আধাঁরের আলো (পর্ব ১৩)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ১২ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:০৫:৩৯ রাত
মোনার দিন গুলো খুবই আনন্দে কাটছে।হাসিনের ভালবাসা আর শশুর শাশুরীর আদরে।
আনজোম আহনাফ মোনাকে চোখে হাড়ায়,বাসায় থেকে বের হওয়ার সময় মোনাকে আদর করে বের হবে .আর আনজোম কাজ থেকে কয়েকবার ফোন দিয়ে মোনা তুমি একা কিন্তু কিচেনে যাবে না,চুলা জ্বালাবে না,এটা করবে না ওটা করবে না। আবার ফিরে এসে ও আনজোম মোনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করবে।আর প্রতিদিন আসার সময় মোনার জন্য কিছু না কিছু নিয়ে আসবেই অন্য কিছু না হলেও মোনার প্রিয় চকলেট ডাইম। তাদের আদরে মোনার কাছে মনে হয় মোনা একটা ছোট্ট বাচ্চা।আর মোনাও মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মত প্রশ্ন করে আনজোমকে বিব্রত করে
মা তুমি তো আগেও আমাকে অনেক আদর আর ভালবাসতে এখন আর বেশী আদর আর ভালবাস কিন্তু এই দুই আদর আর ভালবাসার মাঝে একটা প্রার্থক্য আছে সেটা কি তুমি বলতে পার ।
আনজোম : আমার এত বুদ্ধিমতি মেয়ে এটা বুঝে না বুঝি,আগে তোমাকে ভালবাসতাম সেটা ছিল শুধুই ভালবাসা আর কিছু নয় ।এখন তোমাকে ভাল বাসি আর এই ভালবাসার সাথে আছে অধিকার আছে দায়িত্ব কর্তব্য।
মা আমার ও ঠিক তাই মনে হয়।মোনা হেসে হেসে আচ্ছা মা এবার বলত তুমি কাকে বেশী ভালবাস আমাকে না হাসিনকে ?
আনজোম : এটা অনেক জটিল আর কঠিন প্রশ্ন তবে হাসিন আমার একমাত্র সন্তান তার জন্য আমি পাড়িনা এমন কোন কাজ নেই এমন কি আমি আমার জীবনও দিতে পারি ।আর আমি বুঝতে পারি আমার সেই সন্তান প্রয়োজনে তোমার জন্য জীবন দিয়ে দিবে ।কাজেই আমি আমার ভালবাসার জন্য আমি তার ভালবাসাকে তার মতই ভালবাসি।
আনজোমের কথায় মোনার চোখ দিয়ে পানি চলে আসে মোনা আনজোমকে জড়িয়ে ধরে মা তুমি অনেক ভাল।
মোনা হাসিনকে বলে হাসিন তোমার মাম্মা,পাপ্পা তো এখন তোমার চেয়ে আমাকে বেশী ভালবাসে তোমার কি খারাপ লাগে না?
না কারাপ লাগবে কেন ! আমি তোমাকে ভালবাসি আর আমার ভালবাসাকে আমার আপনজনেরা আমার চেয়ে বেশী ভালবাসে এতে আমি অনেক খুশী ও সুখী।
তোমরা সত্যি ভাল মানুষ,তুমি তোমার মা,বাবা তোমারা সত্যি ভাল মানুষ।তোমাদের পরিবারের একজন সদস্য হতে পেরে আমি সত্যি সুখী ও গর্বিত।
মোনাও শশুর শাশুরী ও হাসিনের সেবা যত্নের ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন ।কার কখন কোনটা লাগবে ,কে কখন কোন ড্রেসটা পরবে এসব মোনাই ঠিক করে দেয় ।যদিও এ বাসায় মোনাকে বড় কোন কাজ করতে হয় না।আনজোম চাকরী করে বাসায় কাজ করা তার পক্ষে সন্বব নয় ,তাই আগে থেকেই তারা হোম সার্ভিচ এর হেল্প নেয় সপ্তাহে একদিন তারা পুরা বাসা পরিস্কার পরিচ্ছন করে দিয়ে যায়।আর তাদের প্রতি সপ্তাহের খাবার আসে স্পেসাল খাবারের দোকান থেকে।মোনা শুধু সময় মত এগুলো গরম করে নেয়।
সব কিছু মিলিয়ে মোনা এত বেশী সুখী ,জীবন টাকে মোনার কাছে মনে হয় স্বপ্নের মতো।মোনা ভাবে দুনিয়াতে কি এত সুন্দর সাজানো,গোছানো সুখী জীবন হয় ।দুনিয়াতেই এত সুখ বেহেসতর সুখ তাহলে কেমন !আল্লাহর কাছে মোনা সুখের জন্য সব সময় শুকরিয়া আর দোওয়া করে আল্লাহ আমি দুনিয়ার সুখে অন্ধ হয়ে এমন কোন কাজ না করি যার কারনে আমাকে অনন্ত কালের সুখ হাড়াতে হয়।
হে আল্লাহ! তোমারই রহমতের আকাঙ্ক্ষী আমি। সুতরাং এক পলকের জন্যও তুমি আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিয়ো না।হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি
হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পদস্খলন অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে। আমীন।
মোনার বাবা,মা চলে যাবার আগে মোনার সাথে দেখা করতে এসে মোনার সুখ দেখে মরিয়ম বেগমের দুচোখ দিয়ে পানি চলে আসে, মোনা মাকে জড়িয়ে আম্মু তুমি কাঁদছ কেন? মা তোমার সুখ দেখে নিজেকে অনেক বেশী সুখী মনে হচ্ছে সেই সুখে ,এখন যদি আল্লাহ আমাকে মৃত্যু দিত একজন সুখী মানুষের মৃত্যু হত।
আম্মু তুমি এমন করে বলছ কেন?মা তুই আমার ছোট সন্তান তোর জীবনের কোন দুঃখ কষ্ট যেন আমাকে দেখতে না হয় এই জন্য বলছি।মা তুমি ভাল আছ সুখে আছ এর জন্য বেশী বেশী আল্লাহর কাছে সব সময় শুকরিয়া করবে, আর জীবনে চলার পথে যদি দুঃখ-কষ্ট আসে তখন আল্লাহর উপর ভরষা করে সবুর করিও।
মোনা ও হাসিনের ক্লাস শুরু হয় ।হাসিন একদিন ইসলামী অর্গানাইজেশন সত্যপথ এর খবর পায় এখনে বিভিন্ন দেশের মুসলিম ছেলে মে্যেরা একত্রে কোরাআন হাদীস আলোচনা করে নিজেদেকে practicing মুসলিম হিসাবে তৈরি ও ইসলামী দাওয়ার কাজ করে।হাসিন মোনাকে নিয়ে একদিন ওদের প্রগ্রামে অংশ গ্রহন করে ও বিভিন্ন প্রশ্ন করে করে এদের সম্পর্কে অনেক কিছু জেনে নেয় ।হাসিন মোনার আগ্রহ দেখে তারাও তাদেরকে সংগঠনের কিছু বই দিয়ে ।বই গুলো পড়ে ও আহনাফ আনজোমের সাথে আলোচনে করে হাসিন ও মোনা সত্য পথ এর worker হিসাবে কাজ শুরু করে।
হাসিন মোনার জীবন সুখের দুলায় ভাসতে ভাসতে সামনের দিকে আগাতে থাকে।
হাসিন মোনা শুয়ে আছে পাশাপশি হঠৎ মোনা হাসিনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাসিন চমকে উঠে কি হয়েছে আপি !তুমি কি স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছ ?না আমি কোন স্বপ্ন দেখিনি হাসিন আমার এমনিতিই অনেক ভয় করে জান হাসিন আমার মনে হয় আমি স্বপ্নে বসবাস করছি ।এত সুখ এত আনন্দ এত সুন্দর জীবন বাস্তবে কেমন করে হয় ।হাসিন সারাক্ষন একটা ভয় আমাকে তাড়া করে ফিরে একটা ঝড় এসে আমার জীবনকে উলট-পালট করে দিবে নাতো !তোমাকে আমি হাড়িয়ে ফেলব নাতো !
আপি তুমি এসব নিয়ে ভেব না তো আল্লাহ না করুক জীবনে যদি কোন ঝড় আসে আমি তুমি পাশা পাশি থেকে সে ঝড়ের মোকাবিলা করব। এক মাত্র মৃত্যু ছাড়া আমি তোমাকে কখনো ছেড়ে যাব না যদি না তুমি আমাকে ছেড়ে যাও।
মোনা আশ্চর্য হয়ে হাসিন আমি তোমাকে ছেড়ে যাব মানে....হাসিন বলা তো যায় না মানুষে মন কখন কি হয়।
হাসিন আমি তোমাকে গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি আমি তোমাকে ছেড়ে কখনো যাব না ,আমার জীবনে যত দুঃখ-কষ্ট আসুক শুধু তুমি আমার পাশে থাকলে সব দুঃখ কষ্টকে আমি হাসি মুখে বরন করে নিব।
আপি আমি তোমার দুঃখ- কষ্টকে বরন করেই তোমাকে আপন করে নিয়েছি যাতে তোমার পাশে থেকে তোমাকে আগলে রাখতে পারি ।মোনা অবাক হয়ে আমার দুঃখ-কষ্ট মানে !!
না কিছু না আপি এটা তো বললাম কথার কথা ,তুমি টেনশন মুক্ত থাক আমার কাছ থেকে তুমি কখনো কোন ধরনের অবহেলা পাবে আর না আমি তোমাকে ছেড়ে যাব।হাসিনের কথায় মোনা পরম নিশ্চিন্তে হাসিনের বুকে মাথা রাখে...........................।
( শেষ পর্ব আগামী পরশু )
বিষয়: বিবিধ
১৮১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন