আধাঁরের আলো (পর্ব ১১)

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২৯ অক্টোবর, ২০১৩, ০৮:৫৯:৫৮ রাত



আপু, দুলাভাই,ভাগনা-ভাগনী সাথে রাহী ,মাহী সবার সাথে মোনার দিনটা বেশ আনন্দেই কেটে যায়।সকাল হতেই শুরু হয় মোনার বুক দুরু দুরু করা। আজকে হাসিনের মেডিকেলের রেজাল্ট হবে এখানে মেডিকেলে চান্স পাওয়া অনেক বেশী কঠিন।পরিক্ষার রেজাল্ট হতে হবে সর্বোচ্চ ভাল। সর্বোচ্চ ভাল রেজাল্টকারী দুই হাজার ছাত্র ছাত্রীদের মাঝে লটারীর মাধ্যমে ২০০জনকে নয়া হবে।হাসিনের সর্বোচ্চ ভাল রেজাল্ট আছে এখন যদি লটারীতে হাসিনের নাম না উঠে তাহলে কি হবে !এটা ভাবতেই মোনার ভিতর ঝড় শুরু হয় ।মোনা সারাক্ষন মনে মনে দরুদ শরীফ পড়ছে আর বলছে হে আল্লাহ তুমি হাসিনকে নিরাশ কর না। মোনা এই আস্থিরতার মাঝেই ১১টা বাজতেই কমপিউটার অন করে মেডিকেল সাইন্স এর ওয়েব সাইটে গিয়ে দেখে রেজাল্ট হয়েছে নামের লিষ্ট দেখতে ১,২, ৩, ৪,এরকম করে দেখতে দেখতে ১২তে যেয়ে মোনার চোখ আটকে যায় হাসিন ওমার দেখে মোনা এমন জুড়ে আলহাদুল্লিলাহ বলে লাফিয়ে উঠে তোবা আর রাইহান তখন রুমেই ছিল তোবা বলে মোনা কি হয়েছে ?মোনা এত বেশী খুশী যে কথাই বলতে পারছে না তোবাকে জড়িয়ে ধরে আপু হয়ে গেছে ,হয়ে গেছে, তোবা : মোনা এমন করছিস কেন কি হয়ে গেছে? মোনা : হাসিনের মেডিকেলে চান্স হয়ে গেছে ।

তোবা : আরে বাবা আমি তো মনে করেছি তুইই মেডিকেলে চান্স পেয়েছিস।

মোনা : মোনা লজ্জিত হয়ে আ.....পু ফাইজলামী করবা নাতো!

মোনা হাসিনকে মোবাইলে রিং করে হাসিন রিসিপ করে হ্যালো আপি।

মোনা : কনগ্রাচুলেশন হাসিন কনগ্রাচুলেশন !

হাসিন : থ্যাংক ইউ আপি থ্যাংক ইউ সো মাচ ! আপি আমার আজকের এই পজিশনের পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশী সে তুমি ।আপি সন্ধ্যায় মাম্মা পাপ্পা তোমাদের ওখানে যাবে।মোনা লজ্জিত হয়ে আল্লাহ হাফেজ বলে ফোন কেটে দেয়।

আদনান রাইমাকে ফোন করে বলে রাইমা ,আনজোম আন্টি ফোন করে বল্ল হাসিন মেডিকেলে চান্স পেয়েছে তাই রাতে আমাদের সাথে খাবে ,সে ভাবে রান্নার ব্যাবস্থা কর।

দুপুরে খাওয়ার পর রাইমা শাশুরী আর বড়জা সাহানার সাথে আলোচনা করে কি কি রান্না হবে ফ্রীজ থেকে সে সব বের করে সাহানাকে নিয়ে রান্নার আয়োজনে ব্যাস্ত হয়।মোনার এখন আর কোন কাজ করতে হয় না কিন্তু বাসায় ছয়টা বাচ্চা তো নয় যেন ছয়টা বিচ্ছু এই ছয়টাকে সামাল দিতে মোনা হিম শিম খাচ্ছে ,মোনা আর পারছে না সন্ধ্যা যত এগিয়ে আসছে মোনার বুক ধরফরানি তত বেড়েই চলছে ,বাসার সবাই হাসিনের প্রস্তাব কি ভাবে নিবে এটা ভেবে মোনা

মাগরিব নামাজের পর আহনাফ ও আনজোম আসে , আদনান উনাদের লিবিং রুমে বসান ও বোন তোবা ও তোবার জামাই রাইহানের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন বড় ভাই আরমান ও ভাবী সাহানার সাথে উনাদের আগেই পরিচয় আছে।আনজোম রুমে সবাইকে দেখে মোনাকে না দেখে রাইমাকে বলে,রাইমা মোনা কোথায় ?মোনাকে ডাক।রাইমা মোনাকে ডাকে রাইমার ডাকে মোনা লজ্জিত ভাবে ভীরু ভীরু পায়ে রুমে আসতেই আনজোম মোনাকে দুহাত দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে মোনা তুমি সাকসেসফুল তুমি তোমার চ্যালেন্জ এ তুমি জিতেছ বলেই নিজের গলা থেকে চেইন খুলে মোনার গলায় পড়িয়ে দেন।আনজোমের এরকম আচরনে আহনাফ ছাড়া ঘরের সবাই আবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।আনজোম মোনাকে পাশে নিয়ে বসে বলেন,

আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে খুশীর একটা দিন আর দিনটির পেছনে যার অবদান সবচেয়ে বেশী সে মোনা ,যদিও আমি ডাক্তার কিন্তু আমি এদেশএ চান্স পাইনি আমি পোলান্ড থেকে ডাক্তারী পাশ করেছি আমার ইচ্ছা ছিল আমার ছেলেকে ডাক্তারী পড়ানোর তবে এখানেতো চান্স পাবে না ,পোলান্ড বা হাঙ্গেরিতে পড়াব।এটা সন্ভব হয়েছে একমাত্র মোনার কারনে, মোনা যে ভাবে হাসিনের পাশে থেকে হাসিনকে সব সময় লেখা পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ আর প্রেরণা দিয়েছে সে কারনেই হাসিন এত ভাল রেজাল্ট করেছে।

আনজোমের কথার মাঝেই আহনাফ বলে মোনা শুধু হাসিনের লেখা পড়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছে তাই না সে হাসিনকে কোরাআন পড়া শিখিয়েছে, নামাজ পড়া শিখিয়েছে ইসলামকে জানার ও কিভাবে ইসলামকে মেনে জীবন যাপন করতে হয় সে ব্যাপারে আগ্রহী করেছে,আর শুধু হাসিন নয় আমরা বড় হয়েও মোনার মাধ্যমেই ইসলামকে জানার ও মানার ব্যাপারে উৎসাহী হই একারনেই আজকে আমরা আগের চেয়ে অনেক বেশী ইসলামকে মানছি এখনো যতটুকু ভূল ভ্রান্তি আমাদের আছে সেটুকু শুধরানোর চেষ্টা করব ইনশা আল্লাহ।মোনা আমাদের ফ্যামেলীর জন্য আধাঁরের আলো হয়ে এসেছে।তাই আজকে আমদের এই খুশীর দিনে ,আনজোম বলে উঠে আহনাফ থাম ,আনজোম আদনান এখন তোমার মাকে একটু আসতে বল ।

মরিয়ম বেগম এতক্ষন দরজার আড়াল থেকে উনাদের সব কথাই শুনছিলেন ,আদনান মাকে ডেকে আনেন মোনা উঠে মাকে বসতে দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।

আহনাফ : আমরা জানতে পারলাম আপনারা মোনার বিয়ের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছেন তাই আজকে আমরা আমাদের এই খুশীর দিনে আপনাদের কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে চাই আপনাদের যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে হাসিন,মোনার এই ভ্যাকেশনেই ওদের বিয়ে দিতে চাই এ কথায় মোনার ভাই বোনের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক আসলেও মোনার মা বাবার চোখে নেমে আসে পানি ।

আনজোম : আপনারা কাঁদছেন কেন!!!

মরিয়ম বেগম চোখ মুছে তারা তারি বলেন,এটা আমার কষ্টের কান্না নয় আমি কাদছি আমার মেয়ের কপালে এত সুখ সইবে তো !!

আনজোম আহনাফ সবার মনোভাব বুঝতে পেরে বলেন তাহলে আমরা একটা দিন ঠিক করতে পারি।

জামান সাহেব ও মরিয়ম বেগম বলেন আপনাদের প্রস্তাবে আমরা খুশী ও আনন্দিত কিন্তু আমাদের দুইটা দিন সময় দেন তারপর না হয় দিন ঠিক করেন।

আনজোম আহনাফ :ওকে

বাসায় অনেক লোকজন রাতে ঘুমানোর জন্য মোনার জায়গা হয় বাবা মা ও বাচ্চাদের সাথে লিবিং রোমের ফ্লোরে মায়ের পাশে ।মরিয়ম বেগমের চোখে কি এক চিন্তায় ঘুম আসে না উনি শুধু ছট ফট করতে থাকেন একবার শুন একবার বসেন ।মায়ের এরকম অবস্তা দেখে মোনা উঠে বসে আম্মু তুমি এমন করছ কেন তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে? নারে মা শরীর খারাপ লাগছে না বলে মরিয়ম বেগম মোনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন মারে এখন হাসিন যদি কোন কারনে পিছিয়ে যায় তাহলে তুই কি সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবি।

মোনা : আম্মু তুমি একথা বলছ কেন? হাসিন কেন পিছিয়ে যাবে।

মরিয়ম বেগম : মানুষের মন আবার হাসিনের বয়স ও কম বলা তো যায় না হয়তো এই দুই দিনে তার মতের পরিবর্তন হতেও পারে। মায়ের কথায় মোনার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে আম্মু কষ্ট হলেও সেটাকে আমি আমার ভাগ্য মনে করে আমি খুশী মনে মেনে নেব , হাসিন বা অন্য কারো বিরুদ্ধে আমার কোন আভিযোগ থাকবে না।আম্মু তুমি এসব নিয়ে কোন চিন্তা করনা তো তুমি এখন ঘুমাও তো ঘুমাও।কিন্ত মরিয়ম বেগমের ঘুম আসে না উনি উঠে অজু করে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া শুরু করেন ,ফজরের নামাজের সময় হলে ফজরের নামাজ শেষ করে সবাইকে ডাকেন নামাজের জন্য।

মরিয়ম বেগম জামান সাহেবের সাথে কথা বলে ছেলে আদনানকে আড়ালে নিয়ে বলেন তোমরা সবাই যেহেতু এ বিয়েতে রাজী আছ আমি একটু হাসিনের সাথে কথা বলতে চাই।

আদনান :ঠিক আছে হাসিনকে বাসায় আসতে বলি ।

মরিয়ম বেগম : না বাসায় না আর মোনা বা বাসার কেউ যেন জানতে না পারে আমি হাসিনের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি। শুধু তুমি আর আরমান যাবে আমার সাথে আর হাসিনকেও বলবে ও যে আমাদের সাথে যাচ্ছে সেটা আগেই ওর মা বাবাকে জানানোর দরকার নেই ।

আদনান মায়ের কথা মতই হাসিনের সাথে কথা বলে মা ও আরমানকে রেডী হতে বলে ।মরিয়ম বেগমকে রেডী হতে দেখে বাসার সবাই অবাক হয় সেতো কোথাও যায় না।রাইমা সাহানা জিঙ্গেস করে মাকে নিয়ে তোমরা কোথায় যাচ্ছ্? আদনান বলে এমনি আম্মু তো আসার পর কোথাও যায়নি তাই একটু বাহিরে থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। মোনা : আম্মু আমি তোমাদের সাথে আসি।মরিয়ম না সোনা তুমি থাক আমি দুই ঘন্টার মধ্যেই ফিরে আসব।

মোনা মনের সন্দেহ আর কৌতুহল চেপে রাখতে না পেরে তোবার কাছে জানতে চায় আপু আম্মু কোথায় গেল তুমি কি কিছু জান?তোবা জানা সত্ত্বে ও না জানার ভান করে বলে তুই যা দেখছিস আমিও তাই দেখছি এর চেয়ে বেশী কিছু আমি জানি না।

মরিয়ম বেগমদের আসতে আসতে প্রায় বিকাল হয়ে যায় ।আরমান ,আদনান বাসায় ডুকেই মোনার রুমে যেয়ে মোনাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ,মোনা ভাইদের এরকম আচরনে বিব্রত ও ভয় পেয়ে কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে ভাইয়া আমি কি কোন ভূল করেছি্? আদনান ও আরমান না তুই কোন ভূল করিস নি তুই খুব ভাগ্যবতী সেই আনন্দে আমরা কাঁদছি।

হাসিন সন্ধ্যায় মোনাকে ফোন করে আপি কেমন আছ?

মোনা : হাসিন তুমি আর ফোন করবে নাতো তোমার সাথে কথা বলতে আমার খুব লজ্জা লাগছে !!

হাসিন : তাহলে সুখবরটা শুনে রাখ আর মাত্র দুই দিন আগামী শুক্র বার দিনই তুমি আমার হবে সে দিন থেকে তুমি শুধুই আমার ..............।

চলবে........।

বিষয়: বিবিধ

১৪৪৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File