আধাঁরের আলো (পর্ব ৮)

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ২৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০৪:৪৪:৪৮ বিকাল



নতুন বাড়িতে উঠার আনন্দের পাশা পাশি রাইমাদের ছেড়ে যাবার কষ্ট দুটুই আনজোম আহনাফ বুকের মাঝে অনুভব করে।দুটি ভিন্ন দেশের ভিন্ন পরিবেশের মানুষ হয়েও মুসলমান হওয়ার কারনে তারা হয়েছিল আত্বার আত্নীয়।আনজোমের বেশী খারাপ লাগে মোনার জন্য,নিজের কোন মেয়ে না থাকার কারনে মোনাকে সে মেয়ের মতই ভালবাসত।যাওয়ার সময় আনজোম মোনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদেন ও বলেন মোনা তুমি কিন্তু প্রতিদিন একবার হলেও আমার কাছে আসবে,আমরাতো আর অনেক দুরে যাচ্ছি না হেটে যেতে মাত্র ২০ মিনিট লাগে।

মোনা হাসিনদের বাসা বদলের কথা শুনে মনে মনে খুশীই হয়েছিল ।কিন্তু ওরা চলে যাবার পর মোনা নিজের ভিতর এক ধরনের শূন্যতা আনুভব করে।আহনাফ,আনজোমের বাবা,মায়ের মত আদর ভালবাসা হাসিনের আপি আপি ডাকে বিরক্ত করা সবকিছু মিলিয়ে মোনাও কষ্ট পায়।

তিন ফ্লোরের সামনে অনেক জায়গা সহ ভিলা বাড়ি।আর বাসাও সাজানো হয়েছে সম্পূর্ণ নতুন আসবাব পত্রে।আগের বাসা থেকে শুধু মাত্র জামা কাপড়ার দরকারী বই -পুস্তক ,কাগজ-পত্র ছাড়া আর কিছু আনা হয়নি।

হাসিন খুব খুশী মনেই নতুন বাড়িতে আসে।কারন বাড়িটা কেনা হয়েছে হাসিনের পছন্দে,সমস্ত ফার্নিচার থেকে শুরু করে ছুটো-খাটো সব জিনিস বাড়ির ডেকরেশন সবই করা হয়েছে হাসিনের পছন্দে।পরের দিন হাসিন কলেজ থেকে ফিরে দেখে বাবা,মা এখনো ফিরে নি, এত বড় বাড়িতে হাসিনের নিজেকে খুব একা মনে হয়।আর মোনার জন্য বুকের ভিতর কেমন যেন করে।হাসিন নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেস না হয়েই বিছানায় শুয়ে ভাবত থাকে আমার এমন কেন লাগছে!

আহনাফ,আনজোম ৯-৫ আফিস করে বেশীর ভাগ সময় তারা একসাথেই যায় ও একসাথেই আসে।আর আনজোম সব সময় বাহির থেকে এসে আগে ছেলের রুমে ঢুকেন ছেলেকে দেখে একটু আদর করে তারপর নিজের রুমে যান।একটা মাত্র ছেলে তাও শেষ বয়ষে, ছেলে চাইলে আকাশের চাঁদ টাও পেড়ে দিতে চেষ্টা করবেন,না পারলেও।

আনজোম আহনাফ এক সাথে বাসায় ফিরে আহনাফ তাদের রুমে ঢুকে আর আনজোম হাসিনের রুমে ঢুকে হাসিনকে জামা কাপড় না ছেড়ে শুয়ে থাকতে দেখে ছেলের কপালে হাত রেখে বলেন, হাসিন তোমার কি শরীর খারাপ পাপা ?হাসিন মায়ের হাতের পরশে ও কথা শুনে উঠে বসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে না মাম্মা আমার শরীর ঠিক আছে তবে আমার খুব মন খারাপ লাগছে।

আনজোম, কেন পাপা আমরা এত সুন্দর বাড়িতে আছি আর সবকিছু তোমার ইচছা মত করা হয়েছে তোমার কেন মন খারাপ লাগবে !

হাসিন ,কিন্তু মাম্মা আমার এমন কেন লাগছে ,আমার শুধু মনে হচ্ছে আমি কি যেন ফেলে এসেছি।

আনজোম এবার ছেলের কষ্টটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বলেন, মোনাকে তুমি ইউনিভারসিটি নামিয়ে দাওনি আজকে।

হাসিন,আজকে তো আপির ক্লাস ছিল না।

আনজোম ,ফোনেও কথা বলনি।

হাসিন,দুইবার কল দিয়েছিলাম আপি কল রিসিপ করেনি আবার কল ব্যাকও করেনি।মাম্মা আমাদের তো অনেক বড় বাড়ী চল না আমরা আপিকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসি।

আনজোম তা কেমন করে হয়, তাকে আমরা কেমন করে আনব।

আহনাফ মা,ছেলের কথা শুনে দরজার সামনে দাড়িয়ে বলে উঠে উপায় একটা আছে তবে এ ব্যাপারে আমি কিছু বলব না বলে আনজোমের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসতে থাকে সাথে আনজোম ও।

মরিয়ম বেগম জামান সাহেবকে বলেন আমার মেয়েটা তো বড় হয়েছে এবার তো ওকে বিয়ে দেয়া দরকার ।দেশে থাকলে অনেক আগেই বিয়ে হয়ে যেত।

জামান সাহেব ,আমিও কয়েকদিন যাবত এটাই ভাবছি ,কিন্তু সমস্যা হল ছেলে মেয়েরা সবাই তো একসাথে দেশে আসতে পারে না ,তাই বলছিলাম আমি আর তুমি যদি আদনানের ওখানে যাই তারপর আরমান ও তোবাকে আসতে বলি তখন সবাই মিলে বসে পরামর্শ করে সিন্ধান্ত নিলে ভাল হবে।

মরিয়ম বেগম তার জন্য আমাদের ওখানে যেতে হবে কেন?আপনি তো skype তে বসেই সবার সাথে কথা বলতে পারেন।

জামান সাহেব তা পারি ,ছেলে মেয়েরা সব সময় আমাদের যেতে বলছে,আর ছেলে মেয়েরা ওখানে কি ভাবে আছে,কি করছে ,কি ভাবে চলছে ,ফিরছে সেটা কি আমাদের দেখা উচিত না। আর আদনান ও মোনা তো গতবার বলেই গেছে তুমি না গেলে ওরা আর আসবে না।এই তোমার জন্য আমারও এখনো যাওয়া হল না। তাই বলছিলাম তুমি আর না কর না চল আমরা যাই।

মরিয়ম বেগম অনিচ্ছাসত্ত্বেও ওকে আপনি যা ভাল মনে করেন তাই করেন ।

জামান সাহেব এ কথা শুনে সাথে সাথেই ছেলে মেয়েদের ফোন দিয়ে জানিয়ে দেন তোমার আম্মু রাজী হয়েছে আমরা আগামী মাসেই আসছি।

এ কথা শুনে মোনা তো খুশীতে আত্বহারা...........।

চলবে........।

বিষয়: বিবিধ

১৩২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File