অনাকাক্ষিত বিয়ে
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২২ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:১০:৪০ রাত
আজমল সাহেব একজন সফল ও সুখী ব্যাক্তি হিসাবে সমাজে পরিচিত।তিনি শিক্ষিত ও অনেক সম্পদের মালিক তেমনি সন্তানদের ও করেছেন সুশিক্ষায় শিক্ষিত ।
দুইমেয়েকে দ্বীনদার ও শিক্ষিত ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছেন।বড় মেয়ে স্বামী সন্তান সহ দেশের বাহিরে থাকে ।ছোটমেয়ে স্বামীর সাথে অন্য শহরে থাকে।
আজমল সাহেব ,স্ত্রী ফরিদা বানু ও একমাত্র ছেলে আরফান ও আরফানের স্ত্রী ও দুই ছেলে মেয়ে নিয়ে আজমল সাহেবের সংসার।
সংসারের কর্তত্ব সবটাই আজমল সাহেব ও তার স্ত্রী ফরিদা বানুর হাতে ।ছেলে ও বউ দুজনেই চাকরী করে তারা সংসারে সময় দিতে পারে না তাছাড়া সংসারে তারা কোন টাকা পয়সা দেয় না ,দেয় না মানে দেয়ার প্রয়োজন পড়া না ।কারন আজমল সাহেবের মাসিক ইনকাম আছে প্রায় ৪লক্ষ টাকা ।
আজমল সাহেবের এই বিশাল সম্পত্তি যদিও তার পরিশ্রমের টাকায় করা কিন্তু তিনি তার স্ত্রীকে এত বেশী ভালবাসেন তাই তার মৃত্যুর পর স্ত্রী ফরিদা বানুকে যাতে ছেলে মেয়ের গলগ্রহ হতে না হয় এই চিন্তা করে বেশীর ভাগ সম্পদ করেছেন স্ত্রী ফরিদা বানুর নামে ।
ফরিদা বানু স্বামীকে বলেন : তুমি পরিশ্রম করেছ আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছেন ,ছেলে মেয়েদের সুশিক্ষায় মানুষ করেছ ।তারা দ্বীনের পথে ও সুখে শান্তিতে আছে ।তোমার ও বয়স হয়ে গেছে মৃত্যুর কথা তো বলা যায় না ।আমাদের আর সম্পদের দরকার নেই এখন তুমি এমন একটা কিছু কর যা আমাদের মৃত্যুর পর সদকায়ে জারিয়া হিসাবে জারি থাকবে ।
৪৫ বছরে আজমল সাহেব ফরিদা বানুর পরামর্শ ছাড়া এমন কোন কাজ করেন নাই আর ফরিদা বানুর কোন কথাই উনি ফেলেন নাই ।আজমল সাহেব মনে করেন আজকে তার এই বিশাল সম্পদের মালিক হওয়ার পেছনে ফরিদা বানুর অবদান কম নয় ।ফরিদার বুদ্ধি, পরামর্শ , ত্যাগ ফরিদার বাবার বাড়ির হেল্প ছাড়া সম্বব হত না ।
আজও আজমল সাহেব স্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে বলেন তুমি ঠিক আমার মনের কথাই বলেছ ।তাহলে আমরা ছেলেমেয়েদের সাথে কথা বলে ঠিক করি কি করা যায় ।মসজিদ ,মাদ্রাসা নাকি এতিমখানা।
মানুষ অনেক পরিকল্পনা করে কিন্তু সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মালিক একমাত্র আল্লাহ ।আল্লাহ যা যান তাই হয় ।
একেবারেই হঠাৎ করে ফরিদা বানুর লিভারে ক্যানসার ধরা পরে এটা একেবারেই ল্যাষ্ট পর্যায়ে ।ডাক্তার বলে দেন এখন আর আমাদের কিছুই করার নেই উনি বড়জোর আর একমাস টিকবেন।
এটা জানার পর ফরিদা বানুর প্রথম কথা ছিল স্বামীর উদ্দেশ্যে আমি মারা গেলে তুমি কি আবার বিয়ে করবে !!
তুমি এটা চিন্তা কর কি ভাবে আমি আবার বিয়ে করব ।
কিন্ত আজমল সাহেবের কথায় ভরষা পান না ।৪৫ বছর একই ছাদের নীচে থেকে আজমল সাহেবকে ফরিদা বানুর চেয়ে আর বেশী কে চিনে !
ফরিদা বানু স্বামীকে বলেন তোমার আর আমার নামের সব সম্পদ তিন ছেলে মেয়ের নামে লিখে দেও ।
সম্পদ তো বেশীই তোমার নামে সেগুলো তো চেলে মেয়েই পাবে অল্প কিছু আমার নামে এগুলো ও ছেলে মেয়েই পাবে তবে এটুকু যদি এখন ছেলে মেয়েদের দিয়ে দেই তাহলে তো আমার আর কিছু থাকল না ।
মায়ের অসুস্থতার খবরে বড় মেয়ে মারুফা ও ছোট মেয়ে মহিমা ছুটে আসে ।
বড় মেয়ে মারুফাকে ফরিদা বানু অনেক কিছু বলেন তার সব স্বর্ণা অলংকার তিন ছেলে মেয়েকে ভাগ করে দেন ।আর দুইটা বড় গয়না বড় মেয়েকে গোপনে দিয়ে বলেন এই দুইটা গয়না তোমার কাছে রাখ যে তোমার আব্বুর সেবা করবে তাকে দিবা ।
তোমার আব্বু যে কি করব আমি শুধু সে চিন্তা করি তোমার আব্বুর তো বুদ্ধি নাই তাকে চালাবে কে ?মানুষে তো তাকে খারাপ বুদ্ধি দিবে।
ফরিদা বেগম স্বামীকে সারাক্ষন শুধু একটা কথাই বলতেন তুমি আমার ছেলে মেয়েদের কষ্ট দিও না ।আর বলতেন বড় মেয়ে তো বিদেশে তুমি যদি ছেলের বউ এর কাছে থাকতে না পার তাহলে ছোট মেয়ে মহিমার কাছে থেক ।
এসব কথা বলতে বলতেই ফরিদা বানু এক সময় চোখ বন্ধ করেন ।
আমাদের সমাজের মানুষ এত খারাপ আমি চিণ্তাও করতে পারি না ।ফরিদা বানুর লাশ দাফন ও শেষ হয়নি সংসারের বড় সন্তান হিসাবে মারুফাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা শুরু করে তোমার মা কি বলে গেছে তোমার আব্বাকে বিয়ে দিবা না মারুফা মানুষের এসব কথায় মায়ের জন্য কান্না ভুলে অবাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
মারুফা ,আরফান, মহিমার যতই খারাপ লাগুক মানুষের মুখ তো আর বন্ধ রাখতে পারবে না ।দিন যতই যায় মানুষের কথা বাড়তে থাকে ।
যদিও আশে পাশের অনেকেই বলে আজমল সাহেব মনে হয় না বিয়ে করবে উনাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে অনেক ভালবাসা ছিল ।
মারুফা এব্যাপারে ছোট ভাই বোনদের সাথে কথা বলে তারা সিন্ধান্ত নেয় আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে আমাদের মা চলে গিয়েছে সে আর আসবে না এখন আমাদের বাবা আছে তার যেন কোন কষ্ট না হয় সেটা আমাদের দেখতে হবে তাই সে যদি বিয়ে করতে চায় আমাদের কষ্ট হলেও আমরা বিয়ে করাব ।
তবে আমার মায়ের মত বয়স দেখে বা বন্ধ্যা মহিলা দেখে ।
মারুফা ভাইবোনকে সাথে নিয়ে বাবার সাথে বসেন।
আব্বা আমাদের মা মারা গেছেন এখন এই পৃথিবীতে আপনিই আমাদের সবচেয়ে আপন আপনি আমাদের যতটা ভালবাসেন আর কেউ আমাদের এরকম ভালবাসবে না ।আপনাকেও আমাদের মত করে কেউ ভালবাসবে না ।
আপনি যার কাছে ভাল থাকেন তার কাছে থাকেন, আমার ।আরফানের বা মহিমার ।আমাদের কারো কাছেই আপনার কোন অযত্ন হবে না।
তার পর আপনি যদি চান আমরা আপনাকে বিয়ে করাব। আমার মা মারা গেছে আপনি বাবা বেঁচে আছেন আমরা চাই না আপনার কোন কষ্ট হোক ।
তার জন্য আমাদের কিছুটা সময়ের দরকার আমার মা মারা গেল সেই কষ্টই এখনো দূর হয়নি ।
তাছাড়া আপনি যাকে বিয়ে করবেন তাকে টো আমাদের মায়ের সন্মান দিতে হবে তাই আমরা চাই আমার মায়ের বয়সী কোন ভাল মহিলা খুজে বের করতে ।
মারুফার এসব কথা শুনে আজমল সাহেব :: তোমার মাকে আমি বলেছি আমি বিয়ে করব না । কিন্তু বাস্তবে স্বামী মারা গেলে মহিলাদের পক্ষে একা থাকা যতটা সহজ পুরুষদের বেলায় কিছুটা কঠিন ।
মহিমার বাসায় আমি থাকতে পারব না ,মহিমার জামাই এর ব্যবহার ভাল না ।তুমি থাক বিদেশ আমি ওখানে যেয়ে কি ভাবে থাকব ,আরফান তো সংসারের কিছুই বুঝে না তিন তিনটা বাড়ির দেখা শুনা তা ছাড়া উত্তরার জায়গা গুলো ভাড়া দেয়া এগোলোর দেখা শুনা সব কিছু আমাকেই দেখতে হয় ।
তোমার মায়ের বয়স হয়ে ছিল ৫২ বছর আমাদের দেশে এই বয়সী মহিলারা বিয়ে করে না । কাজেই এই বয়সী মহিলা খুজে পাবে না ।
৪০ বছরের পড়ে মহিলাদের বিভিন্ন রোগ ব্যধী হয়ে যায় ।
৫০ বছরের মহিলাকে বিয়ে করব সে আমার সেবা যত্ন কি করব আমার ই তো তার সেবা যত্ন করতে হবে ।
তোমার কথা শুনে আমি যা বুঝলাম আসলে তোমরা মন থেকে চাচ্ছ না আমাকে বিয়ে দিতে ।
মারুফা কান্না জড়িত কন্ঠে আব্বা আসলে আমাদের মন যায় না আপনি বিয়ে করেন ।শুধু আপনার কষ্টের কথা ভেবেই আমরা এটা বলছি ।
আমি আমার মায়ের বড় সন্তান ।আমার ছোট ভাই বোন দের মনে না থাকলেও আমার মনে আছে আমার মা কত কষ্ট করে এই সংসার করেছেন ।আমি জানি এই সম্পদ আপনার টাকায় করেছেন কিন্তু আমার মার বুদ্ধি পরামর্শ আমার নানীর বাড়ির হেল্প না থাকলে আপনি এসব করতে পারতেন না ।আজকে আপনার ২টা ছয় তলা বাড়ি ১টা ৪ তালা বাড়ি ।সেখানে ৫০টা ফ্যামেলী ভাড়া থাকে ।
একদিন আপনার থাকার কোন জায়গা বাড়ি ছিল না ।আমার মা আপনার সাথে বিয়ের পর আমার নানা বাড়িতে থেকেছে সেখানে আমাদের তিন ভাই বোনের জন্ম হয়েছে আমি ক্লাস ফাইব পাশ করি আমার নানা বাড়ি থেকে ।তার পর আপনি একটা টিনসেট বাড়ি করেন সেই বাড়িতে আমরা আসি ।
তার পর আপনাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই ।বাড়িতে আসার পর ও আমাদের চাল ,ডাল ,তেল ,তরিতরকারি কিনে খাই নি সব আমার নানীর বাড়ি থেকে আসত।
আব্বা আপনি বলতে পারেন আমার কখনো দুইটা ছাড়া তিনটা শাড়ী কিনেছে !যদিও আপনি দোকান থেকে এক সাথে ৮-৯ তা শাড়ী নিয়ে আসতেন ।আমার মা ব্লাউজকে একদিন সোজা করে একদিন উল্টা করে পড়ত শুধু এক হাতা ছিড়ে যায় বলে ।
আমার মা কখনো ভাল এক পিচ মাছ বা গোস্ত কি খেয়েছেন !!আরো এরকম কত ত্যাগ করে এই সোনার সংসার গড়ে তোলেছেন ।
এখন আমার মায়ের সুখের সময় ছিল কিন্ত আল্লাহর ইচ্ছায় তার সোনার সংসার ছেড়ে সে চলে গেছে সবই পড়ে আছে ।
আমরা তার সন্তান হয়ে এটা মেনে নিতে কতটা কষ্ট আমি আপনাকে বুঝাতে পারব না আব্বা আমার মায়ের নিজ হাতে গড়া সংসারে অন্য কেউ উড়ে এসে জুড়ে বসবে ।
মরুফা কাদঁতে কাদঁতে ই আমার আমা মারা গেছে সে আর ফিরে আসবে না ।আমাদের যত কষ্টই হোক শুধু আপনি যাতে ভাল থাকেন সে জন্য আমরা এটা বলি ।
মারুফা আট্বীয় স্বজন ,পরিচিত অনেকেই বলে দিল বাবার জন্য মেয়ে দেখতে ।
আজমল সাহেবের সম্পদ আছে তাই বয়স ৭০ তাতে কি !
২৫-৩০ বছরের মেয়ের বাবা মারাও লাইন দেয়া শুরু করল মেয়ে বিয়া দেওয়ার জন্য ।এমনি মেয়েরাও আজমল সাহেবকে ফোন দেয় ।
আজমল সাহেবের ছোটভাই আকরাম মারুফার সাথে কথা বলে একটা মেয়ে আছে বয়স ৩৮ অবিবাহিত ।ভাইজানকে নিয়ে যাই মেয়েটা দেখে আসি ।
চাচা এ মেয়ে তো আমার চেয়ে ছোট ,তা ছাড়া এ মেয়ের তো বাচ্চা হবে ।এটা আমার পছ্ন্দ হচ্ছে না ।আপনি অন্য মেয়ে দেখেন ।
ঠিক আছে আগে এ মেয়েটা দেখে আসি ,দেখলেই তো আর বিয়ে হবে না বলে ভাইকে নিয়ে চলে যায় ।
মেয়ে দেখে এসে আজমল সাহেব বলে আমি এই মেয়েকেই বিয়ে করব ।কিন্তু ছেলে মেয়ে চাচ্ছে না ।
এটা নিয়ে বাবা ও ছেলে মেয়ের মাঝে বেশ ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় ।
শেষ পর্যন্ত ছেলে মেয়েরাই হার মানে ।
আজকে বাবার বিয়ে ।আজমল সাহেব তার ভাইদের সাথে বিয়ে করতে চলে গেছে ।
মারুফার শুধু মার কথা মনে পড়ছে ।মারুফা মনে মনে ভাবে এই কি স্বামী স্ত্রীর ভালবাসা ।আমার যেই বাবা আমার মাকে এত ভালবাসত ,একটা দিন সে আমার মাকে ছেড়ে থাকতে পারত না ,আমার মায়ের একটু মাথা ব্যথায় যে অস্থির হয়ে পড়ত ।
আমার মনে পড়ে না আমার মায়ের কোন কথা আমার আব্বা রাখেন নি ।কিন্তু আমার মা তো আব্বাকে বলেছিল আমার ছেলে মেয়েকে কষ্ট দিও না তাহলে আমার আব্বা কেমন করে পারল আমাদেরকে এত বড় আঘাত দিতে ।
এত প্রেম এত ভালবাসা মারা যাওয়ার ছয়মাস না হতেই সব শেষ হয়ে গেল ।
এসব ভেবে মারুফা পাগলের দৌড়ে মায়ের রুমে ডুকে মায়ের মায়ের সাজানো সমস্ত জিনিস পত্র হাতাচ্ছে আর চিৎকার করে কাঁন্না করছে মা-----মা মাগো------তোমার সাজানো সংসার আর তোমার থাকল না আজকে থেকে তোমার সংসার চলে যাচ্ছে অন্য কারো দখলে ।
মারুফার চিৎকার শুনে ছুটে আসে আরফান ও মহিমা বোনকে জরিয়ে ধরে আপু তুমি এমন করছ কেন !!
ভাইয়া------ ভাইয়া-----রে.---বিয়ে মানে তো আনন্দ বাবার বিয়তে এত কষ্ট কেন----রে ভাইয়া-----।
তিন ভাই বোনের চোখের পানিতে ভিজতে থাকে মায়ের সাজানো সংসার -----------।
বিষয়: বিয়ের গল্প
২৩৯৩ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
একজন পুরুষের অনেক ধরনের সেবার দরকার পড়ে গাঁ চুলকানো ,হাত ,পা টিপে দেওয়া এই ধরনের কাজ গুলো মেয়ে বা ছেলের বউ বা কাজের মেয়ে দিয়ে করানো যায় না ।এই বিষয় গুলো চিন্তা করলে আজমল সাহেব ঠিক করেছেন বলে আমার মনে হয় ।
ধন্যবাদ ভাইজান আশা করি আপনার মতটা জানাবেন ।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ --
ধন্যবাদ আপনাকে।
তবে
একজন সন্তানের কাছে তার মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে বসানো কতখানি কষ্টকর সেটা আমাদের যাদের মা আছে আমরা কি তার কষ্ট তার মত উপলব্ধি করতে পারব ।
এখানে স্বার্থপরতার চেয়ে মায়ের প্রতি সন্তানের ভালবাসা আবেগ কাজ করেছে বেশী আর আবেগের বশে মানুষ অনেক ভুল কাজ বা কথা বলে ফেলে ।
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন