আধাঁরের আলো (পর্ব ১৪-১৫)

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ১৪ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:৩৯:০২ রাত



আহনাফ ও আনজোম ২ সপ্তাহের টুরে যাচ্ছে আমেরিকা ।আহনাফের এটা আফিশিয়াল টুর সাথে আনজোমকে নিয়ে যাচ্ছে ।কলা বেচা আর রথ দেখার মত।মোনা রাতেই তাদের ল্যাগেজ গুছিয়ে রেখেছে।

নাস্তার টেবিলে আহনাফ আনজোম মোনা হাসিনকে বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিচ্ছে এটা এভাবে করবে ওটা ওভাবে করবে সাবধানে থাকবে ।মোনাও কোন কোন জিনিস দেয়া হয়েছে কোনটা কোথায় দেয়া হয়েছে এসব বলছে,কিন্তু হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিক একটা কথা মোনা মুখ ফসকে বলে ফেলে ,মা তুমি কি একটু দেখতে পার আমাদের বিয়েরতো আড়াই বছর হয়ে গেল এখনো কিছু হচ্ছে না কেন?

মো...না বলে চিৎকার করে হাসিন ঠাস করে মোনার গালে একটা চড় দিয়ে দেয়।হাসিনের চেহারা ও কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে যায়।

মোনার কথায় আনজোম আহনাফ অবাক হয় আর হাসিনের আচরনে হয় হতবিহ্বল আহনাফ আনজোম একসাথেই হাসিন এটা তুমি কি করলে ,এটা কোন ধরনের আচরন এর মাঝেই মোনা খিল খিলিয়ে হেসে উঠে মা ,বাবা এটা কোন বিষয় না আসলে এটা আমারই ফেল হয়েছে এই সময়ে এই মূহুর্তে এটা বলা উচিত হয়নি ।তোমারা হসিনকে কিছ্ছু বল না হাসিনের চরে আমি যতটুকু ব্যাথা পেয়েছি হাসিন তার চেয়ে অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছে দেখ না মা হাসিন কেমন করে কাঁদছে।

মোনা নিজের ওড়না দিয়ে হাসিনের চোখ মুছিয়ে দেয় হাসিন আমি কিছু মনে করেনি আমার ফেল দেখলে তুমি আমাকে শাসন করতেই পার আমি সরি হাসিন আমি অনেক সরি ।হাসিন মোনার হাত ধরে আপি আমিও অনেক সরি।

মোনা আরো বেশী প্রানচঞ্চল হয়ে এক ঘন্টায় সব স্বাভাবিক করে ফেলে সবাই ভূলে যায় এক ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া অবান্ছিত ঘটনা।

হাসিন মোনা একসাথে আনজোম আহনাফকে এয়ারপোর্টে বিদায় দিয়ে আসে



মোনা ওয়াস রুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে হাসিন বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে আছে।মোনা হাসিনের পিঠে হাত রেখে তোমার কি খারাপ লাগছে মা বাবার জন্য ?হাসিন সোজা হয়ে শোয়ে না খরাপ লাগবে কেন?

এর আগে তো তুমি কখনো বাবা মাকে ছাড়া একা থাক নি তাই বলছিলাম ?

আমি এখন বড় হয়েছি না ।তাছাড়া আমি তো একা নই তুমি আছ না আমার সাথে।

ওকে হাসিন এখন উঠ তোমার সাথে আমার কথা আছে হাসিন উঠে বসে বল আপি।

হাসিন আসলে আজকে সকালে এভাবে কথা বলা আমার ঠিক হয়নি তার জন্য আমি সরি।কিন্তু তোমার চেহারায় তখন আমি এমন একটা রূপ আমি দেখেছি যেটা আমি সারে ১১ বছরে দেখিনি এর কারন কি ও কেন ?

মোনার কথায় হাসিন আবার ও কেমন যেন হয়ে যায় আর আমতা আমতা করে বলে আসলে আপি আমি এই মূহুর্তে চাচ্ছি না ।

চাচ্ছ না মানে কি হা..সি..ন।বিয়ের প্রথম দিন আমি যখন তোমাকে বলে ছিলাম হাসিন তোমার বয়স কম আমারা কি ডাক্তারের কাছে কোন পরামর্শ নিব কিনা ,তখন তো তুমি বলছ না দরকার নাই আল্লাহ যা চায় তাই হবে । আর আমরা তো কিছু করি নি যে কোন সময় এটা হতে পারত।আর এখন তুমি বলছ তুমি চাচ্ছ না আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না।

হাসিন মোনার মাথায় আদর করে আপি আমরা আর কয়েকটা বছর মানে আমার পড়াটা শেষ করি তাছাড়া আমার তো তেমন বয়স হয়নি..

মোনা কাঁদছে হাসিন ছেলে হিসাবে তোমার বয়স হয়নি এটা ঠিক কিন্তু মেয়ে হিসাবে আমার বয়স বেড়ে যাচ্ছে ।তা ছাড়া আমার পড়া শুনা শেষ কোন জবও করছি না ,এখন বাচ্চা হলেও তোমার কোন সমস্যা হবে না চল আমরা ডাক্তারের কাছে যাই।

হাসিন মোনার চোখের পানি মুছে দেয় আপি আমি এখনি ডাক্তারের কাছে যেতে চাই না আর কিছু দিন দেখতে চাই ।

হাসিন মুখে একথা বললেও হাসিনের চেহারা কেমন যেন বিমর্ষ দেখায়

এটা বুদ্ধীমতি মোনার চোখ এটা এড়ায় না।

মোনা কেঁদে কেঁদে দুই হাত দিয়ে হাসিনের গলা পেচিয়ে ধরে হাসিন আমি মা হতে চাই.....মা।

মোনার একথায় হাসিনের চোখ দিয়েও নেমে আসে অশ্রুধারা।

মোনা একটু শক্ত ও চড়া গলায় হাসিন তুমি কাদছ কেন?আর সকাল থেকেই আমি লক্ষ করছি তোমার চেহারায় বিষন্নতা আর হতাশার ছাপ,আবার ডাক্তারের কাছেও যেতে চাচ্ছ না ,আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে !!

হাসিন কিছুই বলে না শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে মোনার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।

তোমার মা ডাক্তার তুমি ডাক্তার তোমরা আমার কাছে কিছু গোপন করেছ্ ,আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে হাসিন তোমার কি কোন সমস্যা ?

হাসিন এবার মুখ খুলে আপি ঠিক ধরেছ কিন্তু বিয়ে তো করে ফেলছ এখন আর কি করবে ।

মোনা করুন স্বরে বিয়ে করেছি বলেই তো আমি এখন মা হতে চাই মা ,হাসিন আমি মা হতে চাই .........মা...।

হাসিন দুই হাত দিয়ে কান চেপে ধরে চুপ কর আপি চুপ কর আমি আর পারছি না.........তুমি তো বললেই আমার সমস্য আমি স্বীকার ও করলাম ।

হাসিন তুমি স্বীকার করছ কিন্তু আমি যতক্ষন ডাক্তারের মুখ থেকে নিজের কানে না শুনছি আমি থামছি না ।চল আমরা কালকেই ডাক্তারের কাছে যাই ।

ওকে হাসিন যতক্ষন আমরা ডাক্তারের কাছে না যাচ্ছি আমি এক গ্লাস পানিও খাচ্ছি না...।

হাসিন আর সহ্য করতে না পেরে বাসা বের হয়ে সমুদ্রের পারে গিয়ে বসে হাসিনের কানে মোনার করুন স্বরের আর্তি বাজতে থাকে আমি মা হতে চাই হাসিন আমি মা হতে চাই ..........মা।

হে আল্লাহ তুমি বলে দাও আমি এখন কি করব.......।

হাসিন অনেক চেষ্টা করেও যখন মোনা কে কিছু খাওয়াতে পারছে না তখন হাসিন বাধ্য হয়ে ডাক্তার কাছে টাইম নিতে ফোন দিলে তিন মাসের মাস পড়ে তাদের একটা সময় দেয়া হয়।

আপি চল এবার তো খাও ।মোনা উঠে খাওয়া দাওয়া করে যদিও মোনা আর আগের মত হাসিনের সাথে হাসি খুশী প্রানচঞ্চল হতে পারে না যদিও মোনা চেষ্টা করে ।

(পর্ব ১৫)



বিকাল বেলা মোনা শুয়ে শুয়ে ভাবছে এমন কেন হল হাসিন যা বল্ল তাকি আসলেই ঠিক ,সত্যি কি হাসিনের সমস্যা আমি মা হতে পারব না মোনার দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে ।

আপি দেখ কে এসেছে হাসিনের কথায় মোনা চোখ মুছে পাশ ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠে আম্মু তুমি কখন এলে?

মোনার মা মোনার পাশে বসতে বসতে এই তো মা আজকে সকালেই এসেছি ।

মোনা নিজেকে আর ধরে রাখতে পারে না মায়ের কোলে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠে আম্মু আমার জীবন কেন এমন হল আমি কি এমন অন্যায় করেছি যার জন্য আমাকে এত বড় শাস্তি পেতে হবে।

মোনার মাও কাঁদছে আদনান,হাসিন এর চোখেও পানি ।

মোনার মা মোনার মাথায় ,পিঠে হাত বুলিয়ে মাগো তুমি এমন কর না তুমি শান্ত হও সবুর কর ।তুমি তো অনেক ভাগ্যবতী তুমি হাসিনের মত স্বামী পেয়েছ যে তোমাকে তার জীবনের চেয়ে বেশী ভালবাসে,দুনিয়ার এই জীবন খুবই ক্ষনস্থায়ী আর এই ক্ষনস্থায়ী জীবনে আল্লাহ তার মুমিন বান্দাদের বিভিন্ন ভাবে পরিক্ষা করেন কাউকে ধন-সম্পদ দিয়ে পরিক্ষা করেন কাউকে না দিয়ে করেন ,কাউকে সন্তান দিয়ে পরিক্ষা করেন আবার কাউকে না দিয়ে করেন ।এটাকে তুমি তোমার জীবনের পরিক্ষা মনে করে সবুর কর মা।

মায়ের কথায় অবাক হয়ে ..আম্মু তাহলে কি হাসিনের সমস্যার কথা জেনে শুনেই হাসিনদের ধন- সম্পদ দেখে তোমরা আমাকে বিয়ে দিয়েছ !!

মোনার কথায় মোনার মা অবাক হয়ে হাসিনের সমস্যা !!হাসিনের সমস্যা হবে কেন মা ,সমস্যা তো মা তোমার ।তোমার কি মনে আছে তুমি এদেশে আসার কিছু দিন আগে ছাদ থেকে পড়ে তোমার কোমরের হাড় ভেঙ্গে গিয়েছিল তখন যে তোমার অপারেশন হয়ে ছিল তখনই আমাদের ডাক্তার জানিয়ে ছিল তুমি কখনো মা হতে পারবে না।মোনার মা ব্যাগ থেকে কাগজ বের করে এই নাও তার রিপোট এটা হাসিনই তোমাকে ভাল বুঝাতে পারবে.

মায়ের কথা শুনে মোনা চিৎকার করে.. আম্মু বলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ,মোনার মাও চিৎকার করে, হায় আল্লাহ আমার মেয়ের কি হল।

আম্মু তুমি শান্ত হও আমি দেখছি ,হাসিন পানি এনে মোনার মুখে পানির ঝাপটা দিতে থাকে প্রায় ৫ মিনিট পর মোনা চোখ মেলে তাকায়।

মোনা শক্ত হয়ে উঠে বসে আম্মু এই সত্য তোমরা আমার কাছে গোপন করেছ আবার একটা পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য আমাকে বিয়েও দিয়েছ !আম্মু কোরআন ,হাদীসের পর আমি যাদের কথা মানি,আল্লাহর রাসুলের (সাঃ)এর পর যাদেরকে আমি আমার আর্দশ জানি ,সেই তোমারা এতবড় প্রতারক ,তোমারা এত স্বার্থপর ।তোমরা তোমাদের মেয়ের সুখের জন্য হাসিনের সাথে হাসিনের মা, বাবার সাথে এত বড় প্রতারনা কি ভাবে করলে মা ।

মোনার বুকফাটা কান্নায় হাসিন আর নিজেকে স্হির রাখতে পারে না ,হাসিন মোনাকে কাছে টেনে নিয়ে আপি তুমি শান্ত হও তুমি এমন কর না ।উনারা আমাকে ঠকায়নি ,আমার সাথে কোন প্রতারনাও করেনি ,উনারা আমাকে সবই বলেছে আর আমার অনুরোধেই তোমাকে ও মাম্মা,পাপ্পাকে কিছু বলে নি।

মোনা কান্না থামিয়ে ও হাসিন তাহলে সব জেনে শুনেই আমাকে করুনা করেছ না ?

মোনা হাসিনের কাছ থেকে সরে এসে মাকে জড়িয়ে ধরে । মোনার মা মোনার মাথায় হাত দিয়ে মা করুনা করে এত বড় ত্যাগ করা যায় না । মা মাগো তোমার কি মনে আছে তোমাদের বিয়ের দুই দিন আগে আমি তোমার দুই ভাইকে নিয়ে বাহিরে গিয়েছিলাম ,সেদিন আমার প্রায় ৫ঘন্টা হাসিনের সাথে কথা হয় ।হাসিনকে আমি তোমার সব কথা খুলে বলে হাসিনকে সরে যেতে বলি ।হাসিন আমার কথার যে জবাব দেয় সেটা হাসিনের অল্প বয়সী কোন আবেগের কথা ছিল না ,হাসিনের কথা থেকে আমি এটাই বুঝতে পেরে ছিলাম ,হাসিন তোমাকে ভালবাসে তোমার রূপ।সৌন্দর্য দেখে নয় ,হাসিন তোমাকে ভালবাসে তোমার দ্বীনদারী দেখে হাসিন তোমাকে ভালবাসে তার নিজের স্বার্থে আর সেটা কোন দুনিয়াবী স্বার্থ নয় একমাত্র পরকালের স্বার্থে, হাসিন তোমাকে পাশে নিয়ে তার পরকালকে সুন্দর করতে চায় ।আর এটা বুঝতে পেরেই আমি এ বিয়েতে মত দিয়েছি তানা হলে আমি কখনো এ বিয়েতে মত দিতাম না। আমি তোমাকে ও হাসিনের মা ,বাবাকে একথা বলতে চেয়েছি ,এটা হাসিনের অনুরোধ আর আমার মাতৃত্বের দূর্বলতার কারনে বলতে পারিনি, তার জন্য তুমি আমাকে ক্ষমা কর।

সব কিছু শুনে মোনা উঠে বসে, আম্মু চল। মোনার কথায় মোনার মা, হাসিন,আদনান চমকে উঠে কোথায় ?

ভাইয়ার বাসায় ,আম্মু আমি আমার অন্ধকার জীবনের কারনে হাসিন বা হাসিনের মা বাবার জীবনও অন্ধকার হোক তা চাই না ।

হাসিন মোনার হাত ধরে আপি সন্তান আল্লাহর সবচেয়ে বড় নেয়ামত ,সেই নেয়ামত থেকে আল্লাহ যদি কাউকে বঞ্চিত করেন ,এখানে তো মানুষের করার কিছু থাকে না।আপি আমাদের সন্তান না থাক আমাদের কাছে আছে কোরআন ।তুমি আমি পাশা পাশি থেকে এই ইউরুপের মাঝে আমরা কোরানের আলো ছড়ানোর চেষ্টা করব।

মোনা কান্নার শব্দকে বন্ধ করতে পারে কিন্তু চোখের পানিকে থামাতে পারে না মোনার দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে তো পড়ছেই।

হাসিন সে চেষ্টা আমি করব তবে তোমার পাশে থেকে নয় আমি একা । হাসিন তোমার সাথে কাটানো আড়াইটা বছর আমার আধাঁর জীবনে আলো হয়ে আমার একাকী জীবনে পথ চলতে সাহায্য করবে।

হাসিন আমি চলে যাচ্ছি তোমার প্রতি কোন রাগ বা কষ্ট নিয়ে নয় হাসিন তুমি,তোমার বাবা মা আমাকে অনেক ভাল বাস ।আমিও তোমাদের কম ভালবাসি না ।তোমাদের প্রতি আমার ভালবাসাও অনেক বড়।তোমাদের প্রতি আমার বড় ভালবাসাই আমাকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করল।

হাসিনের চোখ দিয়েও পানি পড়ছে,হাসিন মোনার মাথায় হাত রেখে আপি আমি এই মূহুর্তে তোমাকে বাধা দিচ্ছি না ,জানি এই মূহুর্তে বাধা দিয়েও তোমাকে থামাতে পারব না ।মনে রেখ আমৃত্যু তোমার জন্য অপেক্ষা করে থাকব তুমি ফিরে আসবে এই আশায়।

আম্মু চল বলেই মোনা বাসা থেকে বাড়িয়ে আসে...................।

বিষয়: বিবিধ

১৬৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File