ভূলে ভরা ফুল গুলো মোর অশ্রু হয়ে ঝরে যা
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২০ নভেম্বর, ২০১৩, ০৯:৪৪:২৮ রাত
মায়ের জরুরী তলব পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি আসে সাহেদ।মা এত জরুরী ভাবে আসতে বলছ কেন?
জমিলা বাবা আসছ জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেস হও ,খাওয়া দাও্য়া কর তার পর বলি ।
রতে খেয়ে সাহেদ নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পড়ে।জমিলা খেয়ে এশা নামাজ পরে সাহেদ এর রুমে ডুকে বাবা তুমি কি ঘুমিয়ে পরেছ ?না মা ঘুমাই নি এস ।সাহেদ উঠতে যায় না বাবা উঠার দরকার নেই তুমি শোয়ে থাক বলে খাটের এক পাশে বসে।
তোমার জমির চাচার বাড়িতে তোমার চাচীর ভাইয়ের মেয়ে এসেছে।নাম নীলা কলেজে পড়ে দেখতে খুবই সুন্দরী দ্বীনদার,আচার ব্যাবহার,চাল চলন সব কিছুই আমার পছন্দ হয়েছে ।তাই আমি তোমার চাচা চাচীর সাথে মোটামোটি কথাও বলেছি এখন তোমার মত পেলে আগামী শুক্র বারেই বিয়ের কাজ সেরে ফেলতে চাই।
মায়ের কথায় সাহেদ আকাশ থেকে পরে ।মা এ সব তুমি কি বলছ ,আমার সামনে ফাইন্যাল পরিক্ষা ,আর এরকম হঠাৎ করে কি কারো বিয়ে হয় নাকি ?তাছাড়া মেয়ের তো বয়স কম ।আমার পক্ষে এখন বিয়ে করা সম্ভব নয় মা।
ছেলের কথায় জমিলা হতাশ হয়ে বলেন ,দেখ তোমার আব্বার সাথে যখন আমার বিয়ে হয় তখন আমার বয়স ১৫ বছর আর আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।সংসার পড়া শুনা একসাথেই করেছি কোন অসুবিধা হয়নি।
অনেক চিকিৎসার পর আমার বিয়ের নয় বছর পর তোমার জন্ম হয় ।আমার এমনই পোড়া কপাল তোমার পাঁচ বছর বয়সের সময় তোমার আব্বা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায় ।আমার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার ।সেই অন্ধকারে আমার একমাত্র আশার আলো ছিলে তুমি।আমাদের সমাজে একটা অল্প বয়সী বিধবা মেয়েকে নানা রকম ল্যান্ছনা-গন্ছনার শিকার হতে হয় ,তার সব কিছু আমি সয়ে গেছি একমাত্র তোমার জন্য।
তোমাকে আমি অর্থনৈতিক প্রাচুর্য দিয়ে মানুষ করতে পারিনি তা ঠিক তবে তোমাকে আমি কখনো অভাবও বুঝতে দেইনি।এটাও ঠিক তুমিও কখনো অপ্রয়োজনীয় কোন কিছু দাবী করনি।
আমার স্বপ্ন,সুখ,আশা সব কিছু তোমাকে ঘিরেই।তুমিও কখনো আমার কথার অবাধ্য হওনি।এই বিস্বাস নিয়েই আমি মনে হয় একটু বেশী এগিয়ে ফেলেছি,এটা মনে হয় আমার ভূল হয়ে গেছে। তুমি এখন বড় হয়েছ ভাল মন্দ বুঝতে শিখেছ এটা আমার বুঝা উচিত ছিল।নীলাকে আমার মনে হয়েছে এ মেয়ের সাথে বিয়ে হলে তুমি সুখী হবে ।আর তোমার সুখই আমার জীবনের একমাত্র চাওয়া।
জমিলা চোখ মুছতে মুছতে নিজের রুমে চলে যায়।
সাহেদ ভালবাসে নোহাকে নোহা সাহেদের একই সাবজেক্ট এ দুই ব্যাচ জুনিয়র।বড়লোক বাবার এক মাত্র মেয়ে ।দেখতে সুন্দরী আর জেদী সাহেদকে ভালবাসে পাগলের কত।প্রায় তিন বছর তাদের মন দেয়া নেয়া চলছে।
সাহেদ মাকে নোহার কথা বলেনি ভাবছে পড়াশোনা শেষ হলেই মাকে নোহার কথা জানাবে তার আগেই তো ঝামালা হয়ে গেল।
সাহেদ চিন্তা করে কোন কূল করতে পারে না এখন সে কি করবে একদিকে মা অন্যদিকে নোহা ।
সাহেদ মাকে অনেক ভালবাসে ।এই মাই তার জীবনের সবকিছু ।এই মাই তাকে বাবা,মায়ের দুইজনের আদর ভালবাসা দিয়ে মানুষ করেছে।সাহেদ কখনো কোন কারনে মায়ের অবাধ্য হয়নি ।
এসব ভাবতে ভাবতে সাহেদ নিজের মনে বলে উঠে,নোহা তুমি আমায় ক্ষমা কর আমি আমার মায়ের অবাধ্য হতে পারব না,আমার মায়ের মনে কষ্ট দিতে পারব না।তুমি আমায় ক্ষমা কর।সাহেদের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।
সারা রাত সাহেদের ঘুম হয় না।মায়ের ফজরের নামাজ শেষ হতেই সাহেদ মা আসব ।এস বাবা এস।
কিছু বলবা বাবা ?না মা তেমন কিছু না।সাহেদ একটু লজ´জিত ভাবেই বলে ঠিক আছে মা তুমি যা ভাল মনে কর তাই কর।
বাবা বিয়ে কোন ছেলে খেলা নয় ,বিয়ে নিয়ে করা experiment করা যায় না ।চিন্তা ভাবনা যা করার বিয়ের আগেই করতে হয় ,বিয়ে একবার হয়ে গেলে তখন আর চিন্তা ভাবনা করার কিছু থাকে না।আমাকে খুশী করার জন্য তুমি কোন ডিসিশন নিও না ।তোমার জীবন তোমার বিয়ে আর এই বিয়ের প্রকৃত ফল তুমি ভোগ করবে।আমি হয়ত মা হিসাবে তোমার সুখ-দুঃখে সুখী -দুঃখী হব এটুকুই।
সাহেদ সত্যকে আড়াল করে মা আমি জানি এই পৃথিবীতে তুমিই আমার সবচেয়ে আপন ।তুমি যা করবে আমার মঙ্গলের জন্যই করবে।আমি শুধু ভাবছিলাম আমার পড়া শুনা শেষ হতে আরো ছয়মাস লাগবে,তার পর চাকরি কখন হবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই ,আমি শুধু এজন্যই বলেছিলাম মা অন্য কিছু নয় ।
সাহেদ বাবা এটা যদি তোমার মনের কথা হয় তাহলে এটা নিয়ে তুমি কোন চিন্তা করনা আমি এখনো চাকরি করছি তাছাড়া আমাদের অবস্থা এতটা খারাপ নয় যে একটা ছেলের বউকে পালতে পারব না।
আমার আর কোন আপত্তি নেই মা তোমার ইচ্ছে মত তুমি কর।
জমিলা ছেলের মত পেয়ে খুশী মনে বিয়ের আয়োজনে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
বিয়ের আসরে বসে সাহেদের শুধু কান্না আসছে ,সে মানুষ হয়ে আরেক টা মানুষের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে ,আজকের পর থাকে এই মেয়ের সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব তার সে পারবে তো এ দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে। এসব ভেবে কাবিন নামায় সই ও বিয়ে পড়ানোর সময় সাহেদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না তার দুচোখ বেয়ে পানি পড়তেই থাকে।
বিয়ের সময় মেয়েরা কাঁদে এটা স্বাভাবিক তাই সাহেদের কান্না দেখে আশেপাশের সবাই অবাক হয় মুখে কেউ কিছু না বললেও আড়ালে এ নিয়ে আলোচনা হতে থাকে আর এভাবেই একথা নীলার কানেও পৌছে যায়।
বাসর ঘরে নীলাকে দেখে সাহেদ বেশ খুশী হয় ।নীলা আসলেই সুন্দরী ও নম্র ভদ্র মেয়ে। সাহেদ চায় নোহাকে ভূলে যেয়ে নীলাকে আপন করে নিতে ।
@
তিন দিন পর সাহেদ ঢাকায় ফিরে আসে ।নোহার সাথে দেখা করে নোহাকে সব খুলে বলে।
নোহার চোখ দিয়ে সমানে পানি পড়ছে ।সাহেদ গ্রামের সহজ সরল নরম মনের মানুষ নোহার কান্না দেখে সাহেদের চোখেও পানি চলে আসে ।
নোহা আমি কি করব বল আমার বাবা নেই মা আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে,আমি আমার মায়ের মনে কষ্ট দিতে পারি নি,তুমি আমাকে ক্ষমা কর নোহা।নীলা একটা এতিম মেয়ে ,তোমার সব কিছু আছে তুমি আমার চেয়ে ভাল ছেলেকে বিয়ে করতে পারবে।
আমি ভাল মন্দ বুঝি না আমি তোমাকে ভালবাসি শুধু তোমাকেই ভালবাসি ।আমি তোমাকে ক্ষমা করতে পারব না।তুমি মায়ের ইচ্ছাতে বিয়ে করেছ ওকে আমি মেনে নিলাম ,আমি তোমার বউকে ত্যাগও করতে বলব না ।কিন্তু তোমার আমাকেও বিয়ে করতে হবে।
সাহেদ অবাক হয়ে এটা কেমন করে হয় !
কেন হবে না মানুষ দুই বিয়ে করে না !তুমিও করবে।
না নোহা এটা আমি পারব না ।এটা আমার পক্ষে সন্ভব নয়।
নোহা এবার চিৎকার করে কেদে উঠে এটা যদি না পার তাহলে তুমি কি আমার মৃত্যু চাও?তুমি যদি আমাকে বিয়ে না কর তাহলে আমি সুইসাইড করব বলে নোহা কাদতেই থাকে।
নোহার কথায় সাহেদ চমকে উঠে যেই জেদী মেয়ে এই মেয়ে পারে না এমন কিছু নেই ।
সাহেদ পরে যায় আবেগ আর বিবেকের দন্ধে ।একদিকে নোহার ভালবাসা,কান্না সাহেদের আবেগকে নাড়া দেয়, অন্য দিকে নীলার প্রতি অন্যায় হবে আবার নোহার সুইসাইডের হুমকি সাহেদের বিবেককে তারা করে ।সাহেদ পড়ে যায় উভয় সংকটে।
নোহা দেখ এই মূহুর্তে আরেকটা বিয়ে কি ভাবে করি ,এক বউকেই মা পালছে।
তোমার আমাকে এখনি বিয়ে করতে হবে না ,তোমার লেখা পড়া শেষ হোক ।তুমি চাকরি পাও যতদিন লাগে আমি অপেক্ষা করব।সাহেদ তুমি শুধু আমাকে কথা দাও তুমি আমার কাছ থাকে হাড়িয়ে যাবে না , আমাকে বিয়ে করবে।
ওকে কথা দিলাম এবার কান্না থামাও একটু হাস। আর আগের মতই সাহেদ ও নোহার যোগাযোগ থেকেই যায়।
নীলা খুবই ভাল মেয়ে ।সে শাশুরীর সাথে থাকে ।সংসারের কাজকর্ম শাশুরীর সেবা যত্ন আর নিজের লেখা পড়া নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।জমিলা ও নীলাকে মেয়ের মতই আদর করে।
সাহেদ দু-এক সপ্তাহ পর পর বাড়ি এসে এক-দুই দিন থেকে চলে যায় ।এতে নীলার কোন অভিযোগ নেই।সে সাহেদকে স্বামী হিসাবে পেয়ে অনেক খুশী।
সাহেদ নীলাকে পছন্দও করে,ভালোবাসে তার পরও সাহেদের মনে একটা ভয়,একটা সংকোচ থেকেই যায় যার কারনে সাহেদ না চাইলেও নীলার সাথে একটা দূরত্ব থেকেই যায় ।যদিও এটা নীলা বুঝতে পারে না।
সাহেদ নীলাকে অবহেলা না করলে খুব আন্তরিক তাও না কেমন যেন চুপচাপ থাকে। নীলার কাছে এটাও তেমন দুষের মনে হয় না।সব মানুষ তো আর একরকম না প্রতিটা মানুষ ভিন্ন প্রকৃতির।কেউ ভালবাসার কথা মুখে প্সেরকাশ করতে পারে কেউ পারে না ।সাহেদ মুখে না বলুক সে ঠিকই আমাকে ভালবাসে এটাই নীলার বিশবাস।
সাহেদ ভাল রেজাল্ট করে পাশের সাথে সাথে ভাল বেতনের চাকরি ও পেয়ে যায়।
এতে জমিলা যেমন খুশী হয় তেমনি নীলাও।
সাহেদ বাড়ি এলে জমিলা বাবা এবার তুমি বাসা ঠিক করে বউমাকে নিয়ে যাও।
মা নীলা চলে গেলে তুমি একা হয়ে যাবে না ।
আমি তো একাই ছিলাম একাই থাকব ,তুমি এতদিন ইউনির্ভারসিটির হলে ছিলে ম্যাচে ছিলে তোমার খাওয়া দাওয়ার অনেক কষ্ট করেছ আল্লাহ এখন সুযোগ করে দিয়েছে আর কেন কষ্ট করবে
@
মায়ের কথায় সাহেদ বাসা ঠিক করে পরের মাসেই নীলাকে নিয়ে আসে।বাসায় এসে নিলাও খুব খুশী মনে নিজের সংসার নিজের মত করে গুছিয়ে নেয় ।স্বামী সংসার নিয়ে সে নিজেকে অনেক সুখী মনে করে।যদিও সাহেদ তাকে তেমন সময় দিতে পারে না ।সাহেদ সকালে যায় ফিরে রাতে ।এতে অবস্য নীলার কোন অভিযোক নেই সাহেদের বিরুদ্বে।
সাহেদ অফিস থেকে বের হয়ে নোহার সাথে দেখা করতে যায়।
সাহেদ আব্বু আম্মু আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য তাই আমি চাই কালকেই তোমাকে বিয়ে করতে।কালকে সকাল ১০টায় তুমি আমাদের বাসার নীচে থাকবে তারপর আমরা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করব।
নোহার কথা শুনে সাহেদ হাসবে না কাঁদবে কিছুই বুঝতে পারে না ,কিছু বলতেও পারেনা শুধু মাথা নীচু করে থেকে মাথা নারে।
ওকে তাহলে কালকে দেখা হবে বলে নোহা বিদায় নেয়,সাহেদ বাসায় ফিরে আসে।
সাহাদের নিজের কাছে নিজেকে কেমন যেন চোর চোর মনে হচ্ছে ।সে নীলার দিকেও তাকাতে পারছে না ,কোন কথাও বলতে পারছে না সে তারা তারি খেয়ে চুপ চাপ শুয়ে পড়ে।নীলা এসে সাহেদের পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পরে।
সাহেদের ঘুম আসে না।তার ভিতরে বয়ে যাচ্ছে এক কাল বৈশাখী ঝড়। নীলার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে কি নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে মেয়েটা অথচ সে জানে কি ঘটতে যাচ্ছে তার ভাগ্যে।সাহেদ মনে মনে বলে হে আল্লাহ আমি এখন কি করব হে আল্লাহ পাপ আমি করেছি আমার পাপের শাস্তি তুমি আমাকে অন্য কোন ভাবে দেও তুমি এই নিস্পাপ মেয়েটাকে কোন শাস্তি দিও না। সাহেদের চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে ।
সাহেদ মনের সাথে যুদ্ধ করেই ঠিক ১০ টায় নোহাদের বাসার সামনে এসে অপেক্ষা করছে।সারে ১০টা বেজে যায় এখনো নোহা আসছে আরো কিছুক্ষন পর সাহেদকে অবাক করে দিয়ে নোহা বেড়িয়ে আসে বধুবেশে বর পাশে নিয়ে সাহেদ এতক্ষন খয়ালই করে নিয়ে নোহাদের বাসার নিচে সাজানো বিয়ের গাড়ি।সাহেদ আশ্চার্য হয়ে তাকিয়ে আছে নোহার দিকে নোহাও সাহেদের দিকে তাকিয়ে দুফোটা চোখের জল ফেলে বরের সাথে গাড়িতে গিয়ে বসে।সাহেদের সামনে দিয়ে নোহার গাড়ি চলে যায়।
নোহাদের বাসার কাজের ছেলে সাহেদকে একটা চিঠি দেয়।সাহেদ চিঠিটা খুলে পড়।
"সাহেদ "
কালকে তোমার সাথে কথা বলে বাসায় এসে দেখি বিয়ের আয়োজন ও বাসার পরিবেশ পরিস্থিতি এমন যেখানে আমার কিছু বলার ছিল না ।হয়ত এটাই আমার নিয়তি ।মাত্র এক রাতেই সব কিছু উলোট-পালোট হয়ে গেল আল্লাহর ইচ্ছায়।বিবেকের দায়বদ্ধতা থেকে তুমিও পেলে মুক্তি ।
নোহা ।
সাহেদের চোখ বেয়ে নেমে আসে অশ্রু তবে এ অশ্রু কোন বেদনার নয় আনন্দের ।এ অশ্রু বিবেকের দায় বদ্ধতা থেকে মুক্তির ।
@
নীলা কাজ সেরে পেপার পড়তে ছিল কলিং বেলের শব্দে সে এমন সময় কে এল বলে এগিয়ে গিয়ে কে ?আমি নীলা । সাহেদের গলা শুনে অবাক হয়েই দরজা খুলে দেয় ।সাহেদ নীলাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নীলাকে জড়িয়ে ধরে নীলা তুমি সত্যি পূণ্যবতী তুমি ভাগ্যবতী সাহেদের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে তো পড়ছেই।নীলা সাহেদের আচরনে অবাক হয়ে সাহেদ কি হয়েছে তুমি এমন করছ কেন ?
নীলা আজকে তোমাকে সব বলব আর কিছু আর কিছু গোপন করব না ।আমি জানি আমার কথাগুলো শুনে তুমি কষ্ট পাবে কিন্তু আমি তোমার কাছে পরিস্কার হতে চাই ।আমি তোমার কাছে এ কথাগুলো না বললে কিছুতেই শান্তি পাব না।
নোহার সাথে কখন কি ভাবে পরিচয় থেকে শুরু করে আজকের ঘটনা পর্যন্ত সব কিছু খুলে বলে নিজেকে মেলে ধরে নীলার কাছে ।
নীলা আজকে থেকে আমি নিজে নিজের পরিস্কার ।সমস্ত ভয় ,সংকোচ ,দ্বিধা ,দন্দ সব কিছু থেকে আমি মোক্ত এখন আমি শুধুই তোমার।
সাহেদের চোখের পানি বন্ধ হলেও এবার শুরু হয় নীলার চোখের পানি।
নীলা তুমি কাঁদছ কেন ? আমি তো ফিরে এসেছি তোমার কাছে একান্ত তোমার ই হয়ে।এখন তুমি শুধু আমার ভূলটাকে ক্ষমা করে দাও।
আমার তো কখনো মনে হয়নি তুমি আমার না ,আমার মনে তো কখনো কোন সন্দেহ বা অবিস্বাস ছিল না তোমার প্রতি।
সাহেদ মানুষের জীবনে এমন অনেক সত্য থাকে যা জানলে শুধু কষ্টই বাড়ে কাজেই এমন সত্য না জানাই আমার জন্য ভাল ছিল ।আমাদের বিয়ের দিন তুমি অনেক কেঁদেছিলে সে ব্যাপারে আমি কখনো তোমার কাছে জানতে চাই নি।আজকে আমি যে কষ্ট পেলাম আমি জানি না আমি এ কষ্ট থেকে কখনো মুক্ত হতে পারব কি না..........।
সাহেদ আগের চেয়ে অনেক প্রানবন্ত উচ্ছল হয়ে নীলার কাছে আসে নীলার প্রতি অনেক বেশী কেয়ারী ,হাসি তামাশায় নীলাকে মাতিয়ে রাখতে চায় ।কিন্তু নীলা আর সাহেদকে আগের মত সহজ ভাবে নিতে পারে না ।যদিও নীলা চেষ্টার কোন ত্রুতি করে না স্বামী হিসাবে সাহেদকে সন্মান বা সেবা যত্নের ।কিন্তু সারা ক্ষন একটা কষ্ট নীলাকে দগ্ধ করতেই থাকে ,সাহেদ মায়ের চাপে আমাকে বিয়ে করেছে ,সে স্বামী হিসাবে আমার প্রতি দায়িত্ব পালন করেছে ঠিকই কিন্ত সে,আমাকে ভালবাসেনি , এখন সে আমার কাছে ফিরে এসেছে বাধ্য হয়ে নোহা চলে গেছে বলে। নীলার মনে সারাক্ষন একথা গুলো তুলপার করতে থাকে আর ভিতরে্ ভিতরে নিজেই ক্ষয় হতে থাকে ।নীলার বদ্ধমূল ধারনা সাহেদ এখনো নোহাকেই ভালবাসে তাকে নয়।সাহেদ এখন তার সাথে যা করছে সেটা ভালবাসার অভিনয়।
সাহেদ যদিও বুঝতে পারে নীলার মনোভাব তবু সাহেদ কিছু মনে না করে নীলাকে কি ভাবে হাসি খুশী ও সুখী করা যায় সে চাষ্টায় করে আর মনে মনে বলে নীলা যদি কখনো তেমন প্রয়োজন হয় জীবন দিয়ে হলেও প্রমান করে দিব আমি তোমাকে কতটা ভালবাসি।
একদিন হঠাৎ নিলা মাথা ঘুরে পরে যায়,ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় খুশীর খবর নীলা মা হবে।
সাহেদ এত বেশী খুশী হয় সাথে সাথে মাকে ফোন করে আসতে বলে। জমিলাও এখবরে অনেক খুশী হয়ে দুই দিন পর নীলার কাছে চলে আসে।
ঠিক সময়ে নীলা এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় । দুই দিন পর বাসায় চলে আসে ।ছেলে ও নাতি পেয়ে সাহেদ ও জমিলা ভীষন খুশী। কিন্তু নীলার শরীর ভাল যাচ্ছে না ।এতদিন প্রেগন্যন্ট এর কারনে তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি ।প্রেগন্যন্ট এর সময় অনেকের অনেক সময় অনেক রকম লাগে বাচ্চা হওরার পার ঠিক হয়ে যায় নীলার ঠিক তো হচ্ছেই না আরো খারাপ হচ্ছে।
সাহেদ নীলাকে আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়।ডাক্তার নীলার অনেক গুলো টেষ্ট দেয় ।টেস্ট রিপোট গুলো নিয়ে একসপ্টাহ পর দেখা করতে বলে।
ডাক্তার নীলার টেষ্টের রিপোট গুলো দেখে জানায় নীলার একটা কিডনী পুরাই ড্যামেজ আরেকটা ৭৫% ,কাজেই যততারা তারি সম্বব কিডনী ট্যান্সফার করতে হবে এছাড়া আর উপায় নাই।
@
সাহেদ খুবই ভেঙ্গে পরে কিন্তু সাহেদকে তো ভেঙ্গে পড়লে চলবে না ,হায়াত মৃত্যু মালিক আল্লাহ কিন্ত চাষ্টা তো করতে হবে ।এ ভাবে নীলাকে তো বিনা চিকিৎসায় মরতে দেয়া যাবে না ।এ সব ভেবে সাহেদ শক্ত হয়ে সব জায়গায় যোগাযোগ করে টাকা পয়সার ব্যাবস্থা করে অফিস থেকে একমাসের ছুটি নিয়ে নীলাকে নিয়ে মাদ্রাজের একটা হাসপাতালে ভর্তি করে ।
দুই দিন পর নীলার অপারেশন করে আর অপারেশন স্যাকসেসফুল হয়।
নীলার জ্ঞান ফিরে আসছে দেখে নার্স এসে নীলার সামনে দাড়ায় ।নীলা আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার পাশের বেডে শুয়ে আছে সাহেদ ।
সিষ্টার সাহেদের কি হয়েছে ? কেন তুমি জান না ,তোমার স্বামীই তো তোমাকে একটা কিডনী দিয়েছে।তুমি সত্যি ভাগ্যবতী, স্বামীর এমন ভালবাসা কয়টা মেয়ে পায় ।
নীলার দুচোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে ,সিষ্টার তুমি কি আমাকে একটু সাহেদের কাছে নিতে পার ?
নার্স নীলার বেডকে ধাক্কা দিয়ে সাহেদের বেডের সাথে মিলিয়ে দেয় ।
নীলা সাহেদের মুখে কপালে হাত বুলিয়ে ,সাহেদ তুমি আমার ভূল ভেঙ্গে প্রমান করে দিলে তুমি আমায় সত্যি ভাল বাস ।
সাহেদ নীলার চোখ মুছে ,নীলা আমি তোমায় সত্যি ভালবাসি অনেক ভালবাসি। নীলা তুমি আর কেঁদ না ,আর কেঁদ না।
সাহেদের কথায় নীলার চোখের পানির বেগ আরো বেড়ে যায়,সাহেদ আমাকে কাঁদতে দাও ,এতদিন আমি যে সন্দেহের আগুনে পুড়ছিলাম অনুশোচনার পানিতে সেগুলো নিভে যেতে দাও ।
বিষয়: বিবিধ
৪২২৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন