ফিরে এসে শান্তির পথে (২য় পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ০৯:৪০:১২ রাত
মায়ের মৃত্যু শোক কাটিয়ে শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে মীনা ।পাশে থেকে দাদী বিভিন্ন পরামর্শ দীনা কাজেকর্মে মীনা কে হেল্প করে।
তবুও সবদিক সামলিয়ে সংসার পরিচালনা করতে গিয়ে এই বয়সে মীনা হিম সীম খায় ।
তবু হাল ছাড়ার মেয়ে নয় মীনা । প্রয়োজনে আমি লেখা পড়া বন্ধ করে দিব তবু ছোট ভাই বোনদের মায়ের অভাব বুঝতে দিব না ।মীনা এই দৃর সংকল্পে জাফর সাহেবের সংসার মোটামুটি ভাবে চলছিল ।
কিন্তু ছয়মাস না যেতেই মীনা দীনার জীবনে ঝড়ের বাতাস শুরু হয় । জাফর সাহেবের মা ,ভাই ,বোনেরা এমন কি মীনার নানা নানীও জাফর সাহেবের বিয়ের জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠেন ।
যুব, শুভ ছোট আর দীনা এব্যাপারে কোন কথা না বল্লেও মীনা হয়ে উঠে প্রতিবাদী। মীনা এব্যাপারে দাদী হাবেলা খাতুনের সাথে কথা বলেঃ
আমার আম্মু আমাদের ছেড়ে চলে গেছে ,আমার আব্বুই আমাদের সব আমরা চাই না আমার আব্বু আবার বিয়ে করুক ,আমার আব্বু আমাদের থেকে দুরে সরে যাক ।
তোমার আব্বু তোমাদের কাছ থেকে দুরে সরে যাবে কেন ?তোমাদের আব্বু তোমাদেরই থাকবে ।আমি বুঝি, সন্তানের জন্য এটা কষ্টকর কিন্তু কি করবে তোমাদের কপাল খারাপ না হলে এই অসময়ে তোমার আম্মু মারা যাবে কেন ?যে চলে গেছে এখন তার কথা না ভেবে তোমরা তোমার আব্বুর কষ্টের কথা তোমরা ভাববে না ?
আমার আব্বু বিয়ে করলে বউ পাবে তার কষ্ট দূর হবে আমরা পাব সৎমা আমাদের কষ্ট আরো বৃদ্ধি পাবে ।তুমি আমাদের কষ্ট কি ভাবে দুর করবে ?এখন আমার আব্বুর একার কষ্ট আর তখন হবে আমাদের চার জনের কষ্ট ।মীনার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে ।
হাবেলা খাতুন মীনার মাথায় হাত বুলিয়ে কি করবরে বোন আমি জানি এক গাছের বাকল আরেক গাছে জুড়া লাগে না তবু আমি তো মা আমাকে তো আমার ছেলের কথাও ভাবতে হয় ছেলের মনের কথা বুঝতে হয়। আমরা একটা ভাল মেয়ের সন্ধানে আছি দেখি পাই কীনা ।
আমি তোমাদের মুখেই শুনেছি মা মরলে বাবা হয় তালই ।আমার আব্বুর সাথে আমাদের এরকম সম্পর্ক তৈরি করে দিও না আর আমি আমার মায়ের জায়গায় অন্য কাউকে মেনে নিতে পারব না বলে মীনা হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।
পাশে এসে দীনা ,যবু ,শুভ চার ভাই বোন একে অপরকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকে।
বাস্তবতা বরই নির্মম বড়ই কঠিন ।বাস্তবতার কাছে সবাই হয় পরাজিত ।মীনাদের চোখের পানির কোন মূল্য পেলনা ।
যদিও সবার সহানুভূতি আছে মীনাদের প্রতি সবাই আর কি করতে পারে ।
জাফর সাহেব নিজেই যেখানে চান বিয়ে করতে।এখানে কার কি করার থাকতে পারে ।
মীনার নানাই খুজে বের করেন ৩৫বছরের রাহেলা নামের নিঃসন্তান বিধবা ও ধার্মিক মহিলা।
আজ জাফর সাহেবের বিয়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে মীনারা চার ভাই বোন ছাড়া ,মীনার দাদী,চাচারা ,ফুপুরা সবাই গেছে ।
সারাটা দিন কাটে মীনার অস্থিরতার মাঝে সে কোন কিছুতেই মন বসাতে পারছে না এমন কি ভাই বোনের পাশেও বসতে পারছে না।সে শুধু এক রুম থেকে আরেক রুমে হাটা হাটি করছে আর চোখের পানি মুছছে ।
মীনার এ অবস্থা দেখে দীনা : মীনা শান্ত হঅ বাস্তবতা কঠিন হলেও আমাদের মানতেই হবে আর যেটা মানতেই হবে সেটা সহজ ভাবে মেনে নেয়াই ভাল ।আমার কি কষ্ট হচ্ছে না যবু,শুভর কি কষ্ট হচ্ছে না আমরাতো তোর মত করছি না তুই আমাদের বড় তোকে আমাদের চেয়েও শক্ত হতে হবে না হলে আমার কথা না হয় বাদই দিলাম যুব,শুভ কার কাছে শান্তনা খুজবে দীনার দুচোখে দিয়েও পানি পড়তে থাকে ।
মীনা, দীনার চোখের পানি মুছিয়ে জানিস দীনা আমিও চাই বাস্তবাকে মেনে নিতে,কিন্তু আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না আমার আব্বুর পাশে আমার আম্মুর জায়গায় অন্য আরেকজন । আম্মুর মৃ্ত্যুর দিনও আমার এমন কষ্ট হয়নি বলেই মীনা চিৎকার করে কেঁদে উঠে।
বোনদের কান্না শুনে যুব শুভ বোনদের কাছে ছুটে আসে মীনা ভাই দের জড়িয়ে আজকে থেকে আমরা চার ভাই-বোন ছাড়া আমাদের আর পৃথিবীতে আপন বলে কেউ থাকল না রে.....যবু ,শুভ ।
দুই দিন পর জাফর সাহেব নতুন স্ত্রী রাহেলা ও মা হাবেলা খাতুনকে নিয়ে বাসায় আসতেই হাবেলা খাতুন মীনাদের চার ভাই-বোনদের ডাকেন ।
মীনারা চার ভাই বোন একত্রে দাদীর রুমে ডুকে বাবার পাশে রাহেলাকে দেখে চার জনের চোখ দিয়েই পানি ঝড়তে থাকে.....................।
চলবে......................।
বিষয়: বিবিধ
১৭৫৬ বার পঠিত, ৪৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখার জন্য ধন্যবাদ --
মন থেকে চাই এই মা যেন আসল মায়ের চেয়েও বেশী কল্যাণকর হন।
পর্বটির জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি ---
ভালো লাগলো অনেক
আপনার গল্পটি হয়ে উঠুক আঁধারের বুকে একবিন্দু জোনাকির আলো.........
আমারে জালিবেত দিয়ে মারার আগে কন আপার পোষ্টে এত দেরিতে কমেন্ট করলেন কেন -- আপা বুঝি কষ্ট পায় না -- আর এমন করবেন না
মন্তব্য করতে লগইন করুন