ভাল লাগা ফিরে আসে ভালবাসা হয়ে।(শেষ অংশ)

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৭ নভেম্বর, ২০১৩, ১০:০১:৩১ রাত



সকাল বেলা তাহিরা লজ্জা ,ভয় ও সংকোচ কাটিয়ে মায়ের রুমে ডুকে আম্মু আব্বু আফিসে চলে গেছে? জী চলে গেছে কেন?আম্মু আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।ঠিক আছে বল।

তাহিরা লজ্জা ও ভয় জড়ানো কন্ঠেই বলে আম্মু আমি আবরার ভাইয়াকে বিয়ে করতে চাই।

সাহিদা মেয়ের কথাশুনে অবাক ও রাগ হয়ে বলে দেখ আবেগ দিয়ে জীবন চলে না ।জীবন মানে বাস্তবতা তাই জীবনকে বাস্তবতা দিয়েই বিবেচনা করতে হয়,তোমার একটা ভুল সিন্ধান্ত তোমার জীবনকে করে তুলতে পারে বিষময়।আর আমি মা হয়ে সেটা মেনে নিতে পারি না।

দেখ আবরার বিয়ে করেছিল তার একটা ছেলে আছে এখন তুমি আরাফকে একটা মাছুম বাচ্চা হিসাবে তাকে ভালবাস তার প্রতি তোমার মায়া মমতা সবই ঠিক আছে কিন্তু আবরারের সাথে বিয়ের পর যখন তোমার একটা বাচ্চা হবে তখন কি তুমি এই দুই বাচ্চাকে একি রকম মনে করতে পারবে !!কিন্তু আবরারের কাছে দুই বাচ্চা এক রকম হবে তখন তোমার কষ্ট হবে আর এটা নিয়ে তোমাদের স্বামী-স্ত্রীর মাঝে অশান্তি শুরু হবে তোমার কাছে জীবনটাকে বিষের মত মনে হবে।

আম্মু তোমার কথাকে আমি অস্বীকার করছি না ।মানুষের মন পরিবর্তন হতে সময় লাগে না।আমার মনও যে পরিবর্তন হবে না তারও কোন গ্যারান্টি নাই।

আম্মু তাই বলে কি মানুষের জীবনে মানুষের জন্য ভালবাসা মায়া মমতা,মানবতা বলে কিছু থাকবে না ।

সাহিদা : থাকবে তবে সেটা নিজের জীবনকে বিষর্জন দিয়ে নয় ,তুমি নিজের জীবনকে সেফ করে যতটুকু অপরের জন্য করতে পার করবে।যেটা তুমি এখন আরাফের জন্য করছ।আর তাছাড়া আমি তো বড় আপাকে আগেই তোমার ব্যপারে বলেছিলাম তখন সে রাজী হয়নি এখন সে তার স্বার্থের কারনে আমার কাছে আসছে।

আম্মু এর জন্য তো তোমার আল্লাহর কাছে শুকরিয়া করা উচিত।তখন যদি খালা মনি রাজী হত আর ফাইজা ভাবীর মত তুমি তোমার মেয়েকে হাড়াতে তাহলে তোমার কত কষ্ট হত।সেই কষ্ট থেকে আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছে।

আরাফকে রেখে যদি আমি মারা যেতাম তাহলে তুমি আরাফের জন্য কতটুকু ভাবতে এখনও তুমি সেভাবে ভাব ।আরাফ তো একটা নিস্পাপ বাচ্চা ।আরাফের জন্মের দিন থেকে আমি তাকে লালান পালন করছি সেই আমিও যদি আরাফের ভাল মা হতে না পারি ,তাহলে হঠাৎ করে আসা একটা মায়ের কাছে আরাফ কতটুক ভাল থাকবে ।

আম্মু আল্লাহ অহংকারীকে পছন্দ করে না ,খালা মনি হয়ত তাদের আভিজাত্য আর অর্থ সম্পদের অহংকারে সেদিন তোমাদর প্রস্তাব গ্রহন করেনি অথচ দেখ সেই খালা মনিই আজকে তোমার কাছে ভিখিরির মত হাত পেতেছে ।

আম্মু তুমি খালা মনিকে এভাবে ফিরিয়ে দিওনা ।সে তোমার আপন বোন আবরার ভাইয়া তোমার বোনের ছেলে।তুমি তাদের প্রতি এতটুকু সহানুভূতি না দেখাতে না পারলে কে পারবে বল।

এবার সাহেদার মন টা নরম হয়ে চোখে পানি আসে মারে সবই তো বুঝি,আর আবরারের চেয়ে ভাল ছেলের কাছে আমি তোকে বিয়ে দিতে পারব না সেটাও জানি তাই বলে কি আমি তোর জীবনের সুখ আহ্লাদ নষ্ট করে দিব ।

আম্মু আমার কপালে যদি সুখ না থাকে তাহলে আবিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করলেও আমি সুখী হতে পারব না।

আম্মু জীবন মানেকি শুধুই স্বার্থ পরের মত নিজে সুখে থাকা নিজে শান্তিতে থাকা ।না আম্মু শুধু নিজে সুখে - শান্তিতে থাকার নাম জীবন নয়।

আম্মু ক্ষণস্থায়ী এই জীবনে নিজের সুখ ত্যাগ করে অন্যকে কতটুকু সুখ বা শান্তি দিতে পারলাম সেটাই আসল সুখ সেটাই জীবনের তৃপ্তী।আম্মু আমি যখন আরাফকে কোলে নিয়ে আদর করি বা আরাফের সাথে খেলা করি আবরার ভাইয়ার অসহায় চেহারায় শান্তির যে ঝিলিক আমি দেখি নিজেকে তখন অনেক সুখী মনে হয়।

আমি না হয় এক আসহায় বাবার মাছুম বাচ্চার জন্য আমার জীবনের স্বপ্ন আশাকে ত্যাগ করলাম।

সাহিদা মা তোরা অনেক লেখা পড়া করেছিস অনেক কিছু আমার চেয়ে ভাল বুঝিস ঠিক আছে আমি তোমার আব্বুর সাথে কথা বলে দেখি সে কি বলে।

তাহিরার মা বাবা সব দিক চিন্তা ভাব না করে আর তাহিরার যেহেতু মত আছে তাই তাদের মত মিসেস জাহিদাকে জানিয়ে দেন । মিসেস জাহিদা স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লেন খুশীতে ছেলে আবরারকে সবই খুলে বলেন ।এ খবরে আবরার খুশী না কষ্ট পেল তা বুঝা গেল না শুধু বল্ল আম্মু আমি এ ব্যাপারে তাহিরার সাথে কথা বলব।

তাহিরা আরাফকে ঘুম পারাচ্ছে এমন সময় আবরার এসে তাহিরা আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই ।ভাইয়া আপনি যান আমি আরাফকে ঘুম পাড়িয়ে শুইয়ে দিয়ে আসছি।

তাহিরা আবরারের রুমের দরজায় এসে ভাইয়া আসব ?এস তাহিরা ।তাহিরা লজ্জায় জর সর হয়ে খাটের পাশে বসে ।

তাহিরা তুমি যে ভাবে আমার ছেলেটাকে মায়ের আদর ভালবাসা দিয়ে লালন পালন করছ আমি তার জন্য তোমার কাছে কৃতজ্ঞ ।আমি জানি আমি বিয়ে করলে বউ পাব কিন্তু আরাফের জন্য তোমার মত ভাল মা পাব না তার পরো আমি চাই না আমার বা আমার ছেলের জন্য তোমার জীবন নষ্ট হোক।

তাহিরা লজ্জিত ভাবেই বলেন ভাইয়া আপনি এভাবে বলছেন কেন ?আর আমার জীবন নষ্ট হবে কেন ?

আবরার : তাহিরা প্রতিটা মেয়েই স্বপ্ন দেখে তার স্বামীর জীবনে সেই হবে প্রথম নারী। আমি বিয়ে করেছিলাম,আমার বউ ছিল আমি তার সাথে প্রায় দুই বছর সংসার করেছি আমার একটা ছেলে আছে ।এগুলো নিয়ে তোমার মনে কষ্ট হবে। আর আমি চাই না তুমি কোন কষ্ট পাও।

ভাইয়া আপনি বিয়ে করেছিলেন আপনি ভাবীর এর সাথে সংসার করেছেন যা কিছুই করেছন বৈধ ভাবেই করেছন আর আমি সেটা জানি।ভাইয়া এমনও হতে পারে আমার একটা অবিবাহীত ছেলের সাথে বিয়ে হল আর বিয়ের পর আমি জানলাম আমার স্বামীর একটা মেয়ের সাথে অবৈধ সম্পর্ক ছিল তাহলে সেটা কি বেশি কষ্টের না ।আর একটা মেয়ে একটা ছেলেকেই বিয়ে করে ।ভাইয়া আমি আরাফকে ভালবাসি আমি ওর মা হয়ে সারা জীবন ওর পাশে থাকতে চাই। তাহিরা ভাইয়া আমি আসি।তাহিরার কথায় আবরারের চোখে পানি চলে আসে ।

এক সপ্তাহ পর তাহিরার প্রথম বিয়ে হলেও আবরার দ্বিতীয় বিয়ে তাই এক ঘরোয়া অনুষ্টানের মাধ্যমে আবরার ও তাহিরার বিয়ে হয় ।আবরার তাহিরাকে নিয়ে তাদের রুমে আসে তাহিরা রুমে এসে আরাফ কোথায়? পিছন থেকে মিসেস জাহিদা আজকে তোমার জীবনের একটা বিশেষ রাত আজকে আরাফ আমার কাছেই থাক ।

খালা মনি আমি আরাফের মা হয়েই এ বাড়িতে এসেছি আর একজন মায়ের একজন মায়ের কাছে তার সন্তানের চেয়ে আর কিছুই বড় নয় আপনি আরাফকে কাউকে দিয়ে এঘরে পাঠিয়ে দিন ।মিসেস জাহিদা ওকে বলে চলে যান।

আবরার তাহিরাকে জরিয়ে ধরে তাহিরা, অন্তত আজকের রাতটা আরাফ থাক না আম্মুর কাছে।তাহিরা চুপ করে থাকে আবরার দুই হাত দিয়ে তাহিরার মুখ উচু করে ধরে অপলক চোখে চেয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে এই তো আমার প্রথম জীবনের প্রথম ভাললাগা যে ভাল লাগার কথা কাউকে বলতে পারিনি ।

হে আল্লাহ তোমার লীলা বুঝার সাধ্য বান্দার নাই ,তুমি যে ভাবে চাও সেভাবেই সব কিছু হয়, তুমি তোমার ইচ্ছা মত সময়ে আমার প্রথম ভাললাগাকে, ভালবাসায় আমার কাছে এনে দিলে।

বিষয়: বিবিধ

৫৪৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File