ভাল লাগা ফিরে আসে ভালবাসা হয়ে।(প্রথম অংশ )

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৬ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৪৮:২৭ দুপুর



মিসেস জাহেদার একমাত্র সন্তান আবরারকে নিয়েই তার সংসার। ।ছেলে আবরারকে উচ্চ শিক্ষায় যেমন শিক্ষিত করেছেন তেমনি নৈতিক শিক্ষারও কোন ঘাটতি রাখেন নি। আবরার দেখতে সুর্দশন আচার ব্যাবহারে তেমনি নম্র ও ভদ্র।একেবারে চাঁদের টুকরো ছেলে।গতবছর বাবা মারা যাবার আগেই আবরারকে নিজের ব্যাবসা বাণিজ্য বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন।আবরার ও সফলতার সাথেই ব্যাবসা পরিচলনা করছে।

মিসেস জাহেদা এবার ছেলের বিয়ে দিবেন সিন্ধান্ত নিলেন। প্রায় প্রতিদিনই ঘটক আসেন বাড়িতে মেয়েদের ছবি ও বায়োডাটা নিয়ে ,মিসেস জাহেদা ২/৩ টা মেয়ে নিজের চোখে দেখেছেন ও কিন্তু সবকিছু একসাথে মিলছে না।

আবরারের ভাললাগে আপন খালাত বোন তাহিরাকে ।তাহিরা মেয়ে হিসাবে খুবই ভাল লেখাপড়ায় ভাল ,দেখতে সুন্দুরী ,আমল আখলাকও ভাল।আবরার তার এই ভাল লাগা তাহিরাকে যেমন বলতে পারেনি তেমনি মাকেও বলতে পারে না।শুধু মনে মনে ভাবে আম্মু এত মেয়ে খোজা খোজি করছে আম্মুকি তাহিরাকে কথা ভাবতে পারে না ।তাহিরা তো মেয়ে হিসাবে খুবই ভাল শুধু আমাদের মত তাদের অর্থ বিত্ত নেই এই কারনেই কি আম্মু তাহেরাকে পছন্দ করছে না। আবরার শুয়ে শুয়ে যখন এসব কথা ভাবছিল এমন সময় মিসেস জাহেদা ছেলের রুমে নখ করে ,আবরার শুয়া থেকে উঠে বসে আম্মু এস।

মিসেস জাহেদা এতদিনে একটা আমার মনের মত মেয়ে পেয়েছি একেবারে পারফেক্ট তারাও তোমাকে পছন্দ করেছে ,তাদের সাথে আমার কথাও হয়েছে আগামী শুক্রবার আমরা ওদের ওখানে যাব আর সেদিন বিয়ের ব্যপারে ফাইনাল কথা হবে। এইযে এখানে মেয়ের ছবি ও বায়োডাটা আছে তুমি দেখতে পার। আবরারের খুব ইচ্ছা করে মাকে তাহিরার কথা বলতে লজ্জা আর সংকোচের কারনে কিছুই বলতে পারে না। শুধু বলে আম্মু তুমি যা ভাল মনে কর তাই কর।

ফাইজাও আবরারের চেয়ে কোন অংশে কম নয় তার বাবার ও সামাজিক মান সন্মান অর্থ বিত্ত সবই আছে আর তিন ভাইয়ের আদরের একমাত্র বোন।দেখতে বেশ সুন্দরী,শিক্ষিত ও নৈতিকতা সম্পন্ন মেয়ে ।

যথা সময়ে মিসেস জাহিদা আবরার ও কাছের কয়েকজন আত্বীয় সহ ফাইজাদের বাসায় আসেন ,দুইপরিবারেরই দুই পরিবারকে পছন্দ হওয়ায় বিয়ের দিনক্ষন ঠিক করা হয়।

আবরার রাতে শুয়ে শুয়ে তাহেরা ও ফাইজার সাথে তুলনা করে সবকিছু মিলিয়ে ফাইজার পাল্লায়ই ভারী হয় তবুও আবরারের মনে তাহেরার জন্য একধরনের কষ্ট অনুভব করে।আল্লাহ আমার জন্য যাকে নিদৃষ্ট করেছে তাকেই আমাকে মেনে নিতে হবে এই বলে মনকে শান্তনা দেয়।

এক মাসের মাথায় খুব জাক জমকের সাথে আবরার আর ফাইজার বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের দিন আবরার ও ফাইজাকে দেখে সবার মুখে একটাই কথা যেমন বর তেমনি বউ একেবারে সোনায় সোহাগা।বুদ্ধীমতি ফাইজা খুব সহজেই স্বামী আবরার ও শাশুরী মিসেস জাহেদার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে আনন্দে দিন কাটাচ্ছে ,এই আনন্দের মাঝেই আরো একটি শুভ খবর মিসেস জাহেদার সংসারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় ,ফাইজা মা হবে।

বান্দা অনেক রকম পরিকল্পনা করে বিভিন্ন রকম সিন্ধান্ত নিতে পারে তবে সেই পরিকল্পনা বা সিন্ধান্ত বাস্তবায়নের মালিক একমাত্র আল্লাহ।তানা হলে এমন হবে কেন !আবরার ও ফাইজা অনাগত সন্তানের কথা ভেবে কত স্বপ্ন,কত আশা ,কত রকম পরিকল্পনা নিয়েছে।সবকিছু ঠিক থাকা সত্ত্বে ও ফাইজা এক পুত্র সন্তানের জন্মদিয়ে ডাক্তারদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকা সত্ত্বে ও অতিরিক্ত ব্লিডিং এর কারনে অটিতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন এমন কি তার সন্তানের মুখটি পর্যন্ত দেখতে পারেন নি।

ফাইজার এই অকাল মৃত্যুতে মিসেস জাহিদার সংসারে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া।আত্বীয় স্বজন সবাই মিসেস জাহিদাকে শান্তনা দেওয়ার জন্য তার চার পাশে ভির করে আছে তাহিরা নিরবে চলে যায় ফাইজার রেখে যাওয়া সন্তানের দুলনার কাছে।কি নিস্পাপ ফুটফুটে চাদের মত মায়াময় চেহারা দেখে তাহিরার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরে নিজের অজান্তেই তাহিরা বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।

মিসেস জাহিদার মানষিক ও শারীরিক যে অবস্থা তাতে এই মূর্হতে বাচ্চার দেখা শুনা করা তার পক্ষে সম্ভব নয় তাই সবাই মিলে যখন এটা নিয়ে আলোচনা করছিল তাহিরা এটা শুনতে পেয়ে সবার সামনেই বলে বসে আম্মু আমার তো ইউনির্ভারসিটি বন্ধ আমি খালা মনি আর এই বাবুটার কাছে থাকতে পারি ।সাহিদা মেয়ের কথায় মনে মনে বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বলে না।তাহিরার এই কথায় সবাই খুশী হয় ও সবার মনে সস্থি আসে ।সাহিদা ও বোনের এই বিপদের দিনে আর না করতে পারে না।

তাহিরা প্রথমই বাচ্চার একটা নাম ঠিক করে আবরার ও ফাইজার নাম মিলিয়ে তাদের সন্তানের নাম রাখে আরাফ।তাহিরা এত বেশী মনোনিবেশ করে তাকে দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না এটা তার বাচ্চা নয়।কখন আরাফকে খাওয়াতে হবে কখন তেল মাখতে হবে,কখন গোছল ,কখন ঘুম পাড়াতে হবে এসব নিয়েই সারাক্ষন ব্যাস্ত কখন আরাফ একটু মুখ বাকা করে হাসি দিল,একটা হাই দিল,একটা হাছি দিল ,হাতটা নাড়াল পাটা নাড়াল এসব পর্যবেক্ষণ করে তাহেরা এত বেশী আন্দোলিত হয় মা না হয়েও সে নিজের ভিতর মাতৃত্বের স্বাদ অনুভব করে।

তাহিরার আদর যত্নে আরাফ এক মাসেই বেশ স্বাস্থ্যবান হয় ।তাহিরার ক্লাস শুরু হবে আগামীকাল থেকে আর মিসেস জাহিদা ও শোক কাটিয়ে অনেকটা সচল হয়ে উঠে ।আজ বিকালে তাহিরা চলে যাবে।

তাহিরার মন কিছুতেই যেতে চাচ্ছে না আরাফকে রেখে ,তাহিরার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছা করে কিন্তু পারছে না চোখ দিয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে।

বাসায় এসে তাহিরা ঘুমাতে পারে না সারারাত ছটফট করতে থাকে খালা মনি কি আরাফকে খাওয়াতে পারছে ,আরাফ কি কান্না করছে নাকি ঘুমাচ্ছে এসব ভাবতে ভাবতেই রাত শেষ হয়ে যায়।খুব ইচ্ছা করে একটা ফোন দিয়ে জানতে আরাফ কেমন আছে কোন এক লজ্জায় তা আর করতে পারে না ।তাহিরা ক্লাসে এমন সময় মোবাইল বেজে উঠে তাহিরা ফোন রিসিপ করতেই আরাফের কান্না শুনে ভাইয়া আরাফ এত কান্না করছে কেন?তাহিরা আরাফ সারা ঘুমাই নি আমাকে আম্মুকেও ঘুমাইতে দেয় নি ,সে কিছু খাচ্ছেও না তুমি কি একটু আসতে পার একথা শুনে তাহিরার বুকের ভিতরটা কেপে উঠে ভাইয়া আমি ১ঘন্টার মধ্যে আসছি বলে ফোন রেখে।

তাহিরা আরাফকে কুলে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরতেই আরাফের কান্না বন্ধ হয়ে যায় তাহিরার হাতে ফিডার খেয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে তাহিরার কুলে।তাহিরা আবরারের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় এক অসহায় বাবা কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

তাহিরা এখন প্রতিদিন ক্লাস শেষে এবাসায় আসে রাত দশটা এগার টার দিকে আরাফকে রাতের শেষ ফিডার খাইয়ে চলে যায় ।বেশীর দিন তার মা শাহিদা এসে নিয়ে যায় আবার মাঝে সাঝে আবরার ও দিয়ে আসে আবার ছুটির দিন গুলিতে তাহেরা এখানে থেকে যায়। তাহিরার সব চিন্তা ভাবনা সব কিছুই মনে হয় আরাফকে নিয়ে ,আরাফ মুখে একটু শব্দ করুক বা হাত পা নেড়ে একটু খেলা করুক তাতে তাহিরা আনন্দে আটখানা আবার আরাফ এর একটু গা গরম বা একটু বমি হলেই তাহিরা চিন্তায় অস্থির হয়ে যায়।আরাফের সব কিছতেই তাহিরার আনন্দ উচ্ছাস ও ব্যকুলতা দেখে মিসেস জাহিদা মনে মনে সস্থির নিঃশ্বাস ফেললেও আবরারের মন এক অজানা ভয়ে শংকিত হয়।

এভাবেই আরো তিন মাস কেটে যায় মিসেস জাহিদা আবার আবরারের বিয়ে নিয়ে চিন্তা করেন।আর এবার তার মনে আসে তাহিরার কথা তাহিরা যে ভাবে আরাফের দেখা শুনা করে বাহিরের একটা মেয়ে কখনো সেটা করবে না ।এসব কথা ভেবে মিসেস জাহিদা বোনের সাথে কথা বলতে যান।তাহিরা তখন ইউনির্ভারসিটিতে।

তাহিরার মোবাইলে কল আসলে কল রিসিপ করে সালাম দেয় ।সাহিদা : তুমি কোথায়?আম্মু আমার ক্লাস শেষ আমি এখন খালামনির ওখানে যাব।

সাহিদা রাগত স্বরে না তুমি ওখানে যাবে না ।তুমি বাসায় চলে এস।

আম্মু আরাফকে আজকে গোছল দিতে হব,তাছাড়া আরাফ অন্য কারো কাছে তেমন খেতেও চায় না।

সাহিদা আরো বেশী রেগে সেটা তোমার কোন দায়িত্ব না সেটা যাদের বাচ্চা তারা বুঝবে ,আমি বলছি তুমি যাবে না তুমি বাসায় চলে এস।তাহিরা মায়ের রাগ দেখে আর কঠা না বাড়িয়ে বলে ওকে আম্মু আমি আসছি।

তাহিরা বাসায় ডুকে মায়ের মুখে চোখে রাগ দেখে সরাসরি নিজের রুমে ডুকে ছোট বোন তাহমিনাকে জিঙ্গেস করে আম্মু এত রাগছে কেন রে।বড় খালামনি এসছিল তোমার আর আবরার ভাইয়ার বিয়ের কথা বলতে আম্মুও খালামনির কথা খালা মনিকে ফিরত দিয়েছে ।তাহিরা মানে !

তাহমিনা : মানে আবরার ভাইয়ার বিয়ের আগে আম্মু ছোট খালামনিকে দিয়ে বড় খালা মনিকে বলেছিল তোমার ব্যাপারে তখন বড় খালা মনি বলেছিল আমি আত্বীয়ের ভিতরে আমার ছেলের বিয়ে দিব না তাই আম্মু আজকে বড় খালামনিকে বলে দিয়েছে আমি আত্বীয়ের ভিতরে আমার মেয়ে বিয়ে দিব না।

তাহিরা : আমিতো কখনো শুনিনি একথা ।তাহমিনা নিগেটিভ হওয়ার জন্য আম্মু তোমাকে জানতে দেয় নি।

তাহিরা বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যায় আরাফের প্রতি তার মায়া মমতা ভালবাসা সব কিছুর উর্ধ্বে ।একটা অসহায় বাচ্চা যে জন্মের পর মাকে দেখিনি সেই বাচ্চাটাকে ভালবেশে তার পাশে থাকতে চাইলে তার বাবাকে বিয়ে করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ তো দেখছি না ।তাহিরা মনে মনে সিন্ধান্ত নিয়ে নেয় আরাফের জন্য আমি না হয় আরাফের বাবাকেই বিয়ে করব এ ব্যাপারে আমি আম্মুর সাথে কথা বলব ....।

বিষয়: বিবিধ

২৮৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File