমাদের সাথে প্রতারনা করি নি ,ঠকানোর তো প্রশ্নই আসে না ।তুমি যেটা শুনেছ তার পুরাটাই ভুল বুঝেছ ।
মানে কি বলতে চাইছ তুমি ?
সাহেদ তার ছোট বোন রেশমাকে ডাকে ,রেশমা একটু এঘরে আয় ।
জী ভাইয়া আসছি বলে রেশমা ঘরে ডুকে কি ভাইয়া ।
বিকালে আমাদের বাড়িতে কে এসেছিল ?
রমিছা নানী এসেছিল ভাবীকে দেখতে ।
তো তোর ভাবীকে দেখে কি বল্ল ।
বলেছে রাহাতের চেয়ে সাহেদ সুন্দর বউ পেয়েছে ।
না রেশমা উনি তা বলেন নাই উনি বলেছে সাহেদ আগের চেয়ে সুন্দর বউ পেয়েছে ।
জী ভাবী রাহাত ভাইয়াকে আমাদের গ্রামের সবাই আগা নামেই ডাকে ।
এ কথা শুনে লজ্জায় রাহার চেহারা লাল হয়ে যায় কি করবে ভেবে না পেয়ে পিছন ঘুরে দুহাত দিয়ে মুখ ডাকে ।
সাহেদ আর রেশমা খিল খিলিয়ে হেসে উঠে ।রেশমা ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় ।
সাহেদ পিছন থেকে রাহাকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে আমি প্রতারক আমি তোমাকে ঠকিয়েছি তাই না .....।
আমি অনেক অনেক লজ্জিত ও দুঃখিত তোমাকে ভুল বুঝার জন্য ।তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ।
ওকে ।আমাদের বিয়েটা এত হঠাৎ করে হয়ে গেল তুমি তো আমার বা আমার ফ্যামেলী সম্পর্কে তেমন কিছুই জান না ভুল হতেই পারে ।
আমাকে সবাই কি ডাকে তাও তো তুমি জান না !
কি ডাকে ?
আমি অনেক ফর্সা তো তাই আমাকে সবাই রসুন ডাকে ।
কি.........!র---সু---ন.....।
সাহেদ আর রাহা এক সাথে উচ্চ শব্দে হেসে উঠে ------।
বিষয়: বিবিধ
২৯৫৮ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার কাহিনী লেখার হাতের জন্য প্রশংসা থাকল --
বেশ মজা পেয়েছি, আপু মণি। প্রথমেতো আমারও কান্না পেয়েছিলো, কারন আমিও বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে কোন কথা লুকিয়ে রাখার পক্ষে নয়।
পরে দেখি যে পুরোটাই ...... হা হা হা
তবে আগা হোক বা গোড়া, সন্দেহকে প্রশ্রয় না দিয়ে কথা বলে পরিস্কার করে নেয়াই ভাল
মন্তব্য করতে লগইন করুন